নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ পর্ব ৪

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১৭



কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ পর্ব ৪
---------- ড. রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
(কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ - পর্ব ১, ২, ৩)

আগেই বলেছি স্কুলে কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ তেমন কিছুই হতো না। আমাদের পাড়ায় আমরা শিশুরা আনন্দের জন্য যেটা করতাম তা হলো স্কুল থেকে আসার পর পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলতাম। শীতকালে সামান্য ক্রিকেট খেলা হতো। এক সিজনে ঘুড়ি উড়াতাম। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়াবান্ধা, কাবাডি খেলতাম। একবার এক বাংলা জানা বিদেশীকে কাবাডি খেলাটা বুঝাচ্ছিলাম তিনি কিছুদূর শুনে আমাকে প্রশ্ন করলেন, "বুঝলাম মাঠের দুইপাশে দুইদল থাকে, তারপর একদল ছুটে আসে, কিন্তু বলটা কোথায় থাকে?" তার প্রশ্ন শুনে আমি তো হাসতে হাসতে শেষ। কিন্তু পরে আমার মনেও প্রশ্ন জাগলো দাঁড়িয়াবান্ধা, কাবাডি, কুতকুত, ডাঙ্গুলি এইসব ইনস্ট্রুমেন্ট বিহীন খেলা কি করে প্রচলিত হলো আমাদের দেশে? পরে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালাম নিজের মনে, খুব সম্ভবত ইংরেজ আমলে নিজ ভূমে আমরা এমনই দরিদ্র হয়ে পড়েছিলাম যে সামান্য বল বা সরঞ্জাম কেনার টাকাও ছিলোনা, তাই বাধ্য হয়েই সরঞ্জামবিহীন এইসব খেলা প্রচলিত হয়। যাহোক ছুটকা-ছাটকা যা আমরা পাড়ার মধ্যে খেলতাম সেইসব খেলার মানও খুব ভালো ছিলো না, নিজেরা নিজেরা খেলতাম আর খেলা নিয়ে মনোমালিন্য হয়ে মাঝে মাঝে বন্ধুরা বন্ধুরা মারামারি করতাম, কথা বলা বন্ধ করে দিতাম, ইত্যাদি। শিশুদের দৈহিক-মানসিক গঠনে সৃষ্টিশীল কোন উদ্যোগ নিতে পাড়ার মুরুব্বীদেরকেও দেখিনি।

তখন ১৯৭৯ সালে ঘোষিত হলো বিশ্ব শিশুবর্ষ, আর তার পরপরই সরকারী উদ্যোগে ১৯৮০ সালে ঘোষিত হলো বাংলাদেশ শিশুবর্ষ। সারাদেশে নানা আয়োজন নানা তোড়জোড়, সবাই একটা উৎসাহ পেলো। আমাদের পাড়ার বয়োজ্যোষ্ঠ বড় ভাইয়েরা (যারা তখন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়তেন) সিদ্ধান্ত নিলেন একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার। (তার কিছুকাল আগে আমাদের পাশের পাড়ায় মুরুব্বীদের উদ্যোগে একটা ক্লাব হয়েছিলো, কিন্তু তা টেকেনি বেশীদিন, নিজেরা নিজেরা কলহ করে ওটা আবার ভেঙেও দেয়।) তবে আমাদের পাড়ার ভাইয়েরা ইনডিপেনডেন্ট কোন ক্লাব না করে কোন সংগঠনের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। করা হলোও তাই, 'চাঁদের হাট' নামে একটা শিশু সংগঠন ছিলো তখন, তারই শাখা খোলা হলো। আমরা শিশুরা মহা উৎসাহে তার মেম্বার হলাম, মুরুব্বীরা চাঁদা দিয়ে সহযোগীতা করলেন। এবার সাংগঠনিকভাবে কাজ শুরু হলো। আমাদের ফুটবল খেলা শুরু হলো বিকালে টাইম মাফিক, বড় ভাইয়েরা এলেন প্রশিক্ষণ দিতে। তারপর শুরু হলো ড্রীল, এক বড় ভাই মহা উৎসাহে আমাদের ড্রীল শেখাতেন, আরো শিখানোর চেষ্টা করতেন শৃঙ্খলা। ভুল করলে তিনি খুব ধমক-ধামক দিতেন আমাদের। জীবনে প্রথম ড্রীল ওখানেই শিখেছিলাম।

একটা ওয়াল ম্যাগাজিন করা হলো। নাম দেয়া হলো 'ঢাক-ঢোল'। পাড়ার যে যা পারে লেখা দিলো, সেই লেখা লিখে পাড়ার এক দেয়ালে টাঙানো হলো। অভিভাবকরা দেখে বললেন, 'হু, সুন্দর হয়েছে, সাবাশ!' পাড়ার কয়েকটি পুকুরে কচুরীপানা জমে মশার উৎকৃষ্ট খামার তৈরী হয়েছিলো, সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়ে সেই পুকুরগুলো সাফ করে ফেললাম। মশাদের উৎপাত কমে গেলো।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে মাঠে ফিল্ম দেখানোরও আয়োজন করা হলো। রাতের বেলা প্রজেক্টর এনে পর্দা টাঙিয়ে ফিল্ম দেখানো হলো। খোলা মাঠে মাটিতে বিছানো ত্রিপলে বসে আমরা মহাআনন্দে সেই ফিল্ম দেখলাম।

এরপর সিদ্ধান্ত হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের। শুরু হলো প্র‍্যাকটিস, গান-নাচ-কবিতা যে যা পারে। একটা খুব পজিটিভ জিনিস লক্ষ্য করলাম, বড়দের মধ্যে যাদের মাস্তানী টেন্ডেসী ছিলো তারাও ওসব ছেড়ে দিয়ে ভদ্র হয়ে ক্লাবের কাজে লেগে গেলো। তারাও সংস্কৃতিমনা হয়ে গেলেন। নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠান শুরু হলো, আমাদের সে কি উৎসাহ! অতিথী হয়ে এলেন শিশুদের অতি প্রিয় ব্যাক্তি রোকনুজ্জামান দাদা ভাই। সেই সময় গুণী লোকজনের সম্মান ছিলো, তাঁদেরকেই প্রধান বা বিশেষ অতিথী করা হতো। অনুষ্ঠানের কোরাস গানটি এখনো মনে পড়ে, 'তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিব রে'। সেই গান আমাদের রক্তে আগুন জ্বালাতে শুরু করে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করেই পারছি না। আমাদের ক্লাবের মূল উদ্যোক্তা ও পরিচালক ছিলেন আবুল ভাই (ছদ্মনাম), কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন আহবায়ক হিসাবে নাম ঘোষণা করা হলো গণি ভাইয়ের। গণি ভাই-ই মঞ্চে বক্তৃতা দিলেন ও প্রধান অতিথির পাশে বসলেন। আমি অবাক হয়ে স্টেজের পাশে দাঁড়ানো আবুল ভাইয়ের দিকে তাকালাম, "আপনি যাবেন না?" উনি আমার দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বললেন, "নাহ! আমাকে কি মানায়?" পরবর্তিতে বুঝতে পেরেছিলাম, আবুল ভাই লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন না, পরিচয় দেয়ার মত অত ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন না। পক্ষান্তরে গণি ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন, সুবক্তা ছিলেন, স্মার্ট ছিলেন। প্রধান অতিথী যেন দেখে চমৎকৃত হয় এমন একজনকেই সবাই মিলে আহবায়ক হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন (আজকাল যেখানে দেখি মেধাবীদের হটিয়ে দিয়ে ফাউলরাই সংগঠনের চেয়ারে বসে)।

এই ঘটনাগুলো আমার ও আমার বন্ধুদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিলো এবং স্পোর্টস ও সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলো। আমরা আরও উৎসাহ নিয়ে শুরু করলাম ফুটবল ও ড্রীল প্র‍্যাকটিস, সংস্কৃতি চর্চা।
বেঁচে থাক কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ।

(চলবে)

(ছবি আকাশজাল থেকে নেয়া)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫

অশ্রুকারিগর বলেছেন: আমি ৯০ এর দশকের ছেলে। কালকে এক বন্ধুর সাথে এমনি কথা হচ্ছিলো বাতসরিক ছুটিছাটা নিয়ে। ও বলে বসলো স্কুলে আমি কিছুদিন এক্সট্রা ছুটি কাটাতাম। আমি অবাক হলাম কিভাবে ? উত্তর দিলোঃ বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ৩ দিন এবং স্পোর্টস প্রতিযোগিতার ৩ দিন আমি স্কুলে যেতাম না। আমি উত্তর দিলাম আমিতো কোনদিন ভাবতেও পারিনি এই দিনগুলো ফাঁকি দিব!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭

রমিত বলেছেন: জ্বী, ভালো বলেছেন। দিন দিন কেবল পিছনেই যাচ্ছি
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একটা খুব পজিটিভ জিনিস লক্ষ্য করলাম, বড়দের মধ্যে যাদের মাস্তানী টেন্ডেসী ছিলো তারাও ওসব ছেড়ে দিয়ে ভদ্র হয়ে ক্লাবের কাজে লেগে গেলো। তারাও সংস্কৃতিমনা হয়ে গেলেন।

এভাবেইতো বদলায়! অথচ আমরা উল্টোটাই করছি!

অলস মস্তিস্ক শয়তানের আড্ডা! ফণে জেনারেশন ফল করছে ব্যাপক ভাবে! হিন্দি আগ্রাসন তাদের মগজকে এক হাইব্রিড আরোপিত কালচারে আষ্টেপৃষ্টৈ বেধে ফেলছে!! বাংলার কালচার কই?????

কালচার কি আপনার ছাত্ররা বলবে কি করে! যেখানে আমাদের এত এত টিভি চ্যানেল মালিক বা তাদের পোষা বুদ্ধিজীবরিাই বোঝে না!
নইলে বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানের দিকে তাকান ! দৈনতা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭

রমিত বলেছেন: সবই ঠিক বলেছেন ভৃগু ভাই। আফসোস ও দীর্ঘশ্বাসটা ওখানেই।
কষ্ট করে এত দীর্ঘ ও সুন্দর মন্তব্য দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪

গরল বলেছেন: মহল্লায় ক্লাব কালচার উঠেই গেছে বলতে হয় কারণ খেলার মাঠ বলতে শহরে কিছু নাই। এমনকি স্কুলগুলোতেও আজকাল স্কাউটিং, বিএনসিসি বা রেডক্রিসেন্ট কার্য্যক্রম উঠে গেছে কারন স্কুল গুলোতেো মাঠ নাই। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল শিক্ষার্থীরা আজকাল সারাদিনই ব্যাস্ত থাকে ক্লাস আর কোচিং নিয়ে, এমনকি সেটা ক্লাস ওয়ান থেকেই। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। এছাড়া বাচ্চাদের উদ্ভাবনি ক্ষমতা বিকশিত হচ্ছে না যেটার প্রভাব পড়বে উন্নয়ণ ও গবেষণায়। প্রাথমিক পর্যায়ে পড়াশুনার চেয়েও বেশী জরুরী হচ্ছে লাইফ স্কীল শেখা সেই সাথে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা। লাইফ স্কীল বলতে সামাজিক আচার ব্যাবহার, খাওয়া-দাওয়া, রাস্তা-ঘাটে চলাচল, বিভিন্ন টুলস ব্যাবহার করতে শেখা যেমন চামচ, ছুরী, কাচি, স্ক্রু ড্রাইভার, লাইটার, টর্চ ইত্যাদি। জাপানে দেখেছি যে ক্লাস ওয়ান-টুএর বাচ্চাদের সপ্তাহে একদিন ক্লাসরুম পরিষ্কার পরিছন্ন করা ও মাসে একদিন টয়লেট পরিষ্কার করতে হয়। আমাদের ভবিষ্যত যে কি হবে কে জানে।

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮

রমিত বলেছেন: জ্বী, আপনি ঠিকই বলেছেন। সুন্দর বিশ্লেষণ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.