নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

reba moni

reba moni › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : তবুও জীবন

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

জীবনটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, শামুকের মতো নিজের অস্তিত্ব লুকিয়ে যাচ্ছে আপন খোলসে। রাত গভীর হচ্ছে, নীরব রাতের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি আস্তে আস্তে জোসনার সোনালী আলোকে আলোকিত হচ্ছে আর এর মাঝেও জোনাকির ক্ষুদ্র আলোটুকু বিলিয়ে দেবার প্রচেষ্টা। কখনোও জোসনা আড়াল হয়ে চাঁদটা মেঘের আঁচলের নিচে লুকিয়ে পড়ছে। মিটিমিটি করে আলো ছড়াচ্ছে দূর আকাশের নক্ষত্রগুলো। এই আলো আধাঁরসহ পৃথিবীর বিচিত্র রুপের মাঝে আশার স্বপ্ন বুনছে কেউ, কেউ বা আবার আশা ভঙ্গের যন্ত্রনায় ছটফট করছে, এটাই জাগতিক নিয়ম। তবুও মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে, ভালবাসে, সুখে থাকার স্বপ্ন দেখে ।আমিও আগে দেখতাম, কত রঙীন স্বপ্ন। কিন্তু বারবার স্বপ্ন ভাঙ্গার যন্ত্রনায় মনটা মরে গেছে। এক রাজকুমার এসে আমাকে বৌ সাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাবে, তাকে নিয়ে দুজনে সুখের নীড় বাঁধবো, জোছনা রাতে উঠানে মাদুর পেতে বসে দুজনে গল্প করবো, বৃষ্টি হলে দুজনে একসাথে হাত ধরে ভিজবো, শরৎ সকালে শিশির মাড়িয়ে দুজনে দুর্বা ঘাসের উপর দিয়ে হাটবো, কত কত স্বপ্ন। কিন্তু কালো মেয়েদের যে এসব স্বপ্ন দেখতে নেই। তাইতো আজ স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রনায় ছটফট করছি। ছোট্টবেলায় মা আদর করে কালোনী বলে ডাকতো, ভালোই লাগতো কিন্তু এখন এই রংটাই আমাকে মাঝে মাঝে উপহাস করে কিন্তু নিজেকে দেখে আমি মুগ্ধ, কি সুন্দর চোখ, নাক, গাল, চুল। কেউ ভাল না বাসলেও আমি আমাকে ভালবাসি, খুব ভালবাসি। আমি নিজের সাথে একটা পৃথিবী গড়ে নিয়েছি। পাত্র পক্ষ আমাকে দেখে যায়, আমাকে পছন্দ হয় না, কিন্তু আমার চাকরিটা পছন্দ হয় লোভী মানুষ আমি একদম দেখতে পারি না, না করে দেই। এ নিয়ে মা ভাই আমাকে ইদানিং বেশ কথা শোনাচ্ছে। অথচ আমি এদের কাছে কত প্রিয় ছিলাম। গত দুদিন আগেও ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসলো। তাদের ভাবখানা দেখে মনে হলো কালো হয়ে জন্মে আমি বিরাট অপরাধ করেছি। -আপনার মেয়ে কালো শুনেছি কিন্তু আবার এতো খাটো। -কি করবো ভাই আল্লাহ যেমন বানিয়েছেন। -তবুও দেখতে মানানসই না হলে কি চলে? যাই হোক এসেছি যখন … তা আপনারা মেয়েকে কি কি দিতে চান? এরপর ওনাদের এতো চাহিদা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তারপর আর কি? অন্যদের মতো তারাও চলে গেল! সমাজের নানা জনে নানা কথা বলে। আইবুড়ি মেয়ে, সকালে প্রথমে আমার মুখ দেখাও নাকি অমঙ্গলের, যে যা খুশি বলুক, নিজেকে নিয়ে আমি সুখি, অনেক ভাল আছি। অফিসে যাব বলে বের হচ্ছিলাম, দেখি মা আর ভাই মামুন দাড়িয়ে, -লিমা শোন্ -বলো মা -মামুন তোর বিয়ে ঠিক করেছে, আজ বিকেলে ওরা আসবে, ছেলেটা… -আমাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছে? আমার একটা পছন্দ অপছন্দ আছে না। -চুপ কর তোর আবার কি পছন্দ থাকবে? কত বলে কয়ে ওদের রাজি করছি, না হলে তোর তো জীবনে বিয়েই হবে না আর মানুষ আমাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে।আমিও বিয়ে করতে পারছি না, আর লাইজু ও বড় হচ্ছে ওকেও তো বিয়ে দিতে হবে। বললো মামুন। -আমার বিয়ে নিয়ে কাউকে মাথা ঘামাতে হবে না। তোমরা বিয়ে করে ফেলো, আমি কিছু মনে করবো না। -তা তো বলছিস, কিন্তু মানুষের মুখ বন্ধ রাখবো কি করে? লোকে নানা কথা বলে। – কেন তোমরা বলতে পারো না? আমি কি নষ্টামি করে বেড়াই? কৈ আমি শুনলে তো মুখের উপর বলে দেই। – তোই যা খুশি কর। বলেই মা হনহন করে চলে গেলো। আমি নিশ্চিত জানি চাকরিটা না থাকলে সবাই আমার উপর জোর করতো। কিন্তু এখন তা পারে না, এজন্যই বোধ হয় অপমানিত হয়ে অনেক কালো মেয়েই আত্নহত্যা করে। কিন্তু আমি আমার মধ্যে কোন খুঁত দেখি না, নিজেকে ভালবাসি, অন্যের কথায় কেন নিজের ভালবাসাকে বিসর্জন দেব? অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছি বদলি হয়ে চলে এলাম খুলনাতে, আমার পৃথিবী আমি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি, নিজেকে নিয়ে খুব সুখে আছি। এখন আর আমার স্বপ্নে কোন রাজকুমার আসে না, কি দরকার! বিয়ে করে পুরুষের যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য নিজেকে পুরুষের কাছে সোপর্দ করার নামই জীবন নয়। সংসার জীবনে নিত্যদিন অপমানিত না হয়ে, নিজের কাছে সুস্থ মনে ভাল আছি আমি। জীবনের কোথাও কোন ঘাটতি নেই আমার । অফিসেও বেশ সুনামের সাথে কাজ করছি, তবে গায়ের রংটা আমাকে মাঝেমাঝেই বিব্রত করে, অনেক পুরুষ সহকর্মী আছে যারা আকারে ইঙ্গিতে ভালবাসার লোভ দেখায়, অথচ তারা বিবাহিত। আমি সোজা তাদের বলে দেই বৌ এর সাথে ভালবাসা করতে কারন কালো হলেও আমি নোংড়ামি পছন্দ করি না। এটা নিয়েও কম কথা হয় না। ‘এমনিতেই কালো আবার দেমাগ কত। এজন্যই বিয়ে হয় নি’। দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর কেটে গেছে।একটা বাড়ি করেছি, নাম “ভালবাসার বাগান”। এখানে আমার দিনগুলো খুব ভালোই কেটে যায়, একাকিত্ব কখনোও অনুভব করিনা। আমার সাথে ওরা দশজন বাচ্চা থাকে, আমাকে মা বলে ডাকে, ওদেরকে মানুষ করছি নিজের মতো করে, মাঝে মাঝে মনে হয় আমি খুব সুখি, যখন ওরা আমাকে মা বলে ডাকে নিজের মাতৃত্ব অনুভব করি। রাতে আর আমাকে কোন দুঃস্বপ্ন তাড়া করে না। সন্তানদের হাঁসি আনন্দ আর উচ্ছলতা দেখে নিজেকে নিয়ে আরও গর্ব হয়। সবই সম্ভব হয়েছে নিজেকে ভালবাসি বলে, নিজেকে ভাল না বাসলে, নিজের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে যে কোন খারাপ পরিস্থতিতে মানুষ আবেগে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। আমার এই কচি বাচ্চাদের দিকে তাকালে আমি ভুলে যাই পৃথিবীতে দুঃখ বলে কিছু আছে। তিন বছরের ফারিয়া যখন মা বলে কোলে ঝাপিয়ে পড়ে তখন আমি ভুলে যাই সমাজের কাছে আমি অপয়া, আমার নিজের একটা সংসার নেই, আমি কালো বলে আমার বিয়ে হয়নি। আমার ভিতরে এক মা জেগে ওঠে, মায়ের আঁচল দিয়ে জড়িয়ে রাখি আমার টোকাই সন্তানদের। গায়ের রং কালো বলে ওরা কেউ আমাকে ‘মা’ বলা ছেড়ে দেয় না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.