নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন : সর্বশেষ আপডেট (বুধবার সন্ধ্যা ৬টা)।।

১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জরুরী ফোন নাম্বারগুলো:

চট্টগ্রাম ইটিজেড এলাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ:৭৪১৪৪৬ ও ৭৪১৪৩৩

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র: ৬১১৫৪৫

চট্টগ্রাম কন্ট্রোল রুম: ৬৩০৭৩৯ ও ৬৩৩৬৪৯

ঢাকা কন্ট্রোল রুম: ৮৮১৮৭৩৮, ৯৮৫৫৯৩৩ ও ০১৭৫৯১১৪৪৮৮, ফ্যাক্স: ৮৮১৯৩৫৩

সেনাবাহিনী কন্ট্রোল রুম: ৯৮৩৪৩৫৮

ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কন্ট্রোল রুম: ৮৮১৯৩৫৩

কক্সবাজার জেলা কন্ট্রৌল রুম: ৬৪২৫৪



ঘূর্ণুঝড় মহাসেন:


বঙ্গোপসাগরে আগুয়ান ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বুধবার ছয় ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) থেকে পাওয়া চিত্র অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের অবস্থান বর্তমানে মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৬ কিমি, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬৩ কিমি দূরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের অন্তত ৮২ লাখ মানুষ চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় অতিবাহিত করছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় আঘাত করেছে এবং ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে শ্রীলঙ্কার উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসে অন্তত ৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তঃত ১০ জন। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সরকারি কর্মকর্তারা খবর দিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় এলাকায় ঘর-বাড়ি ছেড়েছে হাজার হাজার মানুষ। শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের মুখপাত্র লাল শরথ কুমারা রয়টার্সকে একথা জানান।এনডিটিভি’র খবরে একথা বলা হয়েছে। শরথ কুমারা জানান, এ পর্যন্ত ২৮০০’রও বেশি গৃহহীন মানুষের জন্য ৪ টি ক্যাম্প খোলা হয়েছে।পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে ভূমিধসের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।কিছু কিছু পার্বত্য এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

এর আগে, মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে বাঁচতে গিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সরিয়ে নেয়ার সময় নৌকাডুবিতে অন্তত ১শ’ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং অস্থিরতার শিকার প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা তাঁবুতে বসবাস করছে। এরা সবাই মহাসেনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘ গত সপ্তাহেই সতর্ক সংকেত দিয়ে বলেছে, লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া না হলে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে।



বঙ্গোপসাগরে আগুয়ান ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বুধবার ছয় ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে।পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দিকে ধেয়ে আসছে। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর সতর্কসংতেক এবং মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলঅ হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।



আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, মহাসেন আজ বুধবার সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ বুধবার রাত ১০টা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর সতর্কসংকেতের আওতায় থাকবে। এছাড়া মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৫ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৫ নম্বর সতর্কসংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাগুলো এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।



ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগে করণীয়:

• দুর্যোগের সময় কোন এলাকার লোক কোন আশ্রয়ে যাবে, গবাদিপশু কোথায় থাকবে, তা আগে ঠিক করে রাখুন এবং জায়গা চিনিয়ে রাখুন।

• বাড়িতে, গ্রামে, রাস্তায় ও বাঁধের ওপর গাছ লাগান।

• যথাসম্ভব উঁচু স্থানে শক্ত করে ঘর তৈরি করুন। পাকা ভিত্তির ওপর লোহার বা কাঠের পিলার এবং ফ্রেম দিয়ে তার ওপর ছাউনি দিন। ছাউনিতে টিন ব্যবহার না করা ভালো। কারণ ঝড়ের সময় টিন উড়ে মানুষ ও গবাদিপশু আহত করতে পারে। তবে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার পুরুত্ববিশিষ্ট টিন ও জেহুক ব্যবহার করা যেতে পারে।

• উঁচু জায়গায় টিউবওয়েল স্থাপন করুন, যাতে জলোচ্ছ্বাসের লোনা ও ময়লা পানি টিউবওয়েলে ঢুকতে না পারে।

• জেলে নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলারে রেডিও রাখুন। সকাল, দুপুর ও বিকেলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করুন।

• সম্ভব হলে বাড়িতে কিছু প্রাথমিক চিকিত্সার সরঞ্জাম (ব্যান্ডেজ, ডেটল প্রভৃতি) রাখুন।

• জলোচ্ছ্বাসের পানির প্রকোপ থেকে রক্ষার নানারকম শস্যের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

• বাড়িতে ও রাস্তায় নারকেল, কলাগাছ, বাঁশ, তাল, কড়ই ও অন্যান্য শক্ত গাছপালা লাগান। এসব গাছ ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বেগ কমিয়ে দেয়। ফলে মানুষ দুর্যোগের কবল থেকে বাঁচতে পারে।

• নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে প্রত্যেকেরই সাঁতার শেখা উচিত।

• ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাওয়ার সময় কী কী জরুরি জিনিস সঙ্গে নেওয়া যাবে এবং কী কী জিনিস মাটিতে পুঁতে রাখা হবে, তা ঠিক করে সেই অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

• আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত করুন। জলোচ্ছ্বাসের আগে এই পাকা গর্তের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।

• ডায়রিয়া মহামারির প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে কীভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে, সে বিষয়ে পরিবারের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেন।

• ঘূর্ণিঝড়ের মাসগুলোতে বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুটজাতীয় শুকনো খাবার রাখা ভালো।

• নোংরা পানি কীভাবে ফিটকারি বা ফিল্টার দ্বারা খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, সে বিষয়ে নারীদের এবং আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন।

• ঘূর্ণিঝড়ের পরে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করুন। বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ। মাটির বড় হাঁড়িতে বা ড্রামে পানি রেখে তার মুখ ভালোভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে, যাতে পোকা-মাকড়, ময়লা-আবর্জনা ঢুকতে না পারে।



পূর্বাভাস পাওয়ার পর দুর্যোগকালে করণীয়:

• আপনার ঘরগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করুন। আরও মজবুত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যেমন: মাটিতে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন অংশ বাঁধা।

• সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

• বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র বাড়ির নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের আগে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পোঁছে দিতে প্রস্তুত হোন এবং অপসারণ নির্দেশের পরে সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যান।

• বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় আগুন নিভিয়ে যাবেন।

• আপনার অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন—ডাল, চাল, দেশলাই, শুকনো কাঠ, পানি ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহূত ওষুধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধন পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।

• আপনার গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচু স্থানে রাখুন। কোনো অবস্থায়ই গোয়ালঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোনো উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন, বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।

• শক্ত গাছের সঙ্গে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখুন, যাতে প্রবল ঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিতে না পারে।

• আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের আগেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়ে না যায়।

• রেডিওতে প্রতি ১৫ মিনিট পর পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনতে থাকুন।

• দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন।

• টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে, যাতে ময়লা বা লবণাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে।



দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয়:

• রাস্তাঘাটের ওপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।

• আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।

• অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করুন।

• ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে শুধু এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে যেন অন্যকে সাহায্য করে, সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

• ত্রাণের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সচেষ্ট হোন। ত্রাণের পরিবর্তে কাজ করুন। কাজের সুযোগ সৃষ্টি করুন। রিলিফ যেন মানুষকে কর্মবিমুখ না করে কাজে উত্সাহী করে, সেভাবে রিলিফ বিতরণ করতে হবে।

• দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধারকাজ শুরু করুন। কাদায় আটকে পড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাঁকে উদ্ধারকাজে সাহায্য করা যায়।

• ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার আশঙ্কা বেশি থাকে।

• পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।

• নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বণ্টন (আলাদা লাইনে) করুন।

• দ্রুত উত্পাদনশীল ধান ও শাক-সবজির জন্য জমি প্রস্তুত করুন, বীজ সংগ্রহ করুন এবং কৃষিকাজ শুরু করুন, যাতে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে আসে।



সমুদ্রবন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ, সব জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠানো হচ্ছে:

চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল জেটিতে বন্দরের নিজস্ব তিন মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বন্দরের মূল জেটি ও মুরিংয়ে ২১টি জাহাজ আছে। তিন মাত্রার সতর্কতা অনুযায়ী, এসব জাহাজ এখন জোয়ারের সময় পর্যায়ক্রমে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করা হয়েছে।

চ্যানেল নিরাপদ রাখতে জেটিতে থাকা সব জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাগরে অবস্থানরত জাহাজের পক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা সহজ হয়। জেটিতে থাকলে জাহাজের আঘাতে জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া চ্যানেলে কোনো জাহাজ ডুবে গেলে বন্দর অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।



এক হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিম গঠন:

মহাসেনের আঘাতের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ উপকূলীয় ১৩টি জেলায় এক হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। স্বাস্থ্য ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।



নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে লোকজন:

চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবদুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা থেকে নির্দেশ এসেছে। তাই সিগন্যাল আটের জন্য অপেক্ষা করব না। আমরা সাত সিগন্যাল থাকতেই উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছি।’এদিকে বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।



বাংলাদেশের উপকূল জুড়ে উত্কণ্ঠা:

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ধেয়ে আসার খবরে দেশের উপকূলীয় এলাকায় উত্কণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজারে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির তীব্রতা কেমন হতে পারে বা কবে কখন এটি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে সে সম্পর্কে আবহাওয়া বিভাগ গতকাল পর্যন্ত কিছু জানাতে পারেনি। গত রাতে আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মহাসেন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সমুদ্রে চলাচল না করতে বলা হয়েছে।



ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় চট্টগ্রামে সমন্বিত কমিটি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন'-এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম আবদুল কাদেরকে এ বিশেষ কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটিতে সেনাবাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধিদের সদস্য করা হয়েছে। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন, 'বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জীবনরক্ষায় ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।



উপকূল জুড়ে অজানা আতংক:

ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবেশের খবরে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, কুয়াকাটা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার কক্সবাজারে তীব্র গরম অনুভূত হয়েছে। বাতাস চলাচলও একেবারেই কম। আবহাওয়া গুমোট হয়ে পড়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে। রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার থেকে কক্সবাজারের নিচু এলাকায় মাইকিং করা হবে। এছাড়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ১১৩টি জরুরি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. কাজল কান্তি বড়ুয়া।

এদিকে উপকূলের দিকে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে লাল পতাকা পুঁতে দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সমুদ্র শান্ত দেখা গেছে। সমুদ্রে মাছ ধরারত ট্রলারসমূহ গভীর সাগর থেকে উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে।



ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’:

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি এখন ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে।

এসকাপ (ইএসসিএপি) প্যানেল এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ‘মহাসেন’। এটি শ্রীলঙ্কান শব্দ। তৃতীয় শতকে শ্রীলংকা শাসন করা রাজা মহাসেনের নাম অনুসারে এ ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে 'মহাসেন'। তথ্য সংরক্ষণ ও বোঝানোর সুবিধার জন্যে ঞড়গুলোর নাম আগেই ঠিক করে রাখা হয়। ৪ মে ২০১৩ সালে এটি বঙ্গোপসাগরের নিকোবর দীপপুঞ্জের অদূরে নিম্নচাপ আকারে ঘনীভূত হতে শুরু করে। ৮ মে ২০১৩ থেকে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তিস্থলের অবস্থান ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ (শনিবার) সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।



ঘূর্ণিঝড়-কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-কেন্দ্রের কাছে সাগর খুব উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯৯৬ কিলোমিটার। জয়েন্ট তাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (জেটিডব্লিউসি) -এর মতে ঘূর্ণঝড়টি বর্তমানে ২.৫ টি মাত্রার তাইফুন আকার ধারণ করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা বা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে শক্তিশালী হারিকেন আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।



ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ১৩ মে বিকাল নাগাদ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এবং ১৬ মে সকালে বাংলাদেশের তৎসংলগ্ন উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে 'ইয়োলো সিগন্যালের' তাইফুন আকারে রয়েছে। তবে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অগ্রসর হতে হতে ঘূর্ণিঝড়টি 'রেড সিগন্যালের' শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বঙ্গোপসাগরের সকল সমুদ্রবন্দরকে আইএমডি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা সকল ট্রলার ও নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলে নিরাপদ স্থানে থাকার অনুরোধ করেছে।



কিন্তু ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সাইক্লোনের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, তা আগামী মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে। এই সময় বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ১৬৬ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান বাহিনীর যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।



'ঘূর্ণিঝড় মহাসেন' যেনো আমাদের মহা বিপদে না ফেলতে পারে সেজন্য আগাম সতর্ক হওয়া খুব জরুরী। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মায়ানমারের আবজহাওয়া অধিদপ্তরগুলো বারবার সবাইকে সতর্ক বার্তা পাঠাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর 'ঘূর্ণিঝড় মহাসেন'কে এখনো তেমন আমলে নিচ্ছে না। ভয়টা সেখানে। অন্যরা সবাই বলছে সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দিতে এবং উপকূলের মানুষজন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে। আর আমরা বলছি, সাবধানে উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে। আর আমাদের তিনটি সমুদ্রবন্দরকে তিন নাম্বার স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছ।



বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি গড়ে ১০ কিলোমিটার করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলের কাছাকাছি এসে এটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার করে বা তার বেশি গতিতে অগ্রসর হতে পারে।



ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো।



নিজ বাড়ি থেকে সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার আগে যা যা জরুরী:

১. সাথে নেবার জন্য একটি জরুরী কিট প্রস্তুত রাখুন। জরুরী কিটে রাখুন পোর্টেবল ব্যাটারি, ছোট রেডিও, টর্চলাইট, অতিরিক্ত ব্যাটারি; ম্যাচ বাক্স/ম্যাচলাইট, মোমবাতি, জলরোধী ব্যাগ, প্রয়োজনীয় হাল্কা বিছানাপত্র, পাস্পিং বালিশ, হালকা কম্বল ইত্যাদি।

২. সাথে নেবার জন্য একটি জরুরী ফার্স্ট এইড বক্স। জরুরী ওষুধ বক্সে রাখনু প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন, প‌্যারাসিটামল, ফ্লাজিল, এন্টাসিড, গ্লুকোজ, এবং আপনার বর্তমানে প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী।

৩. সাথে নেবার জন্য একটি জরুরী খাবার বক্স । জরুরী খাবার বক্সে রাখুন পানির বোতলে খাবার পানি, শুকনো খাবার বা টিনজাত খাবার, যেমন চিড়া-মুড়ি, গুড়, নাড়ু ইত্যাদি।

৪. যদি সম্ভব হয় সাথে রাখুন তাহলে জ্বালানী ল্যাম্প, পোর্টেবল চুলা, রান্নার হাড়ি, কিছু চাল, ডিম, গোলআলু ইত্যাদি।

৫. যদি আপনার কোনো পোষা প্রাণী থাকে তাহলে সঙ্গে নেওয়া সম্ভব হলে নিতে পারেন নতুবা তাকে ছেড়ে দিন। কোনো অবস্থায় ছেড়ে যাবার আগে এদের বেধে রাখবেন না। বেধে রাখলে এরা নিশ্চিতমৃত্যুর সন্মুখীন হতে পারে।

৬. বসবাসের ঘরে আপনার জরুরী বা মুল্যবান দ্রব্যসামগ্রী অখবা ভারী বস্তুগুল একত্রে বড় একটি শক্তিশালী আলমারিতে রাখতে পারেন। নতুবা যদি সম্ভব হয় পলিথিন মুড়িয়ে ঘরের মেঝেতে মাটিতে গর্ত করে রেখে দিন। ফিরে এসে আবার তুলে নিতে পারবেন।

৭. বাড়ি ছাড়ার আগে ঘরের সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংযোগ অবশ্যই বিচ্ছিন্ন করুন।

৮. সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার আগে বাড়ির ও আশে পাশের শিশু বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়ের খোঁজ নিন। সম্ভব হলে তাঁদেরকে আপনার সাথে যাবার জন্যে সাহায্য করুন।

৯. সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে মহিলা ও শিশুদের একত্রে থাকার সুযোগ করে দিন।

১০. যতোটা সম্ভব আপনার পরিবারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন।

১১. নিয়মতি আবহাওয়ার পূর্বাভাষ শুনুন এবং জরুরী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত টিমের সঙ্গে বা ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন।

১২. সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার সুযোগ না পেলে কাছাকাছি বড় রাস্তা, ভেড়ি বাঁধ, এবং উঁচু সড়কে আশ্রয়গ্রহন করুন।



আমাদের আক্কেল!!

আমাদের কখন আক্কেল হবে? যখন আর সময় থাকবে না, নিরাপদ স্থানে চলে যাবার মত সুযোগ থাকবে না, তখন রাতারাতি ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখালে কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসের পরিমাণ কমানো যাবে না। আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরে যারা চাকরি করেন, তাদেরকে আরো সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও আগাম সঠিক পরামর্শ দেবার জন্যে অনুরোধ রইল। নইলে সময় মত আপনাদের সিগন্যাল যথাযথ না হলে সেই মাশুল সাধারণ জনগণের উপর দিয়ে খুব তীব্র আকারে বয়ে যাবে।

সবাইকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে নিরাপদ স্থানে নিরাপদে থাকার জন্যে আকুল আবেদন করছি। মঙ্গলবার কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়। অতএব সাধু সাবধান। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে সাবধান।



উপকূলীয় অন্যান্য জেলা কি করছে?

নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষিরা জেলার আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কে মিডিয়ায় কোনো খবর নেই। কেবল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা বিশেষ টিম গঠন করেছে। ওইসব জেলার ডিসি সাহেবরা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন? যাতে মহাসেন আসলে পরে ত্রাণ লুটতে সুবিধা হবে? আপনাদের কাণ্ডজ্ঞান কবে হবে? আপনাদের একটিভিটি দেখতে পাচ্ছি না কেন? ওই সব জেলায় কি সরকারের কোন মন্ত্রী বা স্থানীয় সংসদ সদস্য নেই। থাকলে তাদের এখনো কোনো একটিভিটি নেই কেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় মহাসেন অপেক্ষা করবে না। কিন্তু আপনার মন্ত্রী সাংসদরা, আপনার ডিসি এসপিরা আপনার মহানির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। আপনি মহাসেন নিয়ে জরুরী নির্দেশ পাঠাতে দেরি করবেন না।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন যদি সিডর বা আয়ালাকেও হার মানায়, তখন আমাদের বাঁচার আর পথ থাকবে না। তাই সময় ক্ষেপণ না করে দয়া করে এখনই করনীয় ঠিক করুন। সবাই সতর্ক থাকুন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪

মেঘকন্যা বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।

১৫ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪

বাংলাদেশী দালাল বলেছেন: স্টিকি হোক

১৫ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৫ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

সুমন জেবা বলেছেন: নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরিশাল, জেলার ডিসি সাহেবরা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন?
ওই সব জেলায় কি সরকারের কোন মন্ত্রী বা স্থানীয় সংসদ সদস্য নেই। থাকলে তাদের এখনো কোনো একটিভিটি নেই কেন?

১৫ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.