![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্বেতপ্রদরের অন্যতম ও প্রধান কারণ
হচ্ছে যোনিপথের ইনফেকশন
বা জীবাণুদূষণ,
এমনকি সে ক্ষেত্রে যদি নিঃসরণ
কোনোরকম ইনফেকশন ছাড়াও
ঘটে তবে তাকেও শ্বেতপ্রদর
বা লিউকোরিয়া হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। এমনো যদি হয়
যে যোনি বা জরায়ুগ্রীবায় ক্যান্সারের
কারণেও রক্তাভ যোনি নিঃসরণ
ঘটে তাকেও লিউকোরিয়া ধরা হয়।
উপরে উল্লেখ
করা হয়েছে যে লিউকোরিয়ার প্রধান
কারণ ইনফেকশন। প্রধান যে দুটি জীবাণু
লিউকোরিয়ার জন্য
দায়ী তা হলো ট্রাইকোমোনাস
ভ্যাজিনালিস
এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস।
দুটি রোগই যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়।
এর ভয়াবহতার গুরুত্ব বিবেচনা করে রোগ
দুটিকে লঘু যৌনরোগ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়েছে। এ ছাড়াও
গার্ডনেরেলা ভ্যাজিনালিস,
মাইকোপ্লাসমা হোমিনিস,
ইউরিয়াপ্লাসমা ইউরিয়া লাইটিকাম,
গনোকক্কাস, ক্লামাইডিয়া, হারপিস
সিমপ্লেক্স ইত্যাদি জীবাণুর
কারণে বিভিন্ন রকমেরও রঙের নিঃসরণ
ঘটতে পারে। তবে এ প্রতিবেদনে মূলত
প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দুটো জীবাণুর ওপরই
আলোচনা সীমিত রাখা হবে।
ক্যানডিডিয়াসিস: এর আরেকটি নাম
মনিলিয়াসিস এবং এ রোগ যে ছত্রাক
জীবাণু দিয়ে হয় সে জীবাণুটির নাম
ক্যানডিডা অ্যালবিকানস। অতি প্রাচীন
এ রোগ। তবে এ জীবাণু আবিষ্কৃত
হয়েছে ১৯৩৯ সালে।
যে বিজ্ঞানী একে আবিষ্কার করেন তার
নাম ল্যানজেনবেক। এ জীবাণুগুলো মুখ,
গলা, বৃহদন্ত্র এবং যোনিপথে সচরাচর
সংক্রমণ ঘটায়। তারা ভেজা এবং গরম
স্থানে অতি সহজেই আক্রমণ
ঘটাতে সক্ষম। তবে শুষ্ক স্থানে (ত্বকে)
তারা কখনোই আক্রমণ ঘটাতে পারে না।
তাই তারা মুখ থেকে শুরু করে ফুসফুস,
যোনি, ভেজা ত্বকে বা চামড়ার ভাঁজ,
অন্ত্রনালি ইত্যাদি স্থানে সংক্রমিত
হয়। এটা নারী বা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই
সংক্রমিত হয়ে থাকে।
পুরুষের ক্ষেত্রে উপসর্গ : পুুরুষের
ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সময়
জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রণা অনুভূত হয়।
প্রস্রাবের
পথে চুলকানি এবং সাদা পদার্থের নিঃসরণ
যা পরিমাণে খুবই কম হয়ে থাকে। পুরুষের
ক্ষেত্রে প্রস্রাবের নালির
অগ্রভাগে লক্ষ্য করলে প্রদাহজনিত
লালচে ভাব দেখা যায়। মহিলাদের অনেক
ক্ষেত্রেই এ রোগের কোনো উপসর্গ
থাকে না। যাদের থাকে তাদের সাদা স্রাব
বা অন্য রঙের যোনি নিঃসরণ,
যোনিপথের চুলকানি, প্রস্রাবের
পথে জ্বালা-যন্ত্রণা,
কারো কারো ক্ষেত্রে সহবাসের সময়
ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
যোনিপথ পরীক্ষা করলে প্রদাহের
কারণে ফোলা লালচে ভাব দেখা যায়
এবং ভেতরে যে নিঃসরণ দেখা যায়
তা পানির মতো এমনকি চুনের পানির
মতো দেখা যেতে পারে।
রোগ নির্ণয় : এ
ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে ছত্রা
নির্ণয় করা যায় ঠিকই তবে সাধারণত
তা করা হয় না। রোগের উৎসর্গ
বা লক্ষণ শুনেই
চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে।
একটা কথা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে এ
জীবাণু আমাদের দেহে বিশেষ করে গলা,
মুখে, বৃহদন্ত্রে, যোনিপথে,
পরজীবী হিসেবে কোনোরকম
ক্ষতি করা ছাড়াই মানবদেহে বসবাস
করে। তবে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে,
অন্তঃসত্ত্বা হলে, ডায়াবেটিক
দেখা দিলে, কার্টিসোন গ্রুপের ওষুধ
সেবন করলে, স্বাস্থ্যহীনতা ও দুর্বলতায়
ভুগলে, বেশি পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক
খেলে, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে,
খাবারে বেশি পরিমাণ সুগার খেলে দেহের
অভ্যন্তরে (বৃহদন্ত্রের) নিষ্ক্রিয় জীবাণু
সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আবার দেহে ত্বরিত
আক্রমণ ঘটায়।
ট্রাইকোমোনিয়াসিস : এ রোগের
জীবাণুটির নাম ট্রাইকোমোনাস
ভ্যাজিনালিস। ভ্যাজিনালিস
শব্দটি শুনে মনে হয় যেন
ভ্যাজিনা থেকে এসেছে ভ্যাজিনালিস
শব্দটি। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই
মনে হয় যেন এ রোগ বুঝি শুধু মহিলাদের
হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। নারী-পুরুষ
উভয়েরই এ রোগটি হতে পারে। জীবাণু
দেখতে ডিম্বাকৃতির এবং শ্বেতকণিকার
চেয়ে কিছুটা বড়। এ জীবাণুটি যোনিপথ
ছাড়াও কিডনিতন্ত্রের নিচের
অংশে আক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এটিও
অন্যান্য যৌনরোগের মতো সহবাসের
মাধ্যমে একের থেকে অপরের
দেহে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত রোগীর
অন্তর্বাস ব্যবহার করলে সংক্রমিত
হতে পারে। জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৪
থেকে ১২ দিনের মধ্যে রোগের উপসর্গ
দেখা দেয়।
উপসর্গ : অধিকাংশ আক্রান্ত পুরুষের
ক্ষেত্রে এ রোগের কোনো উপসর্গ
থাকে না। অনেকের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ
মূত্রনালি নিঃসরণ থাকতে পারে।
প্রস্রাবের রাস্তায় সামান্য জ্বালা-
যন্ত্রণাও থাকতে পারে।
মহিলাদরে ক্ষেত্রে যোনির নিঃসরণ
যা পাতলা থেকে শুরু করে হলদে রঙের
হতে পারে। যোনিপথের চুলকানি,
তলপেটের ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব
হওয়া এবং জ্বালা-যন্ত্রণাও
একসঙ্গে থাকতে পারে। এ
রোগটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত
ল্যাবরেটরি পরীক্ষার সাহায্য ছড়াই
চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। তবে অনুবীক্ষণ
যন্ত্রের সাহায্য রোগটি শনাক্ত
করা যায়।
চিকিৎসা : এ ক্ষেত্রে অন্যান্য
যৌনরোগের মতোই স্বামী-স্ত্রী দুজনের
একসঙ্গে চিকিৎসার প্রয়োজন। ট্যাবলেট
মেট্রোনিডাজল ২৫০ মিলিগ্রাম রোজ
তিনবার সাত দিন পর্যন্ত দিতে হবে।
অথবা একসঙ্গে ২ গ্রাম মেট্রোনিডাজল
অর্থাৎ ৪০০ মিলিগ্রামের
সাড়ে চারটি বড়ি একসঙ্গে খেতে হবে।
ক্যানডিডা অ্যালবিকানসের
ক্ষেত্রে ক্লোট্রিমাজল ১% ভ্যাজিনাল
ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
ক্লোট্রিমাজল ভ্যাজিনাল ট্যাবলেট
রোজ দুবার ছয় দিন পর্যন্ত ব্যবহার
করলেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
©somewhere in net ltd.