নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
হিপোক্রেটিস ও তাঁর শপথ:
হিপোক্রেটিস (প্রাচীন গ্রিক Ἱπποκράτης হিপ্পোক্রাত্যাস্ খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬০ - খ্রীষ্টপূর্ব ৩৭০) প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসাবিদ। তিনি পেরিক্লেসের সময়কালীন একজন প্রাজ্ঞ। তিনিই প্রথম রোগীদেরকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন। তার সময়কালে গ্রিসের সাধারণ লোকেরা বিশ্বাস করত রোগ দেবতাদের অভিশাপ বা অপদেবতাদের কারনে হয়। কিন্তু তিনি জোর গলায় বলেন রোগ প্রাকৃতিক ঘটনার অঙ্গ আর প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে। আর তাই হিপক্রেটিসকে বলা হয় পাশ্চাত্য 'চিকিৎসাবিদ্যার জনক'। চিকিৎসাক্ষেত্রে হিপক্রেটিসের একটি অবদান হল পথ্য নির্দেশে নিয়ম শৃঙ্খলা। তিনি বলেছেন যে পথ্য নির্দেশে রোগীর বয়স, রোগীর স্বাস্থ্য এবং ঋতুর কথা বিবেচনা করতে হবে। তার জ্ঞানের ভিত্তিতে চিকিৎসাশাস্ত্রকে পৃথক ডিসিপ্লিন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ইতিপূর্বে অলৌকিকতা ও দর্শনের অন্তর্গত করে রাখা হয়েছিলো। ধারণা করা হয়, হিপোক্রেটিস খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে গ্রিসের 'কস' নামে এক ছোট দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নব্বই বছর বেঁচেছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি সম্ভবত মিশর সফর করেছিলেন, যেখানে তাঁর পরিচয় ঘটে মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির সাথে। তারপর তিনি গড়ে তোলেন তার নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি। তিনি পরবর্তীতে যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই তার চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। হিপক্রেটিসের রচনার মধ্যে অনেকগুলো ছোট বাক্য 'হিপোক্রেটিসের বচন' হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। যেমনঃ
"জীবন সংক্ষিপ্ত কিন্ত কলা দীর্ঘস্থায়ী।"
"একজনের জন্য যা অমৃত অন্যের জন্য তাই বিষ।"
"যারা স্বভাবত মেদবহুল তারা ক্ষীনদেহী ব্যাক্তির চেয়ে স্বল্পায়ু হতে পারে।"
"শীতকালে গ্রীষ্মের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন হয়।"
"ক্ষীনদেহ ব্যাক্তিদের খাদ্যের প্রয়োজন কম, কিন্তু তা স্নেহজাতীয় হওয়া চাই। মেদবহুল ব্যাক্তির খাদ্যের প্রয়োজন বেশি, কিন্তু তাতে স্নেহবস্তু কম থাকা ভাল।"
এই হিপোক্রেটিসের নামেই রয়েছে 'হিপোক্রেটিসের শপথ' যা পৃথিবীর সব চিকিৎসকরাই নিয়ে থাকেন।
হিপোক্রেটিসের শপথনামা (Hippocratic Oath)
(একজন চিকিৎসকের কর্তব্য কর্ম):
একজন চিকিৎসকের জীবনের উদ্দেশ্য, দায়িত্ব, কর্তব্য, নৈতিক আইন বা আদর্শ ও সঠিক আচার-ব্যবহার কেমন হতে হবে, এ বিষয়ে তিনি চিকিৎসক সমাজের জন্যে একটা শপথনামা প্রণয়ন করেন। এটা চিকিৎসা জগতে বিশ্ববিখ্যাত 'হিপোক্রেটিসের শপথনামা(Hippocratic Oath)' নামে পরিচিত। প্রায় দু' হাজার বছর ধরে এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে পরিচালিত করেছে। এটা আদিমকাল থেকে আজ পর্যন্ত চিকিৎসা বিদ্যা বিষয়ক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের ডিগ্রীপ্রাপ্তি অনুষ্ঠানে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে উচ্চারিত ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এ শপথনামার নয়টা অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ--------
(১) আমি নিরাময়কারী অ্যাপোলোর নামে, স্বাস্থ্যের নামে ও আরোগ্যকারী সকল ক্ষমতার নামে শপথ করছি। সকল দেব-দেবীকে সাক্ষী রেখে শপথ করছি যে, আমি এ শপথ ও প্রতিজ্ঞাবানী আমার সকল সামর্থ্য ও বিচারক্ষমতা প্রয়োগ করে রক্ষা করতে প্রয়াস পাব।
(২) আমি আমার শাস্ত্রের শিক্ষককে (গুরুকে) সব ধরনের সম্মান প্রদর্শন করব, যেমন আমার পিতামাতাকে করে থাকি। আমি আমার জীবনকে তাঁর সাথে ভাগ করে নেব এবং তাঁর সব দেনা শোধ করব। আমি তাঁর সন্তানদেরকে আমার ভাই বলে মনে করব এবং যদি তাঁরা ইচ্ছা করেন, তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে এ শাস্ত্র শিক্ষা দেব। আমি আমার গুরুর কাছে যে সব বিধান, বক্তৃতা ও অন্যান্য শিক্ষা লাভ করেছি, তা সব আমার পুত্রদেরকে দান করব। আর দান করব গুরুর পুত্রদেরকে, আর যারা যথাযথভাবে শিক্ষানবিশি গ্রহন করবে ও শপথ করবে তাদেরকে। এছাড়া আমি আর কাউকে তা দান করব না।
(৩) আমি আমার সামর্থ্য ও বিচার ক্ষমতার সব শক্তি রোগীদের সাহায্য করার ব্যাপারে প্রয়োগ করব। আমি আমার জ্ঞান প্রয়োগ করে কারও কোন ক্ষতিসাধন করব না।
(৪) কেউ চাইলেও আমি কাউকে প্রাণনাশক ওষুধ দেব না। আমি ও ধরনের কোন সংবাদ পরিবেশন করব না। আমি কোন মহিলাকে গর্ভপাত করানোর উপায় জানাব না।
(৫) আমি আমার জীবনে ও পেশায় চরিত্রবান ও ধর্মপরায়ণ হব।
(৬) আমি আমার শাস্ত্রের বাইরে অন্য কোন পেশা থেকে বিরত থাকব।
(৭) আমি যখন কোন বাড়িতে যাব, তখন কেবলমাত্র কোন রোগীকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাব এবং কখনই কারও কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যাব না। আমি আমার সুযোগ-সুবিধাকে নারী বা পুরুষ কারও সাথেই যৌন-সংযোগ ঘটানোর কাজে ব্যবহার করব না, হোক সে ব্যক্তি স্বাধীন কিংবা ক্রীতদাস।
(৮) আমি পেশাগত বা ব্যক্তিগতভাবে যাই দেখি বা শুনি না কেন, উক্ত বিষয় প্রকাশ করব না; আমি উহার সব গোপন রাখব এবং কাউকে জানাব না।
(৯) আমি যদি এ শপথবাণী মেনে চলি এবং এর ব্যতিক্রম ঘটতে না দেই, তবে আমি আশা করব, আমি জীবনে ও পেশায় যেন উন্নতি লাভ করি এবং সবকালের সবার মধ্যে সুনাম অর্জন করতে পারি। আমি যদি এ শপথ না মানি ও লংঘন করি, তবে আমার পরিণাম যেন অন্য রকম হয়।
উল্লেখ্য যে একদল পন্ডিত ধারনা করেন হিপোক্রেটিসের এই শপথ হিপোক্রেটিস নিজেই অথবা তাঁর কোন শিষ্য লিখেছেন, আবার আরেকদল পন্ডিত মনে করেন যে, হিপোক্রেটিসের জন্মের বহু আগেই পিথাগোরিয়ানরাই এই শপথবাক্য লেখেন এবং হিপোক্রেটিসের জন্মের আগে থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শপথ বাক্য পাঠ করানোর নিয়ম প্রচলিত ছিল। এখানে আরও উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৪৮ সালে হিপোক্রেটিসের শপথনামা অবলম্বনে চিকিৎসকদের একটা বিশ্বব্যাপী শপথনামা তৈরি করা হয়। এ নতুন World Medical Association (WMA) কর্তৃক তৈরী এই শপথনামার নাম 'জেনেভা ঘোষণা' (Declaration of Geneva)।
তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন আর্টিকেল।
©somewhere in net ltd.