![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুন্দরবন — পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। বঙ্গোপসাগরের উত্তরে বিস্তৃত এই অরণ্য শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তা-ই নয়, এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের আধারও। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য এই বনভূমি হাজারো প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। আজ আমরা এক নজরে দেখে নেব সুন্দরবনের কিছু সাধারণ ও উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর কথা।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)
সুন্দরবনের প্রাণ বলা চলে এই রাজা—রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এটি বিশ্বের বাঘ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী। সুন্দরবনে প্রায় ৯০-১০০টি বাঘের বাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এরা সুইমার হিসেবে দারুণ দক্ষ এবং খাঁড়ি পেরিয়ে শিকারে যেতে পারে। বনের গভীরে ও নিস্তব্ধ পরিবেশে এরা একচ্ছত্র অধিপতি।
কুমির (Estuarine Crocodile)
সুন্দরবনের নদী ও খাঁড়িতে বাস করে বৃহত্তম প্রজাতির লবণাক্ত পানির কুমির। এরা হিংস্র হলেও সাধারণত মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে। এই কুমিরগুলো ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এদের প্রধান খাদ্য মাছ ও ছোট প্রাণী।
বানর (Rhesus Macaque)
সুন্দরবনের অন্যতম সাধারণ দৃশ্য হলো গাছের শাখায় লাফিয়ে বেড়ানো বানরের দল। বিশেষত পর্যটন এলাকাগুলোতে এদের দেখা মেলে বেশি। বানররা সামাজিক প্রাণী, দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে এবং খাদ্যের সন্ধানে প্রায়ই মানুষের কাছাকাছি চলে আসে।
চিত্রা হরিণ (Spotted Deer)
সুন্দরবনের সবচেয়ে সাধারণ স্তন্যপায়ী প্রাণী হলো চিত্রা হরিণ। এদের সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষাধিক। সুন্দরবনের ঘন বনাঞ্চল ও ঘাসযুক্ত এলাকা তাদের প্রিয় বাসস্থান। হরিণদের শিকারি প্রধানত বাঘ ও বন্য কুকুর।
সাপ (Various Species of Snakes)
সুন্দরবনে বিষাক্ত ও অবিষাক্ত উভয় ধরনের সাপ পাওয়া যায়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো কিং কোবরা ও র্যাশেল ভাইপার। যদিও সাপ মানব বসতির কাছাকাছি কম আসে, তবুও বনের গভীরে চলাচলের সময় সতর্ক থাকা জরুরি।
পাখি (Birds)
সুন্দরবন প্রায় ২৬০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। মাছরাঙা, বক, চিল, হাঁস, ঈগল এবং নানা ধরনের সামুদ্রিক ও জলচর পাখি এখানে দেখা যায়। এই পাখিরা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কচ্ছপ (Turtle)
সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলোতে ও ম্যানগ্রোভ জলাধারে বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ বাস করে, বিশেষ করে অলিভ রিডলি কচ্ছপ। প্রজননের জন্য তারা নির্দিষ্ট সময়ে তীরে উঠে আসে।
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা একে অপরের সঙ্গে ও প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে বাঁচে। এই মহাবন আমাদের দেশের প্রকৃতিক ও পরিবেশগত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এই দুর্লভ ও সংবেদনশীল প্রাণীদের সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ ও বন্যপ্রাণী যেন যুগের পর যুগ টিকে থাকে — সেটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
আপনি যদি কখনো সুন্দরবন সাফারীতে যান, মনে রাখবেন—এটি প্রাণীদের ঘর। সম্মান ও সচেতনতা নিয়ে বনে প্রবেশ করুন, এবং বনের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।