নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোঃ দেলোয়ার হোসেন তুহিন
-হ্যালো..
-হুম বল..
-বাবুর দুধ শেষ হয়ে গেছে আসার সময় বাবুর জন্য দুধ নিয়ে এসো,
-আচ্ছা নিয়ে আসবো, বাবু মায়ের জন্য কিছু লাগবে?
-না বাবুর মায়ের কিছুই লাগবে না, বাবুর বাবা তারাতাড়ি অফিস থেকে আসলেই হবে।
-আচ্ছা বাবুর বাবা কে বলবো তারাতাড়ি বাসায় যেতে...
-আচ্ছা বাবু কাঁধছে রাখি বাই,
-আচ্ছা যাও
-ওকে বাই..
-শোন
-আবার কি?
-লাভ ইউ..
-লাভ ইউ টু পাগল...
সুমন ও হৈমন্তির সুখের সংসার, আজ প্রায় তিন বছর হয়ে গেল ওদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু ভালবাসার এতোটুকুও কমতি নেই, সাধারণ দম্পতিদের মাঝে মধ্যে টুকিটাকি ঝগড়া হয় কিন্তু এদের বেলায় একটু ব্যতিক্রম। যেই ঝগড়া শুরু করুক অপর জন চোঁখে চুমু দিয়ে ঝগড়া থামিয়ে দেয়।
সুমন একটা বেসরকারী কোম্পানির কর্মকর্তা, যদিও অল্প কিছুদিন পর প্রমোশন পাওয়ার সম্ভবা আছে , বর্তমানে বেতন যা পায় দুইজনের চলে যায়, ওদের বাবু আসাতে যদি প্রথম প্রথম সংসার চালাতে একটু হিমসিম খেতে হয়েছিল কিন্তু তারা ঠিকই গুছিয়ে নিয়েছে, সংসারের কিছু বাড়িতি খরচ কমিয়ে নিয়েছে, হৈমন্তিও একটা চাকরী করতো কিন্তু বাবু আসার পর ছেড়ে দিয়েছে কারণ ওদের কাছে বাবুই সবকিছু আগে। এখন বাসায় কিছু বাচ্চাদের টিউশন দেয় হৈমন্তি, সেখান থেকে কিছু টাকা পায় তা দিয়ে সংসারের টুকিটাকি খরচ সে সামলে নেয়।
সুমন কখনই ভাবতে পারেনি এমন সুন্দর একটা সংসার হবে তার। তিন বছর আগেও সুমন ছিল বিশাল স্বপ্নবাজ ছেলে, পড়ালেখা শেষ করেও চাকরী-বাকরীর কোন চেষ্টা না করে শুধু ঘুরে বেড়াতো। সে ভাবতো পৃথিবিতে চাকরী মানে দাসত্ব, আর সে কারো দাস হয়ে থাকতে রাজি না, ব্যবসা করবে সেই টাকা তার কাছে নেই। সে স্বপ্ন দেখতো কোন একদিন কোন এক জাদুর পাথরের পরশে বিশাল ধনী হয়ে যাবে। বাবা-মা নেই, বড় বোনের বাসায় থাকতো, বোনের স্বামী অনেক পছন্দ করতো সুমনকে, নিজের ছোট ভাইয়ের মতই মনে করতো, কিন্তু তার স্বপ্নবাজি একদম পছন্দ করতো না, উনার কোম্পানিতে একটা চাকরীর ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন কিন্তু বেপরোয়া সুমন চাকরি করবে না সে সিন্ধান্তে অটল।
একটি ঘটনা সুমনকে বধলে দিতে বাধ্য করে দেয়...
সুমন একদিন দুলাভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, রাত প্রায় তখন ১১টা কি ১২ টা হবে। অন্ধকার রাস্থা মানুষজন নেই বললেই চলে, মাঝে মাঝে দুইএকজন মানুষ দেখা যাচ্ছে কিন্তু তাদের বাসায় ফেরার তাড়া, দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায়।
হাটতে হাটতে হঠাৎ লক্ষ করে সুমন একটি মেয়ে অন্ধকারের আড়ালে লুকিয়ে আছে, প্রায় সময় এমন মেয়ে দেখা যায় আড়ালে, কেন দাঁড়িয়ে থাকে তা ব্যাখ্যা না করলেও সবাই জানে। সুমন অন্য পথ ধরে হাটা শুরু করলো, পেছন থেকে মেয়েটি হঠাৎ ডাক দিল...
স্যার স্যার...
জ্বী??(ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়)
কয়টা বাজে?
১২.৩০ মিনিট
এতো রাইত হইয়া গেল, থ্যাংকু স্যার।
আচ্ছা ঠিক আছে, আসি আমি।
হ যান স্যার...
মেয়েটিকে দেখতে ভারী সুন্দর সে কেন যে এই পেশায় এলো সেটা মেলাতে পারছে না সুমন, দেখে মনে হয় না এই টাইপের কাজ সে করতে পারে। মেয়েটি কেমন যেন অন্য মনস্ক এবং চিন্তত ও মনে হচ্ছে... তাতে কি সুমন এখন আরও বেশি চিন্তত কোথায় থাকবে তারই কোন ঠিক নাই, রাতে খায়ও নাই, পকেটে কিছু টাকা আছে ওগুলো দিয়ে দুই একদিনন চলে যাবে, এর ভেতর যদি কোন একটা ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে না খেয়ে মরতে হবে, ভাবতে ভাওবেই পা বাড়াচ্ছে। কি মনে করে সুমন পেছন ফিরেই দেখে মেয়েটি সেখানে বসে আছে আর ফুপিতে ফুপিতে কাঁধছে।এক নজর দেখে নিল আশে-পাশে কেউ নাই সুমন মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করে..
-কাঁধছেন কেন আপনি?
-আপনে কে? ক্যান আইছেন?
আমি যেই হই এতো রাতে একটা মেয়েকে এভাবে রাস্তায় কাঁধতে দেখতে মোটেই ভাল লাগছে না, বলেন কি হয়েছে আপনার কাঁধছেন কেন?
-কান্দি আমার কপাল দোষে, এতো রাইত হইলো একটা খদ্দেরও পাইলাম না। একজনের লগে ফোনে কথা হইছিল কিন্তু আইলো না।
-ও আচ্ছা.. ঠিক আছে যাই।
-ক্যান ভয় পাইছেন, আপনেরে খদ্দের বানামুনা ভয় পাইয়েন না।
-আচ্ছা একরাত কত টাকা নেন?
-ক্যান?
-জানতে চাচ্ছি বলেন শুনি?
-২০০০টেকা
-ও আচ্ছা কম দিলে হয় না।
-এমনেই খদ্দের পাই না, কত দিবেন কন?
-১০০০টাকা দিব।
-না হইবো না।
ও আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি যাই।
-আইচ্ছা শুনেই আজকে এমনেই বাজার ভাল না চলেন।
-কোথায় যাব?
-আমি কি জানি আপনে কই লইয়া যাইবেন?
-কেন আপনি এসব কাজ করেন আপনার পরিচিত কোন জায়গা নেই?
-না..
-তো এসব কাজ করেন কেন জায়গা যদি না চিনেন ছেড়ে দেন এসব।
-আরে আজব আপনে পোলা মানুষ আপনের না জায়গা চিইন্না রাখা দরকার, আমি কি জানি কই যায় না যায়?
-আমি কিভবে চিনবো আমিমি তো আর কোন দিন এসব কাজে যাই নাই, আর করিও নাই।
-ও আসলে আমিও কোনদিন যাই নাই আজকেই প্রথম।
-কেন আসছেন তাহলে এই পেশায়?
-কি করবো বলেন, বাসায় কামাই খাওয়ানোর মত কেউ নাই ঘরে অসুস্থ মা, ছোট বোন, ওদের খাওয়াবে কে?
-কাজ করেন..
-কাজ অনেক জায়গাই চাইতে গেছিলাম কোনখানে পাই নাই, সবাই শুধু শরিরই খুজে কাজ দিতে চায় না। একবার একটা নামী কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দিতে গেছিলাম অফিসের বড় অফিসার ইন্টার্ভির শেষে রাতে উনার বাসায় আসতে বলে। একটা বাসায় টিউশনি করাতাম স্টুডেন্টে একদিন ছিল না সেই সুযোগে স্টুডেন্টের বাবা আমার শরিরে হাতে দিতে চেয়েছিল দৌড়ে কোন রকম পালিয়ে বাঁচি। এরকম অনেক অনেক বার হয়, শরিরই যদি বেঁচতে হবে তাহলে এই পেশাই ঠিক আছে।
-কতটুকু পড়ালেখা করছে?
-থাক স্যার জেনে কি হবে, বাদ দেন চলেন আপনার কাম শেষ কইরা আসি।
-আজ রাতের জন্য আপনি আমার তাই আমি যা জানতে চাই তার উত্তর দেন। নইলে একটাকাও পাবেন না।
-অনার্স ৩য় বর্ষের পয়ন্ত পড়ছি, এখন টাকার অভাবে ফাইনাল দিতে পারছি না।
-চলেন আপনার বাসায় যাবো।
-মানে?
-মানে কি আপনার বাসায় যাব আপনার মাকে দেখতে...
মাকে দেখবেন মানে?
-বাহ এখন তো অনেক সুন্দর করে কথা বলছেন, এতোক্ষন ওভাবে কথা বলছিলেন কেন?
-এই ভাষা এই পেশার সাথে যায় না তাই।
-ভাল বলেছেন চলেন আপনার বাসায় যাই।
-বাসায় কেন যাবেন?
-আপনার মাকে দেখবো।
-মা জানলে মারা যাবে।
-আপনার মা কিছুই জানবে না, আমি কিছুই বলবো না, এখন চলেন।
-কিন্তু...
-কোন কিন্তু না বাসা কোথায় বলেন? দেখি কোন গাড়ি পাই কিনা।
-ওমুক জায়গা।
-চলেন সামনে হাটি দেখি কোন গাড়ি পাই কিনা। আচ্ছা ভাল কথা আপনার নামটা তো জানা হল না। আপনার নাম কি?
-হৈমন্তি
-বাহ নামটা তো অনেক সুন্দর। এই যে দেখুন সুন্দর নামে সাথে সাথেই গাড়িও চলে এলো দাঁড়ান দেখি যাবে কি না।
সুমন ও হৈমন্তি সিএন্ডজি নিয়ে হৈমন্তির বাসায় দিকে রওনা দিল। বাসায় গিয়ে দেখে হৈমন্তির মায়ের শরির অনেক বেশি খারাপ হাঁট থেকে নিচে পড়ে গেছে, মাঠিতেই এদিক-ওদিক গড়াগড়ি খাচ্ছে, সুমন দ্রুত হৈমন্তির মাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষন পরই হৈমন্তির মা মারা যায়।
.
দূরে দাড়িয়ে হৈমন্তি চোঁখের জল গড়িয়ে পড়ছে দেখে সুমন এগিয়ে গিয়ে হৈমন্তর চোঁখের জল তার আগুলের স্পর্শে মুছে দেয়।
এর পরের ঘটনাটা অনেকটা নাটকীয় ভাবেই ঘটে যায় সুমনের জীবনে, সে হৈমন্তি ও তার বোন রূপার দ্বায়িত্ব নেয়।
সুমনের একবন্ধুর বধলতে এই চাকরীটা ব্যবস্থা হয়। তিন বছর পর এখন তাদের সুখের সংসার...
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
হরমোন বাড়ছে।