নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তামাক শিল্পকে বাঁচাতে সুস্পষ্ট ঘোষণা চাই।।

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৩১

এক সময় পাট ছিল বাংলাদেশের সোনালী আঁশ আর তামাক ছিল সোনালী ফসল। সেসব কথা এখন রূপকথা। বিগত ৪২ বছরে শুধুমাত্র তামাক ও বিড়ি শিল্পে শ্রমিক বেকার হয়েছে ২৭ লাখ। তামাক ও বিড়ি শিল্পের ২৭ লাখ বেকার শ্রমিক নিয়ে আমাদের দেশে কোনো সভা-সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক, সিম্পুজিয়াম বা আলোচনা হয় না। বরং তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর বছর বছর উচ্চহারে কর বসিয়ে এই শিল্পের প্রতি মানুষকে বিমুখ করতে এনজিও সর্বস্ব একশ্রেণীর দেশী ও বিদেশী দালাল কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই শিল্পকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।

আমার বক্তব্য খুব পরিষ্কার। আপনি আমি কোন বাপের ছাওয়াল? আমার মা বাবা দু'জনেই বিড়ি-সিগারেট খেতেন। আমার দাদুভাই দাদীমা সবাই হুক্কা খেতেন। বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা ফিলটার সিগারেট ফুঁকছি। আপনি কোন বাপের ছাওয়াল, শুনি? আপনার বাপ-দাদা কি বিড়ি-সিগারেট-হুক্কা খেতেন না? আপনার মা-দাদী-নানীরা কি বিড়ি ফুঁকতো না? এখনো কি আপনার আশেপাশে ফিলটার সিগারেট খায় না? যারা তামাক খাবার লোক তারা সব জনমে খাবে। মেডিকেল সায়েন্স বলে যে এটা জেনেটিক। আমি সিগারেট খাই। আমার বউও খায়। তবে দুজ'নের ব্র্যান্ড একটু আলাদা। এ নিয়ে আমার কোনো বাহাদুরী নেই। কোনো আপত্তিও নেই। যে খাবার সে খাবে। সামনে না খেলে পেছনে পালিয়ে খাবে।

আমরা এক মায়ের পেটে বারো ভাইবোন। আট ভাই চার বোন। তার মধ্যে বড় দুই ভাই ও একেবারে ছোট ভাই তাদের ছোটবেলায় মারা গেছে। আমরা নয় ভাই বোন এখনো জীবিত। আমাদের এই নয় জনের মধ্যে আমি, আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাই চেইন স্মোকার। আমার একেবারে ছোট বোন স্যোসালি স্মোক করে। কারণ, ওর হাসব্যান্ডও চেইন স্মোকার। আমাদের পরিবারে এই তামাকসেবীদের বিষয়টা ওপেন সিকরেট। শুধু বড়দের সম্মান করে তাদের সামনে খাই না। আমরা ছোটরা সবাই একসাথে খাই। আমার কাজিনরা যারা আমার চেয়ে অনেক ছোট কিন্তু সিগারেট খায়, তারা আমার সাথেও সিগারেট খায়। পালিয়ে প্রথম খেতো। আমিই তাদের ভয় ভাঙতে সহযোগিতা করেছি।

যারা ক্যান্সারে মারা যাবে তারা সিগারেট না খেলেও মারা যাবে। যাদের ক্যান্সার হবে তারা সিগারেট না খেলেও ক্যান্সার হবে। আমার নানা ৯৫ বছর বেঁচে ছিলেন। চেইন স্মোকার ছিলেন। সিগারেট টানতে টানতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। যাকে বলে স্বর্গীয় মৃত্যু। আমার নানীও সিগারেট খেতেন। তিনি টিবিতে মারা যান। সিগারেট না খেলেও মারা যেতেন।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান বা সংক্ষেপে ডব্লিউএইচও সারা বিশ্বে তামাক ও তামাকজাত পন্যের ব্যবহার বন্ধে সবচেয়ে বড় দানব। আমি নিজে ২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশানের টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তামাক বিরোধী জনসচেতনতায় কাজ করেছি। কাজের ফাঁকে সিকরেটলি সিগারেট খেতাম। আমাদের প্রায় সকল ভলান্টিয়ার ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সবাই স্মোকার। তামাক বিরোধী কার্যক্রমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করলেও আমরা স্মোকার। অন্যকে সচেতন করতে তো দোষ নেই। জনগণ সচেতন হলে ভালো। তামাক সেবন করলেও ভালো। কারণ, ক্যান্সার যার হবে তার সঙ্গে তামাকের সরাসরি কোনো কারবারি নেই। পরোক্ষ কারবারি থাকতে পারে।

তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার রোধে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমার বানানো পাঁচ মিনিটের ভিডিও গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশানের চোখে সেরা ক্যাম্পেইন ছিল তখন। কিন্তু আমি নিজে সিগারেট ছাড়তে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুষ্ঠানে আমার তিন বন্ধু'র সিগারেটকে না বলার প্রতিশুতি ছিল। কথা ছিল অনুষ্ঠানে তারা সিগারেটকে না বলার অঙ্গিকার করবেন। প্রথমজন প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার। অনুষ্ঠানের মাঝখানেই উধাও। কোনো কমিটমেন্ট করলেন না জাকির তালুকদার। দ্বিতীয় জন রম্যলেখক আহসান কবির। তিনি ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে আর সিগারেট খাননি। তৃতীয়জন বিখ্যাত সাংবাদিক নজরুল কবীর। অনুষ্ঠানের আগে গোটা এক প‌্যাকেট সিগারেট শেষ করেছেন। সবাইকে অবাক করে অনুষ্ঠানে সিগারেট ছাড়ার প্রতিশুতি করেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত নজরুলের বড় ভাই ইকবাল কবীর নজরুলকে খুশিতে কুঁড়ি হাজার টাকা নগদ বকশিশ দিয়েছেন।

পরদিন বিকালে নজরুলের বাসায় নজরুলকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন আমার দুই বন্ধু বিখ্যাত লেখক আহমাদ মোস্তফা কামাল ও কবি আলফ্রেড খোকন। বন্ধুদের সেই স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানেই নজরুল আবার সিগারেট খেয়েছে জোর করে কেড়ে নিয়ে। আমার বন্ধু কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান চলাকালে আমাদের ক্যাম্পেইনে উৎসাহ দিতে গিয়ে গ্রিনরুমে বসে আমার সঙ্গে সিগারেট খেয়ে ক্যাম্পেইনের শতভাগ সুফল কামনা করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর এসএমএ ফায়েজ স্যার স্বিকার করেছেন যে তাঁর বন্ধুদের তুলনায় তাঁকে নাকি বেশি বয়স্ক লাগে। আর এজন্য নাকি সিগারেট দায়ী। তবু স্যার সেদিন ছাত্রছাত্রীদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষকদের তামাক ও তামাকজাত পণ্য বর্জণের আহবান জানিয়েছিলেন।

প্রতি বছর বাংলাদেশে বাজেটের আগে আগে সিগারেটের দাম বাড়ে। এটা একটা প্রহসন। সেই প্রহসনে সরকার, সরকারের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, দালাল, এনজিও, এমন কি খোদ ট্যোবাকো কোম্পানির লোকজন জড়িত। তামাক ও তামাক পণ্য নিয়ে তারা প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অবৈধ ব্যবসা করেন। সরকারি ভাবে এই অবৈধ ব্যবসা যেনো লাইসেন্স পেয়ে গেছে এমনি তাদের স্বভাব ও হাবভাবে বোঝা যায়। সরকারের নাকের ডগায় এসব ঘটে। কিন্তু সরকার নির্বিকার। বাজেটে সিগারেটের উপর কর বাড়ানো হয়। সিগারেটের দাম বাড়ে। কিন্তু সিগারেটের ক্রেতা কমেছে এ খবরটি কোনো ইতিহাসে পাওয়া যায় না।

মাঝখানে এই অবৈধ ব্যবসায় সরকারি ইন্ধনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তামাক ও বিড়ি শিল্প এখন পথে বসতে বসেছে। ইতোমধ্যে ২৭ লাখ বেকার শ্রমিক তিন কোটি বেকারের দেশে অবশ্যই বাড়তি বোঝা। আসুন, তামাক ও তামাকজাত শিল্পকে বাঁচাতে এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ বেকার শ্রমিকে বাঁচাতে আমরা কোনো উদ্যোগ গ্রহন করি। তামাক শিল্পকে বাঁচাতে পারলে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। আমি তামাকের ক্ষতিকর বিষয়টিকে অগ্রাহ্য না করেই বলতে চাই, এই শিল্পটিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত। বাপ-দাদাদের চৌদ্দ গুষ্ঠী যে শিল্পকে মৃত্যুর হুঙ্কার তোয়াক্কা না করে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, তাকে লালন করাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে।

তামাক ও তামাকজাত শিল্পকে বাঁচাতে আসন্ন বাজেটে সরকারের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চাই। পাশাপাশি ২৭ লাখ বেকার শ্রমিককে কর্মসংস্থানের সুযোগ দানের ব্যবস্থা রাখার আহবান জানাই। আমরা মরলে ভাতে মরব, তামাকে নয়। তামাক, তামাকু, তামুক, তাম্রকূট, তাম্রকূট্টক, তাম্রকূটধূম নমঃ নমঃ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

নীরব দর্শক বলেছেন:
আপনি কি বিটিআরসি তে চাকরি করেন B-))

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.