নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রানা রয়

আমি আদতে আনাড়ী

রানা রয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন তাদের কাছে প্রকৃত সুখ এসে ধরা দিবে

২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩২

মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের মত সাধ আর নিম্নবিত্তের মতো সাধ্য এই নিয়েই মধ্যবিত্ত। কথাটা আসলেই সত্যি, মধ্যবিত্ত হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ফকির হওয়া অনেক ভালো। মধ্যবিত্ত পরিবারে বারো মাসই অভাব-অনটন লেগে থাকে। খুব কম সময়ই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য সব পরিবারের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারেও বাবাদের উপরই চাপটা বেশি থাকে। ছেলে-মেয়েদেরকে সব বাবা-মা ই নিজেরদের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চান। অরণ্য সেরকমই এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সে ভালো করেই জানে, এই জগত-সংসারে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করলে কতো রকমের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বুঝতে শিখার বয়স থেকেই সে যে এই গুলোর সাথে পরিচিত। কিন্তু অরণ্যের বাবা একদিনের জন্যও ওনার ছেলে-মেয়েকে অভাব কি বা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিলে কি রকম সমস্যা হয় এই গুলো বুঝতে দেন নাই! কিন্তু এক ঘরে বসবাস করলে সব কিছু কি আর গোপন রাখা যায়। তাই তিনি বুঝতে না দিলেও অরণ্য ঠিকই অভাবের সাথে পরিচিত। অরণ্য যখন স্কুলে পড়তো, সবার আগেই সে বেতন দিয়ে দিতো। তার জন্য বই কারো কাছে থেকে চেয়ে নিয়ে আসলে হতো না। ওইটা অবশ্য তার চাহিদা ছিল না। অরণ্যের বাবাই বলতেন, আমার ছেলে অন্যের বই পড়বে কেন? তার স্কুলে পরীক্ষার আগে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষার ফি বকেয়া থাকলেও অরণ্যের ফি টা সবার আগে দিয়ে দেয়া হতো। অরণ্যে বাবাকে বলতো, ফি না দিলে পরীক্ষা চলাকালীন সময় স্যাররা এসে একটু পর পর দাঁড় করাবেন, হয়তো সবার সামনে অপমান করবেন! এইসবের জন্য অরণ্য সবার আগেই পরীক্ষার ফি জমা দিতো। এইভাবে বেশ ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। কিন্তু গত কিছুদিন থেকে আর আগের অবস্তায় নেই। ধারাবাহীক ভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর সব মাত্রাতিরুক্ত খরচ বেরে যাওয়ার কারণে অরণ্যের বাবা সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। চার জনের পরিবারে অরণ্যের বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী। সব কিছু যখন বৃদ্ধি পেয়ে নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে, অরণ্যের বাবা তখনও সেই আগের রোগা বেতনের একটা ছোট চাকরি করে যাচ্ছেন। বয়সের প্রভাব অনেকটা ওনার শরীরে লক্ষণীয়। ওনার শরীর খারাপ কিন্তু টাকা-পয়সার কথা ভেবে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় না। ডাক্তারের কাছে গেলেই তো শুধু ডাক্তারের ফি না, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিবে তারপর ঔষধ নিতে হবে। কম করে হলেও ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এই অসময়ে অরণ্যের বাবা ৫০০ টাকাও নিজের জন্য খরচা করতে পারছেন না আর ৫ হাজার টাকাতো অনেক দূরের ব্যাপার। অরণ্য গরম একদম সহ্য করতে পারে না। দিনের বেলা রোঁদের তাপ বেশি থাকলে সে বাসা থেকেই বের হয় না। এই গরমে আবার অরণ্যের ফ্যানটাও নষ্ট হয়ে পরেছে। অরণ্য তার বাবাকে ফোন দিয়ে জানালো যে ফোন চলছে না। অরণ্যের বাবার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো শুনাল খবরটা। তিনি সাথে সাথে ওনার দোকানের একটা ছেলেকে পাঠিয়ে ফ্যান নিয়ে গেলেন। ওই ছেলেটাই ফ্যান ঠিক করতে পারে। ছেলেটা জানালো যে ফ্যানের কয়েল নষ্ট হয়েছে, নতুন কয়েল লাগবে। অরণ্যের বাবা বুঝতে পারলেন ওনার জন্য আরেকটা সমস্যা তৈরি হল। দুই-তিন দিন পর ফ্যান আসছে না দেখে অরণ্য তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, ফ্যান কি এখনো ঠিক হয়নি? তার বাবা বললেন, ছেলেটার হাতে অনেক কাজ। তার সময় নেই এখন। দোকানের কাজে খুব ব্যস্ত সে। ফ্রী হলেই ফ্যান নিয়ে আসবে। তখন অরণ্যের কাছে বিষয়টা কেমন গোলাটে লাগলো। কিন্তু সে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। মনে মনে ভাবলো, ফ্যান তো অন্য দোকানে দিলেই হতো। এইভাবে আরও কয়দিন যাওয়ার পর অরণ্য তার বাবাকে আবারও জিজ্ঞেস করলো, তখন তিনি বললেন, ছেলেটা এখনও খুব ব্যস্ত আর ফ্যানের কয়েল নষ্ট হয়েছে। ওইটা ঠিক করাতে নাকি ৬০০ টাকা লাগবে, আমি ওরে ৩০০ টাকা দিয়েছি। কালকে গিয়ে বাকি টাকাটা দিয়ে বলবো ফ্যানটা ঠিক করে দিয়ে যেতে। তখন আর অরণ্যের বুঝতে সমস্যা হল না যে, ফ্যান এতো দিন থেকে আসলে কেন ঠিক হচ্ছে না! কিন্তু তার বাবা তাকে সেটা বলতে পারছেন না, হয়তো লজ্জায় নয়তো ছেলের খারাপ লাগবে এই ভেবে। ছেলের যাতে কষ্ট না হয় সেই জন্য অরণ্যের বাবা নিজের রুমের বিছানায় ছেলেকে ঘুমাতে বলেন আর তিনি মেয়ের রুমে মেঝোতে শুয়ে পরেন। অরণ্য আর ফ্যানের জন্য তাগিদ দেয় না। সে তার বাবা মায়ের রুমে ঘুমায় আর তার বাবা-মা নিজেদের মেয়ের রুমে মেঝোতে ঘুমান। এইভাবেই চলছে তাদের দিনযাপন। অরণ্যের রুমে আজও ফ্যান আসেনি, হয়তো আসবেও না আবার হয়তো আসবে কিন্তু কবে আসবে অরণ্য কেন তাঁর বাবাও জানেন না। শুধু অরণ্যের না, এই অরণ্যদের মতো এরকম আরও হাজার হাজার অরণ্য আছে, যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, যাদেরকে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তে শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করার জন্য। তারা এই জগত-সংসারে বেঁচে থাকার জন্য প্রানপ্রন লড়াই করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। জীবনের প্রতি তারা অনেকটাই হতাশ, মধ্যবিত্তের জীবন মনে হয় দুঃখকষ্টের জীবন। হয়তো কোন একদিন তাদের কাছে প্রকৃত সুখ এসে ধরা দিবে, মধ্যবিত্ত থেকে তারা বিত্তবান হয়ে উঠবে। সেই আশায় জীবন কাটিয়ে দেয় মানুষগুলো। কিন্তু কতোজন সুখ পায়? কতজন বিত্তবান হতে পারে? জানিনা আমি, আপনিও জানেন না। আমরা শুধু মন থেকে চাইতে পারি, ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটা মধ্যবিত্ত পরিবার, ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.