নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
স্মৃতিতে ইউক্রেন, স্মৃতিতে রাশিয়া - ২
----------------------------------------- ড. রমিত আজাদ
Ukraine in memories, Russia in memories – 2
---------------------------------------------Dr. Ramit Azad
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
আমি এই সিরিজটি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যেকার চলমান পরিস্থিতি ও তার প্রেক্ষাপটের উপর এবং সেইসাথে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। তবে পাঠকদের অনেকেই এটাকে একটি ভ্রমণকাহিনী ভেবে স্বাগত জানিয়েছেন ও একটি চমৎকার ভ্রমণকাহিনী তারা আশা করেছেন। পাঠকদের আশা ও চাহিদার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি দুটোই করবো। অর্থাৎ একদিকে ভ্রমণকাহিনী ও আরেকদিকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি-প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করবো।
আমার এক প্যালেস্টাইনি বন্ধু একটা বাস্তব কৌতুক বলেছিলেন। তিনি যখন উচ্চশিক্ষার উদ্ধেশ্যে প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়নে এলেন, তাকে মস্কো থেকে পাঠানো হলো আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। যাওয়ার উপায় - ট্রেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন আকৃতির দিক থেকে ইউরোপ মহাদেশের চাইতে বড় এবং এশিয়া মহাদেশের অর্ধেক। মস্কো থেকে বাকু দীর্ঘ পথ, কয়েকদিনের জার্নি। সেই ট্রেনে তার পরিচয় হলো কয়েকজন সাধারণ আজারবাইজানিদের সাথে। তরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হচ্ছিলেন। আমার প্যালেস্টাইনি বন্ধু রাইদকে তারা জিজ্ঞাসা করলো, "ভাই তুমি কোথাকার?" রাইদ উত্তর দিলো, "আমার বাড়ী প্যালেস্টাইন।" একজন বৃদ্ধ লজ্জা পয়ে বললো, "ভাইরে মাফ করো, প্যালেস্টাইন আমি চিনিনা, এতো চেনা কি সম্ভব বলো? সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক বড় দেশ!" সেই বৃদ্ধ ভেবেছিলো প্যালেস্টাইন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরেই কোন অঞ্চল হবে। রাইদের এই ঘটনা শুনে আমরা বেজায় হেসেছিলাম। তবে বাস্তবতা আসলে ঐই ছিলো। সোভিয়েত ইউনিয়ন আকৃতিতে এতোই বিশাল ছিলো এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণে এতই বিচিত্র ও বিস্তৃত ছিলো যে তার সবটা চেনা-জানা খুবই দুরুহ ছিলো।
ক্রিমিয়া নামটি সোভিয়েতে পাড়ি জমানোর আগে বই-পত্রে কয়েকবার পড়েছিলাম সত্য তবে হৃদয়ঙ্গম করিনি। নামটি প্রথম স্পষ্ট মনে গেথেছিলো একটি ঘটনায়। আমি তখন ইউক্রেনের খারকোভ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সদ্য ভর্তি হয়ে মাস দুয়েক কাটিয়েছি। একদিন ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছি এমন সময় আমার ক্লাসের আরো কয়েকজন এলো। এক টেবিলে বসলাম আমরা। যাদের চিনিনা তাদের সাথে পরিচিত হলাম। সুদর্শন ও ভদ্র একটি ছেলে তার নাম বললো, সের্গেই। কোন কারণে ছেলেটিকে আমার ভালো লাগলো। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, “তোমার দেশের বাড়ী কোথায়?" ইউনিভার্সিটিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা এসে পড়ালেখা করতো। তাছাড়া ওকে আমি ডরমিটরিতে দেখেছিলাম, অর্থাৎ ও খারকোভ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা নয়। তাই প্রশ্নটি করা। ও আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, "তুমি কি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূগোল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখো?" আমি বললাম, "কিছু জ্ঞান রাখি, তবে ভালো জ্ঞান রাখিনা। তোমাদের কাছ থেকে শিখবো।" ও বলো, "আমার বাড়ী ক্রীম (ক্রিমিয়ার রুশ নাম)।"
আমিঃ কোথায় এটা?
সের্গেই আমাকে ম্যাপ এঁকে বুঝিয়ে দিলো। বুঝলাম কৃষ্ণ সাগরের পারে। এই কৃষ্ণ সাগরের পাশ দিয়ে আমি জর্জিয়া গিয়েছিলাম, এবং সাগরের কালো জল ও তীরের সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তারপরেই চট করে একটা প্রশ্ন করলাম, "তুমি কি ইউক্রেনীয় না রাশান?"
এই প্রশ্নটি টেবিলে বসা সবাইকেই বেশ বিব্রত করলো। প্রশ্নটি করার পর আমি নিজেও একটু বিব্রত হলাম। কিন্তু আমার কৌতুহল ছিলো।
সের্গেইঃ আমি ইউক্রেনীয়ও না আবার রাশানও না।
আমিঃ এটা আবার কিরকম?
আশপাশ থেকে দু'একজন মন্তব্য করতে শুরু করলো, 'এটা কি কথা', 'সের্গেই তুই ইউক্রেনীয়', 'না সের্গেই তুই রাশান'।
সের্গেইঃ আমি ক্রীমচানীন।
আমিঃ ক্রীমচানীন কি?
সের্গেইঃ ক্রীম-এর নাগরীক।
আমিঃ কিন্তু ক্রীম তো ইউক্রেনের অংশ।
সের্গেই রহস্যময় হাসি হাসলো। তার সেই হাসির রহস্য অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলাম।
১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো কম্যুনিস্ট মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে। তার আগে ছিলো রুশ সাম্রাজ্য। রুশ আর্মীর প্রতাপ আর বাহুবল ব্যবহার করে জোরপূর্বক প্রতিবেশী দেশগুলোকে দখল করে রুশ জার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুই মহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশাল ও শক্তিধর রুশ সাম্রাজ্য। যার প্রতীক ছিলো একটি দুই মাথাওয়ালা ঈগল - অর্থ ঈগলটির একমাথা তাকিয়ে আছে ইউরোপের দিকে আরেক মাথা তাকিয়ে আছে এশিয়ার দিকে। এই রুশ সাম্রাজ্যই কনভার্ট হয়ে হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সাথে কিছু যোগ হয়েছিলো, তবে বিয়োগ হয়েছে খুব কম। সোভিয়েতের রাজনৈতিক চড়াই-উৎড়াইয়ের পর একসময় আর সেখানে জাতিগত বিভেদ বলে কিছু ছিলোনা। সংঘাতের তো প্রশ্নই ওঠেনা। বরং যেটা বলা হতো তা হলো, 'আমাদের দেশে রয়েছে 'দ্রুঝবা নারোদোভ' যার অর্থ 'জাতিতে জাতিতে সৌহার্দ'। এর আইকন হিসাবে মস্কো শহরে নির্মিত হয়েছিলো 'মৈত্রী ফোয়ারা' - পনেরটি রিপাবলিককে প্রতিনিধিত্বকারী পনেরটি সোনালী নারীমূর্তি তাদের যার যার জাতীয় পোষাকে অপূর্ব নাচের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে আছে, আর তাদের ঘিরে অবিরাম ঝরছে ফোয়ারার বারিধারা। ১৯৮৬-৮৭-র দিকে আমরা বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় একটি জায়গার নাম প্রায়ই পেতে থাকলাম তা হলো গোরনি কারাবাখ (পত্রিকায় লিখতো নাগোর্নি কারাবাখ) এর সাথে এলো আরো দুটি রিপাবলিকের নাম আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। পত্র-পত্রিকার সংবাদ থেকে বুঝলাম, জাতিগত কিছু দ্বন্দ্ব-সংঘাত সেখানে চলছে। সেসময় আমাদের ধারণা ছিলো, কঠোর আইন-শৃঙ্খলার সোভিয়েতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নেই, মারামারি লাঠি-সোটা দিয়েই হচ্ছে।
জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসিতে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর লক্ষ্য করেছিলাম। শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটা জায়গায় কিছু বৃদ্ধা মহিলা কালো পোষাক পড়ে বসে থাকে তাদের চারপাশে জ্বলে মোমবাতি আর সাজানো আছে কিছু ক্রুশ ও কিছু মানুষের ছবি। বিষয়টি জানার আগ্রহ থেকে একে ওকে প্রশ্ন করে জেনেছিলাম যে, ১৯৮৯ সালের ৯ই এপ্রিল একটা ট্রাজেডি ঘটে গিয়েছিলো রাজধানী তিবিলিসিতে। (আমি জর্জিয়ার মাটিতে পা রাখার কয়েকমাস আগে)। বেশ কিছুদিন যাবৎ এন্টি-সোভিয়েত মনোভাব দানা বাধতে শুরু করেছিলো জর্জিয়ায়। অবশেষে ঐদিন একটি বিশাল বড় এন্টি-সোভিয়েত ডেমোনস্ট্রেশন হয় রাজধানীতে। সহসাই সেই ডেমোনস্ট্রেশনের উপর হামলা চালায় সোভিয়েত আর্মী। অপারেশনের নির্দেশ দিয়েছিলেন মিলিটারি স্ট্রংম্যান জেনারেল ইগর রোদিয়নোভ (পরবর্তিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী)। এই ঘটনায় ২০ জন নিহত হয় ও কয়েকশত আহত হয়।
রুশ ভাষা কিছুটা রপ্ত করার পর জর্জিয়ানদের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম যে, তাদের মধ্যে এন্টি-সোভিয়েত ও এন্টি-রুশ মনোভাব রয়েছে এবং ৯ই এপ্রিলের ম্যাসাকারের পর এই মনোভাব জোড়ালো হয়েছে। জর্জিয়ানদের প্রশ্ন করেছিলাম, “কারা এই আক্রমণ করেছিলো?” ওরা বলেছিলো, "রুশরা আক্রমণ করেছিলো।' আমরা বলেছিলাম, "ওটাতো সোভিয়েত আর্মী ছিলো, রুশদের কথা বলছো কেন?" ওরা উত্তর দিয়েছিলো, "নামেই সোভিয়েত আর্মী, ওর মূল চালিকা শক্তি রুশদের হাতে।" বুঝলাম। জাতিগত সংঘাতের সুত্রপাত এভাবেই ঘটেছে। পরবর্তিতে ইউক্রেনের মাটিতে নেমেও লক্ষ্য করলাম রুশী ও ইউক্রেনীয়দের মধ্যে জাতিগত বিরোধ শুরু হবে হচ্ছে করছে। আমার মনে তখন একটি প্রশ্ন ঘুরছিলো - এই জাতিগত বিরোধ কি মাত্র শুরু হলো, নাকি এই বিরোধ আগে থেকেই ছিলো, কেবল কিছু সময় সুপ্ত হয়ে ছিলো?
(চলবে)
১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
রমিত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩১
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ভাল লাগছে, চলুক...
১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৫৩
ধানের চাষী বলেছেন: চালিয়ে যান, অনেক কিছু জানতে পারলাম
১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:০৬
আরাফআহনাফ বলেছেন: ভালো লেগেছে.....চলুক......।
১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬
আলী খান বলেছেন: Очень хороший...
১৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১৩
রমিত বলেছেন: স্পাসিবা।
৬| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১১
কালীদাস বলেছেন: এই সিরিজটা কি কন্টিনিউ করা যায়? খুবই ইন্টারেস্টিং স্টার্টিং ছিল পোস্টদুটোর। ইস্টার্ণ ইউরোপে এখনও রাশিয়ান কালচারের রিফ্লেকশন ব্যাপক, আর ইউক্রেইনের লোকজনকে আমি আসলেই বুঝি না!
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫
রমিত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ,
আমি চেষ্টা করবো কন্টিনিউ করতে।
অনেক লেখা আর অনেক কাজ জমে আছে। সময় করে উঠতে পারিনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৪
তূর্য হাসান বলেছেন: সিরিজটা নিয়ে খুব আগ্রহ বোধ করছি। মনে হচ্ছে অজানা অনেক কিছু জানতে পারবো। ভালো থাকুন।