নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচেনা এক পড়শী খুজে কাটল জীবন

রয়াজ

দুঃখ কষ্টের কথা

রয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি নারী, আমি ধর্ষিতা! (১৮ +)

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:১৩

হ্যাঁ, আমি নারী, আমি ধর্ষিতা!!

পৃথিবী আমাকে শিখিয়েছিলো, আব্রু রক্ষা করে চলতে হবে...নইলে আমাকে ধর্ষিত হতে হবে!!

আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি বান্ধবীর বাসায় খেলতে গেলে বান্ধবীর বড় ভাই আমার প্যান্ট খুলে তার যৌনাঙ্গটা কতক্ষণ ঘষে দেয়, বলে, 'এইটা একটা যাদু, এইটা করলে তুমি খেলায় জিতবা! কিন্তু এই যাদুর কথা আর কাউকে বইলো না, তাইলে যাদু আর কোনদিন কাজ করবে না!' যতদূর মনে পড়ে, আমি তখন সাধারণ ফ্রক আর হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হাফ প্যান্ট পরতাম, আমার বুকে, নিতম্বে তখনও কোন মেয়েলি চর্বি জমে নি!!

স্কুলে থাকতেই আমার চাচাতো বোনের বিয়ে হলো এক নামকরা স্কুলের ধর্ম শিক্ষকের সাথে, তার দাঁড়ি আছে, টুপি আছে, বেজায় ভদ্রলোক বলে শুনেছিলাম...ক্লাস সিক্সে পড়া আমাকে একদিন হাত ধরে বলেছিলেন, 'শালীরা দুলাভাইদের অনেক প্রিয়...কিন্তু আমার শালীর কি এই দুলাভাইকে পছন্দ হয়েছে?' আমি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, পারছি না, আস্তে করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম, চোখ নামিয়ে রেখেছি, লজ্জা লাগছে, অস্বস্তি হচ্ছে কথা বলতে...দুলাভাই কেমন করে যেন হাসলেন, 'শালীদের লজ্জা পেতে দেখলে সুন্দর লাগে...মনে হয়, আদর করে দেই!!' বলে মুখে চুমু দেয়ার ভঙ্গী করে চুমুর শব্দ করলেন কয়েকবার...আমি দৌড়ে চলে এলাম!!

ভার্সিটি থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরলাম...বোরখা পরা ছিলাম...মেইন রাস্তা থেকে হেঁটে বাসায় ফিরছি...হঠাৎ এক লোক বোরখা আর ওড়নার উপর দিয়েই বুকে হাত দিয়ে জোরে টিপে দিলো...আমি চিৎকার করে উঠলাম, হাত বাড়িয়ে একবার ধাক্কাও দিলাম...লোকটা একটা নোংরা হাসি দিয়ে দ্রুত চলে গেলো...আশেপাশে এতো মানুষ, আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার চিৎকার, ধাক্কা, কারো চোখে-কানে যায় নি...মনে হলো, চারপাশে একদম জোম্বি চলেফিরে বেড়াচ্ছে!!

অনার্স পাশ করে গেছি তখন, গ্রামে এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিলো...ঢাকা থেকে খুব কাছেই, বাস থেকে নেমে হাঁটছি...একটু নিরিবিলি এক জায়গায় এক লোক দাঁড়িয়ে ছিলো...লুঙ্গি তুলে তার নেতিয়ে থাকা যৌনাঙ্গ দেখাচ্ছিলো আর হাসছিলো...আমি ধরিয়ে দেই লোকটাকে, আমার আত্মীয়রা আচ্ছা করে মার দেয়...ঘটনা এখানেই শেষ!!

বিয়ের পরে বর্ষবরণের জন্য স্বামীকে নিয়ে টিএসসিতে গিয়েছি...ফতুয়া-জিন্স আর ওড়না পরেছিলাম...হঠাৎ দল বেঁধে কতগুলো ছেলে এসে টান মেরে ওড়না নিয়ে নিলো, ফতুয়া খুলে ফেললো, আমি চিৎকার করছিলাম, হাত-পা ছুঁড়ে বাঁধা দিতে চাইছিলাম, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে এলোপাথারি মারার চেষ্টাও করছিলাম...কেউ একজন তার পাঞ্জাবী দিয়ে আমাকে জড়িয়ে নিয়েছিলো...আমার স্বামীকে দেখেছি রক্তাক্ত...আর বাসায় ফিরে ইন্টারনেটে পেয়েছিলাম আমাকে বিবস্ত্র করা ভিডিও ফুটেজ!!

আমার এক ছেলে এক মেয়ে হয়েছে, আমি দুই সন্তানের মা...দুই হাতে সন্তানদের হাত মুঠোয় পুরে আবারো গেছি বৈশাখী মেলাতে...ততদিনে পুরনো ক্ষত শুকিয়েছে কিন্তু আবারো আঘাত পাবো বুঝি নি!! এবারে সোহরাওয়ার্দির সামনে ঘিরে ধরলো আমাকে...লাল শাড়ি পরেছিলাম...নাভির নিচে শাড়ি ছিলো নাকি উপরে সেটা মনে নেই...হাত থেকে দুই সন্তানকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়া হলো...দেখলাম এক ৫০ বছরের বয়স্ক লোক আমার শাড়ি টেনে নিয়ে নিলো আমার ছেলেমেয়ের সামনে!! চারিদিকে কানে তালা লাগানো শব্দে ভুভুজেলা বাজছিলো, এর মাঝেও আমি শুনতে পেলাম কেউ একজন বলছে, 'তাড়াতাড়ি ভিডিও কর!' শুনেছিলাম পুরো জায়গা জুড়ে নাকি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিলো, পুলিশ নাকি কাকে কাকে ধরেছিল, ফেইসবুকে অনেক লেখালেখিও হয়েছে...কিন্তু কোন আসামীর সাজা হয় নি, তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে!!

আমার মেয়েটা সেদিন মন খারাপ করে বসেছিলো, আমি তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলাম...সে জানালো, পরিবারের সবচেয়ে ভদ্র, সৎ খ্যাতি পাওয়া বুয়েট সিভিল থেকে পাশ করা বর্তমান ম্যাজিস্ট্রেট তার এক চাচাকে সে টিভিতে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র নারীদেহ উপভোগ করতে দেখেছে!! সে ভুল করে সেই সময় রুমে চলে গিয়েছিলো...ক্লাস নাইনে পড়ুয়া আমার মেয়েটা আমাকে বললো, 'মা, আমাকে আর ইনাকে কখনো সম্মান করতে হবে বলো না, প্লিজ...আমি মন থেকে কখনোই তাকে আগের মত সম্মান করতে পারবো না!' আমি কিছুই বলতে পারি নি!!

ঠিক তার দুই বছর পরেই মেয়ের আবারো মন খারাপ হলো, সে তখন কলেজে উঠেছে...খুব কাঁদছিলো মেয়েটা...আমি জানতাম, আমার মেয়ে পরপর দুটো ছেলেকে ভালোবেসে ঠকেছে...সে সবকিছু আমাকে বলতো, একদম স-ব-কি-ছু! কয়েকবারই সম্পর্কে তারা হাত ধরেছে, কাঁধে মাথা রেখেছে, একসাথে ছবিও তুলেছে...আমি মেয়েকে বলেছিলাম, 'ধৈর্য ধরো, আরেকটু বড় হও, ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলে আমিই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো!' তারপরও সম্পর্ক ভেঙে গেছে, কার দোষে জানি না...তবে আমার মেয়েটা সত্যিই ভালোবেসেছিলো...তার মাকে ছেলেবেলায় ভীড়ের মাঝে বিবস্ত্র হতে দেখার পরেও সে ভালোবেসেছিলো, সে অনেক ভালো একজন মানুষকে নোংরা কিছু দেখতে দেখার পরেও ভালোবেসেছিলো...কারণ তাকে আমি বরাবরই শিখিয়েছিলাম, মানুষকে বিশ্বাস করতে, সব মানুষ এক নয়, তার বাবার মত ভালো মানুষ যেমন আছে, ঐসব মানুষের মত খারাপ মানুষও আছে...তারপর মেয়েটা একদিন আমাকে ডেকে দেখালো, ফেইসবুকের এক পেইজে তার নাম, তার ফেইসবুক লিংক আর তার সাথে তার অতীত সম্পর্কের এক ছেলের ছবি একসাথে দিয়ে কারা যেন পোস্ট দিয়েছে...পেইজের মূল লক্ষ্য পড়লাম- স্কুল-কলেজের খারাপ ছেলে-মেয়েদেরকে সমাজে চিনিয়ে দেয়া, যাতে অন্য মানুষেরা তাদের খপ্পরে না পড়ে!! আমার মেয়েকে সেখানে চিনিয়ে দেয়া হচ্ছে পতিতা হিসেবে, তার সাধারণ ছেলে বন্ধুর অনেকের নাম দিয়ে বলা হয়েছে, আমার মেয়ে নাকি সবার সাথেই ঘুরে তাদের পকেটের টাকা উপভোগ করে...তাদের কাছ থেকে নোটস কালেক্ট করার দোহাই দিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে!!! আমার মেয়ে আমাকে সব বলে, তার সব বন্ধুদের নাম আমি জানি...তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যাচার দেখে আমি পুলিশের কাছে গেলাম, লাভ কিছুই হলো না...অনেক পরে শুনলাম, পেইজের অ্যাডমিনরা নাকি রাজনীতির ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ছেলে!! তারা সমাজের পরম উপকারে নেমেছে, তাদের এই উপকারের জন্য আমার মেয়ের কাছে তাই ইনবক্স আসে, 'তোমাকে চু*বো জান...অনেক সুখ দিবো...তুমি অনেক সেক্সি...এই নাম্বারে কল দাও...'

আমি যুদ্ধের সময়ে অনেক মেয়েদের ধর্ষণের গল্প শুনেছিলাম...ভারতের দামিনী যখন ধর্ষিত হয়েছিলো তখন ফেইসবুকে দেশের ছেলেদের অনেক আহাজারি শুনেছি...আমি দেখেছি, মেয়ের পোশাক ঠিক ছিল না বলে পরিমলকে অনেক ছেলেমেয়ে সমর্থন করেছে...রাতের ডিউটিতে থাকা ডাক্তার এশার নামাজ পরতে রুমে ঢুকে হাসপাতালের এক কর্মচারীর দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলো, আমি সেই সময়েরও সাক্ষী ছিলাম...আফ্রিদিকে 'ম্যারি মি' প্ল্যাকার্ড লিখেছিলো যে মেয়েটা, সেই মেয়েটাকে ভার্চুয়ালি ধর্ষণ করতে দেখেছি...আমি শুনেছি, আমাদের দেশ নাকি বাংলাস্তান হয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ বলছে, এখানে সব হুজুররাই শয়তান, আবার কেউ বলছে, ভার্সিটির সুশীল চেতনাধারীরাই হারামি...মেয়ের পা দেখা গেলেই নাকি তাকে ধর্ষণ করা জায়েজ, কারণ ছেলেরা নাকি নিজেদের উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ কিরতে পারে না, তাই এটা মেয়েদেরই কর্তব্য নিজেদের পর্দা রক্ষা করা- আমি এমন ফতোয়াও শুনেছি!!

আবার আমি শুনেছি, ভালোবাসলেই মেয়ে নাকি নষ্টা হয়ে যায়...দেখেছি কিছু ছেলেকে বলতে, 'ঘরে মা-বোন আছে তো কী, ডার্লিং তো নাই...সব ডার্লিংরা রাস্তায় উৎসব করতে যায়, তাই আমরা রাস্তায় ডার্লিং খুঁজি!!' আমি শুনেছি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, তাই যে ধর্মেরই হোক, উৎসবের দিনে একটু আনন্দ নেয়া নাকি অপরাধ না!! এই যে আমি এখন মেয়েদের নিয়ে লিখছি, আমি আর আমার মেয়েকেও সামনে এনেছি, দুই সন্তানের মা এই আমাকে এখন কেউ কেউ বলছে, 'তুই নিজেও তো একটা মা*, তোর মেয়েটারেও মা* বানাইতেছোস...এইসব লিখিস বলেই তো তোরে রাস্তায় ফালায়ে চু*তে মন চায়, যেমন মন চায় তসলিমারে!!'

আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অনেক ভদ্র, প্রতিবাদী, সোচ্চার, যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমাদের দেশের দুই নারীনেত্রী...আমি ভেবেছিলাম, দেশের শীর্ষস্থানে এই নারীরা আছে বলেই, তারা আমার মত নারীদের দুঃখ সবার আগে বুঝবে!! আমি ফেইসবুক ভেসে যেতে দেখি প্রতিবাদী কণ্ঠে, দেখি মুক্তমনা আর ছাগুরা কার যৌনাঙ্গে কত শক্তি ধরে সেটা নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হয়...দামিনীর জন্য ভালোবাসা আর আফ্রিদি ফ্যানাটিকের ব্যবচ্ছেদ করার মাধ্যমে এই দেশের ছেলেদের সোচ্চার হতে দেখি...কেন সানি লিওন মানুষ, বেশ্যা না- এই বিষয়ে তর্ক করতে দেখি...হাদিস-কোরআনের বানী দেখি, দেশে অনেক বিশুদ্ধ ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা দেখি...আমার ভালোই লাগে...ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এদেশের সবাই কত সভ্য জ্ঞানসম্পণ্ন...কিন্তু তারপরে আমার আর আমার মেয়েটার পাশে আমি কাউকে খুঁজে পাই না...নারীনেত্রীদের ভালোবাসা, দেশের আইন, ইন্টারনেট অ্যাক্ট কিছুই খুঁজে পাই না!!

হাফপ্যান্ট, বোরখা, জিন্স, ফতুয়া, শাড়ি, বাচ্চা মানুষের শরীর, মেয়েলি শরীর- এসবের কোন কিছুই আমাকে যৌন হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে পারে নি...আমি জেনেছি, বাস্তবে খুব খারাপ খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু ইন্টারনেটে, মিডিয়ায়, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক-গ্রাম্য-ধর্মীয় কিংবা ধর্মবিদ্বেষী পরিবারে, নামকরা প্রতিষ্ঠান কিংবা মাদ্রাসার সার্টিফিকেটধারী ব্যাকগ্রাউন্ডে, সরকারি কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিতদের মাঝে কোন খারাপ মানুষ নেই, একজনও না!! এরা কেউ কোনদিন ভুলেও কোন মেয়েকে টিজ করে নি, কোন মেয়েকে বিরক্ত করে নি, কোন মেয়ে দেখে শিশ দেয় নি, তাদের গায়ে হাত দেবার তো প্রশ্নই ওঠে না!!

হ্যাঁ, আমি নারী, আমি ধর্ষিতা এবং আমি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র!!

বি.দ্র.উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনা সত্য।ফেসবুক থেকে সংগৃীত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৩০

পীরবাবা বলেছেন: সমব্যথী।
কিন্তু সব কেন আপনার সাথেই ঘটে?
ভেবে দেখেছেন কি?

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮

Sabniara বলেছেন: সমাজের কিছু বিকৃত মনা লোক আছে যাদের কাছে কোন নারীই নিরাপদ না।আবার অনেকে আছেন যাদের চোখ বুঝে বিশ্বাস করা যায়।আসল ব্যাপার টা হচ্ছে যারা বিকৃত মস্তিস্কের তাদের কাছে সামনে কে আছে সেটা ব্যাপার না, তারা সব নারীকেই তাদের লালসার বস্তু মনে করে।
হাতের পাচটা আংুল যেমন সনান বা ঠিক তেমনি সব পুরুষ ই খারাপ না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.