নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে. আজাদ চৌধুরী স্যারকে খোলা চিঠি।। রেজা ঘটক

২৪ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪

বরাবর,

প্রফেসর এ.কে. আজাদ চৌধুরী

চেয়ারম্যান

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন

আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭



বিষয়: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কঠোর নজরদারী ও অনিয়ম বন্ধের প্রসঙ্গে



স্যার,



আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি যে, একশ্রেণীর কালোটাকার মালিক অথবা অসৎ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা ধ্বংসের নামে প্রতারণামূলক শিক্ষা ব্যবসা চালু করেছে। এ সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোর নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাস নেই। কিন্তু তারা কমিশনকে না জানিয়ে বা কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে ২৫% কমিশনে অন্য কোনো দলীয় বা স্বজন চামচাকে নতুন ক্যাম্পাসে একই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নিচ্ছে। এ সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি'র মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় টাকায় পোষ্য একটি স্বাধীন কমিশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তা না দেখার ভান করছে অথবা পরোক্ষভাবে আড়ালে আবডালে এসব কালোটাকার অবৈধ মালিকদের বা অসৎ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে। অথবা এদের চোখ রাঙানির কাছে পিছু হটছে।

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্থাপিত একটি স্বায়ত্ত্ব শাসিত ও স্বাধীন সংস্থা কিভাবে এমন অনাচার এ উচ্চ শিক্ষা ধ্বংসের অবাধ বিচররণ ক্ষেত্র সহ্য করছে তা মোটেও বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে প্রায় সকল স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো নির্লজ্ব এবং দুর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে একাট্টা। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন একটি দুর্নীতি'র আকড়া। বাংলাদেশের সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় একটি সরকার দলীয় পোষ্যালয়। বাংলাদেশ কর কমিশন একটি ঘুষের আস্তাবল। বাংলাদেশ বিগত ৪২ বছরে অবৈধ ও অসৎ কার্যাকলাপের চরম অব্যবস্থপনায় রাষ্ট্রীয় অর্থের সবচেয়ে বেশি অপচয় হয়েছে এসকল সংস্থাগুলোতে। যার কোনো জবাবদিহিতা আমরা কোনো দিন দেখিনি।

১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনে স্থাপিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। গত ৪২ বছরে এই কমিশনের কোনো জবাবদিহিতা কোনো ব্যর্থতা রাষ্ট্রের কোথায় উল্লেখ করা হয়নি। উচ্চ শিক্ষার নামে দেশে এই সংস্থাটি পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যাঙের ছাতার মত একশ্রেণীর কোচিং ব্যবসাই কেবল উৎপাদন করতে পেরেছে। উচ্চ শিক্ষা দিনে দিনে ধ্বংসের দোর গোরায় গিয়ে ঠেকেছে। কমিশন থেকেও যোগ্য নের্তৃত্ব, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, বলিষ্ঠ পরিকল্পনা এবং আধুনিক শিক্ষায় জনবল সৃষ্টিতে উচ্চ শিক্ষার যথাযথ প্রসার সৃষ্টিতে এটি ব্যর্থ একটি ঠুটো জগন্নাথে পরিনত হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে এমন অকর্মন্য ও ব্যর্থ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা আর পালতে চাই না।

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার মান এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, এখানে গবেষণা একদম নেই বললেই চলে। সিনিয়র ছাত্রদের নোট কালেক্ট করে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর পাওয়ার একটি প্রয়াশ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকরা প্রায় সবাই এখন এনজিও ব্যবসার বনসালট্যান্ট হিসেবে সময় নষ্ট করেন। ঠিক সময় মতো ক্লাশ নেন না। পরীক্ষা নেন না। দু'পাইস কামানোতে তাদের সময় চলে যায়। তাদের বাজারের থলে হাতে সারা বছর যে সকল ছাত্রছাত্রী তোষামোদীতে লেগে থাকেন বছর ঘুরে তারাই ভালো ফলাফল পায়। এই চিত্র যেনো দেখার কেউ নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দরকারটা কি?

সবচেয়ে ভয়ংকর জিনিসটি হল অনেক প্রাইভেট বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেছে। ছাত্রছাত্রীরা জানেও না তিন-চার বছর পর তারা সার্টিফিকেটও পাবেন না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েতা অবৈধ। যার সার্টিফিকেট দেবার ক্ষমতা নেই। কারো কারো তো অনুমোদনই নেই। তারা ২৫% শেয়ারে নতুন জায়গায় নতুন ক্যাম্পাসের নামে এই ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেছে।

আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই জিনিসটি খুব সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখুক। যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের অনুমোদন বাতিল করুক। অন্তঃত ১০টি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকায় এবং ১০ টি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলে এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে এই তালিকা অন্তঃত এক মাস প্রচার করা হোক। যাতে অভিভাবকরা এবং ছাত্রছাত্রীরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্যের কুফল থেকে নিজেরা অন্তঃত সচেতন হতে পারে। আর ইতোমধ্যে যেসব ছাত্রছাত্রী এই ঝামেলার শিকার হয়েছে তাদের কোনো বৈধ ক্যাম্পাসে ভার্তির ব্যবস্থা করা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের থেকে ছাত্রছাত্রীদের যতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা জরিমানা সহ আদায় করা। এবং কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যারা এই অসৎ ব্যবসা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।

এই কাজগুলোর বাইরেও কমিশন একটি জবাবদিহিতা এড়াতে পারে না। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় যে চলে গেল তার দায় কে নেবে? এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছিল ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬। আমার সার্টিফিকেটে অনার্স ১৯৯১ এবং মাস্টার্স ১৯৯২ লেখা। কিন্তু আমার রেজাল্ট হয়েছে অনার্স ১৯৯৪ সালে আর মাস্টার্স ১৯৯৬ সালে। আমার জীবনের এই মূল্যবান ৪/৫ বছর সময়ের মূল্য তো রাষ্ট্র দেয় নি। আমার জীবনের এই মূল্যবান তারুণ্যের নষ্ট সময়ের হিসেব তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন করেনি। আমার জীবনের বেকারত্বের দীর্ঘ কষ্টের অফুরন্ত সময়কে তো কোনো রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মেটায় নি। আমার জীবনের সময়ের মূল্য যদি এই রাষ্ট্র থেকে আদায় করার কোনো সুযোগ আইনগতভাবেই থাকতো তাহলে আমার ধারণা, আমার মতো হাজার হাজার ভুক্তভোগীরা তা অবশ্যই আদায় করতো।

তাই সরাসরি বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে না পারে, তাহলে আমরা আর বাংলাদেশে কমিশন দেখতে চাই না। আমরা আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাশ টাইমে কনসালট্যান্ট ব্যবসা দেখতে চাই না।

জীবনের একটি দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলামের স্যারের নগর গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। স্যারকেও বহুবার কমিশনকে কিছু একটা করার জন্যে বারবার অনুরোধ করেছিলাম। স্যার কিছুটা শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এখন আপনার সেই শেষ করার দায় রয়েছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি হিসেবে আপনার সেই দায় আরো বেশি। দেশের উচ্চ শিক্ষাকে যুগোপযুগী ও আধুনিক করার জন্য আপনাকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্যার। নইলে এমন কমিশন আর সেই কমিশনের ছত্রছায়ায় ভর্তি বাণিজ্য এবং উচ্চ শিক্ষা ধ্বংসের চলমান পথ বন্ধ হবে না।

সবশেষে আপনার সুস্বাস্থ্য এবং বলিষ্ঠ নের্তৃত্ব এবং কঠোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সহিষ্ণু ও হৃদয় জাগ্রত হোক, এই কামনা করছি।



বিনীত নিবেদক

রেজা ঘটক

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

মিনহাজুল হক শাওন বলেছেন: ঠিক আছে মানলাম, তয় একটা কথা বলি, সরকারের সামর্থ্য নাই এতগুলা ছাত্র ছাত্রী পড়ানোর। টিচারকে দিয়ে হালকাভাবে খাতা দেখিয়ে ৯০% পাশ, পঞ্চাশ থেকে লাখ খানেক এ+, তারপর সেই লাখ থেকে কয়েক হাজার জনকে বৈধ উপায়ে বিভিন্ন সরকারী ভার্সিটিতে পড়ানো হয়। কেন ভাই? বাকিদের কি দোষ? আর এ, বি গ্রেড পাওয়ারা কি অমানুষ?

তো এজন্য বেসরকারীগুলায় বাধ্য হয়ে সবাই ভর্তি হয়। লেখাপড়া তো শিখতে হবেই নাকি? এখন সবার বাবার সামর্থ্য নাই ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকার বা অন্যান্য জায়গার নামী দামী বৈধ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। কাজেই লোকাল অনেক অনুমোদনবিহীন ভার্সিটিতে ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তি হয়। আর এসব জায়গায় স্বজনপ্রীতি, নিম্নমান বলার অপেক্ষা রাখেনা।

তো শুধু অনিয়ম বন্ধের কথা বললেই তো হবেনা। বিকল্প সমাধান করে তারপর মাঠে নামতে হবে। অন্তত অন্যের শরীর কাপড় দিয়ে ঢাকতে গেলে নিজে যেন উলঙ্গ না হয়ে যায় সেইটা সরকারকে দেখতে হবে।

২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩৭

রেজা ঘটক বলেছেন: আপনার তৃতীয় প‌্যারার কথার সঙ্গে একমত। দ্বিতীয় প‌্যারায় আমি সহমত নই। প্রথম প‌্যারায় আপনার বক্তব্য পরিষ্কার না। ধন্যবাদ

২| ২৪ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:০২

ঢাকাবাসী বলেছেন: আপনার পর্যবেক্ষন ঠিক আছে তবে এদেশের প্রেক্ষাপটে এটার সমাধান করা এই ধরণের সরকারের পক্ষে অসম্ভব। এদেশে সরকারের জন্য রাজনীতি, ক্ষমতা আর টাকাটাই মুখ্য। কজন বড়লোক স্কলারশিপের জন্য টাকা দেয়? অথচ ইউরোপ আমেরিকাতে ভার্সিটির জন্য ভুরি ভুরি অর্থ দাতা আর তাদের স্কলারশীপ দেয়া আছে। ধন্যবাদ।

২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩৮

রেজা ঘটক বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৮

মিনহাজুল হক শাওন বলেছেন: প্রথম প্যারায় বলেছি এইযে প্রতি বছর হাজার হাজার এ+ পায়। তারা সবাই নিশ্চয় ভাল ছাত্র। তাহলে কেন তারা সরকারী ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাবেনা?

দ্বিতীয় প্যারায় কেন সহমত না সেইটা তো বলবেন। আপনি বলেন আপনার ভাই বোন যদি কোথাও চান্স না পায় (এক লাখ পরীক্ষা দিয়া ৫ হাজার ভর্তি হলে বাকি ৯৫ জন চান্স পাবেনা শিওর) তাহলে কি বাসায় বসায়া রাখবেন? নাকি যতদূর করা যায় ততটুকু করবেন? আমি আশে পাশে অনেককে দেখেছি তারা জমিজমা বিক্রি করে AIUB, NSU, BRAC এ ভর্তি হইছে। আর যাদের তাও নাই তারা লোকাল দারুল ইহসান, UITS, নর্দান এগুলায় ভর্তি হইছে। কিন্তু এদের ক্যাম্পাস বলতে শুধু একটা বিল্ডিং, পড়াশোনার মান ভয়াবহ নিম্ন। ক্লিয়ার?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.