নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হরপ্পা

``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)

রণদীপম বসু

রণদীপম বসু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।১০। আসন: পদ্মাসন।

২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:০৭



# পদ্মাসন (Padmasana):



ইয়োগা চর্চায় বহুল ব্যবহৃত এ আসনটিকে দেখতে অনেকটা প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো মনে হয় বলে একে পদ্মাসন (Padmasana) বলা হয়। সব্জির মধ্যে আলু যেমন সকল কাজের কাজী, সব কিছুতেই মানিয়ে যায়, তেমনি যোগ-ব্যায়ামের যে কোন আসনের সাথে জুড়ে যাবার প্রয়োগযোগ্যতার কারণে লব্ধ জনপ্রিয়তার সাথে সাথে এই রহস্যময় পদ্মাসন চর্চায় বহু বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায়।

পদ্মাসন মূলতঃ তিন প্রকার: মুক্ত-পদ্মাসন, বদ্ধ-পদ্মাসন ও উত্থিত পদ্মাসন।





(১) মুক্ত-পদ্মাসন (Mukta-Padmasana)

পদ্ধতি:

সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর এবং ডান পা একইভাবে বাঁ উরুর উপর রাখুন। হাত দু’টোর চেটো উপুড় করে বা চিৎ করে অথবা ধ্যান করার ভঙ্গিতে দু’হাঁটুর উপর রাখুন (আসনের এই ভঙ্গিকে সিদ্ধাসনও [siddhasana] বলা হয়)। অথবা নমস্কারের ভঙ্গিমায় বুকের উপর রাখুন। এখন দৃষ্টি নাসিকার অগ্রভাগে এবং জিহ্বার অগ্রভাগ মাড়ির শেষদিকে স্পর্শ করে রাখুন। সহজভাবে যতক্ষণ পারা যায় ঐ অবস্থায় থাকুন। পদ্মাসনে বেশি সময় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস অবশ্যই স্বাভাবিক থাকবে।

এবার পা বদল করে অর্থাৎ প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে বাঁ উরুর উপর এবং বাঁ পা একইভাবে ডান উরুর উপর রাখুন এবং আগে যতক্ষণ অভ্যাস করেছেন ততক্ষণ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে পায়ের বাঁধন খুলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।



উপকারিতা:

যোগশাস্ত্র মতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে হাঁপানি রোগ হতে পারে না, আর থাকলেও অল্পদিনে সেরে যায়। মেরুদণ্ড সোজা ও সরল রাখে। চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মনের একাগ্রতা আনে। পায়ের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। দেহে বাত বা সায়টিকা আক্রমণ করতে পারে না।





(২) বদ্ধ-পদ্মাসন (Baddha-Padmasana)

পদ্ধতি:

প্রথমে মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। এবার ডান হাত পেছনদিক দিয়ে ঘুরিয়ে এনে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল এবং একইভাবে বাঁ হাত পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে এনে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে কিছুক্ষণ এই আসনে থেকে হাত-পা বদল করে আবার করুন এবং শেষ হলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।





উপকারিতা:

পদ্মাসনের সব গুণ এ আসনটিতে বর্তমান। এতে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও আসনটি কাঁধ ও বুকের খাঁচার গঠনগত দোষত্রুটি দূর করে।





(৩) উত্থিত পদ্মাসন (Utthita Padmasana)

পদ্ধতি:

মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। এবার দু’হাত পাছার দু’পাশে রাখুন। এখন হাতের জোরে দু’হাতের চেটোর উপর ভর রেখে শরীরকে কিছুটা উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় ২০-২৫ সেকেন্ড থাকুন। পা বদল করে আবার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।



উপকারিতা:

মুক্ত-পদ্মাসনের প্রায় সব গুণ এতে বর্তমান। উপরন্তু পেটের বাড়তি চর্বি কমিয়ে ক্ষিদে বাড়ায়, হাতের ও কাঁধের পেশী পুষ্ট করে এবং হাতে প্রচণ্ড শক্তি আনে।



আসন-বৈচিত্র্য

পদ্মাসনের এই মূলানুগ চর্চার বাইরেও ব্যবহারবৈচিত্র্যে নতুন নতুন প্রক্রিয়ায় পদ্মাসন চর্চিত হতে দেখা যায়। এইসব সৃষ্ট আসনের মধ্যে অর্ধ-পদ্মাসন, উর্ধ্ব-পদ্মাসন, অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন অন্যতম।





অর্ধ-পদ্মাসন (Ardha-Padmasana):

এই আসন-পদ্ধতিতে এক পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে অন্য পায়ের উরুর উপর রাখা হলেও অন্য পা মুক্ত-পদ্মাসনের ভঙ্গিতে আরেক পায়ের উপর না উঠিয়ে ভাঁজ করে মাটিতেই রাখা হয়। এই আসনকে সুখাসনও বলা হয়ে থাকে।





উর্ধ্ব-পদ্মাসন (Urdhva-Padmasana):

এ আসন-পদ্ধতি মুক্ত-পদ্মাসনের ঠিক উল্টো অর্থাৎ মুক্ত-পদ্মাসনের আসন ভঙ্গিটিকে উপর-নীচে ঠিক উল্টে দিয়ে কাঁধের উপর শরীর ধারণ করে আসনবদ্ধ পা উপরে উঠিয়ে দিয়ে এর চর্চা করতে হয়।





অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন (Ardha Baddha Padmasana):

এ আসন-পদ্ধতিতে এক পা অন্য পায়ের উপর স্থাপন করে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে হাত পেছন দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে উপরে রাখা পায়ের বুড়ো আঙুলকে এই হাত দিয়ে ধরতে হবে। তবে অন্য পা সামনে সোজা রেখে আরেক হাত দিয়ে সরাসরি বুড়ো আঙুল ধরবে।

অথবা মুক্ত-পদ্মাসনে বসে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে এক হাত পেছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল ধরলেও অন্য হাত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।





নতুন অনুশীলনকারী যারা প্রাথমিক অবস্থায় মুক্ত-পদ্মাসন বা বদ্ধ-পদ্মাসন চর্চা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বা সমর্থ হন না, তারা এই অর্ধ-পদ্মাসন বা অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেহকে প্রস্তুত করে তুলতে পারেন। এতেও উপকারে কোন ঘাটতি হবে না।

[Images: from internet]



(চলবে...)



পর্ব:[০৯] [**][১১]

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:১৫

জানপরী বলেছেন: আরে খাইছে সব শিখা ফালামু।

২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:২৫

রণদীপম বসু বলেছেন: হাঁ, শিখে ফেলাই দরকার, নিজের প্রয়োজনেই।

২| ২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:২১

যুগান্তকারী বলেছেন: দ্বীপদা এটা ছারা আরো কি পদ্ধতি আছে যেটা দিয়ে খুব তারাতারি চর্বি কমিয়ে ফেলতে পারবো?পোস্টে প্লাস এবং সরাসরি প্রিয়তে।

২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৩

রণদীপম বসু বলেছেন: এতোকাল যখন চর্বি ধরে রাখার ধৈর্য্য দেখাতে পারলেন, এখন আর এতোটা তাড়াহুড়ো নাই বা করলেন। তার চে' আরেকটু ধৈর্য্য ধরে নিয়মিত সহজ চর্চা শুরু করে দিন। শুধু যে চর্বি যাবে তা-ই নয়, চমৎকার দেহ, মন ও স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠতে পারবেন অবশ্যই।
ইয়োগার প্রভাব ধীরে ধীরে হবে, কিন্তু স্থায়ী ও অবিশ্বাস্য কার্যকরীতায় নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন।

৩| ২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৯

শয়তান বলেছেন: 3 ,4 আর 7 নাম্বারটা পারি না :(

২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৩

রণদীপম বসু বলেছেন: জোর করে শরীরকে পারানোর দরকার নেই। যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুই করতে থাকুন। দেখবেন একসময় এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। বিস্ময় রোধ করতে পারবেন না তখন।

৪| ২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৪২

ছুক্কুরালী বলেছেন: বরই বালা লাগলো। তিন নম্বর আসনডা মাইয়াগো জানা খুবি জরুলী।

২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৪

রণদীপম বসু বলেছেন: ছেলেদের জন্যেও কোন অংশে কম প্রয়োজনীয় নয়।

৫| ২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৪

বিপ্লব রহমান বলেছেন: রণো দা,

এই সিরিজটির আমি অনেক পুরনো পাঠক। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য অনেক সময় মন্তব্য করা হয় না।

পদ্মাসন সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। ছবিগুলোও ঠিক আছে। কিন্তু লেখাটির সঙ্গে পদ্মাসনে উপবিষ্ট ধ্যানী বুদ্ধর একটি ছবি থাকলে আরো ভালো হতো!

অনেক ধন্যবাদ।

২৭ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:১৪

রণদীপম বসু বলেছেন: ধন্যবাদ বিপ্লব দা।
ধ্যানী বুদ্ধ কিংবা চুরাশি হাজার যোগাসনের উৎস মহাদেবের ছবিও স্টকে ছিলো। কিন্তু আমি এই ইয়োগা দর্শনটিকে আধ্যাত্মিক পর্যায় থেকে মানুষের অতি সাধারণ ব্যবহারিক জীবনের আবশ্যক অংশ হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছি মূলত। সেজন্যই আধ্যাত্মিক ছবি দেইনি।

তবে সংশ্লিষ্ট তাত্ত্বিক আলোচনায় তা দেয়া যাবে।

৬| ২৭ শে জুন, ২০০৯ রাত ৯:৫৩

ফালাক বলেছেন:
আর এত আসন একদিনে কি করা সম্ভব? নাকি বেছে বেছে করতে হবে?

২৮ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:২৬

রণদীপম বসু বলেছেন: সিরিজের শুরুতে কিঞ্চিৎ তাত্ত্বিক আলোচনায় এ বিষয়টার সামান্য আলোকপাত করা হয়েছিলো। সব আসন একদিনে করার দরকার নেই। সিরিজে প্রাণায়াম, মুদ্রা, ধৌতি বাদেও আসনই থাকবে হয়তো শতাধিক। সব তো আর একজনের পক্ষে করা সম্ভব নয় ! তবে যার জন্য যেটা প্রয়োজন এবং একদিনে বিভিন্ন ক্যাটেগরির ৬/৭ টার বেশি আসন করার প্রয়োজন নেই। এই বাছাই করা ৬/৭ টা আসন আবার এক নাগাড়ে ২/৩ মাস করার পর পাল্টে ভিন্ন ৬/৭টা আসন বাছাই করে আবার ২/৩ মাস চর্চা করে ফের পাল্টে নেয়াই নিয়ম।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা খেয়াল রাখবেন যে, জোর করে কখনোই আসন চর্চা করতে নেই। শরীর যতটুকু সামলাতে পারে ততটুকুই। ধীরে ধীরে তা আয়ত্ত হয়ে যাবে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কোন অস্পষ্টতা থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ।

৭| ২৭ শে জুন, ২০০৯ রাত ৯:৫৫

ফালাক বলেছেন: ৩ ,৪ কর্লে জান বার হয়া যাইবো

২৮ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:২৮

রণদীপম বসু বলেছেন: জানটাকে এতো ঠুনকো ভাবছেন কেন ! এখন যেগুলো আপনার কাছে জান বাইর হইয়া যাওনের মতো মনে হচ্ছে, ক'দিন চেষ্টা করলে সেগুলোই জলবৎ তরলং হয়ে ওঠবে। নিশ্চিৎ।
অতএব ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

৮| ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৪১

কুতুব্ বলেছেন: খাইছে, হাড্ডিগুড্ডি সব ভাইংগা না ফালায় আবার............. :)

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:০৪

রণদীপম বসু বলেছেন: হা হা হা ! কুতুব মানুষের কিছু হাড্ডিগুড্ডি ভাঙার দরকার আছে না !

ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.