নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মহীন শিক্ষা-ব্যবস্থার উত্তরাধিকার

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১

মানবজাতির ইতিহাসে ধর্মের অধ্যায়টি বিরাট। এ বিরাট অধ্যায়ের দিকে তাকানোর জন্য আমাদের সামনে এখন দুটো চশমা রয়েছে। একটি ধর্মহীন চশমা, আরেকটি ধর্মের চশমা। এ দুটো চশমায় আমাদের অতীত দুটি ভিন্ন প্রকৃতি নিয়ে ধরা পড়ে।
ধর্মহীন চশমা বলছে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে, এর কোনো স্রষ্টা নেই। সকল জীব ও জড়ও এমনি এমনিই সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণীকূলের মধ্যে কেউ উন্নত, কেউ অনুন্নত যা নির্ণিত হয়েছে তাদের অভিযোজনের ক্ষমতার তারতম্য দ্বারা। মানুষ (খুব সম্ভবত) একটি বানরজাতীয় বিবর্তিত প্রাণী, যার আদিপিতা-পিতৃব্যরা গাছে থাকত, তাদের লেজ ছিল। খুলির আকৃতির পার্থক্য অনুযায়ী তারা নিগ্রয়েড, ককেশয়েড, মঙ্গলয়েড, অস্ট্রালয়েড ইত্যাদি শ্রেণিবিন্যাসে বিভক্ত।
আর ধর্মের চশমা বলছে, এই বিশ্বজগৎ নিজে থেকে সৃষ্টি হয় নি, এর একজন স্রষ্টা আছেন, যিনি নিরন্তর এটি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিপালন করছেন। তিনি বিশ্বজগতে এমন কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম, ব্যবস্থা বা চক্র আরোপ করেছেন যার দ্বারা সকল বস্তু ও প্রাণির সৃষ্টি, পালন, বাস্তুসংস্থান, ধ্বংস ইত্যাদি সাধিত হয়। মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ ও ব্যতিক্রমী এক সৃষ্টি যার উদ্ভব জান্নাতে, যার আদিপিতা আদম (আ.), আদিমাতা হাওয়া (আ.)। তাদের থেকেই আজকের সকল হিন্দু, সকল বৌদ্ধ, সকল মুসলিম, সকল খ্রিষ্টান, আর সকলেই।
একটি চশমা দিয়ে তাকালে দেখি নূহ (আ.), ইব্রাহীম (আ.), মুসা (আ.), ঈসা (আ.) ইত্যাদি বহু উজ্জ্বল নাম। অন্য চশমায় তাদেরকে দেখা যায় না, সেখানে আছে বস্তুবাদী দার্শনিক আর বিভিন্ন রাজবংশের নাম। একটি চশমা বলছে, মানব ইতিহাস নবী-রসুলদের মাধ্যমে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের সংগ্রামের ইতিহাস, ধর্মের দ্বারা মানবজাতির শান্তি পাওয়ার ইতিহাস। অন্য চশমাটি বলছে মানুষের অতীত অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল ধর্ম নামক কুসংস্কার ও বর্বরতা দ্বারা। বর্তমানে ধর্ম বিদায় নিয়েছে, মানুষ অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে।
বর্তমানে আমরা জাতি হিসাবে দ্বিধাগ্রস্ত, ধর্ম ও আধুনিকতা একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে দণ্ডায়মান, দু নৌকায় পা দিয়ে আছি আমরা। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি উজ্জ্বল আকর্ষণ নিয়ে হাতছানি দিচ্ছে, ধর্ম ক্রমেই বিবর্ণ ও আকর্ষণহীন বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্তের কণিকায় মিশে আছে যা বাদ দেওয়া সহজ নয়। তবে শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টির যে প্রচেষ্টা বিগত শতাব্দীগুলোতে চালানো হয়েছে তা খুবই সফল হয়েছে। উত্তর-ঔপনিবেশিক তথাকথিত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় এই দ্বিধা ও সন্দেহ সৃষ্টির সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। উপরে যে দুটো চশমার কথা বললাম, বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যা, বিশেষ করে মুসলিম নামধারীরা এ দুটো চশমা দিয়েই নিজেদের ইতিহাসকে দেখতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। এর প্রভাব পড়ছে তাদের ব্যক্তি থেকে জাতীয় জীবনের সর্বত্র।
এ শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মকে রাখা হয়েছে নামে মাত্র। এস.এস.সি পর্যন্ত ধর্মের যেটুকু রাখা হয়েছে সেটুকুর উদ্দেশ্য নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান। কারণ এটা অস্বীকার করার মত অবস্থা এখনও সৃষ্টি হয় নি যে, সকল ভদ্রতা, শিষ্টাচার, সত্যনিষ্ঠা ধর্মেরই অবদান। ধর্ম বইতে বলা হচ্ছে সমস্ত কিছুর মালিক স্রষ্টা, অথচ অন্য সকল বইয়ে ‘আল্লাহ’ শব্দটিও খুঁজে পাওয়া মুশকিল, এমনভাবে স্রষ্টার অস্তিত্বতে অস্বীকার করা হয়েছে। আর ধর্মকে সবচেয়ে গুরুত্বহীন বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। যে ধর্ম সেখানে শেখানো হচ্ছে সেটাও মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই আলোচনা করে, সামষ্টিক জীবন কীভাবে চলবে তা শেখানোর জন্য আছে অন্যান্য বিষয়সমূহ। এটা হচ্ছে মানবজাতিকে ধর্মবিমুখ করে তোলার একটি সুদূরপ্রসারী প্রক্রিয়া। কিন্তু পাশ্চাত্যে নানা কারণে এ প্রক্রিয়া কিছুটা সফল হলেও প্রাচ্যে এটি কয়েক শতাব্দী পরও খাপ খাচ্ছে না। বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে একটু গভীরে যেতে হবে।
‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ দর্শনটি উনিশ শতকে যুক্তরাজ্য থেকে প্রথমত উদ্ভূত হয়েছে। ১৮৪৬ সালে জর্জ জ্যাকব হোলিওক (George Jacob Holyoake) নামক এক ব্যক্তি সেকুলারিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। Oxford Dictionary-তে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (Secularism)-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, Belief that religion should not be involved in the organization of society, education, etc. অর্থাৎ সমাজ কাঠামোতে ধর্মকে সম্পৃক্ত করা যাবে না এমন বিশ্বাস পোষণ করাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। এ মতবাদের অনুসারী (Secular) সম্পর্কে বলা হয়েছে, Not connected with spiritual or religious matter. যিনি আধ্যাত্মিক বিষয় বা ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নন।
মূলত অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে যুক্তি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার নামে Enlightenment Movement-এর ফসল হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এর উদ্ভব হয়েছে। মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের মাধ্যমে এর অনুসারীরা মহান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মানবসভ্যতার ইতিহাসে সম্পূর্ণ নতুন দর্শন আমদানি করলেন যে, রাষ্ট্র ও সমাজের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই; ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অন্তরের ব্যাপার; অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষা প্রভৃতি থেকে ধর্মকে দূরে রাখতে হবে। তাদের মূল বক্তব্য ছিল, যুক্তি (logic)-ই জীবন পরিচালনার ভিত্তি হবে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহপ্রদত্ত নির্দেশনার (divine guidance) কোনো প্রয়োজন নেই। ইউরোপে এই আন্দোলনের সফলতার ফলে ধর্মহীন যে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠল, তাতে মানুষ নিতান্তই স্বার্থপর হয়ে গেল, ভোগবাদী হয়ে পড়ল, পূর্বপুরুষ ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে গেল। সর্বোপরি নীতিবোধের লোপ ও নৈতিকতার অবক্ষয়ই এর চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে প্রকাশ পেল।
মূলত নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ ব্যতীত একটি কল্যাণকর মানবসমাজ কল্পনা করা যায় না। আর নৈতিক শিক্ষার মূল বিষয়টি ধর্মীয় শিক্ষা থেকে উৎসারিত। মানবসমাজে বিরাজিত সকল নৈতিকতার মূল ভিত্তি হলো, অতিপ্রাকৃতিক শক্তি তথা সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস। এ বিশ্বাসই ব্যক্তিমানুষকে তাঁর আদেশ ও নিয়ম অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করে, পৃথিবীতে ও পরলোকে কু-কর্মের শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করে এবং ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত হতে উৎসাহ দেয়। স্রষ্টায় বিশ্বাসের কারণেই ব্যক্তি সবচেয়ে গোপন ও নিরাপদ জায়গাতেও শত প্রলোভন সত্ত্বেও অনৈতিক কোনো কাজে জড়িত হতে পারে না। কিন্তু এ বিশ্বাসের বীজ যার হৃদয়ে বপিত হয় নি তার কাছে নৈতিকতা অর্থহীন মনে হয়। ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত নৈতিক শিক্ষা ভঙ্গুর ও বিক্ষিপ্ত। এমন কি এগুলোর আদি উৎসও বিভিন্ন ধর্ম। ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে যে নৈতিক শিক্ষার কথা বলা হয় তাতে ব্যক্তি নিজের বিবেকের কাছে তার দায়বদ্ধতার কারণে নীতি মেনে চলে। ফলে ব্যক্তি যেকোনো দুর্বল মুহূর্তে প্রলোভনে পড়ে কিংবা মানবিক দুর্বলতার কারণে তার নৈতিক গণ্ডির বাইরে চলে যেতে পারে। সে তো পরকালীন শাস্তির ভয়ে নীতি মানছে না, তাই একবার ভাঙলে আবার তা গড়ে তোলার শক্তিশালী অনুপ্রেরণা পায় না। সে ভাবে যে, নশ্বর এই পৃথিবীতে ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়ে জীবন কেটে গেলেই হলো।
সুতরাং ধর্মকে কাজে লাগিয়েই সামষ্টিক মানুষের চারিত্রিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করা সম্ভব, অন্যভাবে নয়। তাই শিশুকাল থেকেই এ চরিত্রগঠনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। আমরা জানি যে, ব্যক্তির মানসিক গঠনের উপযুক্ত সময় তার শৈশব ও কৈশোর। এ সময় শিশুকে যেভাবে শিক্ষা দেয়া হবে তার গন্তব্যও সেদিকেই হবে। আমরা সবাই চাই, আমাদের শিশুরা জ্ঞানে-গুণে, যোগ্যতা-দক্ষতায় অনন্য হোক এবং তাদের সেই জ্ঞান ও দক্ষতা কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হোক। অথচ তাদেরকে আমরা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সকল নৈতিকতার উৎস ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার শিক্ষাই দিয়ে থাকি। আমরা কি দেখছি না যে, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই আজ জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, চরিত্র বিকিয়ে টাকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা, মিথ্যা আর জালিয়াতির ছড়াছড়ি। সুতরাং বেঁচে থাকার জন্য যেমন মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি সেই মানুষগুলোকে মনুষ্যত্বসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা। বিকৃত ধর্ম সমাজকে আরো দূষিত করবে। প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা যেমন পরিবার ও সমাজের পক্ষ থেকে দিতে হবে তেমনি দিতে হবে রাষ্ট্রের উদ্যোগের মাধ্যমে। রাষ্ট্রই শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণয়ন করে। আর সকল পরিবারের পক্ষে সমভাবে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নির্দিষ্ট চারিত্রিক কাঠামোয় তৈরি করা সম্ভব নয়। পরিবারের অজ্ঞতা বা অসচেতনতার কারণে যেন শিশু সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য সমগ্র জাতিকে এ ভার নিতে হবে। নীতিহীন, চরিত্রহীন মানুষ একটি দানব ছাড়া আর কিছু নয়, বিশেষ করে যখন সে কোনো ধ্বংসাত্মক শক্তির অধিকারী হয়ে যায়। এটা উপলব্ধি করে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের পর The Philosophy of the Modern Education গ্রন্থে অধ্যাপক বার্বাস বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, “বাধ্যতামূলকভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অনুশীলন না করলে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কারণ, মানুষ ধ্বংসের উপকরণ অনেক বেশি জোগাড় করে ফেলেছে।”

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


সময়ের প্রয়োজন ধর্ম এসেছে, সময়ের প্রয়োজনে ধর্ম থেকে ভালো কিছু আসছে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪১

বিদ্রহীসূত বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫১

হুতুম বলেছেন: খুব গঠনমূলক লেখা লিখেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার ক্ষমতা দিন। আমিন।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

বিদ্রহীসূত বলেছেন: আমিও সেই প্রত্যাশাই করি।
ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২

চাঁদগাজী বলেছেন:


" আমি রাকীব আল হাসান, যামানার এমামের অনুসারী, হেযবুত তওহীদের সদস্য। "

-হেযবউ তওহীদ তো নিশ্চয় সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে?

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৪

বিদ্রহীসূত বলেছেন: শ্রদ্ধেয় চাঁদগাজী, আপনি যদি জানার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নটি করে থাকেন (-হেযবুত তওহীদ তো নিশ্চয় সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে?) তবে আমিও উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব কিন্তু যদি বিতর্কে জড়ানোর উদ্দেশ্য থাকে তবে প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কারণ আমি বিতর্ক পছন্দ করি না।
শুরু থেকে সত্যনিষ্ঠ আন্দোলন হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রধানত দুটি শ্রেণি অপপ্রচার চালিয়েছে। তাদের একটা হলো ধর্মব্যবসায়ী আলেম মোল্লা শ্রেণি, দ্বিতীয় হলো ইসলামবিদ্বেষী এক শ্রেণির মিডিয়া। উভয় শ্রেণির সীমাহীন অপপ্রচারে সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ফলে সম্পূর্ণ আইনমান্যকারী আন্দোলন হেযবুত তওহীদের হাজার হাজার কর্মী অহেতুক হয়রানির শিকার হয়েছে।
আল্লাহ বলেছেন, ধর্মের নামে বিনিময় নেওয়া বৈধ নয়, এটি আগুন খাওয়ার শামিল। ধর্মের কাজ করতে হবে মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে। ধর্মব্যবসায়ী মোল্লারা যখন দেখল এই মহাসত্যগুলো মাননীয় এমামুয্যামানের অনুসারীরা সাধারণ মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে তখন তারা ভীত হয়ে পড়ল। তারা দেখল এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ ধর্মব্যবসার ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবে, তাদের ধর্মবাণিজ্যে আঘাত লাগবে, রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য তারা মাননীয় এমামুয্যামানের বিরুদ্ধে, হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করল যে, হেযবুত তওহীদ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা পেয়ে ইসলাম ধর্ম ধ্বংস করছে, ওরা কালো কাপড় দিয়ে লাশ দাফন করে, বসিয়ে কবর দেয়, এরা খ্রিষ্টান হয়ে গেছে, সুতরাং হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মারলে সওয়াব হবে, জান্নাতে যাওয়া যাবে ইত্যাদি। তাদের এ কাল্পনিক, মস্তিষ্কপ্রসূত সব অপপ্রচারে ধর্মভীরু সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় অহেতুক তাদেরকে হামলা, বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে, মাঠের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে, গাছ কেটে নিয়েছে, পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। ধর্মব্যবসায়ীদের ইন্ধনে হেযবুত তওহীদের উপর যে হামলা হয়েছে তাতে এ পর্যন্ত হেযবুত তওহীদের দুইজন কর্মী শহীদ হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন বহু সংখ্যক সদস্য-সদস্যা। অপরপক্ষে ইসলাম বিদ্বেষী এক শ্রেণির মিডিয়া যারা পশ্চিমাদের দ্বারা প্রভাবিত, তারা হেযবুত তওহীদকে নিষিদ্ধ, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, গোপন ইত্যাদি বলে অবিশ্রান্তভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে। অথচ হেযবুত তওহীদ এগুলোর বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। হেযবুত তওহীদ আসলে জঙ্গি কি জঙ্গি না, নিষিদ্ধ না কি বৈধ, তারা গোপন না প্রকাশ্য, তারা সন্ত্রাস করছে কি করে নি, আইন ভঙ্গ করেছে কি করে নি এগুলো তাদের দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। হেযবুত তওহীদ সমস্ত রকম মিথ্যার বিরদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ইসলামের কথা বলছে, ব্যাস এটাই তাদের কাছে যথেষ্ট। তারা বিরামহীন অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে প্রশাসনের মনে এই বিশ্বাস জন্মাতে সমর্থ হলো যে, হেযবুত তওহীদ আসলেই জঙ্গি, চরমপন্থী সংগঠন। আমরা বহুবার মিডিয়াগুলোতে প্রতিবাদ পাঠিয়েছি, কিন্তু সেই প্রতিবাদ প্রকাশের সৎসাহস তাদের হয় নি যা ছিল প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টের প্রতি সুস্পষ্ট অবমাননা। এমনকি প্রেসকনফারেন্স করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
আমাদের বিরুদ্ধে গত ১৯ বছর এক শ্রেণির গণমাধ্যম সন্দেহবশত কিংবা সচেতনভাবে বহু অপপ্রচার চালিয়েছে। এই অপপ্রচারগুলোর মধ্যে একটি হলো বিভিন্ন দেশী বিদেশী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কৌশলে হেযবুত তওহীদকে জড়িয়ে দেয়া, যাতে করে হেযবুত তওহীদের কর্মীরা জনসাধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক হয়রানির শিকার হন। সরকার ২০০৯-এ এদেশে হিযবুত তাহরীর নামে একটি সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। সংগঠনটির নামের সঙ্গে হেযবুত তওহীদের নামের আংশিক মিল থাকায় এক শ্রেণির গণমাধ্যম একে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে হয়রানি করার পন্থা হিসাবে গ্রহণ করে। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিযবুত তাহরীর আর হেযবুত তওহীদ নাম দুটিকে জট পাকিয়ে এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন শুরু করে যে সাধারণ মানুষ তো বটেই সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পর্যন্ত দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। তারা প্রচার করে যে, এ দুটি আসলে একই আন্দোলন। অথচ সত্য হলো এ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন আন্দোলন, এ দু’টির বক্তব্য, কর্মসূচি, কর্মক্ষেত্র, প্রতিষ্ঠার সন, প্রতিষ্ঠাতা সব কিছুই ভিন্ন। তারপরও উক্ত কুচক্রী সংবাদকর্মীদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বহুবার বৈধ হেযবুত তওহীদকে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর মনে করে এর সদস্যদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। পরবর্তীতে তদন্ত করে যখন প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন তখন গ্রেফতারকৃতদের অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন। এটা হেযবুত তওহীদ সদস্যদের জীবনে অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে একটি অহেতুক হয়রানির নমুনাবিশেষ।
আল্লাহর রহমতে বিগত কয়েক বছরে আমাদের নিজস্ব মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা এই সত্য তুলে ধরেছি। এখন প্রশাসন, রাজনীতিক দল, সাধারণ মানুষ সকলেই সত্যটা জানতে পেরেছেন এবং তাদের ইতোপূর্বের ভুল ধারণা থেকে বহুলাংশে মুক্ত হয়েছেন। সৎ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকদের অনেকেই এখন আমাদের সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরে পূর্বের বিরুদ্ধাচরণের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছেন। অনেক সংবাদকর্মীই আমাদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
অনুগ্রহ করে আমরা কী বলি, আমরা কী করি, আমরা কী দেখাই তা দেখুন, শুনুন, জানুন। প্রায় সকল জেলায় আমাদের কর্মীগণ ছড়িয়ে রয়েছেন। আমাদের সকল কার্যক্রম উন্মুক্ত। আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের সকল কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
''বিগত ১৯ বছরে হেযবুত তওহীদ একটিও আইন ভঙ্গ করেনি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি, এটা আমারদের মুখের দাবি নয়, আদালত কর্তৃক তদন্ত রিপোর্টের বক্তব্য।''
এর পর যারা হেযবুত তওহীদকে সন্ত্রাসী দল বলে মনে করবে তাদের বোঝানোর কোন ক্ষমতা আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে হয়ত সম্ভব নয়।
ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩১

আহমেদ জী এস বলেছেন: বিদ্রহীসূত ,





তৃতীয় আরেকটি চশমা লাগবে ।
মানবজাতির ইতিহাসে ধর্মের অধ্যায়টি বিরাট। আসলেই কি ? এতো এতো মসজিদ, মন্দির, গীর্জা প্রতিদিন একটা করে গজিয়ে উঠছে - নামাজী, পুজো আর প্রার্থনাকারীদের সংখ্যা বানের লাহান ফুলে ফুলে উঠছে কিন্তু একটা ভালো খবরও কি পাচ্ছেন একটি দিনেও ? শান্তির চেয়ে অশান্তিই বাড়ছে প্রতিদিন ।
সমস্যাটা ধর্ম-অধর্মের নয় । সমস্যাটি মানুষের , তার বোধ ও বুদ্ধির । ধর্ম, বোধ ও বুদ্ধি বাড়ায় না । জীবনের অনুশাসনগুলি বলে । বোধ-বুদ্ধি থাকলে পরে এ অনুশাসনগুলির যৌক্তিকতা বুঝে মেনে চলা সহজ হয় । এই আর কি । তাই এটা জীবনের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় নয় । ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় হলো শিক্ষা ।অবশ্য শিক্ষার অর্থ সবাই বোঝেনা ।

একচশমায় নবী-সাহাবীদের দেখেও কোনও লাভ নেই, কারন আমরা মানুষেরা আদমের কাল থেকেই নিয়ম ভাঙায় অভ্যস্ত । স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকেও তাই চার-চারখানা আহলে কিতাব পাঠাতে হয়েছে । প্রথমটি পাঠানোর পরে আমরা মানুষেরাই তা মানিনি । দ্বিতীয় , তৃতীয়টির বেলাতেও তাই । বিরক্ত হয়ে শেষ কিতাবটি ( পবিত্র আল-কুরআন ) পাঠিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা বলেছেন – আর নয় এই শেষ ….এই শেষ কিতাব আর এই শেষ নবী । ( কি বলেছি, অর্থ বুঝতে চেষ্টা করুন । তৃতীয় চশমা লাগাতে হবে )

লিখেছেন - ধর্মকে কাজে লাগিয়েই সামষ্টিক মানুষের চারিত্রিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করা সম্ভব, অন্যভাবে নয়। তৃতীয় চশমা দিয়ে দেখুন , আমাদের যদি প্রকৃত জ্ঞান, শিক্ষা, বোধ, বুদ্ধি, না ই থাকে তবে খালি ধর্ম শিখিয়ে কোন ফয়দাটা হাসিল হবে ? যার যার মত করে ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যবসা হবে অঢেল । নৈতিকতা সে অর্থে জ্ঞান নয় , একটি আচরন । এটাকে বাধ্যতামূলক করবেন কিভাবে ? বাধ্যতামূলক হলেই মানুষ পন্ডিত হয়ে যাবে নৈতিকতায় ? বাধ্যতামূলক শেখান তো মাদ্রাসাগুলোতেও হয় । ফলটা কি দেখছেন আপনি ?
আগে দরকার শিক্ষা । ধর্ম নয় । অ, আ, ই, ঈ বর্ণমালা শিখে তবে শব্দ তৈরী করা যায় । আগে শব্দ শিখে পরে বর্ণমালা শেখেনা কেউ । ওটা স্রেফ আহাম্মকী ।

বড় হয়ে যাচ্ছে মন্তব্যটি । হয়তো অনেক প্রশ্ন থাকবে আপনার । সময় পেলে জবাব দেবো । সুস্থ্য আলোচনা হতে পারে হয়তো ।

আর নয় ভালো থাকুন । আরেক চশমা দিয়ে মানুষের উত্তরনের পথটি খুঁজে নিয়ে আবার না হয় আমাদের সচেতন করলেন ।

শুভেচ্ছান্তে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.