নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল আপন

রাসেল ইসলাম আমার নাম

রাসেল আপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুইসাইড সং

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৪

সুইসাইড সং। কি নামটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে। ভাবছেন যে জীবনে এত গান শুনলাম প্রেম, বিরহ, আনন্দ, আবেগ আরও অনেক প্রকারের কিন্তু এটা আবার কেমন গান (আমি শোনার আগে অবশ্য এটাই ভেবেছিলাম)। অবশ্য যারা জানেন গানটি সম্পর্কে তাদের কথা না ই ধরলাম কিন্তু আপনারা যে ইতিমধ্যে এই বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন এটা কিন্তু নির্ঘাত। কি ঠিক বলিনি। আচ্ছা আসুন এই সম্পর্কে কিছু জানা যাক।

১৯৩৩ সালে হাঙ্গেরিয়ান কবি ল্যাজলো জাভিয়ের, মিউজিক কম্পোজার রেজসো সেরেস, ও গায়ক পল কেলমার মিলে সৃষ্টি করেছিলেন এক বিষণ্ণ রবিবারের। সৃষ্টি করেছিলেন একটি গান যা সারা পৃথিবী জুড়ে সুইসাইড সং বা আত্মহননের সংগীত নামে বিখ্যাত। কিন্তু আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারেনা যে কেন পৃথিবীতে এত ভাল গান থাকতে এইগানটি এতো বিখ্যাত হলো?

সময়টা ১৯৩৩ সাল, সময়টা দ্য গ্রেইট ডিপ্রেশানের। পুরো বিশ্বজুড়ে চলছিলো অর্থমন্দা। বড় বড় ব্যবসাদার থেকে শুরু করে দিনমজুর শ্রেনী পেশার মানুষ পর্যন্ত নিমজ্জিত হয়েছিলো এক হতাশার সমুদ্রে। ইউরোপের দেশ গুলো খুব খারাপ ভাবে শিকার হয়েছিলো ফ্যাসিজমের। শুরু হয়েছিলো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। এমনই এক পরিবেশে প্রেমিকার সাথে সদ্য ছাড়াছাড়ি হওয়া ল্যাজলো জাভিয়ের নামক এক হাঙ্গেরিয়ান কবি লিখতে বসলো এক বিষণ্ণ রবিবারের গল্প। গল্পের নায়ক এক যুবক বিষণ্ণ রবিবারে বসে ভাবতে থাকে তার প্রেমিকার কথা যে, কিছুদিন আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। বিষণ্ণ রবিবারে যুবকের সময় কাটতে থাকে অসংখ্য বেদনাদায়ক ছায়াদের সাথে। যুবক ভাবে কোন ভাবেই তার প্রেমিকাকে মৃত্যুর পরবর্তী দুনিয়া থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভবনা(কিন্তু যে একবার এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় সে তো আর ফিরে আসে না)। অথবা প্রেমিকার মতো এখন যদি সে নিজেও মারা যায় তবে, মৃত্যু পরবর্তী জীবনে প্রেমিকার সাথে তার দেখা হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। বিষণ্ণ রবিবারে সে ঝাঁপ দেয় নদীতে।

সেরেজ নামক একজন প্রতিষ্ঠিত সুরকার এই বিষণ্ণ রবিবার সুর করেন এবং গানটি রেকর্ড করা হয় পল কেলমারের কন্ঠে। প্রাথমিক ভাবে গানটি প্রকাশিত হয় শিট মিউজিক হিসেবে। প্রকাশনার সাথে সাথে হাঙ্গেরিতে গানটি চরম জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু একই সাথে হাঙ্গেরিতে আত্মহত্যার সংখ্যা মারাত্মক বেড়ে যায়। কবি জাভিয়ের-এর পূর্ব প্রেমিকা সহ আরো অনেকেই নদীতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে, যাদের হাতে ধরা ছিল বিষণ্ণ রবিবারের লিখিত কপিটি। সে বছর হাঙ্গেরিতে বিষণ্ণ রবিবার নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও বিষণ্ণ রবিবার স্থান করে নেয় অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে। অচিরেই এই গান দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ছড়িয়ে পরে সারা পৃথিবী জুড়ে এবং এর অনুবাদ হতে থাকে বিভিন্ন ভাষায়।

১৯৩৫ সালে রাশিয়া এবং ১৯৩৬ সালে ফ্রান্স ও জাপান এই গান তাদের দেশের নিজস্ব ভাষায় অনুবাদ করে। ১৯৪১ সালে গায়িকা বিলি হলিডের কন্ঠে ধারণ করা ইংরেজি অনুবাদটি বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি হিট হয়, যার নাম দেয়া হয় Gloomy Sunday। এই গানটির প্রভাবে আসলেই মানুষ আত্মহত্যা করেছে কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। প্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী গানটি প্রকাশনার সময়কালে হাঙ্গেরিতে ১৯টি আত্মহত্যা প্রমাণ পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলোর পিছনে এই গানের প্রভাব সম্পর্কে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই আত্মহত্যা গুলোকে অনেকে গ্রেইট ডিপ্রেশানের প্রভাব বলে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন যে, এটি ছিল গানটিকে জনপ্রিয় করার কৌশল হিসেবে ছড়ানো গুজব। কিন্তু এটা যদি নিছকই এক গুজব হতোতাহলে, কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো গানটিকে? গুজবটি আরো প্রতিষ্ঠিত রূপ ধারণ করে গানটি রচনার আরো ৩৫ বছর পর। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে সেরেস জানালা দিয়ে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সেবার ব্যার্থ হলেও সফল হন দ্বিতীয় প্রচেষ্টায়। এই ঘটনার পর বিলি হলিডের করা সংস্করণটি নিষিদ্ধ করে বিবিসি শুধুমাত্র যান্ত্রিক সংস্করণটি পরিবেশনের সম্মতি দেয়া হয়। অবশেষে ২০০২ সালে তাদের এই নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেয় বিবিসি। জাজ ধারার এই গানটির মূল সংস্করণটি ছিল সি-মাইনর স্কেলে।

এখন কথা হল তা নয়। কথা হল আত্মহত্যার ব্যাপারটি গুজবহোক অথবা না হোক। গানটি শোনার সময় হাজারো বিষণ্ণ চিন্তা খেলা করতে থাকে শ্রোতার
মনে(আমি এখনও শুনবি কিন্তু)। গানটি একবার শুনলে শ্রোতার বারবার শুনতে চাওয়ার একটা প্রভাব লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে উঠতে থাকে মনের বিষণ্ণতা। এমন বিষণ্ণ মুহূর্তে কারো মনে আত্মহত্যার ইচ্ছা জেগে উঠা অস্বাভাবিক নয় (ভাগ্যিস আমি শুনি নাই। তাহলে পোষ্ট দেওয়ার টাইম পাইতাম কি না আল্লাহ মালুম)। আর সে জন্যেই বিষণ্ণ রবিবার সকলের কাছে হয়ে উঠে আত্মহননের(যেহেতু আত্মহননের দিন তো রবিবার থেকে সাবধানে থাকবেন)।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৩৯

জাফরুল মবীন বলেছেন: গ্লুমি সানডে’র উপর চমৎকার তথ্যকণিকা।তবে মূল পোস্টে গানটির কথা (লিরিকস) সংযুক্ত করার বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।কারণ পাঠকদের অনেকেই গানে কী কথা ছিল তা জানতে আগ্রহী হতে পারে।

গানটির অরিজিনাল হাঙ্গেরিয়ান লিরিকস:-
"Szomorú Vasárnap száz fehér virággal,
Vártalak, kedvesem, templomi imával,
Álmokat kergető vasárnap délelőtt,
Bánatom hintaja nélküled visszajött.
Azóta szomorú mindig a vasárnap,
Könny csak az italom, kenyerem a bánat...
Szomorú vasárnap.
Utolsó vasárnap, kedvesem, gyere el;
Pap is lesz, koporsó, ravatal, gyászlepel,
Akkor is virág vár, virág és - koporsó,
Virágos fák alatt utam az utolsó.
Nyitva lesz szemem, hogy még egyszer lássalak,
Ne félj a szememtől, holtan is áldalak...
Utolsó vasárnap."


গানটির ইংরেজি লিরিকস:-
"On a sad Sunday with a hundred white flowers,
I was waiting for you, my dear, with a church prayer,
That dream-chasing Sunday morning,
The chariot of my sadness returned without you.
Ever since then, Sundays are always sad,
tears are my drink, and sorrow is my bread...
Sad Sunday.
Last Sunday, my dear, please come along,
There will even be priest, coffin, catafalque, hearse-cloth.
Even then flowers will be awaiting you, flowers and coffin.
Under blossoming (flowering in Hungarian) trees my journey shall be the last.
My eyes will be open, so that I can see you one more time,
Do not be afraid of my eyes as I am blessing you even in my death...
Last Sunday."

(সূত্র: উইকিপিডিয়া)

১৭ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

রাসেল আপন বলেছেন: বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য।

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:০২

রাসেল আপন বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য।

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:২২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: দারুন রিভিউ, যেভাবে লিখেছেন এক্ষুনি শুনতে ইচ্ছে করছে। খুব ভাল লেখা।

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬

সুদীপ্ত সরদার বলেছেন: রিভিউটা সুন্দর!

৫| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২২

রাসেল আপন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। মনিরা সুলতানা।

৬| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২৩

রাসেল আপন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। সুদীপ্ত সরদার।

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৮

রাখালছেলে বলেছেন: গানের কথা শুনেই তো মনে হচ্ছে আহা যদি দেখা পেতাম এমন প্রেমের ।

৮| ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
দারুণ লিখেছেন গানের রিভিউ।++

সাথে গানটি যুক্ত করে দিলে মনে বেশি ভাল হত।

৯| ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭

রাসেল আপন বলেছেন: অবশ্যই দেখা পাবেন যদি মন দিয়ে খোঁজেন। রাখাল ছেলে।

১০| ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

রাসেল আপন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। রঙ্গভূমির রঙ্গমেলা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.