নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাভার ট্রাজেডি ২৪ এপ্রিল ২০১৩: এইসব হত্যা ও দায় কার!!! রেজা ঘটক

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:২৭

২০১০ সালের ৫ আগস্ট চিলিতে এক খনি দুর্ঘটনায় চাপা পড়েছিল ৩৩ জন খনি শ্রমিক। ৩৩ জন খনি শ্রমিক চাপা পড়েছিল ভূগর্ভের অন্তঃত ৭০০ মিটার বা ২,৩০০ ফুট গভীরে। একবার ভাবুন তো, এই ৩৩ জন খনি শ্রমিকের একজনকেও কী জীবিত উদ্ধার করার কথা দুর্ঘটনার সময় কারো মাথায় এসেছিল! দুর্ঘটনাটি বাংলাদেশে না হয়ে ল্যাটিন আমেরিকার চিলিতে ঘটেছিল বলে, চিলি'র সরকার হাল ছাড়েননি। আস্থা, দক্ষতা, বুদ্ধিমতা আর ওই সময়ের প্রয়োজনে যা কিছু দরকার ছিল তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সরকার এবং রেসকিউ টিম উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুনলে এখন রূপকথা মনে হতে পারে। কিন্তু চিলি'র সরকার হাল ছাড়েননি। দীর্ঘ ৬৯ দিন লেগেছিল তাদের উদ্ধার কার্যক্রম গুছিয়ে আনতে। তারপর ১২ অক্টোবর ২০১০ সালে তারা ড্রিল করে খনি শ্রমিকদের উদ্ধার করার মেইন কাজটি শুরু করেছিল। আর ১৩ অক্টোবর ২০১০ সালের সকাল ৮টার মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ৩৩জন খনি শ্রমিককে চিলি জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। ১২ অক্টোবর রাত ১১টা থেকে ১৩ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত গোটা বিশ্ববাসী চিলি'র ওই অবিশ্বাস্য উদ্ধার অভিযান টেলিভিশনের কল্যানে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছিল। ৩৩ জন খনি শ্রমিকের জীবন বাঁচাতে চিলি'র সরকার তখন যা যা করেছিল তা সবই বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের অবদানে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব। সেজন্য প্রথমে চাই সদিচ্ছা।

বাংলাদেশের যে কোনো দুর্ঘটনার পেছনে অবহেলা, গাফিলতি আর সদিচ্ছার ভারী অভাব। সাভার বাসস্যান্ডের পাশে রানা প্লাজায় ফাঁটল ধরেছিল গতকাল। মালিক পক্ষ এবং গার্মেন্টস মালিকদের খামখেয়ালি এবং অবহেলায় আজ সকাল ৯টায় তা দুর্ঘটনায় পরিনত হল। এটিকে কী আপনি দুর্ঘটনা বলবেন? এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এই হত্যাকাণ্ডটি করা খুব সহজ। কারণ, এরা সবাই গরিব মানুষ। গরিব মানুষের জীবনের কোনো দাম বাংলাদেশে নেই। রানা প্লাজায় ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল। গতকাল ভবনে ফাঁটল দেখা যাবার পর ব্যাংক ছুটি ঘোষণা করে তারা সকল মালামাল ওই ভবন থেকে সরিয়ে ফেলেছিল। রানা প্লাজায় অন্য সকল দোকান, গার্মেন্টস ও অফিসগুলো যদি ছুটি ঘোষণা করে মালামাল সরানোর চেষ্টা করতো, আজকের এই দুর্ঘটনা থেকে অন্তঃত হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হত। কিন্তু অবহেলা, গাফিলতি, সদিচ্ছার ঘাটতি আর খামখেয়ালীপনার কারণে আজ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মানুষ সৃষ্ট দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত হল। এই হত্যার দায় এখন কার?



প্রথমে আসা যাক রাজউক-এর কাজ কী ছিল?

ভবন নির্মাণের যাবতীয় দায়ভার প্রথমে গড়ায় রাজউক-এর উপর। রাজউক সেই দায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর প্রচলিত খামখেয়ালীপনার মোড়কে সাভার পৌরসভার উপর চাপিয়েছিল। কিন্তু ভবনের সকল আনুষ্ঠানিকতা রাজউক ইচ্ছে করলেও এড়িয়ে যেতে পারে না। এরপর সাভার পৌরসভা কী করল? ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে দায়সারা রিপোর্ট বানিয়ে ভবনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছিল। সাভার পৌরসভা হয়তো এখন বলবে, ভবন মালিক তাদের বলেননি, যে এই ভবন গার্মেন্টস ব্যবসার জন্য ভাড়া দেওয়া হবে। জবাবে মালিকপক্ষ বলবে, যথাযথ অনুমোদন নিয়েই এবং ভবন নির্মাণের সকল আইন মেনেই তারা ভবন মেরামত করেছেন এবং পরে তা ব্যবসায়িক কারণে গার্মেন্টস ব্যবসায় ভাড়া দিয়েছেন। ব্যাস, দায়িত্ব থেকে একে একে সবাই খালাস। আর যদি এই প্রক্রিয়ায় সরকারি দলের লোকজন থাকে, তাহলে তো তাদের বাংলাদেশে যে কোনো আইনকেই থোরাই কেয়ার করার ব্যাপার। ঘটনা এখানে শেষ নয়।

তাজরীন গার্মেন্টসের আগুনের ঘটনায় লাশের গন্ধ বাংলাদেশের সীমানা থেকে মুছে যাবার আগেই রানা প্লাজা ধসে পড়ল। মৃতের সঠিক সংখ্যা এখনো অনিশ্চিত। ইতোমধ্যে সংবাদ মাডিয়ার তথ্য অনুয়ায়ী, ১০২ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভিতরে এখনো অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত অন্তঃত ১১০০ মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রেসকিউ টিমের প্রধান সাভার সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, উদ্ধার কাজে আরো দুই তিন দিন লাগতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স, সেনাবাহিনী, রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশ, র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। উদ্ধার অভিযানের এখন প্রধান টার্গেট জীবিত মানুষ যতো বেশি সম্ভব উদ্ধার করা যায় সেই প্রচেষ্টা চালানো।

রানা প্লাজায় আটকে পড়া উদ্ধারকৃত জীবিত মানুষেরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখনো ওই ভবনের তলায় অন্তঃত কয়েক হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছে। কী বিভৎস এবং ভয়াবহ খবর। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মারাত্মকভাবে আহতদের অনেকে অবস্থা আশংকাজনক। তার মানে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে। আর ভবনের নীচে যারা এখনো আটকা অবস্থায় আছে, তাদের এখন অক্সিজেন সমস্যা হচ্ছে। খাবার সংকট তো রয়েছেই। আর আলোর অভাবে তারা হতাশার ঘোর অমানিশায় সময় অতিবাহিত করছেন। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তাদের বাঁচার আশা অনেকটাই ক্ষিণ।

ইতোমধ্যে এই দুর্ঘটনার দায় একজন আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। আগামী তিন দিন উদ্ধার কাজ চলবে। সেনাবিহনী উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পর জানা যাবে আসলে কতজন নিরিহ মানুষ এই দুর্ঘটনায় খামাখা প্রাণ হারালো। তারপর কী হবে? বাংলাদেশে কয়েকদিন এই দুর্ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যম গরম থাকবে। তারপর এক সময় সবাই এটা ভুলে যাবে। এটাই এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে চরম দুঃসংবাদের বাস্তবতা।

গার্মেন্টস মালিকরা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা যোগান দেয়। কিন্তু বিনিময়ে তারা নিরিহ গরিব মানুষ হত্যা করার কোনো লাইসেন্স পায়নি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই এদের বিরুদ্ধে কঠোর বিচার করার সুযোগ রয়েছে। সেই কাজটি কে করবে? সরকারকেই সেই দায়ভার গ্রহন করতে হবে। এখন পর্যন্ত গার্মেন্টসে নিরিহ গরিব মানুষ মারা গেলে কেউ বিচার পায়নি। সেই সুযোগে বড় বড় হত্যাকান্ডকে নিছক দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দেবার সুযোগ নেই। দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে দিন ফুরালে এরকম দুর্ঘটনার মোড়কে আবারো বড় বড় হত্যাকান্ড ঘটবে।

একজন গরিব মানুষের লাশ মাত্র কুঁড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে এভাবে দায়সারা গোছের শান্তনা দিয়ে এড়ানোর সুযোগ নেই। রা্জউক থেকে শুরু করে, সাভার পৌরসভা, রানা প্লাজার মালিক, গার্মেন্টস মালিকদের এবং জড়িত সকল দুষ্কৃতকারীদের যথাযথ আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

বাংলাদেশে এখনো যতো গার্মেন্টস ভবন আছে, সেগুলোর যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা এখনই করার সময়। দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি দিয়ে সাধারণ গরিব মানুষের সস্তা জীবন ফিরিয়ে আনা যাবে না। দুর্ঘটনা ঘটার আগেই যথাযথ ব্যবস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সময় মতো্ নিতে হবে। নইলে বাংলাদেশ একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিনত হবে।

একবার ভাবুন, একটি নয়তলা ভবন ধসে পড়ায় আমাদের রেসকিউ টিমের এই দশা। যদি ঢাকায় বা চট্টগ্রামে বা বড় শহরে কোনো বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, তখন আমাদের কী হতে পারে? দয়া করে এই ঘটনা নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। হতাহতের পাশে যে যেভাবে পারেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। দুর্যোগে আমরা সবাই সবার পাশে আছি। নইলে আমরা কীসের বাঙালি জাতী? এই মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে আসুন আমরা উদ্ধার কাজে যে যেভাবে পারি সহযোগিতা করি। আমরা আর কোনো রানা প্লাজা ধসে এতো মৃত্যু দেখতে চাই না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.