নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে, একটি নক্ষত্রের ঝরে পড়া, শোকে মূহ্যমান জাতি – পর্ব ৯
------------------------------------------------ ডঃ রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
http://www.somewhereinblog.net/blog/ramit/29991782
স্বাধীনতার পরপর বেশ কিছু সংগঠনের ফর্মেশন হয় বাংলাদেশে এর পিছনে আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরিন দুই প্রভাবই ছিলো। এমন দুইটি ফর্মেশন হলো রাজনৈতিক দল জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল) ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা (কেউ বলে গোপন সৈনিক সংস্থা)। একটি ছিলো সামরিক বাহিনীর বাইরে আর অপরটি সামরিক বাহিনীর ভিতরে। একটি প্রকাশ্য, অপরটি গোপন। এই দুটি সংগঠনের মধ্যে আদর্শগত কিছু মিল ছিলো। এরা উভয়েই ধনীক শ্রেনীর বিরোধী ছিলো ও সামাজিক অবস্থানে যারা নীচে তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলতো। পরবর্তিতে বহুল পরিচিত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল আবু তাহের চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে জাসদে যোগ দিলে এই দুই সংগঠনের মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপিত হয়। এরপর জাসদ নতুন রাষ্ট্রের সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সামরিক বাহিনীতে রাজনীতির বীজ বপন করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে অফিসার বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি ও আর্মি এ্যাক্ট বিরোধী কর্মকান্ড পৃষ্ঠপোষকতা করতে শুরু করে জাসদ। যার ফল পরবর্তিতে হয়ে ওঠে ভয়াবহ।
কর্নেল তাহের ও জাসদ ৭ই নভেম্বর জেনারেল জিয়া মুক্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো। সাধারণ সৈনিকদের বাধভাঙ্গা ভালোবাসা বন্দী জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করে আনলে সেই দলে ভীড়ে যায় জাসদের গণবাহিনী। তারা কৃতিত্বের দাবী করতে শুরু করে। কিন্তু জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করার জন্য অগ্রনী ভূমিকা রাখা টু-ফিল্ডের সুবেদার আনিস ও মেজর মহিউদ্দিন এবং ৪ ই বেংগল রেজিমেন্ট কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল আমিনুল হক বীরবিক্রম, অ্যাডজুটেন্ট মেজর মুনীর সহ অন্যান্যদের শক্ত অবস্থান তাদেরকে ম্লান করে দেয়। তাছাড়া জাসদের যে দুরভিসন্ধী ছিলো, জেনারেল জিয়াকে সেনানিবাসের বাইরে এলিফেন্ট রোডের বাসায় ও শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া। তাও হতে দেননি তারা। চৌকষ মেধাবী ও দেশপ্রেমিক অফিসার জেনারেল জিয়াউর রহমানও নিজ বিবেচনায় বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা করা যেমন এথিকাল হবেনা তেমনি তা মাতৃভূমির জন্যও বিপদ বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই তিনিও তার অবস্থানে অনড় হন। ফলে জাসদ নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট বুঝতে পারলো যে, খেলা তাদের হাতের বাইরে চলে গেলো।
এরপর তারা আসল রূপে আবির্ভুত হয়। এডলফ হিটলার কম্যুনিস্টদের সম্পর্কে বলেছিলেন, "সত্যি বলতে কি মার্কসীয় মতবাদের জন্মই হয়েছিলো গণতন্ত্রের গর্ভে। গণতন্ত্র হলো মার্কসীয় জীবানু জন্মানোর এক উর্বর ক্ষেত্রবিশেষ, যাতে এই জীবানু অতি দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে।" "মার্কসীয় মতবাদ প্রকৃতির সভ্রান্ত আদর্শগুলো থেকে লোকগুলোকে বর্জন করে।" "কম্যুনিস্টরা নানা কথাবলে সাধারণ মানুষের মন জয় করে। এবং তাদেরকে পুঁজি করে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর তারা স্বরূপে আবির্ভুত হয়। দেশব্যাপি হরর নামিয়ে আনে।"
তাহের ও জাসদ নেতৃবৃন্দ যখন বুঝতে পারলো যে বল তাদের কোর্টে আসছে না। ক্রোধে অন্ধ হয়ে তারা তাদের স্বরূপ দেখাতে শুরু করলো। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর সদস্যদের উসকে দেয়। শুরু হয় এক রক্তাত অধ্যয়।
৭ ই নভেম্বর সকালে ক্যান্টনমেন্টে যে পরিবেশ বিদ্যমান ছিল বিকালে তা সম্পুর্ন ভিন্ন আকার ধারন করলো । সর্বত্র একটি শ্লোগানের প্রতিধ্বনী শুনতে পাওয়া গেলো, 'সৈনিক সৈনিক ভাই ভাই অফিসারদের রক্ত চাই।' অফিসাররা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লো । তারা ধীরেধীরে সরে পড়তে লাগল । মনে হল যে কোন মুহুর্তে তাহেরের অফিসার নিধন অভিযান শুরু হবে।
অতি দ্রুত অফিসাররা রিকশা করে, গাড়িতে করে যার যার পরিবারকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছিলো। সন্ধ্যার মধ্যেই COD ভেঙ্গে পুরো ক্যান্টনমেন্ট অস্ত্রে অস্ত্রে সয়লাব , তবে সবার হাতে সে অস্ত্র পৌঁছায়নি।
অফিসাররা নিরস্ত্র , তাহেরের খ্যাপাটে বিপ্লবিরা সশস্ত্র.। কর্নেল হামিদ (দাবারু রাণী হামিদের স্বামী ও ফুটবলার কায়সার হামিদের পিতা) খুনের নেশায় পাগল হওয়া তথাকথিত বিপ্লবীদের বন্দুকের মুখে পড়েছিলেন, তবে সব সেপাই এই বিপথগামী রক্তপিপাসুদের দলে ছিলো না। আসলে বেশিরভাগই ছিলো লয়াল। এমন একজন ছিলেন তার ব্যাটম্যান সমুজ আলি এবং আরো ৪ জন অনুগত সেপাই।
সেরাতে বেঘোরে প্রান হারালেন ডেন্টাল সার্জন মেজর করিম, মিসেস মুজিব, মিসেস ওসমান [সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর স্ত্রী], মেজর আজিম, টেলিভিশন অফিসার মুনিরুজ্জামান।
ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন আনোয়ার, লেঃ সিকান্দার, লেঃ মুস্তাফিজ। নারী সহ সর্বমোট বারোজন নিরাপরাধ অফিসার নিহত হন ঐ বিভিষীকাময় রাতে। এমন ঘটনা কস্মিনকালেও ঘটেনি এদেশে মাটিতে।
কেন ঘটলো এই ঘটনা? কাদের এত আক্রোশ ছিলো আমাদের নিরাপরাধ অফিসারদের প্রতি? নাকি আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দিতেই এটি ছিলো একটি গভীর ষড়যন্ত্র?
(চলবে)
সাহায্যকারী সূত্রঃ
১। মিশ্র কথন - মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক।
২। দাসত্ব-এর ব্লগ
৩। তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা - কর্নেল এম এ হামিদ।
৪। সাতই নভেম্বর, জেনারেল জিয়া ও কর্নেল তাহের : নির্মল সেন
৫। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন আর্টিকেল
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
রমিত বলেছেন: নিরিহ নিরাপরাধ অফিসার হত্যার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবেই গণমাধ্যমে এসেছে। সেই সময় আমি ঢাকায়ই ছিলাম, খুব ছোট ছিলাম তাই স্পষ্টভাবে মনে না আসলেও কিছু-কিছু আমার নিজেরই মনে আছে। তবে সারা দেশে বিষয়টি জানাজানি হতে সময় লেগেছে। কারণ তখন প্রচার মাধ্যম দুর্বল ও মন্থর ছিলো। সবচাইতে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম টেলিভিশন তখন সম্প্রচার হতো কেবল বড় কয়েকটি শহরে। তার উপর সেই দরিদ্র বাংলাদেশে টেলিভিশন ছিলোই হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ীতে। অর্থাৎ আমি টিভি সংবাদে যা দেখেছি, আমার ঠিক পাশের বাড়ীর ছেলেটিই তা দেখেনি। সংবাদপত্রই তখন ছিলো ভরসা, তাও ঢাকার বাইরে বড় শহরে সংবাদপত্র পৌছাতে সময় লাগতো। আর গ্রামে-গঞ্জে তো পৌছাতো কয়েকদিন পরে। তদুপরি সামরিক বাহিনীর ভিতরের সংবাদ তখন খুব গোপন রাখার চেষ্টা করা হতো। পুরো বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে জানা গিয়েছে কয়েক বছর পরে। কর্নেল হামিদের লেখা বইয়ে ও আরো কয়েকটি বইয়ে।
সুনাম-দুর্নাম বিষয়টি আপেক্ষিক। বামপন্থীরা মনে করে সমাজে উঁচু অবস্থানে থাকা লোকজন খারাপ তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ আছে। তাই অনেকে বিষয়টিকে সাধুবাদই জানিয়েছে। তাদের কাছে কর্নেল তাহের হিরো।
আবার মানবতাবাদীরা ভিন্নমত পোষণ করে। আবার বিচারের কাঠগড়ায় হত্যা হত্যাই। তার বিচার ঐভাবেই হয়।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১
আজকের বাকের ভাই বলেছেন: কর্ণেল তাহের বা ৭ই নভেম্বর নিয়ে লেখা বই বা লিংক দিলে উপকৃত হব
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১
রমিত বলেছেন: ১। মিশ্র কথন - মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক।
২। দাসত্ব-এর ব্লগ
৩। তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা - কর্নেল এম এ হামিদ।
৪। সাতই নভেম্বর, জেনারেল জিয়া ও কর্নেল তাহের : নির্মল সেন
কর্নেল শাফায়াত জামিলের লেখা বইও রয়েছে।
এছাড়া সেই সময়ের কোন কোন সেনা কর্মকর্তা মাঝে মাঝে আর্টিকেল লেখেন পত্র-পত্রিকায়
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
আজকের বাকের ভাই বলেছেন: তারপরও কর্ণেল তাহেরের এতো সুনাম কেন?
তার এই গণহত্যার বিষয় কী মিডিয়ায় আসেনি?