![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে অবশেষে দেহান্তরিত হলেন। আজ সকালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে তিনি পরলোক গমন করেন।
১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম। রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত দুই বাঙালি। তারপর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। জাতিসংঘ তখন ঘোষণা করে- এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ।
গোড়ার ইতিহাস:
বিগত নব্বই শতকের শেষ দিক। সবকিছুর পুরোধা ছিলেন রফিক (রফিকুল ইসলাম) নামের এক ক্যানাডা নিবাসী বাঙালি। চেহারা ছবিতে অসাধারাণ কিছু মনে হবে না দেখলে। চিরায়ত বাঙালি চেহারা, আলাদা কোন বিশেষত্ব চোখে মুখে নেই। কিন্তু যে কেউ একটু কথা বললেই বুঝবেন যে সাধারণ এই লোকটির মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অমিত শক্তির স্ফুরণ। একসময় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেশ-মাতৃকাকে মুক্ত করেছেন না-পাক বাহিনীর হাত থেকে। তো এই লোকটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করার সম্মুখ যোদ্ধা হবেন না তো কে হবেন?
১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে এক রফিক পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়ে একুশে ফেব্রুয়া্রিকে অমর করেছিলেন। তার ৪৬ বছর পরে আরেকজন রফিক সুদূর কানাডায় বসে আরেক দুঃসাহসী কাজ করে ফেললেন ।
১) ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারী রফিক জাতিসংঘের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারী কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে রফিক ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে কফি আনানকে প্রস্তাব করেন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’হিসেবে যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
২) সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের (যিনি একজন সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত) নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন।
৩) সেই উপদেশ মোতাবেক রফিক তার সহযোদ্ধা আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজীভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিজভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর ক্যানাডিয়ান এম্বাসেডর ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করেন।
৪) এর মধ্যে একটি বছর পার হয়ে গেলো। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসান ফেরদৌস সাহেব রফিক এবং সালামকে উপদেশ দেন ইউনেস্কোর ভাষা বিভাগের জোশেফ পডের সাথে দেখা করতে। তারা জোশেফের সাথে দেখা করার পর জোশেফ তাদের উপদেশ দেন ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করতে। এই আনা মারিয়া নামের এই ভদ্রমহিলাকে আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবো, কারণ এই ভদ্রমহিলাই রফিক-সালামের কাজকে অনেক সহজ করে দেন। আনা মারিয়া রফিক-সালামের কথা মন দিয়ে শোনেন এবং তারপর পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ – ক্যানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে।
৫) সে সময় বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী এম এ সাদেক এবং শিক্ষা সচিব কাজী রকিবুদ্দিন, অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমেদ, মশিউর রহমান (প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েটের তৎকালীন ডিরেক্টর), সৈয়দ মোজাম্মেল আলি (ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত), ইকতিয়ার চৌধুরী (কাউন্সিলর), তোজাম্মেল হক (ইউনেস্কোর সেক্রেটারি জেনেরালের শীর্ষ উপদেষ্টা) সহ অন্য অনেকেই জড়িত হয়ে পড়েন।তারা দিন রাত ধরে পরিশ্রম করেন আরো ২৯ টি দেশকে প্রস্তাবটির স্বপক্ষে সমর্থন আদায়ে। অন্যান্য বাংলাদেশী এবং প্রবাসীদের কাছে ব্যাপারটা অগোচরেই ছিল- পর্দার অন্তরালে কি দুঃসাহসিক নাটক চলছিলো সে সময়। এই উচ্চাভিলাসী প্রজেক্টের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এবং ক্যানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরের জনা কয়েক লোক কেবল ব্যাপারটা জানেন, এবং বুকে আশা নিয়ে তারা সেসময় স্বপ্নের জাল বুনে চলেছেন প্রতিদিন।
৬) ১৯৯৯ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর। ইউনেস্কোর প্রস্তাব উত্থাপনের শেষ দিন। এখনো প্রস্তাব এসে পৌঁছায়নি। ওদিকে রফিক সালামেরা ব্যাপারটি নিয়ে বিনিদ্র রজনী অতিক্রম করে চলেছেন। টেলিফোনের সামনে বসে আছেন, কখনো চোখ রাখছেন ইমেইলে। আসলে প্রস্তাবটির পেছনে প্রধাণমন্ত্রীর একটি সই বাকি ছিলো। আর প্রধানমন্ত্রী তখন পার্লামেন্টে। পার্লামেন্টের সময়সূচীর পরে সই করতে করতে প্রস্তাব উত্থাপনের সময়সীমা পার হয়ে যাবে। সেটা আর সময় মত ইউনেস্কো পৌঁছুবে না। সব পরিশ্রম জলেই যাবে বোধ হয়।
৭) প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করা হলো তিনি যেন প্রস্তাবটি সই করে ফ্যাক্স করে দেন ইউনেস্কোর দপ্তরে। অফিসের সময়সীমা শেষ হবার মাত্র একঘণ্টা আগে ফ্যাক্সবার্তা ইউনেস্কোর অফিসে এসে পৌঁছুলো।
৮) ১৬ই নভেম্বর কোন এক অজ্ঞাত কারণে (সময়াভাবে ?) বহুল প্রতাশিত প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সভায় উত্থাপন করা হলো না। রফিক সালামেরা আরো একটি হতাশ দিন পার করলেন।
৯) পর দিন – ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯৯। এক ঐতিহাসিক দিন। প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো সভার প্রথমেই। ১৮৮ টি দেশ এতে সাথে সাথেই সমর্থন জানালো। কোন দেশই এর বিরোধিতা করলোনা, এমনকি খোদ পাকিস্তানও নয়। সর্বসম্মতিক্রমে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গৃহীত হলো ইউনেস্কোর সভায়।
এভাবেই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক দিনে পরিণত হলো। কিন্তু এতো কিছুর পরেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল উদ্যোক্তা রফিক এবং সালাম সবার কাছে অচেনাই রয়ে গেলেন। তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা আর পরিশ্রম অজ্ঞাতই থেকে গেল। কেউ জানলো না কি নিঃসীম উৎকন্ঠা আর আশায় পার করেছিলেন তারা ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসের শেষ ক’টি বিনিদ্র রজনী। কেউ জানলো না, কিভাবে সমর্থন যুগে চলেছিলেন তাদের স্ত্রী, পরিবার, এবং কাছের বন্ধু বান্ধবেরা। কত অজ্ঞাতকূলশীলেরাই বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক পেয়ে যান এই অভাগার দেশে আর রফিক সালামেরা উপেক্ষিতই থেকে যান।
[সূত্র: মুক্তমনা, লেখক: অভিজিৎ]
বলতে গেলে বাংলাদেশের মানুষের সবার অগোেচেরই অত্যন্ত নিরবেই চলে গেলেন এই বীর সেনানী রফিকুল ইসলাম। কয়েক দিন ধরে রফিকুল ইসলামের সর্বশেষ খবরাখবর নিয়মিত জানাচ্ছিলেন কানাডা প্রবাসী কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। দুলাল ভাইয়ের আজকে ফেইসবুকে স্টাটাস ছিল এরকম-
''আজ সকালে ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে পরাজিত হয়ে চির বিদায় নিয়ে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলাম।
---------------------------
আমরা জাতি হিসেবে কি বেঈমান? আমাদের কি কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ নেই! দেশ ও জাতি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মানুষটির একটি বারও কেউ খোঁজ-খবর নিলো না!''
আমরা কি সত্যিই একটা অভাগা জাতি? রাষ্ট্রীয়ভাবে রফিকুল ইসলামের পাশে কেউ দাঁড়ানোর ছিল না? আমাদের স্মার্ট ব্যস্ততম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি কি করেছেন এই সময়ে? আজ হয়তো উনি মন্ত্রীসভায়ও নেই। ওনার স্থলাভিসিক্ত হচ্ছেন এ এইচ মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এখন উচিত হবে রফিকুল ইসলামকে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানে শেষ শ্রদ্ধা জানানো। আমি অভিজিৎ-এর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়ে দাবী করছি যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সদ্য প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ও কানাডা প্রবাসী আবদুস সালামকে ভাষা সৈনিকের একুশে পদক প্রদান করা হোক।
রফিকুল ইসলামরা যুগে যুগে জন্ম নেবে আর এভাবে নিরবে আমাদের কাঁদিয়ে রাষ্ট্রের অগোচরেই চলে যাবে, আর রাষ্ট্রের সেখানে কিছুই করার থাকবে না, এটা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। রফিকুল ইসলামের আত্মা শান্তি পাবে যদি বাংলাদেশ তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করে। আসুন, সবাই রফিকুল ইসলামের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাই। রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের গর্ব। আমরা তাঁকে আমাদের স্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, ততোদিন রফিকুল ইসলামকে আমাদের স্মরণ করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। জয়তু রফিকুল ইসলাম। জয়তু আবদুস সালাম।
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: পলাশ০১৯১১ বলেছেন: উনারা এভাবে চলে গেলে আামদের পথ দেখাবে কে? আমারা তো পথ হারা হয়ে গেলাম।
যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, ততোদিন রফিকুল ইসলামকে আমাদের স্মরণ করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। জয়তু রফিকুল ইসলাম। জয়তু আবদুস সালাম।
উনার প্রতি শ্রদ্ধা । উনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৬
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ভাষা সৈনিকের জন্য শ্রদ্ধা।
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫
গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য শ্রদ্ধা।
৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি!
৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৯
হালি্ বলেছেন: জয়তু রফিকুল ইসলাম। জয়তু আবদুস সালাম।
৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬
রাবার বলেছেন: ভাষা সৈনিকের জন্য শ্রদ্ধা।
৮| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫
মধু নদীর জোলা বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি!
৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
উনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা । উনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১১
পলাশ০১৯১১ বলেছেন: উনারা এভাবে চলে গেলে আামদের পথ দেখাবে কে? আমারা তো পথ হারা হয়ে গেলাম।