![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রুদ্র কানে হেডফোন গুজে হেটে চলেছে,
.
নিলাদ্রীর সাথে শেষ পর্যন্ত ব্রেকাপটা করতে পারলো,
কানের কাছে এত কান্নাকাটি,
ঘ্যানঘ্যানানি ভালো লাগে না ওর ।
.
দুজনেই অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে ওরা ।
কিছুদিন ধরে নিলাদ্রীর বাসায় ওর বিয়ে নিয়ে খুব চাপাচাপি চলছে ।
বিষয়টা নিলাদ্রী রুদ্রের সাথে শেয়ার করে ।
আজ বিকেলেও অনেক কান্নাকাটি করে নিলাদ্রী রুদ্রের কাছে..
.
নিলাদ্রী: প্লিজ রুদ্র, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। তুমি প্লিজ কিছু একটা করো।
রুদ্র: আমি কি করবো ? আমি মাত্র অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র ! তোমাকে এখন বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
.
নিলাদ্রী: এখন বিয়ে করতে না পারো, তবে আমার ফ্যামিলির সাথে তো একটু কথা বলতে পারো !
আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না রুদ্র, প্লিজ কিছু একটা করো।
রুদ্র: আমি কিছু করতে পারবো না, সরি।
.
নিলাদ্রী: যদি আপন করে না ই নেবে, যদি এভাবে দূরেই ঠেলে দেবে, তবে কাছে আসলে কেন? কেন মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে?
রুদ্র:
আমার কাছে তোমার এই কান্নাকাটি, এই সব কথা গুলো কেমন যেন হাস্যকর লাগছে। রিলেশন করলে তো ব্রেকাপ হতেই পারে! এটা নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে ! "এতদিন জাস্ট কিছু টাইম পাস করেছি, ওর ও ফ্রি সময় ছিলো আমারও ফ্রি সময় ছিলো, সেটা দুজনে মিলে একসাথে কাটালাম এতদিন, এছাড়া তো আর কিছু না ! "
.
নিলাদ্রী কাঁদছে,
একটা ছোট্ট কাঠের টুকরো দিয়ে ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে লিখেই যাচ্ছে,
রুদ্র, রুদ্র, রুদ্র, রুদ্র, রুদ্র....
.
রুদ্র: ভালো থেকো, আসি।
.
এই বলে উঠে হাটা শুরু করলো ।
নিলাদ্রী অনেক ভাবে ওকে আটকানোর চেষ্টা করলো।
কিন্তু পারলো না,
চলে গেলো নিলাদ্রীর ভালোবাসার বাঁধন ছিড়ে ।
রুদ্রের কাছে এটা যেন কোন ব্যাপারই না।
.
.
প্রায় সন্ধ্যে হয়ে আসছে,
বাসায় ফিরতে হবে খুব জলদি! রুদ্রের কানে ইয়ারফোনে ফুল ভলিউমে গান বাজলেও মাথার মধ্যে কেবল এই চিন্তা!
মাঝে মধ্যে নিলাদ্রীর কথা একটু আধটু মাথায় আসছে ওর।
"মেয়েটা কতই না বোকা! ব্রেকাপ হলে কি হয়! এই যুগে কি আর প্রেম-ভালোবাসায় কান্নাকাটি হয় নাকি! ব্রেকাপ হইছে তো ভালোই হইছে! নতুন আরেকটা প্রেম হয়ে যাবে কোনই প্রবলেম নাই"
.
রুদ্র কোনভাবে ভালোবাসার সত্যিকারের অনুভূতিটা কেমন যেন বুঝতে পারে না, আসলে বুঝতে চায় না।
কারো কোন যুক্তিতেই কান দেয় না।
ওমন প্রেম ভালোবাসা শুধু সিনেমাতেই হয়,
বাস্তবে না, ওর ধারনাটা ঠিক এমন।
.
এ সমস্ত ভাবতে ভাবতে হেটে চলেছে রুদ্র।
এই এলাকাটা একটু নতুন। রুদ্রের কাছে নতুন।
কেননা বেশি আসা হয় নি ওর এখানে।
হাটতে হাটতে ছোট মতো একটা জটলা দেখতে পেল রাস্তার পাশেই,
কিছু লোকজন গোল করে ঘিরে দাড়িয়ে কিছু একটা দেখছে, তবে সবাই চুপচাপ।
রুদ্র খানিকটা কৌতুহলী হয়ে সেখানে গিয়ে উকি দিলো।
.
এক যুবক,
রুদ্রের থেকে ২-৩ বছরের বড় হবে।
সাদা একটা পাঞ্জাবি, সাথে একটা ফরমাল প্যান্ট পড়া।
চুল গুলো বড় বড়, এলোমেলো হয়ে আছে,
বলতে গেলে একরকম চোখগুলো প্রায় ঢেকে গিয়েছে চুলের আড়ালে বললেই চলে!
গালের দাড়িগুলোও বেশ বড় বড়,
পায়ে কোন জুতা নেই!
.
মাটিতে বসে বসে তিনি কি যেন আঁকিবুঁকি করছেন!
কিছু শব্দ লিখছেন, আবার হাত দিয়ে মুছছেন,
হঠাৎ হঠাৎ হেসে উঠছেন আবার কেঁদে উঠছেন।
মাঝে মাঝে নিজের চুলগুলো গায়ের জোরে টেনে ধরছেন।
.
মাটির লেখাগুলোর দিকে তাকালো রুদ্র।
কয়েকটি শব্দ লেখা-
ভালোবাসি,
নীলপরী,
ছলনাময়ী,
আরো কয়েকটা শব্দ, কেমন যেন একটা সক ওয়েভ বয়ে গেল রুদ্রের দেহের ভিতরে,
লোকটার চেহারার দিকে ভালো করে তাকালো আবার!
"কবি দা...!!" নিজের মনেই বলে উঠলো রুদ্র।
.
কবি,
রুদ্রের সিনিয়র এক বড় ভাই,
লেখালেখি করে, কয়েকটা বইও বেরিয়েছে ইতোমধ্যে।
লাস্ট বের হয়েছে একটা উপন্যাস,
" ছলনাময়ী ও এক বিন্দু প্রেম " নামে।
.
রুদ্র ফোনটা বের করে ওদের বাসার পাশে কবি-র এক বন্ধুকে ফোন করলো।
কিছুক্ষনের মধ্যে কবির অনেক গুলো ফ্রেন্ড এসে ওকে নিয়ে গেল বাড়িতে।
.
কবি-র ব্যাপারে ওদের ভার্সিটির এমন কেউ নেই যে জানে না। সাধাসিধে সরল প্রকৃতির একটা মানুষ,
বর্তমান যুগ থেকে যেন অনেকটাই পিছিয়ে।
নীলা নামের একটা মেয়ের সাথে কবি-র রিলেশন ছিলো, কবি ওই মেয়ে বলতেই যেন অজ্ঞান ছিলো,
এই নিয়ে যে কত হাসাহাসি করা হতো মাঝে মাঝে!
প্রায় পাঁচ মাস আগে কবি কে ছেড়ে নীলা চলে যায়।
.
কবি-র ফ্রেন্ড অভি-র কাছ থেকে রুদ্র জানতে পারে যে,
নীলা ওর সাথে ব্রেকাপ করে দেয়ার পরে ওর ব্রেইনে প্রবলেম দেখা দেয়।
মাঝে মধ্যে পুরো পাগল হয়ে যায়, কোন সেন্স থাকে না,
একা একা বসে বসে কাঁদে, কোন কথা বলে না,
শুধু কি সব লেখে।
.
রুদ্র বুঝতে পারে যে কবি দার লেখা "ছলনাময়ী ও এক বিন্দু প্রেম" বইটি কবিদার নিজের জীবন নিয়েই লেখা।
.
নিলাদ্রীর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে রুদ্রের হঠাৎ করেই, মেয়েটা তখন বসে বসে মাটিতে শুধু রুদ্র, রুদ্র, রুদ্র, রুদ্র লিখেই যাচ্ছিলো।
রুদ্রের চোখের সামনে এখন যেন নিলাদ্রী আর নিলাদ্রী!
.
দাড়িয়ে থাকার শক্তি নেই রুদ্রের মাঝে,
বসে পড়লো রাস্তার পাশেই,
চোখ থেকে অঝর ধারায় জল ঝরছে ওর,
নিজেকে পৃথিবীর বুকে সব থেকে বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে রুদ্রের।
.
সন্ধ্যা গড়িয়েছে মাত্র,
নিলাদ্রীর সাথে যেখানে শেষ কথা বলে এসেছিলো একটু আগে সেখানে রিক্সা নিয়ে ফিরে এলো রুদ্র।
এখনো বসে আছে সেই ভালোবাসা পাগল বোকা মেয়েটি, চোখ থেকে জল গড়িয়েই যাচ্ছে।
রুদ্রের বুকের ধুকধুকানিটা হাজার গুনে বেড়ে গেছে,
কোনমতে নিলাদ্রীর কাছ পর্যন্ত পৌছেই ওর পায়ের কাছে বসে পড়লো রুদ্র।
.
বাচ্চাদের মতো কাদছে রুদ্র,
নিলাদ্রীর কোলে মাথা গুঁজে,
সেই ভালোবাসা পাগল বোকা মেয়েটিও কাঁদছে,
কাদতে কাদতে দু হাতে রুদ্রকে ধরে নিজের পাশে বসালো,
.
নিলাদ্রী: রিলেশনশিপ হলে তো ব্রেকাপ করাই যায়, তাই না...?
.
নিলাদ্রীর কথা শুনে রুদ্র নিলাদ্রীকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাদতে লাগলো,
"আমি তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো, কক্ষনো যাবো না..."
নিলাদ্রীর চোখের থেকে এই মুহূর্তে গড়িয়ে গেল কয়েক ফোটা জল,
তবে নিলাদ্রীর এই চোখের জল কষ্টের না,
এই চোখের জলের একটাই নাম,
ভালোবাসা.....
.
.
©somewhere in net ltd.