নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচল কথন

কাজী সোহেল রানা

১৯৮৭

কাজী সোহেল রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাসড়কে মূল্যহীন প্রাণ

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মিলিয়ে গত ১০ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অর্থাৎ গন্তব্যে বেরিয়ে দিনে গড়ে প্রাণ গেছে ২৪ জনের। এ সময় আহত হয়েছে আরও কয়েক শ জন। ঈদযাত্রায় মহাসড়কে প্রাণহানির এই সংখ্যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এবার সড়কপথে মূল ঈদযাত্রা শুরু হয় ১৫ জুলাই থেকে। হতাহতের এই হিসাব ১৫ জুলাই থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের। এই ১০ দিনে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পৌনে ২০০ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বড় দুর্ঘটনাগুলোর ধরন বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মূলত বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন যানের আধিক্য এবং মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের অনুপ্রবেশ এসব দুর্ঘটনার কারণ। আর এসব নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার কারণ হলো পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অতি মুনাফার লোভ এবং পরিবহন ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি।
ঈদে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার মধ্যে ছিল এক বাসের সঙ্গে অন্য বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে যাওয়া এবং ছোট যানবাহনকে চাপা দেওয়া। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কেই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে চারটি দুর্ঘটনায় ৩১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনাতেই মারা গেছে ১৭ জন। আর গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার আট আরোহী মারা গেছে। গতকাল শুক্রবার সারা দেশে মারা গেছে ১৭ জন। এর মধ্যে গাজীপুর ও মাদারীপুরে পাঁচজন করে ১০ জন নিহত হয়।
সড়ক দুর্ঘটনার সরকারি তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব পুলিশের। ২০০৬ সাল থেকে গত মে মাস পর্যন্ত সংস্থাটির করা হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে আটজন প্রাণ হারিয়েছে। আর ঈদকে কেন্দ্র করে গত ১০ দিনে এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। অবশ্য স্বাভাবিক সময়েও সরকারি এই হিসাবের চেয়ে বেসরকারি হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানির সংখ্যা বেশি থাকে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অন্তত দুই গুণ বেড়ে যায়। গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০০৯ সালের ঈদুল ফিতরের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রায় ১৭৫ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এরপর সংখ্যাটা কিছুটা কমে আসে। তবে এবার তা সব হিসাব ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার আগে-পরের সাত দিনের দুর্ঘটনার হিসাব সংরক্ষণ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির হিসাবে, ওই দুই ঈদের ১৪ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল ২৮৩ জন; দিনে গড়ে ২০ জন করে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেশের যে যোগাযোগ অবকাঠামো আছে, তা ঈদের মতো বড় উৎসবের বিপুল মানুষের চাপ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আবার অধিক মুনাফার লোভে পরিবহন চালক-মালিকেরা তখন অতিরিক্ত ট্রিপ দেয়। ফলে চালক এবং পরিবহন—কারোরই বিশ্রাম মেলে না। ফিটনেসবিহীন যানবাহন তো আছেই, ভালো যানবাহনও বিরামহীন চলাচলের কারণে বিগড়ে যায়। আর চালকের মধ্যে বেপরোয়া গতি তোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ঈদে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির এগুলোই মূল কারণ।
এবারের ঈদের সড়ক দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সামছুল হক বলেন, সড়কের ওপরে বিটুমিনের যে কালো আস্তর দেওয়া হয়, তা বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। অধিক গতির কারণে যানবাহনের চাকা তা কামড়ে ধরে রাখতে পারে না। ফলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তিনি বলেন, এ জন্য বৃষ্টিতে যানবাহনের গতি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নামিয়ে চালাতে হয়। ঈদে যেসব যানবাহন সড়ক থেকে খাদে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে, ধারণা করা যায় পিচ্ছিল সড়কে অধিক গতির কারণে তা হয়েছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদে যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি পরিবহন কোম্পানি বাসের যাত্রা (ট্রিপ) ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। স্বাভাবিক সময়ের মতো মেরামতের জন্যও বিরতি দেওয়া হয় না। ফলে বাস ও চালক কারোরই বিশ্রাম থাকে না। বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে নগর পরিবহনের প্রায় পাঁচ হাজার লক্কড়–ঝক্কড় বাস মহাসড়কে নেমে পড়ে। এসব গাড়ির চালকদের অনেকেরই দূরপাল্লার বাস চালানোর অভিজ্ঞতা থাকে না বা থাকলেও তা যৎসামান্য।
মালিক-শ্রমিক সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে বড় বড় পরিবহন কোম্পানির একজন চালক মাসে ১৫ থেকে ২০ দিন বাস চালানোর সুযোগ পান। ক্লান্তি ও অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত চালক রাখা হয়। আর ছোট কোম্পানি নগর পরিবহনের বাসে বিকল্প চালক কম থাকে। ফলে এ সময়ে চালকদের টানা গাড়ি চালাতে হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মুনাফার লোভে বিরামহীন বাস চালানোর বিষয়টি পুরো সত্য নয়। আর এর জন্যই সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াও ঠিক নয়। তবে চালকদের মধ্যে গতি চড়ানোর একটা নেশা আছে। আর সড়কে প্রচুর ধীরগতির যানবাহন চলার কারণে গতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।
ফিটনেসবিহীন বাস চলাচলের বিষয়ে ফারুক তালুকদার বলেন, ঈদের দুই দিন আগে নগরের কিছু বাস মহাসড়কে নেমে সমস্যা তৈরি করে। মানুষের চাহিদা পূরণের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এটা হচ্ছে।

কার্টেসি: দৈনিক প্রথম আলে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.