নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের বিপরীতে না, সময়ের সাথে...

মোহাম্মেদ মুহসীন

বানিয়ে বানিয়ে আমি গল্প লিখতে পারিনা, আমি গল্পকার নই!!!

মোহাম্মেদ মুহসীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"রজনী\'নিরা" - অধ্যায় ১

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫


২০০৪ সালের শুরুর দিকের কথা, আমার একমাত্র অপ্রকাশিত উপন্যাস লেখা শেষ করার পরে, একদিন হটাৎ ইচ্ছে হলো আমার জীবনের সবচেয়ে উপভোগ্য রাতগুলোকে নিয়ে একটা বই লিখবো, বইটার নাম হবে, “রজনী’নিরা”। কেননা প্রায় প্রতিটা মানুষের জীবনেই কিছুনা কিছু রাত আসে যা কখনোই ভুলে যাবার নয়, আমারো ছিল সেরকম কিছু স্বপ্নিল রাত।

বইটার নাম রজনী’নিরা দেয়ার পেছনে আমার যুক্তি ছিল, রাত গুলো হচ্ছে নারি, তাই রজনীর সাথে নিরা লাগিয়েছি কেননা অনেক গুলো রাতের কাহিনী লিখবো। যতদুর মনে পরে একটা অধ্যায় লিখেছিলামও, এরপর আর এগোয়নি, আমিই পিছিয়ে গেলাম জীবনের স্রোতের সাথে সাঁতরে না পেরে।

২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে কুমিল্লা থেকে আমার এক বন্ধুর চিঠি পেলাম ওর বিয়ে আর আমাকে যেতেই হবে। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, কেননা আমার বয়সী একটা ছেলের বিয়ে, তাও আবার পরিবারের ইচ্ছেতে এমনকি যাকে সে পছন্দ করে তার সাথেই। ওর দুই বোনের ননদ “জোহরা” আর “জেসমিন” কে পছন্দ করতো, কিন্তু ওর ঘরের সবাই মেনে নিয়েছে জোহরাকে কেননা সে ধার্মিক ছিল, আর জেসমিন ছিল আধুনিক, মাসুমের বিয়েতেই আমি প্রথম দেখেছি কোন নববধু বোরখা পরেছা। যাইহোকওর মেজো ভাইয়ের কাছে ফোন করে জানলাম যা সত্যি ওর বিয়ে, সে সময় সবে মোবাইল ফোন সবাই চিনতে শুরু করেছে, আমাদের মহল্লায় হাসিম ভাইয়ের মোবাইল এর দোকান ছিল, এক মিনিট কথা বলতে ১০ টাকা, আর কল আসলে ৫ টাকা। পরে জেনেছি ওর এত তড়িঘড়ি করে বিয়ে দেয়ার জন্যে আমিই দায়ী।

আমার এই বন্ধুটির নাম “মাসুম বিল্লাহ”, ওর সাথে পরিচয় পর্বটা ছিল আরেক রোমাঞ্চকর ঘটনা। ঐ বছরেরই এপ্রিলের দিকে এক বিকেল বেলায় ওর সাথে পরিচয় চাঁদপুরের বড়স্টেশানে তিন নদীর মোহনায়, মাসুম আর ওর এক বন্ধু সোহেল দাখিল পরিক্ষা দিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল চাঁদপুরে। পরে সোহেলের সাথেও অনেক ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল, আমি ওর বাড়িতে গিয়ে ওর মাকে মা বলেছি, ওর বোনেরা আমাকে চিঠি দিত, ওর বাড়ি ছিল কুমিল্লা বড়ুরা হয়ে আড্ডা পোম্বাইশ গ্রামে, আড্ডা বাজার থেকে আমি আর সোহেল বাজার করেছি, কাঁঠাল কিনেছি।

যারা চাঁদপুরে গেছেন তারা জানেন যে পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মিলন-মেলায় অনেকে বেড়াতে যায়, ওখানেই চাঁদপুর রেইলস্টেশান আর লঞ্চঘাট। ওখানে নৌকা করে বেড়ানো যায়, এক ঘণ্টার দাম ছিল ৪০ টাকার মত, ঐ সময়ে আমাদের জন্যে অনেক টাকা, আমি আর আমার এক বন্ধু রুবেল ওখানেই বসেছিলাম বড় বড় ব্লকের উপর, তো দেখলাম মাসুম আর সোহেল নৌকা করে বেড়াতে চায় কিন্তু দাম অনেক বেশী দেখে সাহস করছেনা, তাই আমি বললাম চলেন এক সাথে নৌকা নেই দাম ভাগ করে দেব। ওদের কাছে ভাল লাগলো আমার প্রস্তাব, আমরা চার জনে নৌকা চড়লাম। ওদের কাছে সেই যুগের সেলুলয়েড ফিল্মের ক্যামেরা ছিল, আমাদের ছবি তুলল, পরে আমাকে ছবি দিয়েছিল কিন্তু কালের আবর্তে সব হাড়িয়ে গেছে। কি সময় ছিল সেটা, এখনো স্পষ্ট মনে পরে, আমার গায়ে একটা খয়েরি রঙ্গের মোটা জর্জেট কাপরের শার্ট ছিল, তখন ছেলেদের মোটা জর্জেটের শার্ট নতুন নতুন বের হচ্ছে, এর আগে জর্জেট শুধু মেয়েদের ছিল। পড়নে ছিল মখমলের প্যান্ট, তখন আমার মাথায় সবসময় কাল রঙ্গয়ের একটা জিন্না টুপি থাকতো, আমি সেটাকে সোজা না পরে ডানে-বামে বাঁকা করে পরতাম, গলায় একটা লাভ লকেট ছিল, যেটা খোলা যেত, আর ভিতরে দুই পাশে দুইটা ছবি রাখা যেত, আমি এক পাশে আমার ছবি রেখেছিলাম, আরেকটা পাশ খালি ছিল।

আমার সেই ছবি পাঠানোর জন্যে মাসুম চিঠি দিয়েছিল, আমি তার ঐ চিঠির উত্তরে লিখেছিলাম, আমার সেই চিঠি ওর পড়ার টেবিলের উপরে পেয়ে ওর দুলাভাই পড়েছিল, আমার লেখা সেই প্রেমময় চিঠি পরে তিনি উল্টা ভেবে বন্ধুর বিয়ের আয়োজন করেছিলে।

মাসুমদের বাড়ি ছিল কুমিল্লা চান্দিনা থেকে কাছিশাইর হয়ে ধামতি আলিয়া মাদ্রাসার ওখানে, ওদের পরিবারটা ছিল আগা-গোরা ধার্মিক, ওর বাবা ধামতি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম, ওর বড় ভাই মাওলানা আক্তারুজ্জামান। ওর এত বিবরণ লিখতেছি কেননা অনেক দিন ওর সাথে যোগাযোগ নাই, কেউ যদি লেখা পড়ে চিনে ফেলে তাই। আমি ওর বাড়িতে এক সপ্তাহ ছিলাম, কিন্তু কোন দিন ওদের পরিবারের কোন মহিলাকে দেখিনাই, ঘরে ঢুকার আগে দরজায় গিয়ে ও বলতো আমরা আসতেছি, বাস পুরা ঘর ফাঁকা হয়ে যেত, আমরা সোজা ওর রুমে গিয়ে বসতাম, আবার সেখান থেকেই বের হতাম একই ভাবে।

যেদিন ওদের বাড়িতে গেছি, সেই রাতটা এবং ওর বিয়ের রাতটা আমার কাছে এখনো ছবির মত লাগে, আমি, মাসুম এবং সোহেল তিনজনে মিলে প্রায় সারারাত কাটিয়েছি ধামতি মাদ্রাসার দিঘীর ঘাটে বসে, অনেক বড় দিঘীর শান বাঁধানো ঘাট, একেকটা সিরি ছিল অনেক চওড়া, অনেক অবাক হয়েছিলাম দেখে সেই রাতে আকাশে অনেক বড় একটা চাঁদ ছিল। তিন বন্ধু মিলে সারারাত গল্পকরে কাটিয়েছি, মৃদু বাতাশে দিঘীর পরিষ্কার জলের নিচু নিচু ঢেউ গুলোতে চাঁদের আলোর বর্ণচ্ছটা, কেমন যে স্বর্গীয় লাগছিল, লিখে বুঝাতে পারবোনা।

আর ওর বিয়ের রাতটা অন্যরকম ছিল, কেননা সেই রাতে প্রথম আমি মাসুমের তালত বোন “জেসমিনের” সাথে কথা বলেছিলাম, ওরাও বিয়ের দাওয়াতে আসছিল, কথা মানে ওকে বন্ধুত্বের আহ্বান করেছিলাম। ঐ গোরা পরিবারের কোন মেয়ের সাথে কথা বলা, তাও রাতের বেলায় ঐ বয়সে যে কি পরিমান রোমাঞ্চকর লিখে বা বলে বুঝানোর ক্ষমতা কোন লেখকের নাই। মাসুমের সাথে জেসমিনের ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, মাসুমের কাছেই জেসমিনের কথা শুনে শুনে ওর প্রতি আমার খুব ভাল লাগা তৈরি হয়ে যায়, কেননা এই গোরা পরিবারের মধ্যে একমাত্র জেসমিন ছিল আধুনিক, সে বোরখা পরতো মুখ খোলা রেখে, ওর চেহারাটা এখন মনে নাই, কিন্তু এই টুকু মনে আছে সেই রাতে ওকে চাঁদের মতই লেগেছিল। মাসুম কে দিয়ে ওকে বন্ধুত্তের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সে বলেছে সরাসরি বলতে। সেই রাতেই ছিল প্রথম এবং শেষ কথা জেসমিনের সাথে, পরের দিন চলে আসছিলাম, মাসুম কথা বলার ব্যবস্থা করে দিইয়েছিল, ওদের রান্না ঘরের সামনে, মাসুম আর সোহেল দুইদিকে পাহারায় আমি ওর সাথে কথা বলছি। কি কথা বলেছি, কিছুই বলতে পারিনাই, আমার গলার লকেট টা খুলে ওর হাতে দিয়ে বলেছিলাম, “একপাশে আমার ছবি আছে অন্য পাশে তোমার একটা লাগিয়ে নিও যদি বন্ধু ভাবো”।

এইটুকুই কথা হয়েছিল জেসমিনের সাথে, এর পরে মাসুম আমি আর সোহেল মিলে গিয়েছিলাম বিলের মধ্যে একজনের নতুন বাঁধানো বাঁধে, বাঁধের উপর দাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি অথৈ পানি আর পানি, চাঁদের আলোয় চিক চিক করছে, চিৎকার করে বলেছিলাম, হে আল্লাহ এত সুখ কেন জীবনে? সদ্য যৌবনে পা দেয়া একটা ছেলের সেই অনুভুতি ব্যক্ত করার ভাষা কারো জানা নেই। পরে আমাকে চিঠি দিয়েছিল জেসমিন, সেই চিঠিতে লিখেছিল “প্রেম করতে চাইতে যদি তাহলে আমার জন্যে সহজ হত, কিন্তু চেয়েচো বন্ধুত্বের অধিকার, এটা যে অনেক কঠিন কাজ”।

ওর সাথে আমার যোগাযোগ ছিল অনেক দিন, এরপর মাঝে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, এর অনেকদিন পরে মাসুমের কাছে জানতে পারি জেসমিনের বিয়ে হয়েগেছে। মাসুম দুঃখ প্রকাশ করেছিল, আমিই বরং ওকে বুজিয়েছি যে ওর আর আমার বন্ধুত্ব ছিল প্রেম না। মাসুমের বিয়ের পরের দিন চলে এসেছি ওদের বাড়ি থেকে, আসার সময় জেসমিনের কাছ থেকে বিদায় নেইনাই, সে দাড়িয়ে ছিল মাসুমদের ঘরের সামনের আম গাছের নিছে, আমি একবার পিছনে ফিরে তাকাই নাই, মাসুম আর সোহেল খুব অবাক হয়েছিল সেদিন, কিন্তু আমি জানি তাকালেই জেসমিন আমার আদ্র চোখ দেখে ফেলতো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার কোন উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৫৯

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: নাহ, সেটা হয়ে উঠে নাই ।

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

প্রামানিক বলেছেন: উপন্যাসের কাহিনীর মতই লাগল। ধন্যবাদ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৫৯

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: হ্যাঁ, জীবনের কিছু কিছু কাহিনী এমনি হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.