নিশি

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:০৪

নিশি আমাদের দেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত একটি আরবান লেজেন্ড। ঘুমের মধ্যে মানুষকে তার পরিচিত কারো গলা নকল করে ঘুম থেকে তুলে তারপর দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলাই নিশির কাজ।

নিশি কখনো দুবারের বেশি ডাকে না। মনে আছে ছোটবেলায় আমাদের নানি - দাদিরা কেউ তিনবারের কম ডাকলে বের হতে মানা করতেন? তারা নিশির জন্যই এমনটাই করতেন। নিশি তিনবার ডাকতে অক্ষম।

নিশি সাধারণত গভীর রাতে এবং ভোররাতে মানুষকে ডাক দেয়। দিনের বেলায় নিশি কখনো মানুষকে ডাকে না।
কেউ যখন ঘুমিয়ে থাকে নিশি তার পরিচিত আত্নীয় বা বন্ধুর গলা নকল বাসার বাহিরে থেকে তাকে ডাকতে থাকে। দুইবার ডাকার পর নিশি অপেক্ষা করতে থাকে। এইসময় আপনি শতবার উত্তর চেয়েও ডাক দিলেও সে উত্তর দিবে নাহ। তবে সদর দরজাতে ঠিকই অপেক্ষা করবে সে।

আপনি যদি তার ডাকে বের হন তবে সে আপনাকে তার পিছু নিতে বাধ্য করবে এবং দূরে কোথাও নিয়ে আপনাকে হত্যা করবে। হত্যাটটা এমন ভাবে করবে যেন দেখে মনে হয় কোনো দুর্ঘনা। যেমন পাহাড় থেকে নিছে পেলে দেওয়া, চলন্ত গাড়ির নিছে পড়তে বাধ্য করা ইত্যাদি।

নিশি কে, নিশি দেখতে কেমন, সে ছেলে নাহ মেয়ে তা জানা যায় নাহ, কারণ তার ডাকে কেউ সাড়া দিলে সে আর ফিনে আসে নাহ।
তবে পশ্চিম বঙ্গের দিকে নিশির উৎপত্তি নিয়ে একটা গল্প বেশ জনপ্রিয়।


গল্পটা হলো ;
"এক জমিদারের অপরুপ এক সুন্দরি মেয়ে ছিলো, তার নাম ছিলো নিশি। একরাতে জমিদার বাড়িতে ডাকাত পড়ে এবং ডাকাতের বাড়ির সমস্ত পরুষ কে হত্যা করে। নিশি কোনোক্রমে বের হয়ে পালাতে সক্ষম হয়।
কিন্তু ডাকাতেরা তাকে ধরার জন্য পিছু নিতে থাকে। নিশি ঐরাতে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই কড়াঘাত করে ডাকাডাকি করে এবং সাহায্য চাইতে থাকে কিন্তু ডাকাতদের ভয়ে কেউ বের হয় না।

অবশেষে ডাকাতেরা কাছে চলে এলে নিশি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করে।
এরপর থেকেই ওই গ্রামের মানুষদেরকে গভীর রাতে কে যেন তাদের পরিচিত মানুষদের কন্ঠ নকল করে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে শুরু করে। এভাবে একটা সময়ে পুরো গ্রাম উজাড় হয়ে যায়।

গ্রাম শেষের পর নিশি পাশের গ্রামগুলোতে ঘুরতে থাকে এবং সে গ্রাম শেষ হলে পাশের গ্রাম। এভাবে নিশি গ্রাম এর পর গ্রাম জুড়ে মানুষকে ঘুমের মধ্যে ডাকতে শুরু করে। নিশি কখনো দুবারের বেশি ডাকতে পারে না।"


‌নিশি নিয়ে আমাদের দেশে এবং পশ্চিম বঙ্গের লেখকেরা বেশ লেখালেখি করেছেন। শাহরিয়ার কবিরের "নিশির ডাক" গল্পটি বেশ জনপ্রিয় একই নামে পশ্চিম বঙ্গের লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটি গল্প রয়েছে।

০ টি +০/-০