নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

উদ্ভট উটের পিঠে চলছে ডিজিটাল বাংলা একাডেমি: দেখার কেউ নেই!!!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

আপনি কি কখনো বাঙালি জাতির মননের প্রতীক 'বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইট ভিজিট করেছেন? যদি না করেন, সময় করে একবার ভিজিট করে আসুন, প্লিজ। আপনি যদি বাঙালি হন, আপনার নাগরিকত্ব যদি বাংলাদেশী হয়, আপনার জাতির মননের প্রতীককে একবার অন্তঃত ডিজিটাল যুগে দেখে নিন। ১৯৫৩ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি ৬০ বছরে পদার্পণ করবে। অথচ দীর্ঘ ৬০ বছরে জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতীক এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি খুড়িয়ে চলার অভ্যাস একদমই ত্যাগ করেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪২ বছর আগে। সেই হিসেবে দেশের সবচেয়ে সেরা প্রতিষ্ঠান হবার কথা ছিল বাংলা একাডেমি'র। অখচ সরকার দলীয় লেজুর বৃত্তির বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি কোনোই নজির স্থাপন করতে পারেনি। ঠুটো জগন্নাথের মতো খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে দেশের জাতির মননের প্রতীক দাবিদার বাংলা একাডেমি।

বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে ঢু মারলে প্রথমেই নজরে আসে একাডেমি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি। কোথাও 'ই-কার' কোথাও 'ঈ-কার'। আসলে আমরা কোনটা লিখব, সেই ব্যাখ্যাও কোথাও নেই। অসংখ্য বানান ভুলে জর্জরিত বাংলা একাডেমি'র অফিসিয়াল ওয়েব সাইট। এর দায় কার? অথচ বাংলা একাডেমিতে একজন মহাপরিচালক কর্মরত আছেন। এগারো সদস্যের একটি কার্যর্নির্বাহী পর্ষদ আছে। অনেকগুলো বিভাগ আছে। প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন, ২০১১-এর (খসড়া) ধারা ১১:-এর একাডেমির কার্যাবলি অংশে প্রথমেই বলা হয়েছে 'একাডেমি বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রমিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য রোধ করা'। কিন্তু খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, বাংলা একাডেমি'র বানান বিভ্রাট, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য কে রোধ করবে? আমি গ্যারান্টি দিয়েই বলতে চাই, বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে এখন পর্যন্ত প্রদর্শিত যে সকল বিষয় রয়েছে, সেগুলো'র বানান বিভ্রাট, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দূর করার জন্য মাত্র কয়েক ঘণ্টা প্রয়োজন। অথচ, দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজটি কেউ করছেন না। আমি বাংলা একাডেমি'র মাননীয় মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, প্লিজ, দয়া করে বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে বর্ণিত বানান বিভ্রাট, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য প্রতিরোধে কার্যকর কিছু একটা করুন।

বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটের দৈন্যতার কথা কি বলবো! বাংলা একাডেমি'র প্রাক্তন সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী মারা গেছেন ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ সালে। এরপর ডক্টর আনিসুজ্জামান হন বাংলা একাডেমি'র সভাপতি। অথচ ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বরের পরে সেই নামটি পর্যন্ত সভাপতি'র জায়গায় আপডেট করা হয়নি। এটা করতে এক মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। বাংলা একাডেমিতে এতো বিজ্ঞ লোকজন আছেন, অথচ কেউ এটা করার জন্য তাগিদ অনুভব করেননি। সবাই বাংলা একাডেমিতে চাকরি করছেন। প্রাণ দিয়ে কাজটা কেউ করছেন না। বাংলা একাডেমি'র প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো পাতায় গেলে দেখা যায় মোট বারো বার 'প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো' কথাটি সেখানে খোদানো আছে। আহারে বাংলা একাডেমি'র প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো!! বিভিন্ন কার্যক্রম পাতায় অনেক খবরাখবর আছে। সেগুলো বাস্তবে কতোটা কাজ করছে তা স্বয়ং খোদা মালুম। পত্রিকাগুচ্ছ পাতায় বাংলা একাডেমি'র পত্রিকাগুলো'র নাম আছে। কিন্তু আপনি যদি কোনো পত্রিকা পড়তে চান, তাহলে হয়তো আপনাকে হার্ডকপি সংগ্রহ করতে হবে। প্রকাশনা পাতায় কি বলা হয়েছে তা মোটেও সুস্পষ্ট নয়। কোথাও অনুজ্ঞাবাচক, কোথাও করা হচ্ছে, কোথাও করা হয় ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার চোখে পড়ে। বাংলা একাডেমীর গ্রন্থাগার পাতায় বইয়ের একটি তালিকা সংযোজন করা থাকলে এবং সেটি আপডেট থাকলে ভালো হত। জাদুঘরসমূহ পাতায় কিছুই প্রদর্শিত হয় না। কিসের জাদুঘর ব্যাপারটা রহস্য হয়েই থাকলো। বাংলা একাডেমির বিভিন্ন প্রকল্প পাতায় অনেক ফিরিস্থি রয়েছে। আমি ছোট একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। বাংলা একাডেমি'র ভাষ্য মতে, 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে, জুলাই ’৯৫ থেকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে একজন প্রকল্প পরিচালকের মাধ্যমে এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। জুলাই ’৯৫ থেকে জুন ’৯৭ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের দু’টি অর্থবছরে মোট ১৬০ জন (প্রতি ব্যাচে ৪০ জন ৬ মাস মেয়াদী) তরুণ লেখককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ের ৪টি ব্যাচের প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ছিল মোট ১৩৯টি। গ্রন্থগুলোর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ৫০টি, ছড়া ১১টি, ছোটগল্প ২৩টি, উপন্যাস ২২টি, নাটক ১২টি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ২১টি। তরুণ লেখক প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় জুলাই ’৯৭ থেকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রথম ব্যাচে ৪০ জন তরুণ লেখককে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।' কিন্তু এই দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম ব্যাচের ৪০ জন তরুণ লেখকের কোনো বই কি প্রকাশিত হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তার আপডেট কি? যদি না হয়ে থাকে, কেন তা হয়নি? তার ব্যাখ্যা কি?

বাংলা একাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠানমালা পাতায় অনেক বাহারি চমক আছে! সেই চমকের সঙ্গে অর্থ খরচের একটি যোগসূত্রও আছে বৈকি। কিন্তু বানান বিভ্রাটের কারণে সকল অনুষ্ঠানের মাজেজা উদ্ধার করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। স্বরণীয় কয়েকটি অনুষ্ঠান নামে একটি পাতা আছে। সেখানে মাশাল্লা সবকিছুই ভারী স্বরণীয় বলে কিছুই দেখার উপায় নেই। কারণ, পাতাটি ফাঁকা এবং স্বরণীয় বটে। সাহিত্য পুরস্কার পাতায় ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের একটি তালিকা অবশ্য আছে। কিন্তু থাকা উচিত ছিল ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৩ (বর্তমান) পর্যন্ত সবার নাম। অন্যরা কি দোষ করলো? তার মানে ২০১১ সালের পর আর বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে একাডেমি'র কেউ কোনো কাজ করেননি এটাই প্রমাণ করে কিনা?

অন্যান্য পুরস্কার পাতায় ২০১০ এবং ২০১১ সালের কয়েকটি পুরস্কারের খবর আছে বটে। ওই পুরস্কারগুলো কি এখন আর দেওয়া হয় না? যদি দেওয়া হয়, তার আপডেট কিভাবে জানা যাবে? বাংলা একাডেমিতে গিয়ে জানতে হবে? কার কাছে জানতে হবে? ফেলোগণ পাতায় সম্মানসূচক ফেলোশিপপ্রাপ্ত সুধীদের একটি তালিকা আছে। সেখানে ১০৭ জন সম্মানিত ফেলোদের নামের তালিকা আছে। আর ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক (ফেলো)দের একটি তালিকা আছে। ২০১০ সালের পর কি বাংলা একাডেমি থেকে কেউ ফেলো পাননি? যদি পেয়ে থাকেন, তাদের নাম সেখানে আসল না কেন? যতোদূর জানি, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা অটোমেটিক এই সম্মানিত ফেলো'র সদস্য বনে যান। তো, ২০১০ সালের পর ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে অনেককে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে তাঁদের নামও সেখানে আসার কথা। অবশ্য মৃত ব্যক্তিরা আবার নাকি সম্মানিত ফেলো হতে পারেন না, এমন একটা আইনি জটিলতা আছে প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন ২০১১-তে। বিষয়টা আসলে সত্যিই গোড়ায় গলদের মতো অবস্থা!

জীবনসদস্য ও সদস্য পাতাটি রহস্যপূর্ণ ফাঁকা!! প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন, ২০১১-এর খসড়া পাতার কথা আর কি বলবো? বানান বিভ্রাটের কারণে গোটা জিনিস পড়াই দায় বটে। তবে প্রস্তাবিত আইনের অনেক বিষয় নিয়ে নানান বিতর্ক চারদিকে শুনতে পাচ্ছি। ধারা ৩৭' নিয়ে এর আগে কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদের একটি লেখায় বলেছিলাম। পুরো আইনটি পড়লে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, আমাদের দেশ থেকে ব্রিটিশরা চলে গেলেও ব্রিটিশ ভূত যায়নি। ফরম্যাটের কোনো বদল হয়নি। নতুন চিন্তা করারও যেনো কেউ নেই। অসহায় জাতি মরিছে কাঁদিয়া হাঁকিয়া ভবিষ্যৎ!! আইনের লোক না হয়েও যাতে বাংলা একাডেমি'র নতুন আইন সবাই বুঝতে পারে, এটাকে সেভাবে করা খুব জরুরী। আর মাথা থেকে ব্রিটিশ ফরম্যাটটা সবার আগেই ছেটে দিতে হবে। নইলে কাগুজে আইন কাগজেই থাকবে। মাঝখান থেকে কিছু লোক সরল বিশ্বাসে যা যা অপকর্ম করার তা করতেই থাকবে।

বিজ্ঞাপন পাতাটি এখনো রহস্যজনকভাবে ফাঁকা। হয়তো বাংলা একাডেমি খরচ বাঁচাতে কোনো বিজ্ঞাপন ঝামেলায় যাচ্ছে না। কিন্তু একটু মাথা খাটালে ওই পাতা থেকে ইনকাম করাও যায়। যদি অন্যদের বিজ্ঞাপন না দিতে চায়, তো নিজেদের টা তো দেবেন, নাকি? নইলে ওই পাতার দরকার কেনো? সেটা কি? কোনো হদিস নেই কেন? যোগাযোগ পাতায় বাংলা একাডেমি'র কর্মকর্তাদের নাম ও টেলিফোন নম্বর দেওয়া আছে। কিন্তু অনেকের নামের বানান চোখে পড়ার মতো ভুলে ভরা। নিজেরা কাজকাম না করেন, নিজেদের নামের বানানটা অন্তঃত ঠিক করেন। নইলে আমরা যদি ওই ভুল বানানের নামে চিঠিপত্র, নিমন্ত্রণপত্র লিখতে শুরু করি, তখন কেমন হবে!

বাংলা একাডেমি'র বয়স ৬০ হতে চললেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি এখনো কিশোর পর্যায়ে রয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি'র হওয়া উচিত ছিল এক নাম্বার প্রতিষ্ঠান। যারা এখানে কাজ করেন, তারা সবাই গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়ান। মাস শেষে বেতন নেন। আহা কি মজা। যদি বাংলা একাডেমি'র ওয়েব অ্যাড্রেস রাখতে হয়, তাহলে সেটাকে যথাযথভাবে নিয়ম পালন করেই চলতে হবে। নিয়মের বাইরে কেউ নন। মাননীয় মহাপরিচালকের কাছে আমার বিনীত নিবেদন, দয়া করে বাংলা একাডেমি'র ডিজিটাল পার্ট নিয়ে গঠনমূলক কিছু করেন। নইলে ডিজিটাল জিনিসটা ডিলিট করে দেন। এটা দেখলে জাতির মননের প্রতীক হিসেবে ঠিক মেনে নিতে যে কারোর কষ্ট হবে। উদ্ভট উটের পিঠে চলছে ডিজিটাল বাংলা একাডেমি। সো, সাধু সাবধান।।











মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩

ৈতয়ব খান বলেছেন: উদ্ভট উটের পিঠে চলছে ডিজিটাল বাংলা একাডেমি

হুমমমমমমমমমমমম

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৩

মোঃ মামুনুর রশীদ দুলাল বলেছেন: samsay borti.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.