নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
শয়তানের সমাজে বসবাস - ১
----------------------- ডঃ রমিত আজাদ
একটা মানুষের মোটামুটি ভালো থাকার জন্য কতটুকু কি দরকার? প্রতিদিনকার অন্ন, লজ্জা নিবারণের বস্ত্র, মাথা গোঁজার ঠাই, অসুস্থতায় চিকিৎসা, অজ্ঞানতায় শিক্ষা, আর যদি সম্ভব হয় তবে অবসরে বিনোদন। আচ্ছা এর জন্য একটা মানুষ সর্বচ্চো কি করতে পারে? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম, তাইতো? তাতেও যদি না হয়, তাহলে শরীরটাকে শাসন করে কাজের সময়টাকে না হয় আরো কয়েক ঘন্টা বাড়িয়ে কেবলমাত্র ঘুমানোর জন্য কিছুটা সময় নিলাম। এর বেশী তো আর সম্ভব নয়? এতো কিছুর পরেও যদি তার প্রাপ্য মজুরী জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট না হয়? এরকম একটি সমাজ ব্যবস্থাকে কি বলা যাবে?
উপরে আমি যা উল্লেখ করছি তা একসময় ইউরোপের মতো ধণাঢ্য মহাদেশেরই কিছু কিছু রাষ্ট্রের স্বাভাবিক চিত্র ছিলো। কায়িক শ্রম যারা করতো তাদের দৈনিক রুটির যোগার করাটাই অনিশ্চিত ছিলো। শিক্ষিত শ্রমিকদের কুলি-মজুরদের মতো যখন-তখন চাকুরী থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া না হলেও চাকরীর নিশ্চয়তা বলে তেমন কিছু ছিলনা। এই শিক্ষিতরা একেবারে অনাহারের মুখোমুখী না হলেও বেকারী, ধর্মঘট-হরতাল, লক্ আউটের দরূণ প্রতিদিনই অন্নের চিন্তায় বিপর্যস্ত থাকতে হতো। এই অনিশ্চয়তা ছিলো সামাজিক অর্থনীতির অন্ধকারময় দিক!
গ্রাম থেকে অনেক ছেলে কাজের লোভে শহরে আসতো। আবার শহরের রহস্যময় জীবনের হাতছানিও ছিলো। তারা শহরে এসে মামুলী যে কাজ পেত তাতে তাদের জীবন চলতো কোনভাবে। কখনো কাজ আছে, কখনো বেকার, এভাবেই টেনেটুনে চলতো জীবন। গায়ের কাপড়ে ফ্যাশন কি করবে? যতদিন ছিড়ে না যায় ততোদিন পড়া। ছিড়ে গেলেই দুশ্চিন্তা আরেকটি নতুন কিনতে হবে বলে। সেই সাথে ছিলো শারীরিক দুর্দশা, মাথা গোঁজার ঠাইয়ের চিন্তা। ধীরে ধীরে তারা এই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠতো। একসময় তারা কিছু ঠগ-জোচ্চোরের হাতের পুতুল হয়ে উঠতো, যারা তাদের নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সম্পুর্ণরূপে ব্যবহার করতো এদের। এতো বেশি দারিদ্র্যের বোঝা বইতে বইতে তারা হরতাল, মিছিল, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি, তার নিজের জীবনের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি সম্পর্কে পুরোপুরি উদাসীন হয়ে যেত। বরং এইসবকে পুঁজি করে যারা রাজনীতি করে তাদের খেলার পুতুল হিসাবেও খুব সহজেই ব্যবহৃত হতো। যদিও সে মনেপ্রাণে হরতাল-ধর্মঘট চায়না কিন্তু মনের সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলে সম্পুর্ণ অজ্ঞাতসারে ধর্মঘটিদের দলে ভীড়ে যেত।
শিক্ষিত চাকুরীজীবিদের অবস্থা শ্রমিকদের চাইতে কিছুটা ভালো হলেও অস্বচ্ছলতা আর অনিশ্য়তার হাত থেকে তাদেরও মুক্তি ছিলনা। অর্থনৈতিক ওঠানামায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে বেতন-মজুরী বৃদ্ধির কোন সঙ্গতি না থাকায় খরচের নিয়ন্ত্রণ তারা হারিয়ে ফেলতো। তাই জীবন ধারনের অতিরিক্ত কিছু আর তাদের জন্য সম্ভব ছিলনা। জীবনটি ছিলো একমাসের বেতন থেকে আরেক মাসের বেতন পর্যন্ত বাঁধা। কোন এক মাসের বেতন বাদ পরে গেলে ধার দেনা করা বা কোন এক সময় কষ্ট করে ঘরের জন্য কেনা কোন কিছু বিক্রি করা ছাড়া আর কোন পথ ছিলনা। গৃহকর্তা স্বামীকে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে প্রতি মাসের এই কঠিন দিনগুলোকে পারি দিতে হতো।
আসলে শিশুকাল থেকেই তারা এই দুঃখের দিন গুলোর মুখোমুখী থেকে এই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে এটাকেই নিয়তি ও স্বাভাবিক জীবন বলে মনে করতো। এই অভাবরূপী শয়তানটা মাসের প্রথম দিন থেকেই গৃহকর্তাকে তাড়া করে ফিরতো। আর স্ত্রী সন্তানদের মুখ চেয়ে সংসারের দাবী আদায়ের জন্য সচেষ্ট থাকতো। স্ত্রীর দাবী আদায়ের একমাত্র ব্যক্তিই হলো তার স্বামী, তাই স্বামী বেচারাকেই সব চাপ সহ্য করতে হতো। ক্রমে এটা রূপ নিতো কদর্য কুৎসিৎ ঝগড়ায়। অভাব, অনটন, ঝগড়া-ঝাটি, কান্নাকাটিতে ভরা দিনগুলি কাটতো ভাগ্যকে গালাগাল দিয়ে।
এই যে কদর্য জীবনযাপন, এটাকি স্বাভাবিক জীবনযাপন, নিছক নিয়তি? নাকি অন্য কিছু? আসলে এর মূল খুঁজতে গেলে দেখা যেত এরা সবাই ছিলো একটি শয়তানের সমাজ ব্যবস্থার স্বীকার।
(চলবে)
(এই সমাজব্যবস্থা আসলে ছিলো উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে গুটিকতক স্বার্থান্বেষীদের সৃষ্ট)
সাহায্যকারী গ্রন্থঃ মাইন কাম্পফ
©somewhere in net ltd.