নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেজো কাকিমা না ফেরার দেশে চলে গেলেন!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৫

একটু আগে ছোট ভাই ফোন করে জানালো- সেজো কাকিমা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কত স্মৃতি একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে মনে পড়ছে। সেজো কাকা মারা গেছেন ১৯৮৬ সালের ৫ মার্চ। পরদিন আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। চাচাতো ভাই কালাম আমার সাথে পরীক্ষার্থী ছিল। কালামের পরীক্ষা দেওয়া আর হলো না। আর পড়াশুনাও ওখানে আটকে গেল। কারণ কালাম ভাইবোন সবার বড়।

তারপর সাত ভাইবোনের সংসারটা সেজো কাকিমা কত কষ্ট করে লালন-পালন করেছিলেন। এখন সবাই মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। এ বছর কালাম আর সেজো কাকিমা হজ করেছেন। কাকিমার সাথে অনেকদিন আমার দেখা হয় না। ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি আমার মা মারা যায়। ওই সময় সর্বশেষ দেখা হয়েছিল কাকিমার সাথে। মানুষের জীবন কত অনিশ্চিয়তা নিয়ে গড়ে ওঠে। আবার টুক করে একেকজন একেক সময় চলে যায়। মৃত্যুর পর সবাই আবার কোথায় যায়? আমরা কেউ জানি না। কারণ ওখান থেকে কেউ ফিরে এসে সেখানকার গল্প আমাদের শোনায় না!

কালাম আমার এক মাসের বড়। ছোটবেলায় কাকিমা কালামের জন্য যে খাবার তৈরি করতেন, আমি নাকি আমার নিজেরটা খেয়ে দ্রুত গিয়ে কালামের খাবার কেড়ে খেতাম। এমনকি কালামের জন্য খাবার বানানোর সময় আমার জন্য বাড়তি খাবার তৈরি করলেও আমি সেটায় জোর করে ভাগ বসাতাম। কাকিমা এসব গল্প খুব বলতেন। এখন আর সেই গল্প শোনার সুযোগ রইলো না!

আমার মা-চাচিরা আমাদের ভাইবোনদের কখনো আলাদাভাবে দেখেননি। নিজেদের সন্তানের মত সবসময় আদরযত্ন করেছেন। ভালো একটু খাবার রান্না হলে ডেকে খেতে দিতেন। আমরাও কোনদিন মা-চাচিকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ পাইনি। বরং কোনো অন্যায় করলে, আমার নামে নালিশ আসলে চাচিদের আঁচলের তলায় গিয়ে পালিয়ে বাবার মাইরের হাত থেকে বাঁচতাম। আর এ ব্যাপারে এমনকি চাচিরা বাবার বকাঝকাও নিরবে মেনে নিতেন। কারণ, আমার বাবা ছিলেন সবার বড়। মা-চাচিদের লাই পেয়ে নাকি আমি বেশি দুষ্টামি করার সুযোগ পেতাম!

আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে আমাদের পরিবারে প্রতি দশ বছর পরপর গুরুত্বপূর্ণ কোনো পুরুষ সদস্য মারা যায়। কিন্তু নারী সদস্যরা এই সূত্র মানেন না। ১৯৭৬ সালে আমার দাদু মারা যায়। ১৯৮৬ সালে মারা যায় আমার সেজো কাকা। ১৯৯৬ সালে মারা যায় আমার বাবা। ২০০৬ সালে পুরুষের বদলে মারা যায় আমার ছোট দাদী। এর আগে ১৯৫৬ সালে মারা যায় আমার বড় দাদী। কিন্তু ২০০৯ সালে মা যাবার পর থেকে আমার এই পরিসংখ্যান হুচট খেলো! ২০১৪ সালে মারা যায় আমার মেজো কাকিমা। এরপর আজ আবার চলে গেলেন সেজো কাকিমা।

তাহলে কী মৃত্যুর গতিপ্রকৃতি আবার দশ বছরের গুণিতকে রূপ নিল! নাকি মৃত্যুর জন্য আসলেই কোনো গুণিতক কাজ করে না। হায় মৃত্যু! তুমি কেবল সবকিছু স্মৃতিভ্রষ্ট করে দাও! মৃত্যুর পর সেই সব স্মৃতিরা কেবল ধীরে ধীরে আবছা হতে থাকে। আবছা হতে হতে একসময় কী নিজের দিকে গমণ করে মৃত্যুর লক্ষ্য! আমরা কেউ কী এসবের উত্তর জানি! সেজো কাকিমা, তুমি যেখানে থাকো, ভালো থেকো। তোমার আত্মা শান্তিতে ঘুমাক। এই কামনা করি।

..............................
১ ডিসেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩০

জগতারন বলেছেন:
আমার মা-চাচিরা আমাদের ভাইবোনদের কখনো আলাদাভাবে দেখেননি। নিজেদের সন্তানের মত সবসময় আদরযত্ন করেছেন। ভালো একটু খাবার রান্না হলে ডেকে খেতে দিতেন। আমরাও কোনদিন মা-চাচিকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ পাইনি। বরং কোনো অন্যায় করলে, আমার নামে নালিশ আসলে চাচিদের আঁচলের তলায় গিয়ে পালিয়ে বাবার মাইরের হাত থেকে বাঁচতাম। আর এ ব্যাপারে এমনকি চাচিরা বাবার বকাঝকাও নিরবে মেনে নিতেন। কারণ, আমার বাবা ছিলেন সবার বড়। মা-চাচিদের লাই পেয়ে নাকি আমি বেশি দুষ্টামি করার সুযোগ পেতাম!

রেজা ঘটক আজকে পোষ্টের এই প্রবন্ধটি পড়ে আমার চোখ দুটি ভিজে এসেছিল। সহজেই অনুমেয় যে আপনার বাপ-চাচা, দাদা-দাদী মিলে সবাই ছিলেন (ইংরেজীতে যাকে বলে) ক্লোজ-নেট পড়িবার, (দুখিত এর বাংলা শব্দার্থ না জানার জন্য) যা এক সমেয়ে বাংলাদেশের প্রাগৌতিহাসিক সুখময় স্মৃতি। আপনার সেজো কাকিমা ঘিরে আপনার সেই সুখময় স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার প্রার্থনা রইল তার (সেজো কাকিমার) আত্মা পরকালে শান্তিতে থাক।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে...ভালো থাকবেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.