![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশ না দ্যাশ ? শেষ না শ্যাষ ? আড্ডায় বারবার ফিরে আসে বিয়োগান্ত রাজনীতির কথা, ভবিষ্যতের কথা, দেশের কথা। দুই মহীয়সীর চণ্ডাল টানাটানিতে আদর্শ জলাঞ্জলি, প্রত্যাশা দূর পরাহত আর ভবিষ্যৎ ? অন্ধকার বিদিশার নিশা। আড্ডায় রাজনীতি এলেই, কিঞ্চিৎ পরিমান সুযোগ ছাড়াই কোন এক পক্ষের গাড্ডায় পড়তেই হয়। নিজে যেচে না পড়লেও সঙ্গীরা ঠিকই আপন দায়িত্বে গাড্ডায় নামাবেই। আগে তাও আশার দিশা হিসেবে মধ্যবর্তী একটা জায়গা ছিল। নিরপেক্ষ, সুশীল, মুক্তমনা। এখন এই মধ্যবর্তী জায়গাই যেন মানব দেহের মধ্যবর্তী জায়গার চেয়েও বেশী অশ্লীল, বেশী অস্পৃশ্য। আহা! “ডাস্টবিনের দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি” দেখতে দেখতে খলিল মামার টং দোকানের চা হাতে সুশীল বেশে ভাব মারার দিনগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে।
আড্ডার বিষয় পরিবর্তন হওয়া কিংবা অসম্ভবকে সম্ভব বানানোর উপমা, উদাহরণগুলো নির্জলা ভাবাবেগে কেমন যেন ঠিক ঠিক মানিয়ে যায়। আড্ডার মধ্যমণি বিংবা সবচেয়ে সুযোগ সন্ধানী সঙ্গীটি সেটিকেই চ্যাংদোলা করে ধরে অসম্ভব সুবক্তার মুখেও কালো ঘুচঘুচে আঁধার নামিয়ে আনে। আবার মাঝে মাঝে বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে “আঁধার মুখে, গাধার চিত্তে” পরবর্তী সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এইতো সেদিন এক উজ্জ্বল, উচ্ছল সান্ধ্য আড্ডায় উদাহরণ হিসেবে এসে গেলো সাবেক জাতীয় দলের ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা। জনের এক কথা এবং অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত কথা হল “খালেদ মাহমুদ সুজনের বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অবদান হোল ঠিক সময়ে জাতীয় দল থেকে বিদায় নেয়া”। জনের কথা শেষ হতে না হতেই বাউনা জামাল লাফিয়ে উঠলো- “ক্যান ? সুজন আবার কি করেছে ? এমব্রোস, ওয়ালসের সামনে সেই নির্ভীক একমাত্র দাড়িয়ে যেত। সকল কেশাগ্র দণ্ডয়মান করে বুনো ষাঁড়ের মতো দাড়িয়ে থাকতো”। পাশ থেকে মইত্যা চেচিয়ে উঠলো- “ষাঁড়ের মতো সব খাড়া কইরা খালি খাড়ায় থাকলে হইবো? পুরা টিম তো বইয়া পড়ত। নাহ ? তবে এইটা ঠিক হালার বোলিং করনের স্টাইল আছিল জব্বর-দস্ত। হেভভি স্প্রিড এ উইরা আইয়া ক্যামনে কি? অটোমেটিক চাইনিস স্টেনগান থেইক্কা গুলতির গুলি বাহির হইয়া যাইত। উচা-লাম্বা, হাড্ডা-খাড্ডা খাম্বা পালোয়ানটি আউট হইয়া যাইত। অবসর লইছস শ্যাষ। তোর আবার কাম কি?” কিন্তু ওই যে বললাম, আড্ডার বিষয় কিংবা উপমা, উদাহরণের কোন সীমানা থাকে না। ঠিক তেমনি, সাবেক ক্রিকেটার উদাহরণ হয়ে গেলো রাজনৈতিক জাতীয় নেতার। “ইয়া বড় আমলা, সেইরাম সেনা / লাল ফিতা, বুদ্ধিতে যায় যে চেনা”। সোহেল মইত্যার কথা কেড়ে নিয়ে বলল “সখা শুধু কেন ক্রিকেটেই দাও মন / দেখো চারিদিকে দখল নিয়েছে কেবলি সুজন”। মইত্যা জিজ্ঞেস করে “কাগো কথা কস ? সুশীল সুজন নাকি বিসিবি সুজন ?” সোহেলের অধৈর্য আস্ফালন – “আহা! বুঝিস না ক্যান? সুজন তো একটা উদাহরণ। দেখনা, একজন আমলা কিংবা সামরিক অফিসার সেই যে চাকুরী জীবনে ঢুকে, একবারের জন্যেও পেছনে তাকায় না। সামনে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর পেছনে পরে থাকে একটা নিতান্তই আটপৌরে জীবনের চিন্তায় ব্যস্ত অগণিত সাধারণ মানুষ। সেই শিক্ষানবিশ আমলা কিংবা সদ্য সেনা পুরোহিত চলে যায় সেইসব মানুষের দৃষ্টিসীমা থেকে দূরে, আরও দূরে, তারপর চিন্তার বাহিরে। অবাক করা ব্যাপার, তারাই আবার অবসরের পরে হয়ে যায়- সেসব মানুষের নেতা, দুঃখ দিনের সাথী”।
প্রতি আড্ডায় এক আধ জন পাতি নেতাও থাকে। আমাদের আড্ডার পাতি নেতা মামুন চেচিয়ে বললো-“খালি নেতার দোষ খুঁজো ক্যান? সুশীল বুদ্ধিজীবীদের দেখো না? যেই সুশীল রাষ্ট্রে ধর্মের ঝাণ্ডা গাড়ে সেই আবার তোলে অসাম্প্রদায়িকতার হাওয়া। কমলাপুরের বস্তি থেকে মঙ্গল গ্রহের বসতি। ইনারা সবই জানে। যে সুশীল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মরনাস্ত্ররে কারিগরি দিক আর সর্বচ্চো ব্যাবহার নিয়ে জানে, সেই আবার অগাধ পণ্ডিত মানবিক আবেগ, অনুভুতি, প্রেমিক যুগলের পবিত্র সম্পর্ক বিষয়ে। শান্তিতে বিশেষজ্ঞ, যুদ্ধে বিশ্লেষক আর মরনাস্ত্রে অভিজ্ঞ। আলপিন থেকে এরোপ্ল্যন। ইনারা জানেননা কি?”
বুঝলাম আড্ডা আবার দুই পক্ষের যাঁতাকলে পরে মধ্যবর্তী স্পর্শকাতর স্থানে চাপা খেতে চলেছে। তাই পরিবেশ একটু হাল্কা করার জন্যে বললাম- “আমেরিকার একটা গুগল থাকতে পারে, আমাদের অনেক গুগল”। মামুন ফোঁড়ন কেটে বললো-“খালি Google ? ইনারাই Google হয়ে আলোচনায়, Facebook হয়ে Evening Party তে। আর রাত হলেই Viber, Whatsup”. আড্ডার সবাই একসাথে হেসে উঠলো। কিন্তু রাজনীতি সচেতন বাঙ্গালী হিসেবে অমানিশার অশনি সংকেত বুঝি অজান্তেই সবার অন্তরে বেজে চললো।
ভারত্ত্রাতা আর পাকিস্তানভ্রাতার মাঝে আর বুঝি কোন মধ্যবর্তী নিরপেক্ষ উসর প্রান্তর থাকলোনা। সব বুঝি কাশ্মীর ভূস্বর্গ হয়ে রইল। ভারত্ত্রাতা আর পাকিস্তানভ্রাতার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বিস্ফোরন্মুখ এই মধ্যবর্তী নিরপেক্ষ প্রান্তর। দ্রোহী বাঙ্গালীকে এবার সত্যি রাজনৈতিক সাম্যের এলাকা থেকে বিদায় নিতে হবে। সকালের ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপ হাতে পত্রিকার বদলে হয়তো শোভা পাবে অত্যাধুনিক কোন গ্যাঁজেট। এটাই হয়তো ডিজিটাল বাংলাদেশের ঊষালগ্ন।
©somewhere in net ltd.