নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার মত তেমন কিছুই এখনও অর্জন করতে পারি নি। যে দিন নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু একটা অর্জন করতে পারবো সেই দিন বলবো আমিও কিছু একটা

ডি এইচ তুহিন

মোঃ দেলোয়ার হোসেন তুহিন

ডি এইচ তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কল্পনার বাহিরে

১৬ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১১:১৫

সায়মনের সাথে আমার পরিচয় স্কুল জীবন থেকে। খুব ভাল সম্পর্ক আমার সাথে। প্রিয় খেলা ক্রিকেটের সাথে সাথে ভাল একজন ছাত্রও বটে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব পছন্দ করি ভাল বন্ধু এবং মানুষ হিসেবে। খুব ভাল ক্রিকেটার হওয়ায় অনেক জনপ্রিয়তা তার। বিভিন্ন জায়গায় খেলতে ডাকা হত তাকে। ঢাকা,কুমিল্লা,বরিশাল প্রায় দেশের প্রায় সকল জেলায় গিয়েই সে ক্রিকেট খেলতে যেত।

স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হই। আমার গ্রেড পয়েন্ট খুব ভাল হওয়ায় আমি কোন ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে পারি নাই। কিন্তু সায়মন ভাল কলেজেই ভর্তি হয়। আমি বেসরকারি কলেজে পড়ছি এবং নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হচ্ছে, সায়মনের নতুন নতুন বন্ধু হচ্ছে। কিন্তু আমরা একি এলাকায় থাকার কারনে আমাদের বন্ধুত কমলো না। কারন আমার বেষ্টফ্রেন্ড বলে কথা।

এদিকে ১ম বর্ষ শেষের দিকে আর আমার এখানে অনেক ভাল বন্ধু হয়ে যায় আর হওয়াটাই সাভাবিক। সবার সাথে অনেক ভাল সম্পর্ক আমার। ক্যাম্পাসের যে কোন জামেলায় আমাকে ডাকা হত, এবং আমার সমাধানও সবাই মেনে নিত। সবাজ খুবই পছন্দ করততো। আমি কিছু বললে রাখার চেষ্টাও করতো।

একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, এমন সময় রঞ্জন এসে বলে ওর বাবার জন্য রক্ত লাগবে। কারন ওর বাবা হঠাৎ রোড এক্সিডেন্ট করেছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরন হচ্ছে। ব্লাড গ্রুপ জানতে চাইলে বলে ও নেগেটিভ। আড্ডায় থাকা কোন ফ্রেন্ডের রক্তের গ্রুপ মিলে নাই। রঞ্জন খুবই চিন্তায় পড়ে গেল। আমার রক্তের সাথেও মিলে নাই আমি তো এ পজেটিভ মিলার কথাও না। কলেজের সবাই আমাকে খুবই সম্মান করতো এটা কাজে লাগিয়ে প্রায় ২০-২৫ জনকে ব্লাডগ্রুপিং করার জন্য পাঠালাম। সবাই টেষ্ট করে দুই জনের সাথে মিলে যায় এবং রঞ্জন একজন ডোনার খুজে পায়। এখনও একব্যাগ লাগবে ও নেগেটিভ ব্লাড ডোনার। কি করবো সবার মাথা নষ্ট। সব বন্ধুরা চিন্তিত। তখনই মনে পরে আমাদের স্কুলে একবার কিছু ভাইয়া এসে ব্লাডগ্রুপ টেষ্ট করে দিয়েছিলো সেখানেই আমার গ্রুপ জেনেছিলাম। সায়মনের গ্রুপ খুব মূল্যবান রক্তের গ্রুপ বলেছিল ঐ ভাইয়ারা। মনে পরের সাথে সাথে সায়মনকে কল করলাম-------

-কই তুই??
-এই তো সিটির বাহিরে আছি, খেলতে আসছি।
-আসবি কবে??
-খেলা শেষ হলে।
-খেলা কখন শেষ হবে??
-এই তো আজ ফাইনাল, বিকেলে খেলা।
-ও
-ক্যান কি হইছে??
-তোর ব্লাড গ্রুপটা ভুলে গেছিলাম, ওটা জানার জন্য কল দিছি!!
-ক্যান হঠাৎ ব্লাডগ্রুপের কি দরকার??
-দরকার আছে গ্রুপ কি তোর??
-ও নেগেটিভ।
-তোর খেলাটা কি খুব জরুরী??
-হুম আজ আমরা জিতলে হয়ত আমাকে জাতীয় টিমের জন্য ডাকা হতে পারে। এটা একটা বড় সুযোগ আমার জন্য। দোয়া করিস।
-আমার একটা বন্ধুর বাবার জন্য ও নেগেটিভ রক্তের দরকার, চার ব্যাগ তিন জন পাইছি আর একজন পাইতেছি না। রাতের মধ্যে ব্লাড না দিলে বাচাঁনো সম্ভব হবে না বলছে ডাক্তার। এখন কি করমু বুঝতেছি না। তুই কি আসবি??
-দোস্তো আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলা আজ। আর আমি কখনও রক্ত দেই নাই, দিতেও পারবো না।
-দিতে পারবি না কেন??
-দিব না আমার এগুলো ভাল লাগে না।
-যদি তোর বাবা হইতো, যদি তুই বিপদের পরতি তখন কি করতি??
-তখনেরটা তখন দেখা যেত। এখন আমার প্র্যাকটিস আছে আমি যাচ্ছি বাই বাই।
-শোন...

টিট......... টিট........ টিট........

খুব কষ্ট পেলাম, নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হল। আমার বেষ্টফ্রেন্ড আমার একটা কথা রাখলো না আবার মুখের উপর লাইন কেটে দিল। কিন্তু এখন তো কষ্ট পেলে চলবে না রঞ্জনের বাবাকে বাচাঁতে হবে। কলেজ, স্কুল আরও অন্য বন্ধুদের খবর দিলাম, খোঁজার চেষ্টা করলাম। সবাই খুজে যাচ্ছি অবিরত। কিছুতেই কিছু হল না।খুব ভেঙ্গে পরলাম। শেষে কি আংকেলকে বাচাঁতে পারবো না??

হাসপাতালের বাহিরে বসে সব আসা ছেড়ে দিয়ে বসে আছি, টানা দেড়-দুই ঘন্টা বসে ছিলাম সেখানে, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠে, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে ইচ্ছে করছিল না। ইচ্ছের বিরুদ্ধে মোবাইলটা বের করে বললাম-
-হ্যালো......
-কই তুই??
-হাসপাতালে...
-রক্ত পাসনি??
-এখনও না....
-তুই টেনশন করিস না।
-রঞ্জনের বাবার অবস্থা ভাল না। সবার ট্যার্গেট একটাই রক্ত লাগবে। তোদের যেমন ট্যার্গেট থাকে অন্য দলকে হারাতে হবে ঠিক তেমনি মৃত্যুকে জয় করতে হবে। কিন্তু মনে হয় হেরে যাব।
-চোঁখের পানি মুছে তোর সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে দেখ।
-কই??
-আরে গাধা আমি আসছি, আর মাত্র ৩০-৪০ মিনিট লাগবে আসতে। রঞ্জনের বাবার কিচ্ছু হবে না।
-তোর তো খেলা ছিল।
-দূর ওসব কথা পরে হবে আমি আর আমার আরও দুইফ্রেন্ড আছে সাথে ওদের নিয়ে আসছি ওদের ব্লাড গ্রুপ ও নেগেটিভ বল কোথায় আসতে হবে??
-ওমুক হাসপাতালে আছি আমরা সবাই।
-ওকে বাই।
টিট টিট টিট............

অজানতেই চোঁখের জল খসে পড়ে, একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে, দোঁড়ে হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে সবাইকে ডেকে বললাম রক্তের ব্যবস্তা হয়ে গেছে, সায়মন আসছে। রঞ্জনসহ সবার চোঁখে জল পড়ছে, এটা অনন্দজল।

প্রায় ৪০-৪৫মিনিট সায়মন ও তার বন্ধুরা আসে, সায়মন আসা মাত্র বুকে জড়িয়ে নেই আমি। তারপর ব্লাড ব্যাংকের দিকে রওনা দেই। সেদিন আরো চার ব্যাগ ব্লাড লেগেছিল। সায়মন ও তার দুই বন্ধু দিয়েছিল তিনব্যাগ আর একজনকে রঞ্জন ব্যবস্তা করে। ওর কোন এক সমপর্কে চাচা ঢাকা থেকে ফ্লাইটে এসে রক্ত দিয়ে যায়।

সায়মন সে দিন খেলা বাদ দিয়ে চলে আসে। কি ভেবে আসে তা এখনও বলে নি। জানতে চাইলে বলে বাদ দে সে কথা। হয়ত ভাল বন্ধু একেই বলে।
এখন সে আর ক্রিকেট খেলে না। সেই দিনের পর আর খেলতে দেখি নাই ও বলে "যে খেলার জন্য অমানুষের মত কথা বলেছিলাম একদিন সেই খেলা আর খেলবো না।" এখন সে নিয়মিত ব্লাড ডোনেট করে।

আজও সে দিনের কথা মনে পরলে গা শিউরে উঠে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.