![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি যখন পশ্চিমাদের হাতছাড়া হতে বসেছে, তখন এশিয়ার পুরনো অর্থনৈতিক শক্তিগুলো চীনের নেতৃত্বে এক যুগান্তকারি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দুই হাজার বছর আগে চীনের জিয়ান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত যে সুসমৃদ্ধ বাণিজ্য পথ গড়ে উঠেছিল আরো ব্যাপক পরিসরে তার পুনরুজ্জীবনই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মূল লক্ষ্য। খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে বিশেষত: সিল্ক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সময়টাকে চীনের প্রাচীন ইতিহাসে গোল্ডেন এজ বা স্বর্ণযুগ নামে অভিহিত হয়। দুই হাজর বছর পেরিয়ে এসে চীন তার সেই হারানো সিল্ক রুট, কানেক্টিভিটি ও অর্থনৈতিক নেতৃত্বকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে চায় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মধ্য দিয়ে। শুধু এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নেই নয়, সাম্প্রতিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ইতিহাসে চীনের সিল্করোড যা’ ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) সবচে বড় ও সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এমনই সময় এই উচ্চাভিলাষি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে যখন একদিকে বিশ্বায়িত রাজনৈতিক অর্থনীতিতে পশ্চিমা অর্থনৈতিক সাম্প্রাজ্যবাদ চীনের বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক সক্ষমতার কাছে মার খাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিন এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এক নতুন কৌশলগত অবস্থান গ্রহন করেছে, সেই সাথে চীন-ভারত-পাকিস্তানের ট্রায়াঙ্গেল ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক ও বৈরিতা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে চীনা সিল্ক রুটের সম্ভাবনা থেকে চীন কাউকেই বাদ বা বাইরে রাখতে চায়না। দি সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট অ্যান্ড দি টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোডের এই নেটওয়ার্কে চীনের সাথে পারস্য, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিন এশিয়ার প্রায় সব সব দেশই যুক্ত হতে যাচ্ছে। চীন ইতিমধ্যে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দি ভারতকেও এই ইনিশিয়েটিভে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বল এখন ভারতের কোর্টে। এই মুহুর্তে কাশ্মিরে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি সীমান্তযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। তবে গত বছরের শেষদিকে এবং চলতি বছরের জানুয়ারীতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সেনা ছাউনিতে হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান আরেকটি যুদ্ধের মুখোমুখি দাড়িয়েছিল। সে সময় ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে একঘরে করে ফেলার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল। তবে চীনের রোড এন্ড বেল্ট লিঙ্কে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশগ্রহন ছাড়াও পাকিস্তানকে নিয়ে চীনের সিপিইসি বা চীন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর পাকিস্তানকে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথে নিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের অবকাঠামো ও জ্বালানীখাতে শত শত কোটি ডলারের চীনা বিনিয়োগ পাকিস্তানকে একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সংকট থেকে এই সম্ভাবনাময় মহাসরনিতে তুলে দিচ্ছে। সেখানে ভারত এখনো দিশাহীন ও অনিশ্চয়তার দোলাচলে অবস্থান করছে। খোদ ভারতীয় বিশ্লেষকদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানকে একঘরে করতে গিয়ে ভারত নিজেই যেন একঘরে হয়ে পড়ছে।
পুঁজিবাদের আধিপত্যবাদি নীতি কৌশলের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে অর্থনৈতিক শক্তি-সামর্থ্য ও পুঁজি বিনিয়োগই যখন ভূ-রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তখন বিশাল চীনের অর্থনৈতিক বুমিং এবং প্রযুক্তি ও শিল্পবাণিজ্যের আধিপত্যকে খোদ পশ্চিমা ও মার্কিনীদেরও মেনে নিতে হচ্ছে। সেখানে ভারতের নিজস্ব খন্ডিত চিন্তা ও আশঙ্কা গৌণ বিষয় হয়ে দাড়ায়। যেখানে ভারত রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করে ফেলার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছিল, সেখানে চীনের বিশাল পুঁজি ও উচ্চাভিলাষি বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক প্রকল্পের তোড়ে ভারতকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তে হচ্ছে। এ সপ্তাহে চীনের রাজধানী বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত হল রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ ফোরামের দু’দিন ব্যাপী সম্মেলন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সহ বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে চীনা প্রেসিডেন্ট ওবিওআর প্রকল্পে ১২৪বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ঘোষনা করেন। নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতায় একসঙ্গে এত বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষমতা এই মুহুর্তে চীন ছাড়া আর কোন দেশের নেই বললেই চলে। চীনের এই অর্থনৈতিক সামর্থ্য আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানোর রোড ও বেল্ট ইনিশিয়েটিভকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশী কাজে লাগাতে পারে। বর্তমান সরকারের ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে যে সব আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে, তা থেকে সরকার বেরিয়ে আসবে বলেই জাতি প্রত্যাশা করে। ভারত যোগ না দিলেও দু’দিনের বেইজিং সামিটে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়ে দেশবাসির কাছে সে ম্যাসেজ দিয়েছে সরকার। বেইজিংয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলনে চিনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিনিয়োগ হল অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, উদ্যোগ চীনের, তবে উন্নতি সবার। প্রাচীন চীনের সিল্ক রোডকে সামনে রেখে এই প্রকল্প গৃহিত হলেও দক্ষিন এশিয়া, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা এমনকি আমেরিকা পর্যন্ত এই রুটকে সম্প্রসারিত করার সুযোগ রয়েছে বলে চীনা নেতা উল্লেখ করেছেন। এমনকি চীন থেকে ইউরোপ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাবও ইতিমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে। ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পে চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা করা হলেও চীনা প্রেসিডেন্ট সাবেক আমলের শত্রুতা শত্রুতা খেলা বন্ধ করে নেটওয়ার্কভুক্ত সব দেশের জনগনের ভাগ্যন্নোয়নের মহৎ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
©somewhere in net ltd.