নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
অপূর্ব জাফলং ও একটি ভৌতিক ঘটনা
------------------ ডঃ রমিত আজাদ
ঘটনাটি ১৯৮২/৮৩ সালের দিকে শুনেছিলাম আমার এক সিলেটি বন্ধুর কাছ থেকে। সিলেটের জাফলং বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান। যারা দেখেননি তারাও নাম শুনেছেন। আর যারা দেখেছেন তাদেরতো জাফলং নাম শোনার সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই অপরূপ দৃশ্য। জাফলং নিয়ে উচ্ছাস শুনেছি বহু মানুষের মুখে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে যায় এর নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। সেই ১৯৮৩ সালে কলেজে (সিলেট ক্যাডেট কলেজ) ঘোষণা করা হলো এবারের পিকনিক হবে জাফলং-এ। শোনার সাথে সাথেই কি যে রোমাঞ্চ অনুভব করেছি! এতকালের শোনা অপরূপ জাফলং এবার নিজের চোখে দেখতে পাবো! আমাদের সিলেটি বন্ধুরা তো আগেই দেখেছে জাফলং, সেই অপরূপা জাফলং-এর নানা সৌন্দর্য্য বর্ণনা করে তারা আমাদের কল্প জগৎের জাফলং-এর রূপ-সুষমা আরো বাড়িয়ে দিলো। পিকনিকের আগের রাতে তো এক্সাইটমেন্টে ঘুমটাই ঠিকমতো হলোনা । খুব ভোরে উঠে ভীষণ তোরজোড়। ছয়টি ক্লাসের জন্য ছয়টি বাস, এছাড়া স্যার, স্টাফ ও অন্যান্যদের জন্যও বাস আছে। আমরা তখন নিতান্তই কিশোর তাই আমাদের উৎসাহই সব চাইতে বেশী। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গিয়ে বাসে বসে পড়লাম। বাসে গিয়ে যে বসলাম আর সহজে নামিনা, ভাবি এই বুঝি আমাকে রেখেই বাস ছেড়ে যায়। আর শুধু সময় গুনতে থাকলাম। স্যাররা সব যোগার-যন্ত্র করে। বাসে উঠে মাথা গুনে নিশ্চিত হয়ে, তাদের পিতৃসুলভ কিছু উপদেশ দিয়ে বাস ছাড়লেন। আমরা গান-বাজনা, হাততালি, আনন্দ-উচ্ছলতা করে এগুতে থাকলাম। সিলেটকে এম্নিতেই শ্যামল সিলেট বলা হয়। তারপরেও একটা জায়গায় এসে হঠাৎ সবুজ যেন আরো বেড়ে গেলো। চারিদিকে কেবল সবুজের সমারোহ, কোথাও কোথাও পানির প্লাবন, সুন্দর জলরং এ আঁকা খাল। রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছে বিশাল উঁচু সবুজ-নীল পাহাড়। এই পাহাড়টির নাম খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়। আমাদের কলেজ প্রাঙ্গন থেকে দূরে ঐ পাহাড়টি দেখা যেত। দিনের উজ্জ্বল আলোয় আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ঐ নীল পাহাড়টি আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকতো। আর গোধুলীর ফিকে রঙে সেই পাহাড়টি যখন ছাইবর্ণ ধারণ করতো তখন তাকে ভীষন রহস্যময় মনে হতো। সেই বয়সে একটা গল্প পড়েছিলাম 'পাহাড়ের বন্দি' নামে। আমার মনে বাসনা জাগতো ঐ নীল পাহাড়ে হারিয়ে গিয়ে আমিও পাহাড়ের বন্দি হয়ে যাই। আজ সেই পাহাড়টিই খুব কাছে এসে ধরা দিয়েছে। সেই পাহাড়ের বুক চিরে অসংখ্য কান্না। ইচ্ছে জেগেছে সেই কান্না ছুঁয়ে দেখার।কিন্তু তা হবার নয়, এ কান্না শুধু দেখা যাবে ছোঁয়া যাবেনা। আগে থেকেই জানতাম ঐ পাহাড় আমাদের নয়।
একসময় বাস থেমে গেলো। শোর উঠলো "জাফলং এসে গেছে, জাফলং এসে গেছে।" ঝপ থেকে বাস থেকে লাফিয়ে পড়লাম। নামার সাথেই মন মাতানো, চোখ জুড়ানো দৃশ্য। পাহাড়ের গায়ে কেবল সবুজ আরো সবুজ। এক জায়গায় হঠাৎ করে পাহাড় চিরে গিয়েছে। আর সেই চির ধরে নেমে এসেছে খরস্রোতা এক পাহাড়ী নদী। এই চির যেন মানুষদের বিচ্ছিন্ন করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে তার উপর ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে একটি স্তম্ভবিহীন সেতু। খরস্রোতা সেই স্রোতস্বিনী প্রতিবেশি রাষ্ট্র থেকে কুল কুল করে নেমে এসে পা ধুয়ে দিচ্ছে আমার পবিত্র জন্মভূমির। আর তার সাথে করে উপঢৌকন নিয়ে এসেছে সহস্র পাথর।
ডানে বামে যেদিকে তাকাই শুধু পাথর আর পাথর। আমার জীবনে এতোগুলো পাথর একসাথে আর কখনো দেখিনি। ছোট বেলায় পাথরের নেশা ছিলো। ঘর থেকে চুপি চুপি বের হয়ে দূরে রেল রাস্তায় চলে যেতাম পাথর তুলতে। তারপর হাফপ্যান্টের দুই পকেট ভরে নিয়ে আসতাম পাথর। রাতে ঘষে ঘষে আগুন জ্বালাতাম আর ভাবতাম বিজ্ঞানী হয়ে গিয়েছি। মাঝে মাঝে মনে মনে ভাবতাম এরকম করতে করতে যদি একদিন হীরক খন্ড পেয়ে যাই, তবে সেটা বেচে অনেক টাকা পাবো। আজ আমার চোখের সামনে কতো কতো পাথর! পাথরের নেশায় আরো একবার ছুটে গেলাম। ওমা! একি? এযে হীরার চাইতেও সুন্দর! রেল রাস্তার উপর থেকে যে পাথর তুলতাম জাফলং পাথরের তুলনায় ওগুলোতে একবারেই ফিকে! লাল, গোলাপী, বাদামী, নকশা কাটা, ঝলমলে কতো বিচিত্র রকমের পাথর জাফলং-এ! ঝটপট তুলে নিলাম কিছু, পরক্ষণেই ফেলে দিলাম কয়েকটি, কারণ তাদের চাইতেই সুন্দর কিছু পাথর পেয়েছি, আবার ওখান থেকেও কিছু ফেলে দিলাম, কারণ আরও সুন্দর কিছু পাথর পেয়েছি। অল্প সময়েই পকেট ভরে ফেললাম। এরকম করতে করতে এগিয়ে গেলাম এই এতো এতো পাথর বয়ে আনা সেই পাহাড়ী নদীর দিকে। ওমা! এযে আরেক সৌন্দর্য্য! এতো টলটলে পানি হয়? কাঁচের মতো স্বচ্ছ! নদীর উপর থেকে শুরু করে নীচ পর্যন্ত সবই দেখা যাচ্ছে। নদীর পাদদেশেও কোন মাটি চোখে পড়েনা। সেখানেও রংবেরঙের পাথর। হাত দিয়ে দেখলাম বরফের মত ঠান্ডা পানি। ছোট বেলায় একটা উপন্যাস পড়েছিলাম, 'বরফ গলা নদী'। এই কি সেই বরফ গলা নদী? এতো ঠান্ডায় নামলে তো কষ্ট হবে। তারপরেও কি প্রলোভন ঐ নদীর। নেমে গেলাম দল বেধে। সাঁতরে সাঁতরে ক্লান্ত হয়ে উঠে এলাম। দাঁড়িয়ে গেলাম ঝকঝকে রোদে। যেন কোন পবিত্র প্রবাহিণীতে গা ধুয়ে সোনা রোদ মেখে নিচ্ছি সর্বাঙ্গে।
দুপুরের লাঞ্চ সেরে বিকেলের মিষ্টি আলোয় আরেকবার গেলাম ডাউকি নদীর পাথর ভরা তীরে হাটতে। আর সে সময়েই আমাদের ভ্রমণসঙ্গী এক সিলেটি বন্ধু বললো ঐ অপরূপা বরফ শীতল রহস্যময় নদীর এক ভৌতিক গল্প।
কয়েক বছর আগে, আমাদেরই মতো স্কুল ছাত্রদের একটা দল এসেছিলো এই জাফলং-এ পিকনিক করতে। তারাও সারাদিন থাকার পর সন্ধ্যার দিকে যখন ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন হঠাৎ আবিস্কার করলো যে তাদের মধ্য থেকে একজন নেই। খোঁজ পড়ে গেলো চারদিকে, না কোথাও পাওয়া গেলনা। সে কি নদীতে নেমেছিলো? বন্ধুরা বললো হ্যাঁ নেমেছিলো। তারপর? তারপর আর জানিনা। শহরে ফিরে গেলো দলটি, বাবা-মাকে খবর দেয়া হলো। আরেক দফা খোঁজ, নদীতে জাল ফেলা সবই হলো। কিন্তু না পাওয়া গেল না ওকে। নদীতে ডুবে গেছে, বা নদী ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, এমন ধারণাই হলো সবার। শোকার্ত বাবা-মা কি তা মানে? তারা এক হুজুরের শরণাপন্ন হলেন। তিনি সব শুনলেন তারপর গম্ভীর মুখে বললেন, "আজ আমি জাফলং যাবো, রাতে ডাউকি নদীর তীরে থাকবো। তবে আমার সাথে একটি সাহসী ছেলে দিতে হবে।" ভুট্টো নামে ওদের বাড়ীতে পনের-ষোল বছরের একটি কাজের ছেলে ছিলো। তাকে দেয়া হলো সাথে।
রাতে ডাউকি নদীর তীরে হুজুর তাবু গাড়লেন। শুরুতেই ভুট্টোকে বললেন, "চুপচাপ থাকবি, কোন কথা বলবি না।" তারপর হুজুর সারা রাত দোয়া পড়েন আর একটা করে চিঠি ফেলেন নদীতে। ভুট্টো নীরবে বসে বসে দেখে হুজুরের কাজ। রাত যত বাড়ে অন্ধকার তত গাঢ় হয় আর প্রকৃতির নীরবতাও বাড়তে থাকে এক সময় কাক-পক্ষীও নিঝুম হয়ে পড়ে। থিক সেসময় অন্ধকারের বুক চিরে বরফ শীতল নদী থেকে উঠে আসে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা। দুজনই খোঁড়া। তারপর হুজুরের সাথে তাদের কথপোকথন শুরু হয়। এই ভয়াবহ দৃশ্য ভুট্টো আর স্থীর থাকতে পারেনা। ভয়ে তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে ওঠে। ভয় কাটানোর জন্য হঠাৎ সে হুজুরকে প্রশ্ন করে বসে, "হুজুর কয়টা বাজে?" হঠাৎ যেন শান্তি আলোচনা ভঙ্গ হলো। হুজুর রাগত দৃষ্টিতে তাকালেন ভুট্টোর দিকে (উনার দৃষ্টিতে লেখা,"তোকে না কথা বলতে নিষেধ করেছি!")। নদী থেকে উঠে আসা পুরুষটি রাগত দৃষ্টিতে তাকালো হুজুরের দিকে, ভয়ংকর স্বরে বললো, "কাল পাবি।"
তারপরের ঘটনা দুঃখজনক। পরদিন নদীর বুকে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটির মৃতদেহ ভেসে উঠেছিলো।
(ঘটনাটি আমি কেবলই শুনেছি। এর সত্যতা সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই।)
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৫৮
রমিত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩১
লিখেছেন বলেছেন: শেরজা তপনের ব্লগ থেকে আপনার ব্লগে আসলাম। ভাল লাগল
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
রমিত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯
পথহারা নাবিক বলেছেন: ঘটনা সত্য! আমার কাছে খবর আছে!!