![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে গিয়েছিলাম কুয়াকাটা। দেশে বিদেশে অল্প বিস্তর ঘোরাঘুরি করা হলেও কুয়াকাটা যাওয়া হয়নি কখনো। এবার তাই ঝড় বাদলের দিনেই যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক হলো লঞ্চে যাবো। সঙ্গে আরেক বন্ধু দম্পতি। অফিসের এক সহকর্মীর সহায়তায় বিলাস বহুল লঞ্চ কীর্তনখোলা-২ এর ভিআইপি কেবিন বুক করা হলো অন্য কোন কেবিন না পাওয়ার কারনে। যাত্রার দিন বন্ধু দম্পতি জানালো ঝড় বাদলের কথা চিন্তা করে তারা যাত্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অগত্যা কি আর করা- আমি আর আমার বউ বাক্স পেটরা গুছিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কীর্তনখোলায় চড়ে বসলাম।
এটা আমার প্রথম লঞ্চ ভ্রমন, তাই ব্যাপক উত্তেজিত ছিলাম আর ভিআইপি কেবিন মোটামুটি এলাহি কারবার- এটাচড্ বাথ, সোফা, ড্রেসিং টেবিল, কারুকার্য করা ডাবল খাট, এলসিডি টিভি, ফ্রিজ, স্প্লিট এসি কি নেই। পুরোপুরি বাসা যেন। রাতে আলিশান ডাইনিংয়ে মাছ, মাংস, সব্জী, ভর্তা আর ডাল দিয়ে ফাটাফাটি ডিনার সেরে বিছানায় আরাম করে শুয়ে সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুম, অতঃপর নির্ঝঞ্ছাটে ভোরে বরিশাল আগমন। বরিশালে লঞ্চ ঘাটে নেমেই নাস্তা সেরে লোকাল বাসে কুয়াকাটার পথে যাত্রা। পাঁচ ঘন্টায় চারটি ফেরি আর চরম বিরক্তি উৎপাদন করে অবশেষে বেলা একটায় বাস পৌছলো কুয়াকাটায়। হোটেল বুক করেছিলাম সি-বীচের একদম কাছেই, হোটেল সি ভিউ। তেমন আহামরি হোটেল না কিন্তু বিশাল একটা এয়ার কন্ডিশন্ড রুম দেয়া হলো আমাদের মাত্র ষোলশ টাকা প্রতি রাত ভাড়ায়, সামনে বিরাট বারান্দা, সরাসরি সাগরের দিকে মুখ করা। বারান্দায় বসেই সাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রবল বাতাসের দাপাদাপি টের পাওয়া যায়।
প্রথম দিনটা বরাদ্দ রাখলাম বীচে ঘুরাঘুরি করার জন্য আর আশপাশটা রেকি করার জন্য। অফ সিজন, তাই পর্যটকদের তেমন আনাগোনা নেই, আশে পাশের এই নির্জনতা বরং ভালোই লাগলো। আবহাওয়া কিছুটা মেঘলা, ঝড় হবে হবে ভাব, সাগরে তাই বেশ বড় বড় ঢেউ আর হাওয়ার প্রচন্ড দাপাদাপি। সন্ধে পর্যন্ত বীচের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত হেটে বেরালাম আর অনেক ডাব খেলাম। অসাধারন স্বাদ আর দাম ও ঢাকার অর্ধেক। রাতে ব্যাপক খাইদাইয়ের পর এক মটর সাইকেলওয়ালার সাথে পরদিন সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখানোর কন্ট্রাক্ট করে হোটেলে ফিরে ঘুম। বলা বাহুল্য কুয়াকাটায় মটর সাইকেল ঘুরাঘুরির প্রধান বাহন, কিছু রিকশা ভ্যান ও আছে। ভোরে নাস্তা সেরে প্রথমে গেলাম ঝাউবন আর গঙ্গামতির চর, সেখানে বেশ কিছুক্ষন কাটালাম, চমৎকার জায়গা আর প্রতি ব্রেকেই আনলিমিটেড ডাব চলতে লাগলো। বীচের ওপর দিয়ে মোটর সাইকেল ছুটছে আর হাওয়ার মাতামাতি, অসাধারন লাগছিলো। গঙ্গামতির চর থেকে নৌকায় মটর সাইকেল এবং আরোহী খাড়ি পার হয়ে অন্য পাড়ে নেমে লাল কাকড়ার চরে (মতান্তরে কাউয়ার চর)। কাকড়ার দেখা অবশ্য পাওয়া গেলনা কাছ থেকে। ব্যাপক চালাক এই রেড ডেভিল গুলি। লাল কাকড়ার চর থেকে বিচের ওপর দিয়ে আর প্রায় আধাঘন্টা ঘুরে মিস্ত্রিপাড়ায় বৌদ্ধ মন্দির দেখতে গেলাম। গাইড গিয়ে পুরোহিতকে ডেকে আনলো খুলে দেবার জন্য। ভিতরে ঢুকে ৩০ ফুট উচু বৌদ্ধ মুর্তি দেখলাম, কিছু টাকা নজরানা দিলাম। ছবিটবি তুলে আবার যাত্রা আরেকটি বৌদ্ধ মন্দিরের দিকে সেটি কুয়াকাটার মুল অংশের দিকে। সেখানে দেখলাম কুয়াকাটার সেই কুয়া যার নামে এই এলাকার নামকরন। সেখানেও আরেকটি বৌদ্ধ মুর্তি আছে তবে অনেক ছোট। তাঁরপর দেখলাম বালুর নিচ থেকে উঠে আসা পুরোন আমলের কাঠের নৌকা যা সেনাবাহিনীর সহায়তায় ট্রেইল বসিয়ে তীরে এনে রাখা হয়েছে। এটিকে সংরক্ষনের আর কোন ব্যাবস্থা দেখলাম না।
ইতিমধ্যে দুপুর হয়ে এসেছে। দুপুরের পর যাবার প্ল্যান লেবুর চর বা লেম্বুর চর। গাইড কাম মটর সাইকেলওয়ালাকে বলে দিলাম লেম্বুর চরে ফোন করে ভাত আর ডাল রান্না করে রাখার নির্দেশ দিতে। আমরা কিছুক্ষন রেষ্ট নিয়ে তারপর ওখানে গিয়ে তাজা মাছ সিলেক্ট করে দেব রান্না করার জন্য। লেম্বুর চর আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। সবুজ বন আর সাগরের চমৎকার মিলবন্ধন। বনের ভিতর ধবধবে সাদা বালুর ওপর পলিথিন দেয়া ছাপড়া যেখানে তাজা মাছ ভেজে দেয়া হচ্ছে। আমরা একটি মাঝারি সাইজের ইলিশ, একটি বড় গলদা চিংড়ি আর দুটো মাঝারি রুপচান্দা মাছ বেছে দিলাম ৭০০ টাকায় রান্না করে দেয়া সহ। ভালো ডিল মনে হলো আর না হলেই বা কি, ঘুরতে এসে একটু এদিক ওদিক হলোই বা। রান্না হতে হতে মিনিট চল্লিশ লাগবে। আমি লেগে গেলাম ক্যামেরা নিয়ে। রান্না হলে বালু থেকে বাচার জন্য বনের একটু ভিতরের অংশে টেবিল আর চেয়ার বিছিয়ে খাবার দেয়া হলো। তাজা মাছ, গরম ভাত আর ডাল দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খেয়ে দেয়ে আবার ঘুরাঘুরি। এবার লেম্বুর চর পার হয়ে আরও কিলোমিটার খানেক গেলাম। ফাতরার চর দেখা যাচ্ছে খাড়ির ওই পাড়ে। সাগর অশান্ত থাকার কারনে আমরা অবশ্য ওপারে গেলাম না। বিকেলে মুল সৈকতে ফিরে এসে পানিতে দাপাদাপি। ঘন্টাখানেক জলকেলী করে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ টেশ হয়ে সন্ধায় আবার পেটপুজা করে সাকুরা পরিবহনের বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। সাথে করে দুই ডজন ডাব আর অজস্র সুখ স্মৃতি নিয়ে আসলাম। ছবি দেখুন-
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:১২
আনিসা তাবাসসুম বলেছেন: অনেক অনেক সুন্দর