নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐক্যতান শুনতে পাও, হে নূতন।। রেজা ঘটক

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬

একটি গ্রিক প্রবাদ বারবার কানে বাজছে। কোনো জাতি ধ্বংস করার জন্য শুধু তাদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়ে দিতে পারলেই চলে। তারপর তারা নিজেরা তাই নিয়ে ভাগ হয়। ভাগ হবার এই কাজটি ঘটে স্রেফ গুজব থেকে। একদল লোক এই গুজব ছড়ানোর কাজটি করে নিজেদের স্বার্থে। কারণ তাদের গুজব ছড়ানো ছাড়া আর কোনো যোগ্যতা নেই। গুজব তখনই সফল হয় যখন মানুষ সেটা বিশ্বাস করে। এমনিতে নানা মতের নানা মুনিকে একত্র করাটা খুব কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটি যখন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে চায়, তখন সেখানে কেবল ঐক্যই হল প্রধান শক্তি। সেই ঐক্য ধীরে ধীরে শৃঙ্খল হয়। সেই শৃঙ্খল ধীরে ধীরে পাহাড়ি ঝরনা ধারার মত একই সুরে বেজে ওঠার চেষ্টা করে। সেই সুর যখন মিলেমিশে একটা মায়াবি সুরের মূর্ছণা ছড়ানোর কাজে একসঙ্গে বেজে ওঠে, তখন তা পায় ঐক্যতান। এই ঐক্যতান হল সম্মিলিত সুর। বহু ঐক্যের মধ্যে এক সুর, বহু সুন্দরের সমন্বয়ে এক সুর ঝংকার। একাধিক কণ্ঠ অথবা একাধিক বাদ্যযন্ত্র থেকে উত্থিত সেই গীতধ্বনির পরস্পর ক্রিয়াজনিত সুরতরঙ্গ হল ঐক্যতান। এই ঐক্যতান হল একতার অগ্রবর্তী অবস্থা। এই ঐক্যতান যত বেশি নতুন সুর শুনাতে পারবে তত বেশি এটা কার্যকর হবে। এই ঐক্যতানে কোনো একক নেতার প্রয়োজন হয় না। এখানে সবাই নেতা। সকলকে নিয়েই ঐক্য। আর সেই ঐক্যটা যদি তাল মিলিয়ে একই সুর ধরতে না পারে, তা ঐক্যতান হবে না। ঐক্যতান যত বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে তত বেশি সুরের মূর্ছণা আকাশ প্রকম্পিত করবে। তত বেশি ঐকান্তিক ইন্দ্রজাল সৃষ্টি হবে। আর তখন তা হবে ঐতিহাসিক।

ঐক্য যত দৃঢ় হবে এই ঐক্যতান তত বেশি মধুর শোনাবে। মানুষের শ্রবণ ইন্দ্রিয় তত বেশি ওই সুরের মায়ায় আসক্তি হবে। এই আসক্তির মধ্যে জাদু আছে। এই আসক্তির জাদুতে মানুষ নিজের অজান্তেই কিংবদন্তী হয়ে ওঠে।

ঠিক এর বিপরীত হল গুজব। ঐক্যতান ভাঙার জন্যে গুজব হল চরমপত্রের মত এক মহৌষধী। মানুষের মনে তখন এক সন্দেহ দানা বাধে। সেই সন্দেহ নিয়ে চলে কানাঘুষা। সেই কানাঘুষা গুজগুজ করতে করতে এক সময় মানুষ খেই হারিয়ে ঐক্য নিয়ে সন্দেহ করে। সুর নিয়ে সন্দেহ করে। আর তখন ঐক্যতান ছিড়ে যায়। সফল হয় গুজবের কেরামতি। তখন আর কেউ মনে করতে পারে না গুজবটা কে বা কারা ছড়িয়েছিল? কী উদ্দেশ্যে ছড়িয়েছিল? গুজব ছড়িয়ে কাদের উদ্দেশ্য সফল হল?

ঐক্যতান ভাঙার জন্যে একটা গোষ্ঠী সব সময় স্বার্থ খোঁজে। সেই স্বার্থে অনেক রাজনীতি থাকে। অর্থনীতির লেনদেন থাকে। ক্ষমতার এপিঠ ওপিঠ থাকে। আর থাকে ধর্মান্ধ মানুষের অবুঝ মনকে সহজে কাবু করার এক আশ্চার্য কৌশল। সেই কৌশলকে ধুর্ত স্বার্থবাদী গ্রুপ খুব গোপনে মানুষের ঐক্যতানের মধ্যে ছেড়ে দেয়। প্রথমে তারা এটি একজনের মাধ্যমে ছড়ায়। পরে এটি ভাইরাসের মত মুহূর্তে ঐক্যতানের মধ্যে ঢুকে পড়ে সুরের বারোটা বাজিয়ে দেয়। ভেঙে যায় সুর, নষ্ট হয় ঐক্যতান। আর দাঁত কেলিয়ে তখন হাসে গুজবের শ্রষ্ঠা নপুংসক নরপশু। ঐক্য গঠনের কাজে যার কোনো যোগ্যতা নেই, কিন্তু ঐক্যে ফাঁটল ধরাতে যে ভারী পারদর্শী এক বকধার্মিক।

গুজব কখন সফল হয়? মানুষের আস্থা আর বিশ্বাসে যখন ফাঁটল ধরে। মানুষের চেতনায় যখন মরিচা ধরে। মানুষের নিজস্ব চিন্তার বিচারবোধ যখন পরনির্ভর হয়ে যায়। মানুষ যখন নিজেই একটা পশু হয়ে যায়। বিবেকবোধ, বিচারবোধ, যখন মানুষের মাথা থেকে উধাও হয়ে যায়। মানুষ যখন নিজের অজান্তে অপর দুষ্টু লোকের খপ্পরে পরে গুজব গিলে ঐক্যতানের মায়াবী সুরকে ভাঙার কাজটি করে।

যে মানুষটি দৃঢ় ঐক্য গঠনে সমুদ্রের জোয়ারের মত ভূমিকা রেখেছিল, সেই একই মানুষ একটু বিবেকবোধের অভাবের কারণে, একটু অসাবধানতায়, একটু অধৈর্য হয়ে গুজবে কান দিয়ে ঐক্যতানের ভাঙ্গনে যে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিতে পারে, এটা অসচেতনাতার চরম পর্যায়ে যে কীভাবে হায়ানার মত ছড়িয়ে দেয়, মানুষ তা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা না করলে বুঝতে পারে না। সেই সুযোগে গুজব ছড়ানোর কাজে যে নিজেও ভূমিকা রেখে ঐক্যতান ভাঙার কাঠগড়ায় যে নিজেও আসামী, তা মানুষ খুব সহজে বুঝতে পারে না। এটাকে বলা হয় হুজুগে। এই হুজুগে ব্যাপারটা যত বেশি গুজবকে সহায়তা দিতে পারে, তার কানাকড়িও ঐক্যতানকে দিতে পারে না।

কারণ, ঐক্যতানে লাগে ধৈর্য, লাগে সহিষ্ণুতা, লাগে মমত্ব, লাগে ত্যাগ। আর লাগে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া। সেই বোঝাপড়াটা যার যত সুন্দর, যার যত সঠিক, যার যত দৃঢ়, কেবল সেই পারে ঐক্যতানের মায়াবি মর্ম বুঝতে। ঐক্যতানকে কিংবদন্তী করার ঐতিহাসিক পর্বে ভূমিকা রাখতে। সেই পারে ঐক্যতানের সুর ভূবনময় ছড়িয়ে দিতে। আর এর বিপরীত লোকটি হল ঘাপটি মেরে থাকা ধুরন্ধর নপুংসক। গুজব ছড়িয়ে যে ঐক্যে ফাঁটল ধরিয়ে স্বার্থ হাসিল করার কাজে মতলব করে।

ঐক্য ধরে রেখে আমরা ঐক্যতানের মায়াবি সুরে প্রাণ ভরাব নাকি গুজবে কানাঘুষা করে ঐক্যতানের সুর ভেঙ্গে ধুরন্ধর লোকের পাল্লায় পড়ব, তা হিসেব করার কিছু নেই। চিন্তা করার বিষয়। চিন্তা না করতে পারার অপরাধে তোমরা হাজার হাজার বছর গুজবে কানাঘুষা করে সময় নষ্ট করবা, ঐক্যতান গড়তে পারবা না। একটা বিষয় সবাই মনে রাখবা, গুজবের যে শ্রষ্ঠা সে কিন্তু চিন্তা করেছিল কীভাবে ঐক্য ভাঙা যায়। আর তুমি চিন্তা না করেই সেই গুজব নিয়ে হাবার মত কানাঘুষা শুরু করলা? আর তা ঐক্যতানের সুরের মহালয় ভেঙে দেবার কাজে ভাইরাস হয়ে কাজ করবে। এটা একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখো।

গুজবের একটি নিজস্ব শক্তি আছে। যা নেশার মত মানুষকে প্রলোভনে ফেলে। সেই নেশা থেকে নিজেকে বাঁচানোর একটাই পথ। গুজবে কান না দেয়া। কান দিলেও চিন্তা করে সেই গুজবের পক্ষ প্রতিপক্ষ বের করা দরকার। কার স্বার্থে অমন গুজব রটানো হল, সেই অনুসন্ধান ঠাণ্ডা মাথায় করতে না পারলে বুঝতে হবে, চিন্তা করার শক্তি তুমি অনেক আগেই হারিয়েছ গুজবে মাথা নষ্ট করে। গুজব চিরকালই গুজব। আর এর পেছনে থাকে সুনির্দিষ্ট ষড়যন্ত্র। যা কৌশলে জায়গা মত ছাড়া হয়।

তবু হাজার বছর ধরে মানুষ সত্যকে জয় করেছে। সত্যের পেছনে মানুষ। গুজবের পেছনে শয়তান। মানুষের শয়তানি বুঝতে না পারলে আপনি মানুষ নামের কলংক। তবু আমরা ঐক্যতানের গান শুনতে চাই। তবু আমরা ঐক্য ধরে রাখতে চাই। হে মানব সন্তান, তুমি চিন্তা করতে শেখো। গুজবে তোমার জীবনের মূল্যবান সময় খামাখা নষ্ট করো না।

শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে ঐক্যতানে যে সুর বাজছে, সেই সুর সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মনের টানের ঐক্যতান। সেই ঐক্যতানে ফাঁটল ধরাতে বিভিন্ন মহল গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন প্রজন্ম, তোমরা গুজবে কান না দিয়ে ঐক্যতান ধরে রাখো। এই ভূবন ভরানো সুর, এই সত্যপ্রেম, এই মায়াবি ঐক্য আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়তে পথ দেখাবে। রাজীবের রক্ত দিয়ে লেখা এই গান নিয়ে যেন কেউ গুজবে না ছড়ায়। সবাইকে ঐক্যতানে বাজতে হবে, বাজাতে হবে, গাইতে হবে। আর তখন গুজব ভেসে যাবে মিথ্যার আস্তাকুড়ের ভাগাড়ে। জয় বাংলা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩

আহলান বলেছেন: যে চলে গেলো, সেই জানে কোন রাস্তায় সে গেলো .... এত আন্দেলোন এত কিছু কোন কিছু কি তার এই নতুন চলার পথের পথেয় হয়েছে কিনা কে জানে? এর পরেও আমরা মিথ্যা বলি, মিথ্যা বুঝি, মিথ্যা বুঝাই, নিজেকে নিয়ে বড়াই করি ..... আফসোস ...

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৭

সুমন জেবা বলেছেন: "শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে ঐক্যতানে যে সুর বাজছে, সেই সুর সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মনের টানের ঐক্যতান। সেই ঐক্যতানে ফাঁটল ধরাতে বিভিন্ন মহল গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন প্রজন্ম, তোমরা গুজবে কান না দিয়ে ঐক্যতান ধরে রাখো। এই ভূবন ভরানো সুর, এই সত্যপ্রেম, এই মায়াবি ঐক্য আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়তে পথ দেখাবে। রাজীবের রক্ত দিয়ে লেখা এই গান নিয়ে যেন কেউ গুজবে না ছড়ায়।"

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯

খুব সাধারন একজন বলেছেন: ---ডিভাইড এন্ড রুল---

আমরা সত্যর পক্ষে আবেগের আন্দোলন করি অরা দেয় দাবা-পাশা খেলার গুটির চাল। আমরা বিচার চাই আর অরা নানা দিকে দৃষ্টি ঘোরায়- গাঁজা, গান বাজনা, নাস্তিকতা, সাগর রুনী, ছাত্রলীগ, ধর্মীয় অবমাননা, বিশ্বজিৎ, চাউলের দাম, সীমান্ত, 'আর সব'যুদ্ধাপরাধী... এখনো আজো একাত্তুরেও।

রাজীব থাবা বাবা হওয়ায় মারা গেলে অনেক আগে যেত। সে মারা গেছে শাহবাগে যাওয়ায়। সে মারা গেছে বাংলাদেশে একাত্তর সালে যারা ৩০ লাখ খুন, ৪ লাখ নারীকে ধর্ষণ, এখনো মুক্তিযুদ্ধাদের প্রকাশ্যে লাথি দেয়, গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দেয় আর একাত্তরের খুনীদের রক্ষা করতে প্রতিদিন আটশো কোটি টাকা গচ্চা দেয় হরতাল দিয়ে সেই জামাতির বিচার চাইতে গিয়ে।

রাজীবের জানাযার কথা ভোলেন। মূল প্রসঙ্গে আসো বাংলাদেশের মানুষ। রাজীব নাস্তিক এইজন্য খুন হয় নাই। রাজীব শাহবাগে যায় তাই খুন হয়েছে।

প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মুসলমানের পাঁচটি কর্তব্য। তার মধ্যে এক কর্তব্য হল, যখন কোন লাশ যায়, তার যা বিশ্বাসই হোক না কেন, সম্মান দেখিয়ে উঠে দাঁড়াবে।

বাংলার মানুষ, আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে। দশটা কথার জবাবে একটা কথা হলেও বল। বাংলাদেশ সবার দেশ। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান-নাস্তিক-বাংগালী-চাকমা-মারমা সবাই একাত্তুরে খুন হয়েছে পাকিস্তানিদের হাতে। মনে রেখ, তোমার শত্রু তোমাকে চেনে বাংগালী বাংলাদেশী হিসাবে, কিন্তু মুখে বলে, নাস্তিক-আওয়ামী-শাহবাগী

কয়দিন পরে বলবে, খুন হইসে ভাল হইসে, ঠিকই তো করসে, ওই পোলা সিগারেট খায় জিন্সের পেন্ট পড়ে।
এক পলকে একাত্তর---এভাবে দেখাও---এবং এভাবে---পাকিস্তানে উল্লাস---চাই সতর্কতা,---ইনডাইরেক্টলি,---ভিন্নখাত

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩

হাঁসি মুখ বলেছেন: বাংলার মানুষ, আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে। দশটা কথার জবাবে একটা কথা হলেও বল। বাংলাদেশ সবার দেশ। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান-নাস্তিক-বাংগালী-চাকমা-মারমা সবাই একাত্তুরে খুন হয়েছে পাকিস্তানিদের হাতে। মনে রেখ, তোমার শত্রু তোমাকে চেনে বাংগালী বাংলাদেশী হিসাবে, কিন্তু মুখে বলে, নাস্তিক-আওয়ামী-শাহবাগী

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.