নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকে সাবধান।। রেজা ঘটক

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের একটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশের ডোমেস্টিক এবং ইন্টারন্যাশনাল উভয় রুটেই তাদের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট আছে। বিগত ১২ এপ্রিল ২০১৩ নেপালের কাঠমুন্ডু'র ত্রিভূবন বিমানবন্দর থেকে বিকাল পাঁচটা পঞ্চাশ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ-এর একটি বিমান (ফ্লাইট নাম্বর ৪এইচ ৫৯৪) ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবার সিডিউল ছিল। ২৮৬ জন যাত্রীর মধ্যে আমি এবং আমার স্ত্রীও ওই ফ্লাইটে ঢাকায় আসার যাত্রী। ২৮৬ জন যাত্রীর মধ্যে প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ যাত্রী ছিল ট্রানজিট যাত্রী। তারা ঢাকা হয়ে অন্য বিমানে কুয়ালালামপুর যাবেন। বাকী শতকরা ৩৫ ভাগ যাত্রী ঢাকায় নেমে যাবেন। আমরা বিকাল তিনটায় ত্রিভূবন বিমানবন্দরে চেক-ইন করি। সাড়ে চারটায় ইমেগ্রেশান হবার কথা। কিন্তু পাঁচটায়ও ইমেগ্রেশান শুরু হল না। খোঁজ নিয়ে কিছুই জানা গেল না। সোয়া পাঁচটায় ইমেগ্রেশান শেষ করে লাইঞ্জে বসে আছি। ওই সময় জানা গেল বিমান লেট। লোডিং হতে দেরি হবে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আবার জানা গেল কিছুক্ষণের মধ্যে লোডিং শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত রাত আটটায় আমরা বিমানে উঠে নিজ নিজ আসনে অনেকটা আতংক নিয়েই বসলাম।

পাইলট জানালেন, ঢাকা থেকে আসার সময় দেরি হওয়াতে এই অনাকাঙ্খিত লেট। এজন্য যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমরা বিমানে বসে আছি। কিন্তু বিমান স্ট্যার্ট নিচ্ছে না! একঘণ্টা পাইলট চেষ্টা করলেন। বিমান স্ট্যার্ট নিল না। আবার পাইলটের অনুরোধ। আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আবার ইঞ্জিন চেক করবেন। সময় লাগবে। যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে সবাইকে আবার লাউঞ্জে ফেরত আনা হল রাত নয়টায়। তারপর তিনঘণ্টা ধরে নেপাল নেভিগেশান বিমানের ইঞ্জিন চেক করল। রাত বারোটায় আমরা আবার আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি আতংক নিয়ে বিমানে উঠে বসলাম। পাইলট জানালেন, ঢাকা বিমানবন্দর মেরামতজনিত কারণে বন্ধ রয়েছে। তাই আমরা চট্টগ্রাম যাব। সেখান থেকে কুয়ালালামপুরের ট্রানজিট যাত্রীরা অন্য বিমানে কুয়ালালামপুর যাবেন। আর ঢাকার যাত্রীরা চট্টগ্রামে হোটেলে রাত্রীযাপন করবেন। পরদিন সকালে মানে ১৩ এপ্রিল ২০১৩ তাদেরকে আরেকটা বিমানে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে। পাইলট আরো জানালেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আমরা দেড়ঘণ্টায় চট্টগ্রাম পৌঁছাব। এবার ভারী উৎকণ্ঠা নিয়ে বিমান আকাশে উড়লো। ঘরের চাল ফুটো হলে যেমন বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে, তেমনি মাথার উপর ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়া শুরু হল। বিমানের স্বাভাবিক শব্দের বদলে একটা অদ্ভুত ভৌতিক শব্দ শুরু করল। আমরা মধ্যরাতের আকাশে হিমালয়ের উপর পাক খাচ্ছি। যে কোনো সময় মৃত্যু অথবা হিমালয়ের কোনো পাহাড়ে আছড়ে পড়ে জীবনযুদ্ধ শেষ!

কিছুই বুঝতে পারছি না কি ঘটতে যাচ্ছে। মনে মনে শুধু পাইলটের জন্য দোয়া করতে লাগলাম। আমার স্ত্রী'র মুখের দিকে তাকাতে পারি না। এসবের মধ্যে আরেকটা উৎপাত শুরু হল যাত্রীদের নিয়ে। যখন যার বেল চাপতে ইচ্ছে করছে সে তখন মাথার উপরের বেল চেপে এয়ার হোস্টেজদের কাছে ডাকছেন। হয়তো কিছু জানার জন্যে। হয়তো পানি খাবার জন্যে। হয়তো কোনো অসুবিধার কথা বলার জন্যে। অথবা স্রেফ এয়ার হোস্টেজকে দেখার জন্যে বা স্রেফ মশকরা করার জন্যে। গোটা বিমানে মুহূর্মুহু বেল বেজেই চলছে। মালয়েশিয়ায় যাবার জন্যে যেসকল ট্রানজিট যাত্রী ছিল তাদের প্রায় সবাই অল্প শিক্ষিত এবং শ্রমিক ভিসায় কাজের সন্ধানে যাচ্ছিল। তারাই এই বেল চেপে খুব আনন্দ করছিল। পাইলট মোবাইল ফোন বন্ধ রাখার অনুরোধ করলেও এরা প্রায় সবাই মোবাইলে উচ্চ ভলিউমে গান বাজাচ্ছিল। কী হচ্ছে বা কী হতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। নাকী বিমান ছিনতাই হল! কিছুই বোঝা গেল না। রাত দুইটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের আলো নজরে পড়ল। কিছুই জীবন বুঝিবা ফিরে পেলাম। পাইলট সবাইকে আবারো সিটবেল্ট বাঁধার অনুরোধ করলেন। রাত আড়াইটায় আমরা চট্টগ্রাম ল্যান্ড করলাম।

পাইলট ঘোষণা দিলেন, ঢাকার যাত্রীরা বিমানে বসে থাকেন। কুয়ালালামপুরের যাত্রীরা আগে নামুন। সেই ঘোষণা অনুয়ায়ী ট্রানজিট যাত্রীরা আগে নেমে গেল। পরে আমরা যারা ঢাকার যাত্রী তারা নামলাম। চট্টগ্রাম বিমানবন্দেরর দোতলার বিভন্ন কক্ষ ঘুরিয়ে আমাদের সকল যাত্রীকে বিনা বাধায় বিনা ইমেগ্রশানে বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসা হল। আমি খুব অবাক হলাম। এটা কীভাবে সম্ভব?

মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিনা বাধায় আমরা এতোগুলো যাত্রী কিভাবে বিনা ইমেগ্রেশানে বিমানবন্দরের বাইরে আসতে সক্ষম হলাম!!! আমার মাথা আর কাজ করছিল না। কারণ, ততোক্ষণে একদল যাত্রী তাদের লাগেজ দেওয়ার জন্যে তর্ক শুরু করেছিল। একদল গালাগালি করছিল। একদল খাবার চাচ্ছিল। একদল চিৎকার করছিল। একদল হুদাই তামাশা করছিল। নেপালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ছোট্ট টিম প্রায় মাস খানেক ট্রেনিং করছিল। তাদের কয়েকজনের ফ্যামিলি এবং কয়েকজন আর্মি অফিসার আমাদের সহযাত্রী ছিল। তারাও এই ঘটনায় অত্যন্ত অখুশি ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তারা সবাই আলাদা আলাদা গাড়িতে চলে গেলেন। আর আমরা যারা কলুর বলদ আমরা আরো একঘণ্টা বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় খাঁড়ায়া আছি। রাত চারটায় আমাদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হল স্টেশান রোডের হোটেল গোল্ডেন ইন-এ। সেখানে গিয়ে আবার সেই পুরানা জটলা। কে আগে রুম নেবে! কে কোথায় থাকবে? খাবার কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি!!!

ডাল-মুরগি-ভাত গণ খাবার। খেয়ে বিশ্রামের জন্য মাথা এলিয়ে দিতেই মনে হল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সকাল সাতটা বেজে গেছে। সবার নাকী নাস্তা খেয়ে এখনই আবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যেতে হবে! নাস্তা খেয়ে বসে আছি, এবার বাসের খবর নাই। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের লোকজন লাপাত্তা! সকাল নয়টায় দুটো লোকাল বাস আসল। বিমানের কেউ নেই। বাসের হেলপাররা আমাদের গাইড করে বিমানবন্দরে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার ও তাদের পরিবারদের পেলাম। এবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের লোকজন আসল। আমাদের এবার আবার বিনা চেকিংয়ে ইমিগ্রেশান পার হয়ে বসে থাকার পালা। এবার দেরি কীসের? শোনা গেল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কিছু কর্মকর্তা লেভেলের লোকজন নাকী হোটেলে ঘুমোচ্ছে!!! এখন আর চিন্তা নাই। দেশের মাটিতে আছি। বাংলা টাকায় অন্তঃত পানি তো কিনতে পারছি। অবস্থা কাঠমুন্ডু'র চেয়ে অনেক ভালো, সেই কারণেই আমি অনেকটা ফুরফুরে। প্রয়োজনে বাসে ঢাকা চলে যাওয়া যাবে।

কিন্তু আমার মাথায় একটা প্রশ্নের জবাব কিছুতেই পেলাম না। ২৮৬ জন যাত্রী কীভাবে বিনা বাঁধায় ইমেগ্রশান চেকপোস্ট অতিক্রম করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বের হবার সুযোগ পেল? যাত্রীদের সবাই কী স্বচ্ছ ছিল!!! এভাবে মধ্যরাতের নষ্ট বিমানে কতো মানুষ বাংলাদেশে বিনা বাঁধায় প্রবেশ করতে পারে তা ভেবে আতকে উঠলাম! আমাদের সিভিল এভিয়েশানের কাজটা তাহলে কী? কেউ যদি এভাবে বাংলাদেশে বিনা বাঁধায় ঢুকে গিয়ে হারিয়ে যায়? ফিরতি বিমানের তোয়াক্কা না করে? কোনো দাগী সন্ত্রাসী যদি এভাবে বিনা বাঁধায় বাংলাদেশে ঢুকে যায়? না, আমি আর চিন্তা করতে পারলাম না। এটাই হচ্ছে বিমান পথে। সিভিল এভিয়েশান এসবই হজম করছে। দেখার যেনো কেউ নেই।

সকাল সাড়ে দশটায় আমরা আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে আকাশে উঠলাম। এবার যার যেখানে খুশি বসার নিয়ম জারী হল। তা নিয়ে আরেক দফা হট্টগোল। ভাগ্যিস কুয়ালালামপুরের ট্রানজিট যাত্রীরা ছিল না। তাই হট্টগোল সবাই যার যার মত বসার পরেই মিটে গেল। বেলা সাড়ে এগারোটায় আমরা ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁলালাম। পেছনে রেখে আসলাম হাজারো প্রশ্ন আর জীবন-মৃত্যুর দোলনায় চড়া বাইশটা ঘণ্টা!!

সবাইকে আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই, কাঠমুন্ডু থেকে ঢাকায় আকাশ পথে মাত্র এক ঘণ্টা দশ মিনিটের পথ। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে আমাদের লাগলো দীর্ঘ বাইশ ঘণ্টা। আমরা জানি না কীভাবে এসব প্রাইভেট বিমান বাংলাদেশে লাইসেন্স পায়। চট্টগ্রামের হোটেল গোল্ডেন ইন থেকে জানা গেল, এক সপ্তাহ আগে একই বিমান কলকাতায় বারো ঘণ্টা নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল। তখনও যাত্রীদের এমন দুর্দশা হয়েছিল। বাংলাদেশ বিমানের ফেলে দেওয়া ডিসি-১০ এয়ারক্রাফট কম টাকায় কিনে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এই ব্যবসা শুরু করেছে। বারবার যাত্রীদের হয়রানি এবং নষ্ট বিমান আকাশে ওড়ানোর কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করলেই হয়তো কেবল সেই দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানী রোধ করা সম্ভব হবে। আর রাতের আঁধারে বিনা বাধায় ইমেগ্রেশান পেরিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ঢুকে পরার এই রেওয়াজ বন্ধ না হলে বড় ধরনের সমস্যায় স্বয়ং বাংলাদেশকেই হজম করতে হবে। আশা করি, বিমান কর্তৃপক্ষ, সিভিল এভিয়েশান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন। তাছাড়া কাঠমুন্ডু থেকে ইদানিং বেশ মাদক পাচার হচ্ছে। কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্টে বেশ কড়াকড়ি চেক-আপ। কিন্তু বলা তো যায় না, রাঘব বোয়ালরা সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দুনিয়ায়। হায়, কোথায় কহিব এই অনাচার, এই সব অনাকাঙ্খিত ভয়!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.