![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শারজাহ এয়ারপোর্টের ট্রানজিটে এক মধ্যবয়স্ক নারীর সাথে কথা হয় যিনি আমার মায়ের বয়সী, তিনি নেপাল অন্নপূর্ণা আসছিলেন মাউন্টেইনিং করতে।তার পরিবারেও স্বামী ,বাচ্চাকাচ্চা আছে। মাউন্টেইনিং তার সখের কাজ।প্রতিবছর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই ভ্রমন করেন। সারা বছর বিভিন্ন ধরণের কাজ করে এ ভ্রমনের টাকা যোগাড় করেন।
আমার আম্মার সর্বোচ্চ সখ হচ্ছে ঢাকায় এসে দেখা যে তার বাচ্চাকাচ্চারা কেমন আছে। তার অন্য সখ হচ্ছে আমরা বাড়ি গেলে বিভিন্ন ধরণের পিঠাপুলি, রঙ বেরং এর রান্না করে খাওয়ানো এবং আমাদের হাসিমুখ দেখা। যখন আমরা কোন সাফল্যের কাজ করেছি আম্মা তখন সুখী । আমার রেজাল্ট খারাপ হইছে ,আমরা বাচ্চাকাচ্চারা কোন জায়গায় ফেইলার হইছি আম্মা দুঃখী।তার ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের কোন এলিমেন্ট নেই।এর কারণ আমার আম্মা গৃহিনী। এর উপযুক্ত প্রতিশব্দ কি হবে তা আমি জানিনা,ছোটবেলা থেকে এটাই শিখে এসেছি।
এটি আজব একটি প্রফেশন, যার সার্ভিস টাইম ভোর পাচটা থেকে শুরু এবং ডিউটী কখন শেষ হবে তা অনির্ধারিত। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর থেকেই সারা রাত জেগে জেগে চোখের ঘুম হারাম করে সন্তান লালন পালন এবং সকালবেলা সবার আগে তাকেই
কিচেনে দেখা যাবে।তার কোন সাপ্তাহিক ছুটিও নেই এবং ২৪*৭ সার্ভিস দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে সে এবং তা চলবে তার মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত।
অথচ তার স্বামীকে কেউ যখন জিজ্ঞেস করবে আপনার সহধর্মিনি কি করেন?
তিনি উত্তর দেবেন ,না তেমন কিছু করে না ,বাসায়ই থাকে।
সেই নারীকে যখন জিজ্ঞেস করবে আপনি কি করেন?
সেই নারী লজ্জাবনত হয়ে বলবেন, নাহ তেমন কিছু করিনা,সংসারের দেখাশুনা করি আর কি।
আমাদের সমাজে এটা কোন স্বীকৃত প্রফেশন না ,বেকারত্ত্বই ধরে নেওয়া হয়।কেননা অর্থনীতির ভাষায় মায়ের মমতার কোন অর্থমূল্য নেই , স্ত্রীর সোহাগের কোন আর্থিকমূল্য হয় এক না। ইমোশনালি এটা অমূল্য কিন্তু অর্থনীতিতে অ+মূল্য ই অর্থাৎ যার কোন মূল্যই নেই।
আপনি রেস্টূরেন্টে এক বেলা খেতে যান আপনাকে গুণতে হবে কাড়িকাড়ি অর্থ অথচ সারাজীবন তার রান্না খাবেন কিন্তু তার কোন বিনিময় মূল্য নেই কারণ এটা আপনার অধিকার।
অথচ এই রান্নাই তিনি রেস্টূরেন্টে করলে অর্জন করতে পারবেন ভাল পরিমাণের অর্থ।
স্নেহ , ভালবাসা আদরের হিসেব না হয় বাদই দিলাম , একটি সংসার চালাতে তিনি যেকাজগুলো করেন তার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু কাজ অন্য কমার্সিয়াল জায়গায় করলে তাকে একটা স্বাস্থ্যবান অর্থমূল্য তাকে দিতেই হবে।
তবে আমরা কি করে গৃহিনি বলে তাকে বলে ফেলি, নাহ তেমন কিছু করেন না ,বাসায়ই থাকেন , শুধু সংসারের দেখাশুনা করেন!!
আমাদের দেশের নারীদেরও প্রকারভেদ আছে কিন্তু আমাদের সমাজের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন ইনারাই।তাদের জন্যই বিশ্বে যেখানে পরিবারের বন্ধন ভেঙ্গে মানুষ একাকীত্ত্বের সাথে লড়াই করে করে আত্মহত্যা করে চলেছে আর আমরা পরিবারের ভালবাসা নিয়ে নীতি নৈতিকতা এবং সুস্থ্য সামাজিক মূল্যবোধের সাথে জীবন যাপন করে চলেছি। একটা পরিবারের সকল বন্ধন , ভালবাসার নিউক্লিয়াস ইনারাই।
নারী দিবস গেল অথচ আমার মা জানেনইনা বা জানলেও হয়তো ন্যাকামি বলে উড়িয়েই দিয়েছেন। তার কাছে এ দিবসের কোন বিশেষ গুরুত্বই নেই। নারী দিবস তার সামনে একটি পোশাকি দিবস মাত্র।আমার মায়ের মত যারা আছেন হয়তো যাদের অধিকারের জন্যই এ নারী দিবস তারা হয়তো জানতেও পারেন নি পুরো বিশ্বে কত ধুম ধাম করে এ দিবসটি পালিত হয়ে গেল।তারা থেকে গেলেন তাদের অবস্থানেই। আবার অন্যদিকে যেসব নারীরা অনেক বেশি প্রিভিলেজড তারা হয়তো এই একই সময়ে আরও বেশি স্বাধীনতার জন্য আরও জোড়ালো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আমার মা রা হয়তো স্বাধীনতাই চান না, এ বিষয়টি তাদের চিন্তা চেতনারই অন্তর্গত না।
এটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা কথা মনে পড়ে যায় যা ছোটবেলায় পড়া......
কোন সার্কাস পার্টির প্যাভিলিয়নে আগুন লাগলে সবার আগে মারা যায় শক্তিশালী হাতিগুলোই।
এর কারণ হাতিগুলো যখন বাচ্চা থাকে তখন থেকেই ছোট্ট খুটিতে কিংবা গাছের গুড়িতে বেধে রাখা হয় ,তখন বাচ্চা হাতি সেই খুটিকে কেন্দ্র করে চারপাশে পাক খায় এবং সেখান থেকে ছোটার শক্তি মেলেনা , মজার ব্যাপার হচ্ছে হাতিগুলো যখন বড় হয় এবং সার্কাস প্যাভিলিয়নে আগুন লাগে মস্ত হাতিটি তখনো ওই খুটি কেন্দ্র করেই ঘুরতে থাকে এবং সে একটুও জোর খাটায় না , তার মাথায়ই আসেনা যে সে চাইলে এই খুটি ভেঙ্গে চূড়ে চলে যেতে পারবে।এই পরাধীনতা তার অভ্যাসে রপ্ত হয়ে গেছে।
তেমনি আমার মায়ের মত অতি সাধারণদের কাছে এসব পরাধীনতা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে , তারা কখনো ভুল করেও অনুভব করেনা। মাথায়ও আসেনা তাদের। এখানে তারা সেই বাচ্চা হাতিরই নামান্তর।
এভাবেই চলে আসছে এবং চলবেও হয়তো এভাবে ...
১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯
রায়ান কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ !!
২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩
আরিয়ান আরাফ বলেছেন: বেশ লাগল
১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫০
রায়ান কামাল বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব কবি
৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪৭
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
লেখাটি ভাল লাগল।
ভাল থাকুন। শুভব্লগিং।
১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫২
রায়ান কামাল বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১০
উপপাদ্য বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
লেখা চালিয়ে যান। ধন্যবাদ
১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩৫
রায়ান কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: গতানুগতিকতা থেকে বের হয়ে আমাদের অস্তিত্বকে মাকে তাঁর পূর্ণ অধিকার দিতে হবে স্বীকৃতি দিতেই হবে।অনেক সুন্দর লিখেছেন
শুভ ব্লগিং