![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেতনার প্রদীপ জ্বালানো তারুণ্যের আন্দোলনের আজ দশম দিন। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রবাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে তরুণদের দাবির কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।
তরুণেরাও মনে করছেন, দেশের মানুষ যেভাবে তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, সেটাই তাঁদের প্রাথমিক বিজয়। আর তাই এই আন্দোলনকে এখন টেনে নেওয়া হচ্ছে পরিপূর্ণতার দিকে।
টানা নয় দিনের এই অভূতপূর্ব আন্দোলনের অর্জন কী—এমন প্রশ্নের জবাবে আয়োজক ও সাধারণ আন্দোলনকারীরা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিজয় শুরু হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ বিজয় হয়নি। তাঁরা আশাবাদী, জনগণের দাবি পূরণ হবেই।
তবে নেতৃত্বস্থানীয় আন্দোলনকারীরা এই আন্দোলনের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দিতে এখনো চাচ্ছেন না। তাঁদের ভাষায়, এটা এখন গণমানুষের আন্দোলন। তাই এ আন্দোলন কত দিন চলবে, তা জনগণই ঠিক করবেন।
অর্জন: গতকাল সকালে জামায়াত- শিবির আবারও আগের দিনের মতো তাণ্ডব চালিয়েছে রাজধানীতে। কিন্তু তা শাহবাগের পরিবেশকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারেনি। পয়লা ফাল্গুনে ভিন্ন আবহ আর মানুষের অনন্য উপস্থিতিতে শাহবাগের গণজমায়েত এক নতুন বাংলাদেশের জানান দিচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা বললেন, নয় দিনের আন্দোলনে কিছু অর্জন হয়তো এসেছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা। এটা না হওয়া পর্যন্ত অন্য হাজারো বিজয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই বলে জানান একাধিক আয়োজক। তার পরও তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় যে কটি অর্জন দৃশ্যমান হয়েছে সেগুলো হলো:
এক. একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য জাতি যে ঐক্যবদ্ধ, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
দুই. আন্দোলনের পর সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। আইনে সমতা ফিরে আসছে এবং আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ এ সংশোধনী অনুমোদন করেছে। গতকাল তা জাতীয় সংসদে উত্থাপনও করা হয়েছে।
তিন. প্রসিকিউশনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
চার. জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও অন্যতম অভিযুক্ত কামারুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
পাঁচ. আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক শাহবাগে অবস্থান নেয়। তরুণেরা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খুব ছোট পরিসরে এই প্রতিবাদ শুরু হলেও সন্ধ্যা নাগাদ সেখানে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এসে যোগ দিতে থাকেন। তিন দিনের মাথায় গত শুক্রবার লাখো মানুষের মহাসমাবেশে তরুণেরা তাঁদের দাবি তুলে ধরেন এবং মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ সাজার রায় বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন।
তরুণদের অন্য দাবির মধ্যে ছিল: মানবতাবিরোধী অপরাধী ও জামায়াত-শিবিবের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। পঁচাত্তরের পর ছেড়ে দেওয়া সব অপরাধীকে ট্রাইব্যুনালে বিচার করা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা, জামায়াতের অর্থে পরিচালিত সব প্রতিষ্ঠান বর্জন করা, গৃহযুদ্ধের হুমকি দেওয়া জামায়াতের নেতাদের গ্রেপ্তার করা।
গতকাল বুধবারও শাহবাগ নবজাগরণ মঞ্চ থেকে এসব দাবি জানিয়ে দিনভর স্লোগান দেওয়া হয়। দুপুরের দিকে খবর আসে, কাদের মোল্লা ও অভিযুক্ত কামারুজ্জামানের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। এই খবরের পর সেখানে কিছু সময়ের জন্য আনন্দ বয়ে যায়।
আন্দোলনের সময়সীমা: আয়োজকদের কয়েকজন জানান, এই আন্দোলন আর কত দিন এবং কীভাবে চলবে, তা নিয়ে তাঁরা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। বিশেষ করে ব্যস্ততম শাহবাগ মোড় বন্ধ থাকায় নগরের যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই আলোচনা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
একাধিক আয়োজক বলেন, বিষয়টি এখন আর আয়োজকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলন কত দিন চলবে, এমন সীমা বেঁধে দিলে মানুষের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে।
আন্দোলনের আয়োজক ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে কিছু কিছু বিজয় ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। আমরা চাই, সাধারণ মানুষ যে লক্ষ্য নিয়ে এই আন্দোলনে নেমেছেন, সেই দাবি পূরণ হোক। তাহলে বলা যাবে চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে।’
আর কত দিন এই আন্দোলন চলবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে আছেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় শাহবাগে আসছেন। তাঁরা মনে করছেন, এই আন্দোলন বন্ধ হলে লক্ষ্য পূরণ না-ও হতে পারে। এই আন্দোলন কত দিন চলবে, তা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
©somewhere in net ltd.