নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হতে বাধ্য করল বৃষ্টি মহাশয়!!!

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে ও টেস্ট দুই ধরনের ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই ম্যাচ সেরা (ম্যান অব দ্য ম্যাচ) হওয়ার প্রথম কীর্তি গড়লেন বাংলাদেশের তরুণ ফাস্ট বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। অভিনন্দন মুস্তাফিজকে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অন্তরের ভালোবাসার নাম এখন মুস্তাফিজ। এর আগে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও টেস্ট ম্যাচে মোট ১০০ জন খেলোয়াড় অভিষেক ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। কিন্তু একই খেলোয়াড়ের দুই ফরমেটেই অভিষেকে ম্যাচ সেরার নতুন কীর্তি গড়লেন মুস্তাফিজ। গত ১৮ জুন ওয়ানডে অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। আর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ওভারে ৩ উইকেট সহ মোট ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচ সেরা।
চট্টগ্রাম টেস্ট বৃষ্টির কারণে পঞ্চম দিনেও মাঠে একটি বলও না গড়ানোতে ড্র ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ম্যাচ শেষে আলোচনায় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নবাগত তরুণ পাস্ট বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়ে মুস্তাফিজ বলেন, ‘আমার মূল লক্ষ্য অনেক দিন জাতীয় দলের হয়ে খেলা। দেশের জন্য আরও কিছু করা। দেশের সুনাম বয়ে আনতে ভূমিকা রাখা।’
আজ শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বেলা ১২টায় পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন দুই ফিল্ড আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো ও জোয়েল উইলসন। ফলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্টে এই প্রথম ড্র পেল বাংলাদেশ। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা আটটি টেস্টেই হারে বাংলাদেশ। যার মধ্যে সাতটি ছিল লজ্বাজনক ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। এর আগে ভারতের বিপক্ষে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্টও ড্র হয়েছিল। সেই ড্রয়ে বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল মুশফিকুর রহিমের দলের জন্য। চট্টগ্রাম টেস্টে উল্টো বরং খেলতে না পারার হতাশাই থাকল টাইগার্সদের।
চট্টগ্রাম টেস্টে ৪৫০ ওভারের খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে প্রথম ইনিংসে ৮৩.৪ ওভার ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২১.১ ওভার, বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে খেলেছে ১১৬.১ ওভার। দুই প্রতিপক্ষ খেলেছে মোট ৮৩.৪+২১.১+১১৬.১=২২০ ওভার। যার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিক দুই ইনিংস মিলিয়ে খেলেছে ৮৩.৪+২১.১=১০৪.৫ ওভার এবং বাংলাদেশ খেলেছে ১১৬.১ ওভার। কিন্তু বৃষ্টি খেলেছে ৪৫০-২২০=৩৩০ ওভার। মানে বৃষ্টির দখলে ছিল অর্ধেকেরও বেশি খেলা। প্রথম দিন ছাড়া বাকি চার দিনই বৃষ্টি চট্টগ্রাম টেস্টে হামলা করেছে। দ্বিতীয় দিন ২৫ ওভার, তৃতীয় দিন ২৪.৫ ওভার এবং চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের পুরো ৯০+৯০=১৮০ ওভার বৃষ্টির দখলে ছিল। ফলে চট্টগ্রাম টেস্ট নিস্প্রাণ ড্র।
চট্টগ্রাম টেস্ট বৃষ্টির কারণে নিস্প্রাণ ড্র হলেও বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় কিছু ঘটনা ঘটেছে এই টেস্টে। এর আগে ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম ও কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে টানা তিন টেস্টে আট ব্যাটসম্যান আর তিন বোলারের কম্বিনেশনের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছিলেন। ক্যাপ্টেন মুশফিক ও কোচ হাথুরুসিংহে হয়তো এবার বুঝতে পারবেন টেস্ট ম্যাচে তিনজন বোলার নিয়ে দল গঠন করা কতোটা বোকামি। এবার ম্যাচ শেষে মুশফিক সাত ব্যাটসম্যান ও চার বোলারের কম্বিনেশনের পক্ষে সাফাই গাইলেন। এটিও টেস্ট ম্যাচের মোটেও আদর্শ কম্বিনেশন নয়। টেস্ট ম্যাচের আদর্শ কম্বিনেশন হল ছয় ব্যাটসম্যান ও পাঁচ বোলার। আমার দৃষ্টিতে তিনজন পেসার, দুইজন স্পিনার নিয়ে গড়া পাঁচ বোলার এবং ছয় জন ব্যাটসম্যান নিয়ে গড়া কম্বিনেশন হল সেরা কম্বিনেশন।
সেক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন মুশফিক ও কোচ হাথুরুসিংহের সাথে এখনো টেস্ট কম্বিনেশন নিয়ে আমরা দ্বিমত রয়েই গেল। বাংলাদেশ যতদিন এই সেরা কম্বিনেশন গড়তে না পারবে ততদিন টেস্টে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দেশগুলো বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিপক্ষকে আমরা দুইবার অলআউট করব। দুইবার অলআউট করার মত সামর্থ্য যতক্ষণ আমরা দলে না রাখব ততক্ষণ সেই টেস্ট থেকে ফলাফল পক্ষে আনা কঠিন। প্রতিপক্ষ যখনই দুইবার অলআউট হবে তখনই টেস্ট ম্যাচ আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
পাশাপাশি আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরো ধৈর্য্য বাড়াতে হবে। ক্রিজে পড়ে থাকার মত সামর্থ্য ও ধৈর্য্য কোনোটাই এখনো আমাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেখা যায় না। চট্টগ্রাম টেস্টেও তামিম, মাহমুদউল্লাহ হাফ সেঞ্চুরি করার পর কনসেনট্রেশন ফেল করেছেন। যে কারণে লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে আরো একটি বাড়তি সমস্যা হল একদিনের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ সিরিজ জেতার সেরা খেলোয়াড় সৌম্য সরকারের বেস্ট ইলেভেনে জায়গা না হওয়া। অথচ সৌম্য সরকারের টেস্টে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হবার সামর্থ্য রয়েছে বলেই আমি মনে করি।
চট্টগ্রাম টেস্টে ক্যাপ্টেন মুশফিক আঙুলের চোটের কারণে উইকেট কিপারের দায়িত্ব পালন করতে না পারায় উইকেট কিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন দাস দলে জায়গা পান। নতুবা সৌম্য সরকারের মিডল অর্ডারে জায়গা হবার কথা।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টাইগার্সরা একই দল নিয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্ট বৃষ্টির কারণে ভেসে যাওয়ায় একই ফলাফল ঢাকা টেস্টে আশা করাটা কিছুটা বোকামি হবে। ঢাকা টেস্টেও বৃষ্টির বিড়ম্বনা থাকবে। কারণ ঢাকার উইকেট কিছুটা ব্যাটিং নির্ভর। আবার চরিত্র বদল করে এটি যে কোনো মুহূর্তে বোলিং উইকেটও হয়ে যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বর্ষাকাল। এমনিতে টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে বৃষ্টির দা-কুমড়ো সম্পর্ক। আর সেই খেলা যদি আইসিসি বর্ষাকালে আয়োজন করে তাহলে চট্টগ্রাম টেস্টের মত ঢাকা টেস্টও বৃষ্টির দখলে চলে যেতে পারে। চট্টগ্রাম টেস্টে দুই দল মিলে খেলেছে ২২০ ওভার আর বৃষ্টি খেলেছে ৩৩০ ওভার। একই ঘটনা ঢাকা টেস্টের বেলায় হবার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে প্রায় ৬০ ভাগ।
চট্টগ্রাম টেস্টে মুস্তাফিজ অনন্য রেকর্ড গড়লেও আমি কিন্তু মোহাম্মদ শহীদের বোলিংয়ে খুব খুশি। শহীদ মোট ১৭ ওভার বল করেছেন। যার মধ্যে ৯টি মেডেন ওভার। রান দিয়েছেন মাত্র ৩৪। কিন্তু শহীদের দুর্ভাগ্য কোনো উইকেট ঝুলিতে পড়েনি। এসব ক্ষেত্রে সব সময় যেটা হয়, যে বোলার একপাশে কঠোর নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন, তখন দেখা যায় অন্যপ্রান্তের বোলারের উপর ব্যাটসম্যানরা চড়াও হয়ে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন। তখন ঝুঁকি নিয়ে খেলার কারণে উইকেট পড়ে আর সেটি যায় অন্যপ্রান্তের বোলারের ঝুলিতে। চট্টগ্রাম টেস্টে শহীদের বোলায় ঠিক এই ঘটনাটি ঘটেছে।
একপাশে শহীদ কঠোর নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। অপর পাশ থেকে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ, জুবায়ের, শাকিব, তাইজুল,মাহমুদউল্লাহ। টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দিনে বৃষ্টির বিড়ম্বনা না থাকায় সকালটা প্রোটিয়াসরা বেশ ভালো মত সামাল দেন। ১ উইকেটে ১০৪ রান নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম দিনের লাঞ্চে গিয়েছিল। তারপর শহীদ টানা ৫১টি ডট বল করেছেন লাঞ্চের পর। শহীদ খুব নিঁখুত লাইন-লেংথে বল করে উইকেটে বেধে রাখেন প্রোটিয়াস ব্যাটসম্যানদের। সেই চাপে হাঁসফাঁস করেই পরে আউট হয়েছেন এলগার-দু প্লেসিসরা। যে কারণে ঢাকা টেস্টে আমি রুবেল হোসেনকে একাদশে নেবার পক্ষে। তিনজন পেসার থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকা আরেকটু চাপে থাকবে। সেক্ষেত্রে তাইজুলকে একাদশের বাইরে রাখব। আর মুশফিক যদি কিপিং করতে পারে তাহলে এই মুহূর্তে রানে থাকা লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের মধ্যে আমার রায় সৌম্য সরকারের পক্ষে।
টেস্ট ক্রিকেটে আসল মজা হল, সারাদিন ফাস্ট বোলাররা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখেন। মাঝে মাঝে দু-একটা উইকেটও পড়ে। কিন্তু একজন স্পিনার এসে জাদু দেখিয়ে বাকি উইকেট গুলো তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষের ঘাড় মটকে দেয়। যে কাজটি অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন, ভারতের অনিল কুম্বলে, শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরলিধরন, পাকিস্তানের মুস্তাক বা সাকলায়েন মুস্তাকরা করতেন। বাংলাদেশে যেটি মোহাম্মদ রফিকের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মোহাম্মদ রাজ্জাক কিছুটা দেখিয়েছেন। কিন্তু রাজ্জাক দীর্ঘদিন দলে জাগয়া পাচ্ছেন না। শাকিব অলরাউন্ডার হওয়ায় বাড়তি সুবিধা নিয়ে দলে জায়গা পান। কিন্তু টেস্টে ক্রিকেটে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসাবে শাকিব এখনো ওয়ার্ন, কুম্বলেদের মত কোনো জাদু দেখাতে পারেননি।
আগামী বৃহস্পতিবার ৩০ জুলাই মিরপুর শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। ঢাকা টেস্টের প্রস্তুতির জন্য টাইগার্সরা সময় পাচ্ছে চারটি দিন। বর্ষাকালে টেস্ট ম্যাচ হলেও প্রস্তুতিতে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে কোচ হাথুরুসিংহকে। বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হলেও প্রতিপক্ষের নাম যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা টেস্টের এই মুহূর্তের এক নম্বার দল, তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক প্রস্তুতি এবং কম্বিনেশন সবকিছু দুরদর্শী দিয়েই মেলাতে হবে। টাইগার্সদের ঢাকা টেস্টের জন্য রইল শুভ কামনা। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮৩.৪ ওভারে ২৪৮ (এলগার ৪৭, ফন জিল ৩৪, দু প্লেসিস ৪৮, আমলা ১৩, বাভুমা ৫৪, দুমিনি ০, ডি কক ০, ফিল্যান্ডার ২৪, হারমার ৯, স্টেইন ২, মরকেল ৩*; এবং মুস্তাফিজ ৪/৩৭, জুবায়ের ৩/৫৩, মাহমুদউল্লাহ ১/৯, সাকিব ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৭) ও ২১.১ ওভারে ৬১/০ (এলগার ২৮*, ফন জিল ৩৩*)

বাংলাদেশ: ১১৬.১ ওভারে ৩২৬ (তামিম ৫৭, ইমরুল ২৬, মুমিনুল ৬, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, মুশফিকুর ২৮, সাকিব ৪৭, লিটন ৫০, শহীদ ২৫, তাইজুল ৯, মুস্তাফিজুর ৩, জুবায়ের ০*; স্টেইন ৩/৭৮, হারমার ৩/১০৫, ফিল্যান্ডার ২/৪০, এলগার ১/৬, ফন জিল ১/২৩)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.