নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন স্পিকার নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতির প্রতি চরম উপহাস

০১ লা মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩

কোনো একটি দেশের জাতীয় সংসদ সেই দেশের জাতির প্রতীক। আর স্পিকার হলেন সেই সংসদের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জনগণের সরাসরি ভোটে ৩০০ জন সাংসদ নির্বাচিত হন। বর্তমানে জাতীয় সংসদে ৫০ জন সংরক্ষিত মহিলা সাংসদের আসন রয়েছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন বাস্তবে সংসদের ৩০০ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের দল বা দলসমূহের জন্য একটি বোনাস। সুতরাং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে স্পিকার নির্বাচন করার অর্থ হল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ‘বোনাসের’ অপব্যবহার। এরই ধারাবাহিকতায় এখন এটা কী বলা যায় যে, ভবিষ্যতে সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে জাতি ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীকেও বেছে নিতে পারবে? তার মানে এই প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত না হয়েও বাংলাদেশে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা সম্ভব!

স্পিকারকে বলা হয় দেশের ছায়া রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি'র অনুপস্থিতি বা অকালপ্রয়ান বা যেকোনো কারণে যে কোনো সময় তিনি হয়ে উঠতে পারেন জাতির অভিভাবক। প্রতিবেশী ভারত আর পাকিস্তানের বর্তমান স্পিকার দুইজনই নারী। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন ফাহমিদা মির্জা। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। ৫২ বছর বয়স্কা মির্জা একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবেও স্বীকৃত। স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার সময়ে তিনি ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে ২৪৯ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালে ভারত সর্বসম্মতিক্রমে অস্পৃশ্য সমাজ থেকে স্পিকার হিসেবে যাঁকে তুলে আনেন তিনি শুধু একজন নারী নন, তিনি একজন দলিত, মীরা কুমার। মীরা কুমার ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী জগজীবন রামের মেয়ে। মীরা কুমার ভারতের লোকসভায় পাঁচবারের নির্বাচিত সাংসদ। স্পিকার হওয়ার আগে মীরা কুমার পাঁচ বছর পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরে প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত হালিমা ইয়াকুব। হালিমা ইয়াকুব প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে স্পিকার হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর কোথায় পার্থক্য? হালিমা ইয়াকুব একজন নন্দিত শ্রমিকনেত্রী। স্পিকার হওয়ার আগে তিনি টানা এক যুগ ছিলেন একজন নির্বাচিত এমপি।

আর আমাদের নব নির্বাচিত স্পকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৩১ নং সাংসদ ছিলেন। পরে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। জীবনে কখনোই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হননি। এখন আমাদের এই নতুন নির্বাচিত স্পিকারকে কী ভারত, পাকিস্তান বা সিঙ্গাপুরের মহিলা স্পিকারদের সঙ্গে তুলনা করা সস্ভব? বুঝলাম বাংলাদেশ এই প্রথম একজন নারী স্পিকার বানালো। কিন্তু সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে স্পিকার বানানোর এটিই দেশে প্রথম রেওয়াজ। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কী ৩০০ জন নির্বাচিত সাংসদের কেউ স্পিকার হবার মত যোগ্য নন? বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র কাছে আস্থা সংকটে ভোগেন?

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যাঁরা স্পিকার হয়েছেন তাঁরা হলেন-

১. শাহ আবদুল হামিদ (মেয়াদ: ১০ এপ্রিল ১৯৭২ থেকে ১ মে ১৯৭২)

২. মোহাম্মদ মোহাম্মদুল্লাহ (মেয়াদ: ৭ এপ্রিল ১৯৭৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি ১৯৭৪)

৩. আবদুল মালেক (মেয়াদ: ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৪ থেকে ৫ নভেম্বর ১৯৭৫)

৪. মির্জা গোলাম হাফিজ (মেয়াদ: ২ এপ্রিল ১৯৭৯ থেকে ২৩ মার্চ ১৯৮২)

৫. শামসুল হুদা চৌধুরী (মেয়াদ: ১০ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ২৪ এপ্রিল ১৯৮৮)

৬. শামসুল হুদা চৌধুরী (মেয়াদ: ২৫ এপ্রিল ১৯৮৮ থেকে ৫ এপ্রিল ১৯৯১)

৭. আবদুর রহমান বিশ্বাস (মেয়াদ: ৫ এপ্রিল ১৯৯১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১)

৮. শেখ রাজ্জাক আলী (মেয়াদ: ১২ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ১৯ মার্চ ১৯৯৬)

৯. শেখ রাজ্জাক আলী (মেয়াদ: ১৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ১৪ জুলাই ১৯৯৬)

১০. হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (মেয়াদ: ১৪ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১)

১১. অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ (মেয়াদ: ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১)

১২. ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার (মেয়াদ: ২৮ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০০৯)

১৩. অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ (মেয়াদ: ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৩)

১৪. শওকত আলী (ভারপ্রাপ্ত স্পিকার, মেয়াদ: ২৪ এপ্রিল ২০১৩ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০১৩)

১৫. ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী (মেয়াদ: ৩০ এপ্রিল ২০১৩ থেকে বর্তমান)



বর্তমান স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী এখন রাষ্ট্রের তিন নম্বর গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্নীত হলেন। কিন্তু যে অরাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে বাছাই করা হল তা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সাংসদ এবং জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি ভয়ংকর লজ্জা। সংসদীয় গণতন্ত্রের আলোকে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চায় এটি একটি প্রতিষ্ঠানগত বিপর্যয়ের উদাহরণ হয়ে থাকবে। অর্থাৎ তৃণমূল জনগণের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও শুধুমাত্র ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যের মানদণ্ডে ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হলেন। এটা গোটা সংসদীয় রাজনীতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার দেউলিয়াত্বই কেবল প্রমাণ করে না, বাংলাদেশকে এর জন্যে হয়তো কোনো মহাসংকটের সময়ে কড়ায় গণ্ডায় চড়া মূল্যই দিতে হবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৬

উৎস১৯৮৯ বলেছেন: ভাল লিখেছেন। প্লাস।

২| ০১ লা মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

মাসুদ রশিদ বলেছেন: ভালো বিশ্লেষণ।

৩| ০১ লা মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

পানকৌড়ি বলেছেন: কি দেখার কথা, কি দেখচি ?
কি শোনার কথা , কি শুনছি ...........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.