![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চারিদিকে লাশের গন্ধ—শোকে নিস্তব্ধ গোটা এলাকা। সাভারে ধসে পড়া নয়তলা ভবন থেকে জীবিতদের উদ্ধারে প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে। ২৯ জনের মতো আটকা পড়া মানুষকে গতকাল শনিবার সকাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তখন বেলা পৌনে তিনটা। এর মধ্যে হঠাত্ নীরবতা ভেঙে একটু আনন্দের ঢেউ। সবার ব্যস্ততা বেড়ে গেল। অনেকেই দৌঁড়ে যাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের কাছে। জানা গেল, আরো একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন প্রস্তুত রাখা হলো। ভবনের সুড়ঙ্গ থেকে টেনে তোলা হলো এক শীর্ণকায় যুবককে। চেষ্টা করা হচ্ছে, তার মুখে অক্সিজেনের মাস্কটি লাগানোর। কিন্তু ছেলেটি আর কৃত্রিম শ্বাস চায় না। প্রাণে বেঁচে আসা শ্রমিক যুবকটি চায় খোলা বাতাসে শ্বাস নিতে। যেন পরখ করতে চাইছে নব জীবনকে। শ্বাস নিতে পেরে তার শরীরে যেন শক্তি সঞ্চরিত হলো। বললো, আমার বাড়ি গাইবান্ধায়। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত ফেরায় তার চোখেমুখে আনন্দের ঝলকানি—মৃত্যুকে জয়ের পরম তৃপ্তি।
এর কিছুক্ষণ পর আবারো সবাই যেন ব্যস্ত হয়ে উঠলো। এবারোও ভালো খবর। জীবিত আরো একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এবার এক নারী শ্রমিককে উঠানো হয়েছে ধসে পড়া ভবন থেকে। চারদিন অন্ধকার ধ্বংসস্তূপে থাকার পর পৃথিবীর আলোয় যেন নিজেকে দেখতে চাইছে সে। তাকেও মাস্ক পরানো গেল না। উন্মুক্ত আকাশের নিচে সে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চায়। শুধু এই দুজন নয়—চার দিন ধরে প্রাণে বাঁচার লড়াইয়ের পর মৃত্যুদ্বার থেকে ফিরে আসা ২৯ জনের অনেকেই দেখিয়েছে বাঁচার উচ্ছ্বাস।
বেঁচে থাকার ইচ্ছা মানুষের সহজাত। কিন্তু মানুষকে বাঁচানোর আনন্দও যেন তার চেয়ে কম নয়। সাভারের রানা প্লাজায় আটকা পড়াদের জীবিত উদ্ধারের পর আনন্দের ঢেউ যেন ছড়িয়ে পড়ে সকল উদ্ধারকর্মীর মাঝে। গতকাল তিনটার দিকে, উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত মেজর মাহবুবুর রহমান এসে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খানকে জানালেন, ভবনের এক কোণে জীবিত আরো ১২ জনের সন্ধান মিলেছে। এ খবরে আলী আহমদ খান তাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ওদের পানি, স্যালাইন দেয়া হয়েছে? অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে? মেজর মাহবুব জানালেন, দেয়া হচ্ছে। আলী আহমদ খান বলেন, প্রতিটি জীবিত মানুষ উদ্ধারে আমরা উজ্জীবিত হই। একটি মানুষের প্রাণ থাকতে আমরা এ অভিযান বন্ধ করবো না। শুধু ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা নন। জীবিত উদ্ধারে উল্লসিত হয় সকল স্বেচ্ছসেবকও। যারা এসব মানুষকে উদ্ধারে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
©somewhere in net ltd.