নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিমন ৪০৮

রিমন ৪০৮ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অগ্নিমিছিল, শোকগাথা নয়

১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:১৭

২০০২ থেকে শুরু । এরপর টানা একযুগ পেরিয়ে গেছে ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার সখ্য । হ্যা, ঠিক ধরেছেন । ক্ষয়ে যাওয়া-বখে যাওয়া- ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চার- ডাইনিং ক্যান্টিনে ফাউ খাওয়া-চাদাবাজ-টেন্ডারবাজ ছাত্রলীগের কথাই বলছি । যেন ঘরের অবহেলিত, তিরস্কৃত ছেলেটি । প্রাত্যাহিক বাজারের অংশ হতে মেরে খাওয়া কিছুটা অনৈতিক ছেলেটি ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলার মতোই বাড়ির বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে । তখন আর সংসারের পড়ুয়া, সুশীল ছেলেটির দেখা মেলে না । বখাটে ছেলেটির জন্য বাড়ির দিকে কেউ কুনজর দিতেও সাহস পায় না । যা গুন্ডা স্বভাবের, হাত-পা ভেঙ্গে দেবে একদম

ছাত্রলীগের বিবর্তন নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত । দলের নেতাদের যদি এর ক্লিনিং নিয়ে কিছু বলা হয় তাহলে ভাবখানা এরকম, এতবড় দল তাই ঝামেলা তো হবেই । কথা সত্য, বড় দল তাই ঝামেলা বেশী । তবে নেতাদের উত্তরটি সমস্যা এড়িয়ে যাবার জন্যই । ফলাফল, দল ক্ষমতায় এলে ছাত্রলীগ নাম ধারণ করে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিষাক্ত কীট ভেতরে ঢুকে যাওয়া । নাহ্‌ আজ এর ব্যবচ্ছেদও করতে বসিনি ।



ছাত্রলীগ নিয়ে বিরোধী শিবিরের মন্তব্য উল্লেখ করার কিছু নেই । সুশীলরা আরেকটু ইনিয়েবিনিয়ে বলার চেষ্টা করে । ষাটের দশকের ছাত্রলীগ আর নেই । এখনকার-তখনকার ইত্যাকার তুলনা চলতে থাকে । ছাত্রলীগ এর থোড়াই কেয়ার করে । ষাটের দশকের বুদ্ধিজীবী বলতে যাদের বুঝানো হতো এখনকার বুদ্ধিজীবী বলতে তাদের চেহারা আর ভেসে ওঠে না, বরং বেশ্যাজীবী আসিফ নজরুলদের চেহারাই ভেসে ওঠে । ষাটের দশকে সবচে মেধাবী ছাত্ররাই রাজনীতি সচেতন ছিল, বর্তমানের 'মেধাবী'রা হয় বুদ্ধিবেশ্যামীর পথ বেছে নেয় অথবা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেয়ে আর ফিরে আসে না । কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাকি থাকে তাঁরাই যাদের আমরা মিডিওকার বলি বা ভাল ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাই না । তাহলে আর ওই তুলনা দিয়ে কি লাভ । ছাত্রলীগের পরিবর্তন হয়েছে এবং হবেই । সময়ের প্রয়োজনেই জিল্লুর-তোফায়েলদের জায়গায় এখন নাজমূলরা । বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ, পরবর্তীতে এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও অন্যান্য সময়ে ছাত্রলীগের অসামান্য ভূমিকা আমাদের ইতিহাস । বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেখিয়ে দিচ্ছে, ছাত্রলীগ এখনও বেশ্যাজীবী নয় ।



ছাত্রলীগ নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যকার অভিযোগ বিস্তর । তাই বলে দেশের এই সংকটপূর্ণ মুহুর্তে আমার সংগঠনের ভাইরা যখন ফটিকছড়িতে কতগুলো ইতর নৃশংস ধর্মকীটের হাতে জীবন দিচ্ছে শুধুমাত্র দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে তখনও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার মতো অকৃতজ্ঞ আমরা হই কি করে ? মিডিয়ার কল্যাণে ছাত্রলীগ বহু আগে থেকেই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর জায়গায় ভূমিকা পালন করছে এবং জামায়াত-শিবির থেকে শুরু করে বাকিদের বেলায় 'দুর্বৃত্ত' শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয় । যে সাংবাদিক ভাইবোনগণ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই কাজটি করে যাচ্ছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাবলী বলে যে তাঁরাও নিরাপদ নন । তারা যদি নিজেদের বিকিয়ে না দিয়ে একটু সৎ হতেন তাহলে ধর্মকীটগুলো আজ এত বেপরোয়া হয়ে উঠতো না ।



যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া গত পাঁচ ফেব্রুয়ারী থেকে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম প্রাণভোমরা হয়ে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ । আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন জানাই আমার দুই অগ্রজ ও অনুজপ্রতীম সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সিদ্দিকী নাজমূলকে যারা সময়ের দাবী, প্রাণের দাবীকে উপেক্ষা করেনি, সময়মতো হাজির থেকেছে এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই গণজাগরণে । আমাকে অনেকেই অভিযোগ করে প্রশ্ন করেছে, ছাত্রলীগ কেন এসেছে ? তাতে এটা দলীয় চেহারা পেয়েছে ?



চোখ কপালে তুলিনি, গত চার বছরে হলুদ সাংবাদিকতার তৈরি ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি থেকে এই প্রশ্ন আসা অনাকাঙ্ক্ষিত নয় আমার কাছে । রাগে জ্বলে গেলেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর দিয়েছি । বলেছি, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আওয়ামী সরকারের সময়ে । এই সরকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে । শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবীর সঙ্গে ছাত্রলীগ একাত্মতা পোষণ করে । শুধু তাই নয়, এখানে উপস্থিত আছে সমস্ত বাম সংঠনের ছাত্র সংগঠনগুলো । ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী , ছাত্র ফেডারেশন থেকে শুরু করে সবাই । তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে থাকা দল ক্ষমতায়, তাদের সবচে বড় ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ এখানে আসবে না কেন ? এরপর প্রশ্নকর্তা নিশ্চুপ ।



ছাত্রলীগ এতদিন সরাসরি শিবিরকে অস্ত্র হাতে পাল্টা আঘাত করছে না কেন তা নিয়েও নানান রকম কথাবার্তা । 'সন্ত্রাসী' আখ্যা পাওয়া ছাত্রলীগকে নপুংসক বলতেও ছাড়েনি । এই ছাত্রলীগ শিবির-হিজবুতিয়াদের মতো পেশাদার খুনী হিসেবে ট্রেনিং পাওয়া নয়, তাই নিজেদের এক একটি লাশের বিপরীতে মুড়িমুড়কির মতো ঐ জারজদের লাশ তাঁরা ফেলতে পারেনি । নিজেদের শরীর বার বার আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হবার পরেও সময়ের অপেক্ষা ছিল এবং এই ছেলেরা যে বসে ছিল না সারা দেশে তার প্রমাণ এই কয়দিনে সাধারণ মানুষ পেয়েছে । আমি গর্বিত 'আমাদের' একজন হতে পেরে ।



শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফটিকছড়িতে আটজনের শহীদ হবার কথা জানা গেছে । আরও আছে এই কাতারে, সকাল পর্যন্ত কতজনে দাঁড়ায় জানা নেই । শুধু কোথায় যেন বেদনায় মোচড় দিয়ে উঠছে বার বার, ফটিকছড়ি টানছে কীবোর্ড ছেড়ে । জানি, যাওয়া হবে না । কোন টক শো-তে তোমাদের নাম নেবে না সুশীল চুতিয়ারা । তোমাদের লাশের হিসেব থাকবে না । শুধু সহযোদ্ধাদের কয়েক ফোটা অশ্রু আর দীর্ঘশ্বাসে অগ্নিশপথ । তবু জানি কারো তোয়াক্কা না করেই সময়ের সাহসী সন্তানেরা সমস্ত বিপন্নতা থেকে একদিন বের আসবে, দেশকেও বের করে আনবে । ওই বখে যাওয়া ছেলেরাই । তাঁরা ভোলেনি জাতির পিতার নাম, মুক্তিমন্ত্র । প্রিয় ছাত্রলীগ, স্যালুট । স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকৃত উত্তরাধিকার তোমরাই । তোমাদের ঝরে যাওয়া প্রতিটি রক্তকণিকায় জন্ম নিক শত শত মুক্তিসেনা, পুড়িয়ে ছারখার করে দিক মাতৃভূমির শরীর খামচে ধরা বিষাক্ত জারজ অভিশাপগুলোকে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.