নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচল কথন

কাজী সোহেল রানা

১৯৮৭

কাজী সোহেল রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছেঁড়া নোটের আত্মকাহিনী

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫১

চলতে ফিরতে লেনদেনের ক্ষেত্র্রে অনেকসময় ছেঁড়া এবং প্রায় অচল নোট (টাকা) আমাদের হস্তগত হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এ অধমের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়। তবে সাধারণত ২, ৫, ১০ টাকার নোট হলে সেটা দু’একজনের কাছে চালাবার চেষ্টা করে ব্যর্ হলে ফেলে দিই। কিন্তু সেটা একটু বেশি অংকের হলেতো আর ফেলে দেওয়া যায় না। সম্প্রতি ১০০ টাকার এমনই একটা ছেঁড়া নোট আমার হস্তগত হয়।

নোটটার একটা পাশ থেকে পুরো ছেড়া ছিল এবং টেপ দিয়ে সেটা জুড়ে দেয়া। সেটাকে আমি আর চালানোর চেষ্টা না করে ব্যাংকে গেলাম পাল্টে আনতে। প্রথমে গেলাম অগ্রণী ব্যাংকের রামপুরা শাখায়। বরাবরের মতই প্রায় লোকশুণ্য। নগদ গ্রহণ লেখা এক কাউন্টারে নোটটা দিয়ে বললাম এটা পাল্টে দিন। ব্যাংকের কর্কর্ মহোদয় তথন মনের সুখে কান চুলকাচ্ছিলেন। সুতরাং আমার মত আপদ এ সময় হাজির হওয়ায় বিরক্তই হলেন। নোটটা হাতে না নিয়েই বললেন, এখানে ছেঁড়া টাকা পাল্টানো হয় না। সোনালী ব্যাংকে যান। এরপর আমি তাকে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্শনা বলতে চেষ্টা করলেও তিনি শুনতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলেন না। টাকাটা আমার হাতে ছুঁড়ে দিয়ে আবার কান চুলকাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। দেখে মনে হলো, এ ব্যাংকে ওনার কান চুলকানোই বোধহয় একমাত্র দায়িত্ব।

তবে আমিও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। এবার গেলাম পূবালী ব্যাংকের রামপুরা শাখায়। এখানে অবশ্য ইউটিলিটি বিল প্রদানকারীদের বিশাল একটা ভীড় লক্ষ্য করা গেল। তাদেরকে ঠেলে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে ১০০ টাকার ছেঁড়া নোটটা বের করে বললাম, আমাকে এ নোটটা পরিবর্ন করে দিন। এ কথা শুরে তিনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি ব্যাংক কেলেঙ্কারির কোন বড় হোতা। অনেকদিন থেকে আমাকে খুঁজছেন। এরপর আমার না তাকিয়েই বললেন, দেখেন না এখন কত ভীড়। এখন এসব করতে আসেন কোন আক্কেলে? আপনারাতো মনে করেন আমরা ব্যাংকের লোক খালি ঘুমাই। আর কোন কাজ নেই। কাজের ঠেলাই সকাল থেকে এককাট চা ও খেতে পারিনি। আর উনি এখন আসছেন ছেঁড়া টাকা পাল্টাতে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। যে অবস্থা হয়েছে তাতে এরপর আবার কি হবে কে জানে। তাই নিজের সম্মান নিজেই নিয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসলাম।

তবে ১০০ টাকা লস হবে এ চিন্তাটা রয়েই গেল। তাই এবার গেলাম রুপালী ব্যাংকের মালিবাগ শাখায়। শাখাটা ছোট, মানুষও কম। আর গ্রাহক তখন একজনও নেই। সরাসরি ক্যাশ কাউন্টারে গেলাম। এক নারী কর্কর্ বসে আছেন। পত্রিকা পড়ছিলেন। আমাকে দেখে পত্রিকা থেকে মুখ তুলে বললেন, কি চান? ছেঁড়া নোটটা তার সামনে ধরে বললাম এটা পাল্টাতে চাই। নোটটা হাতে নিয়ে দেখে বললেন, এটাতো পাল্টানো সম্ভব না। তখন আমি বললাম, কেন? আমিতো জানি কোন নোটের এক-তৃতীয়াংশ থাকলে সেটা পাল্টে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম। ‘আপনিতো দেখছি নিয়মও জানেন। তার জন্য আরেক নিয়ম আছে, জানেন? দরখাস্ত দিতে হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা পাল্টে দিলে তখনই দিতে পারি।’

আমি বললাম, তাহলে দেন সেভাবে। দরখাস্তের কাগজ দেন।

এইবার যে তিনি বিরক্ত হয়েছেন সেটা স্পষ্টত বুঝিয়ে দিলেন। কিছুসময় বিরক্তি প্রকাশ করলেন, এদিক ওদিক তাকালেন। তারপর ১০০ টাকার একটা পুরান নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা নিয়ে যান।

টাকাটা মানিব্যাগে রেখে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এস বললাম, যাক বাবা। অবশেষে সফল হলাম।

গল্পটা এখানেই শেষ। এটা গত সপ্তাহে ঘটা বাস্তব কাহিনী। এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। আমি সাধরণ মানুষ হিসেবে যে হিসাব বুঝি সেটা এমন। এ ১০০ টাকা ব্যক্তি আমার কাছে ১০০ টাকাই। এটা নষ্ট হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০০ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কিন্তু রাষ্ট্র কতটা হবে তার একটা সহজ হিসাব এমন। ধরুন এ টাকাটা আরো ৫ বছর ব্যবহার করা যাবে। প্রতিবছর গড়ে ২০০ বার এ টাকাটা লেনদেন হলে ৫ বছরে হবে ১০০০ বার। তাহলে মোট লেনদেন হলো- ১০০*১০০০= ১০০০০০। সুতরাং এর মূল্য হয়ে গেল ১ লক্ষ টাকা। এটা অতি সহয একটা হিসাব। বাস্তবে আরো বেশি।

আমরা অনেকেই এ ধরনের ভোগান্তির ভয়ে ছেঁড়া টাকা ফেলে দেই। এতে আমাদের ব্যক্তিগত লসের চেয়ে রাষ্ট্রের লস হচ্ছে অনেক বেশি। এ দিকটা মনে রেখেই সকলকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.