নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের বিপরীতে না, সময়ের সাথে...

মোহাম্মেদ মুহসীন

বানিয়ে বানিয়ে আমি গল্প লিখতে পারিনা, আমি গল্পকার নই!!!

মোহাম্মেদ মুহসীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন আধা-সবজান্তা এবং MBA এর এসাইনমেন্ট

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮


এই মাসের ৩ তারিখে বিকেল বেলা হটাৎ এক বড় ভাইয়ের ফোন, কথায় কথায় আমারে জিগায় মহসিন থ্রি ইডিয়ট মুভিটা দেখছ নি? আমি কইলাম হ ভাই দেখছি, তো ভাইয়ের মুভির কথা জিগাস করাতে আমি বিচলিত হইনাই, কারন প্রায় সময় আমরা মুভি নিয়ে আলাপ করি, ওনাকে নতুন মুভির গান লোড করে দেই। তো ভাই কইলো, থ্রি ইডিয়ট মুভিতে দেখছনি, একজনে পড়ালেখা করে আর সার্টিফিকেট নেয় আরেকজন, আমি কইলাম হ ভাই। এবার ভাই কয় তাইলে ঐ রকম হবে, আমি MBA এর এডমিশান নিছি, মাঝে মাঝে ক্লাসে যাই, এখন তুমি আমার ফাইনাল এসাইনমেন্টটা করে দেও, আমার হাতে অত সময় নাই। আমিও কইলাম কোন ব্যপার না ভাই, কইরা দিমু। তখন কে জানতো যে এটা রিয়েল লাইফ, কোন মুভি না।

ওনাকে হ্যাঁ বলার পরেই উনি খুব খুশি মনে আমাকে সব সহযোগী ডকুমেন্টস পাঠিয়ে দিয়েছে ইমেইলে। স্যাম্পল এসাইন্মেন্ট দেখেই আমার মাতা যে একটা ঘুরান্তি মারসে, মাগো ২/৩ দিন আমার হুস ছিলনা।

বড় ভাই আমার খুব কাছের মানুষ, আমরা একসাথে চাকরি করি প্রায় একই পজিশানে। মানুষ হিসেবেও ভাইয়ের সাথে তুলনা দেয়ার মত কাউরে এখনো চোখে পরেনাই। একটা ব্যপার বাদ দিলে ওনাকে ফেরেশতা বলা যায়। কোন ব্যাপারে ভাই কখনো আমাদের না করেনা, একবার বেচারা আমার জন্য ১০০০ কিমি গাড়ি চালাইছে। আর ফাইনান্সিয়াল হেল্পতো আছেই। ভাইয়ের ব্যাপারে বলতে গেলে আমার দিন শেষ হয়ে রাত চলে আসবে, তবে তার কাহিনী শেষ হবেনা। সর্বোপরি আমি আবার ভাইয়ের টেকনিক্যাল এডভাইসর!
যেকোন টেকনিক্যাল কাজে আমার ডাক পরে আগে, যেমন একটা নতুন মোবাইল কিনবে, বা গাড়ি কিনতে যাবে (ভাই আবার মাঝে মাঝেই পুরান গাড়ি কিনে মিলমত বেঁচে দেয়, অবশ্য লভ্যাংশ থেকে আমাকেও কিছু দিতে ভুল করেনা, এখনো অনার হাতে ৩টা গাড়ি, সবগুলা বড় বড়; SEQUOIA, PRADO, LAND CRUISER), লং ড্রাইভে যাওয়ার সময়ও ওনার প্রথম পছন্দ আমি। একবার কয় মহসিন চল দুবাই থেকে গিয়ে গাড়ির পার্টস কিনে আনুম, তুই দুবাইর ভিসা লাগা। আমিও একপায়ে রেডি। মোটামুটি সব কাজেই আমি হাফ এক্সপার্ট তাই হয়ত ভাই ভাবছে MBA এর এসাইনমেন্ট করাটা বুঝি আমার বাম হাতের খেল।

আমিও ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিয়ে ঢিমে তালে আগাচ্ছিলাম, এই রবিবারে অনুভব করলাম পেপার জমা দেয়ার শেষ দিন হচ্ছে ২১ তারিখ মানে বৃহস্পতিবার, আমিত কাজ ১৫% করেছি মাত্র, কাজ আগামু কেমতে আমার মত ৮ কেলাশ ফেল কেউ যদি MBA এর এসাইন মেন্ট নিয়ে বসে তাও আবার কোন ক্লাসটাস না করেই, থিসিস কিসের উপর করুম সেই প্রশ্ন বুঝতেই আমার ৩ দিন গেছে। হার্ভার্ড স্টাইলে রেফারেন্স কেমনে দেয় সেটা বুঝতে বুঝতে গেছে ৩ দিন, ভাই আমার উপর ভরসা করে আছে, আমাকে ফোন দিয়ে খবরও নেয়নাই, জানে সময়মত আমি কাজ শেষ করবো। অনেক কষ্টে প্রায় ৪০% কাজ করেছি, সারাক্ষন আমার মাথায় শুধু এসব ঘুরে, আমার প্রোডাক্ট পটেনশিয়াল কি কি, সেলস স্ট্রেটেজি কি কি হবে ? ইয়ারলি রেভেনিউ কত সেট করুম।

মাঝে একদিন কথায় কথায় এক বন্ধুকে বলছিলাম এই কাহিনী, বন্ধু আমারে কয় তুই বামন হয়ে চাঁদের দিয়ে হাত দিছস এখন বুঝ থেলা। চাঁদ হলেও হইত আমার কাছে মনে হচ্ছে সূর্যের দিকে হাত বাড়াইছি। কথায় কথায় আরেক বান্দবিরে বললাম, সে আবার ল'কলেজে পড়ে শেষ সেমিস্টারে আছে, ওদের এমন এসাইনমেন্ট করতে হয়, সেও একই কথা বলল। আমি দুই জনরেই ঝাড়ি মেরে বলছি আরে ব্যাপার না, করে ফেলব, কিন্তু আমারত এখন প্রান যায় যায় অবস্থা। রবি-সোম-মঙ্গল, তিন দিন বস অফিসে আমার নড়াচড়া করার সময় নাই, ভাইয়ের কাজে হাত দিমু কখন? অন্যদিকে ২০ তারিখ হচ্ছে এমপ্লয়িদের টাইম-কিপিঙয়ের কাটঅফ ডেট। সবার ওটি, একচুয়াল, প্রাইওর মান্থ এডজাস্টমেন্ট, এরপর রিভিউ করা, কেননা আমি ঠিকমত সব ডাটা সিস্টেমে না দিলে ওদের পুরা বেতন আসবেনা। অফিস শেষে বাসায় গেলেত এমন আলসেমি ধরে খাইতেও মন চায়না। তারউপর ম্যক গাইভার সিরিজ লোড দিয়ে রাখছি, পুরা ৩৭০ পর্ব ওইগুলা কবে দেখে শেষ করুম।

তাই গতকাল বস ছিলনা দেখে, আমি সব কাজ একদিকে রেখে ভাইয়ের এসাইনমেন্ট নিয়ে বসেছি, না বসে উপায় নাই আজকেই শেষ করতে হবে। কি যে ভেজাল, ডাটা একটা পাইতো অন্যটা পাইনা, আবার কিছু কিছু পাই সেগুলা দেখি ফ্রি দেবেনা। এভাবে ত ভ করতে করতে কোন রকম গোঁজামিল দিয়ে পেপার রেডি করেছি, দেখি তখন রাত ১২টা বাজে। আমার দুপুর - বিকেল - ডিনার - জিম কোন দিক দিয়ে গেছে টের পাইনাই। ওনাকে মেইলে ডকুমেন্ট পাঠিয়ে বাসায় গিয়ে বিছানায় শুয়েছি, মনে হচ্ছিল আমার সারা শরীরের কলকব্জা সব জং ধরে গেছে। প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় লাগছে ঘুম আসতে যেখানে আমি ৫ মিনিটে ঘুমিয়ে যাওয়ার মানুষ। ঘুমানোর আগেও মাথায় ঐসব ঘুরতেছিল তক্ষনি মনে পরছে আমি প্রথম বছরের সেলস টার্গেট মিলিয়নের জায়গাতে বিলয়ন লিখে দিছি।

যা হবার হইছে, কাল সকালে গিয়ে ঠিক করবো, সকাল সকাল কি আর জমা দেবে নাকি?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫০

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: মজা পেলাম পড়ে।
আপনি দেখি বিরাট এক্সপার্ট।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২০

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: হাহাহা, আসলেই নিজেকে এক্সপার্ট মনে হচ্ছে

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: যাক, উনার উপকার করলে নিজেকে সুখী মনে হবে। তৃপ্তি পাবেন আশা করি...

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৪

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: অবশ্যই, এবং বড় ভাই আমারে এমনি ছারবেনা হয়তো

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫১

সোহানী বলেছেন: পাগল নাকি??? দেশে পড়ে নাকি বিদেশে?? দেশে হইলে গোজামিলে কোনই সমস্যা নাই কিন্তু যদি বাইরের ইউনিতে পড়ে তাইলে কিন্তু ভাই খপর আছে উনার...........। টিচাররা একবার চোখ বুলাইয়া ধইরা ফেলে...........

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৪

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: জী উনি বিদেশে পড়ে, জেনেভা উনিতে। তবে আমার আশা ওনার নাম্বার অনেক ভাল আসবে।

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১৪

মানিজার বলেছেন: সক্কাল সক্কাল জমা দিলে কি হইব রে মনু । :-P

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৫

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: নাহ, সকাল সকাল জমা দেয়নাই, ঐটা ঠিক করে দিছি

৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩০

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: অনেক কষ্ট করেছেন । বুঝা যাচ্ছে । ওনার কাজে লাগলেই হয় ।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬

মোহাম্মেদ মুহসীন বলেছেন: সত্যি আমার অনেক পরিশ্রম হয়েছে, এত এত ওয়েব সাইট ঘাটতে হয়েছে। আশাকরি ওনার কাজে আসবে ভালভাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.