নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংশয়ের রাজনীতি ও এলোমেলো কথামালা...

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৬

২৫ অক্টোবর ২০১৩ সালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট যে সমাবেশ করলো, সেই সমাবেশ দেশের জনগণকে কি কি বার্তা দিল? তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র মোটামুটি এরকম-

১. সমাবেশ স্থলে সামনের দিকে ছিল জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের অবস্থান। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন, ব্যানার এবং বেলুন। আর মাথায় ছিল তাদের ব্রান্ডিং কাগজের টুপি। তাদের ব্যানার ফেস্টু আর বেলুনের দাবীগুলো ছিল সুস্পষ্ট। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যাদের সাজা দিয়েছে এবং যারা এখনো বিচারাধীন, তাদের মুক্তি দাবী করেছে তারা।

২. বিএনপি এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল শেষ পর্যন্ত জায়গা ঠেলাঠেলিতে জামায়াত শিবিরকে ছাড় দিয়েছে।

৩. সমাবেশ থেকে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী একবারও বলেননি যে, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের দাবীগুলো তাদের নিজস্ব। যার সংগে বিএনপি'র কোনো সম্পর্ক নেই। মানে দাড়ায়, দাবীগুলো'র সঙ্গে বিএনপিও নিরব সমর্থক।

৪. মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী গতকাল প্রেসক্লাবে দাবী করেছিলেন, ২৫ শে অক্টোবর থেকে বর্তমান সরকার অবৈধ। আজ সমাবেশে বললেন, আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে বর্তমান সরকার অবৈধ। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী'র কথা অনুযায়ী যদি সরকার অবৈধ হয়, তাহলে তারাও সংসদের বিরোধী দল হিসেবে অবৈধ। কিন্তু বিশ্বের কোথাও সংসদের মেয়াদ শেষ হবার আগে সাংবিধানিকভাবেই সরকার অবৈধ হবার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের চলতি নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪। অর্থ্যাৎ ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত বিরোধী দল মানুক আর না মানুক সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ।

৫. মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনী, এবং বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক ও পেশাজীবীদের কাছে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যার অর্থ হল, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আতংকের কোনো কারণ নেই। ক্ষমা করে তাদের পক্ষে টানার একটি প্রক্রিয়ার অংশ এটা। পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, আগামীতে এই সরকারের কোনো নির্দেশ যেনো প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনুসরণ না করেন, সেজন্য তাদের আহবান জানিয়েছেন।

৬. মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের যে রূপরেখা এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে দিয়েছিলেন, সেখান থেকে এক চুলও নড়েন নি। বরং আজ সমাবেশে আবার বললেন, সংসদেও আমরা বলেছি, সংলাপ হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কিভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে। আর সেই সরকারে উপদেষ্টা কারা হবেন তা নিয়ে।

৭. বিরোধীদল বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে না।

এবার আসা যাক আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন বর্তমান ১৪ দলীয় জোট সরকারের নির্বাচন কালীন সরকারের রূপরেখা কেমন ছিল? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতি'র উদ্দেশ্য ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি ধারণা দিয়েছেন। সেটি কি ছিল?

১. নির্বাচনকালীন সরকার হবে সর্বদলীয় সরকার। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে সেই সরকারে আসার জন্য আহবান করেছেন।

২. যদি বিএনপি সেই সরকারে যোগ দেয়, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করবেন বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে।

৩. প্রধান বিরোধীদলকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেবার জন্য সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছেন।

৪. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের সরকারপ্রধান কে হবেন সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না। সেই সরকারের মন্ত্রীসভার আকার কেমন হবে, সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না।

৫. সর্বদলীয় সরকারে যদি বিএনপি যোগ দেয়, তাদের সেই সরকারে কি কি মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে, বা কয়টি মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা ছিল না।

৬. সর্বদলীয় সরকারে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে কয়টি মন্ত্রণালয়ে ভাগ পাবে সে বিষয়েও কোনো স্পষ্টতা ছিল না।

৭. সর্বদলীয় সরকার নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে সহায়তা করবে বা নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে শক্তিশালী করবে, বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা ছিল না।

এবার আসা যাক, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের যে রূপরেখা দিয়েছেন, সেটি কেমন? ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের ২০ জন উপদেষ্টা থেকে ১০ জন উপদেষ্টা নেবার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি ৫ জন এবং আওয়ামীলীগ ৫ জন করে উপদেষ্টা দেবেন। সরকারপ্রধান হবেন গ্রহনযোগ্য কোনো ব্যক্তি। ইতোমধ্যে সেই ২০ উপদেষ্টা নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উপদেষ্টা দুই সরকার মিলে আসলে ১৮ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। ৪ জন শারীরিকভাবে অসুস্থ। ২ জন নতুন সরকারে যোগ দেবার ব্যাপারে অপারগতা জানিয়েছেন। একজন ইতোমধ্যে বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন। আর দুইজনের বক্তব্য পাওয়া যায় নি। অর্থ্যাৎ মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর রূপরেখা অনুযায়ী, কোনোভাবেই ৫ জন + ৫ জন = ১০ জন উপদেষ্টা পাওয়া সম্ভব নয়।

যদি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী'র রূপরেখা আওয়ামী লীগ মেনে নেয়, তখন দেশের অবশিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো আবার নতুন ইস্যু নিয়ে হাজির হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের গঠন এবং আকার নিয়েই বিতর্ক আরো দীর্ঘ হবে।

এবার আসি, আমরা দেশের সাধারণ মানুষ কি চাইছি? বাংলাদেশের সর্বস্তরের সকল শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষ কি কি মনে করছে? সাধারণ মানুষের চাওয়া গুলো হতে পারে এরকম-

১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী একটেবিলে সংলাপের সূচনা করুক। একটি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রী ২৩ বছর কথা বলেন না, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় সংকটের প্রতীক।

২. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন না করেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী কেন ফোন করছেন না? ফোন করে দুইজন প্রতিদিনই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন, এটাই আমরা দেখতে চাই।

৩. জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে প্রধান দুই নেত্রী একসঙ্গে বসে সংকটের সমাধান খুঁজবেন, এটাই আমাদের চাওয়া। শুধু পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনকালীন সংকটের সময় কথা বলার বিষয় নয়, সারা বছরই তারা কথা বলবেন, পরম্পর খোঁজখবর নিবেন, দেখা করবেন, একসঙ্গে বেড়াতে যাবেন, একসঙ্গে কফি খাবেন, একসঙ্গে আড্ডা দেবেন, একসঙ্গে একই অনুষ্ঠানে যাবেন, সারা বছরই যাবেন, এটাই আমরা চাই।

৪. বাংলাদেশের বয়স ৪২ বছর হয়ে গেছে। এখন আমাদের জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে অন্তত একটা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা কমিটি থাকা প্রয়োজন। যেখানে দুইনেত্রী একসঙ্গে বসে সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহে একটি জাতীয় স্বার্থরক্ষা কমিটি গঠন করা দরকার। এই কমিটি যে কোনো রাজনৈতিক সরকারকেও গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করবে। সরকারের যে কোনো ভুল কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করবে। জাতীয় যে কোনো বিপর্যয়ে সর্বোচ্চ সহনশীলতা প্রদর্শন করে যুক্তিসঙ্গত সমাধান বের করবে।

৫. আমরা একটি স্থায়ী নির্বাচন কালীন সরকারের কাঠামো চাই। যাতে পাঁচ বছর পরে আবার আপনারা বেওয়াজ করতে না পারেন। প্রয়োজনে সেই কাঠামো ঠিক করতে সংবিধান পুনরায় সংশোধন করেন। কিন্তু কোনো অযৌক্তিক কারণে মাত্র এবারের নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করাটা হবে নির্বুদ্ধিতার কাজ।

৬. সকল রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য নিজ নিজ দলের বক্তব্য পেশ করুক। সবার বক্তব্য থেকে গ্রহনযোগ্য বিষয়গুলো মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আমরা শক্তিশালী করি।

৭. রাজপথ, হরতাল, মিছিল, মিাটিং, সমাবেশ এগুলো একটি স্বাধীন দেশে আপনারা আর কত করবেন? দেশের যদি আপনারা সত্যিকার উন্নয়ন করতে চান, আপনারা যদি সত্যিই জনগণের সেবা করতে চান, তাহলে তো আপনাদের মিছিল মিটিঙ সমাবেশ করার সময় পাওয়ার কথা না। আপনারা তো করছেন নিজেদের স্বার্থের রাজনীতি। নিজেদের সুবিধা আর ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি। প্রকৃত জনগণের রাজনীতি আপনারা করছেন না। আপনাদের রাজনীতির কার্যকলাপ থেকে আপনাদের দেশপ্রেমই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

৮. দুর্নীতি বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। হরতাল বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটি ঘোষণা দিন। দলীয়করণ বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। স্বজনপ্রীতি বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। কালোবাজারী বন্ধের জন্য আপনারা এক টেবিলে একযোগে একটা ঘোষণা দিন। তাহলেই বুঝবো, আপনাদের দেশপ্রেম কতোটা আছে? আপনাদের এখন জনগণের কাছে সত্যিই দেশপ্রেমের পরীক্ষাটাই দিতে হবে সবার আগে।

৯. ইতিহাস বিক্রি করে আপনারা আর কতোকাল খাবেন? সেই ইতিহাসেও আপনারা নিজেদের মত করে অদলবদল করেন। নিজেদের মত লেখেন। কিন্তু আসল ইতিহাস নিজেই লিখে রাখে কালের গায়ে, যা কেউ পাল্টাতে পারে না। তা নিজেই একটা ইতিহাস। আর আপনাদের পাল্টানোর ইতিহাসও আরেকটি কালো ইতিহাস।

১০. যদি আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসি, তাহলে, নির্বাচনের যেখানে তিনমাসও নেই, আপনাদের কে কি আগামীতে করবেন, সেই রূপরেখাগুলো কোথায়? সেগুলো বরং এসময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হবার কথা। সেই বিষয়গুলো কি আপনারা এখনো রচনা করতে পারেন নি। নাকি সোনার হাঁস এসে সেগুলৌ রাতারাতি পয়দা করে দিয়ে যাবে??

১১. আমরা যদি সত্যিই বাংলাদেশকে ভালোবাসি, নিরহ মানুষের ঘাড়ে বন্দুব রেখে ক্ষমতা দেখানোর রাজনীতি করে আর লাভ হবে না। মানুষ এখন অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন। সো, সাধু সাবধান।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০৮

লুবনা ইয়াসমিন বলেছেন: বুঝলাম। অনেক কাজ আছে, কিন্তু সময় তো একদম কম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.