নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
গত ৩০ নভেম্বর ২০১৬, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'শিল্পে বাঁচি শিল্প বাঁচাই' শ্লোগান নিয়ে টেলিভিশন শিল্পী-কলাকুশলীবৃন্দ দিনব্যাপী একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এই প্রতিবাদ সমাবেশে তারা কিছু দাবি পেশ করেছেন। দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক এই আলোচনা মোটেও তা নিয়ে নয়, বরং দেশের শিল্পী-কলাকুশলীরা যখন একটি একক প্লাটফর্মে একত্র হতে পেরেছেন, তখন তাদের কেমন দাবি তোলার কথা ছিল, কীভাবে সেই দাবি আদায় করা যাবে এবং বাংলাদেশে টেলিভিশন নীতিমালা কেমন হওয়া উচিত, বিজ্ঞাপন নীতিমালা কেমন হওয়া চাই, এসব নিয়েই আমি এখানে খোলামেলা আলোচনা করতে চাই। আপনিও আপনার মতামত যুক্ত করতে পারেন।
১. বাংলা ডাবিং করা সিরিয়াল আপনাদের পেটে লাথি মারছে!
আমরা এখন একুশ শতকে বসবাস করছি। যেখানে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি বিদ্যমান। নাটক বা সিনেমা বা সিরিয়াল বিশ্বের কোথায় কে কেমন নির্মাণ করছে, কতটা সুন্দরভাবে নির্মাণ করছে, কতটা দর্শক টানার মত সেই নির্মাণে ভেলকি আছে, তা দেখার জন্য এখন আর আমরা মোটেও সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের যুগে আটকে নেই। আপনার হাতে কম্পিউটারের মাউস আছে, আপনার হাতে টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোল আছে। আপনি ইচ্ছে করলেই অনায়াসে সেই সব ভালো ভালো নাটক, সিনেমা বা সিরিয়াল বা অন্য কোনো নির্মিত অনুষ্ঠান দেখতে পাচ্ছেন। দর্শক এখন আর আপনার নির্দিষ্ট করে দেওয়া ফরমেটে আটকে নাই। এই বাস্তবতা যদি আপনারা বুঝতে পারেন, তাহলে বাংলা ডাবিং করা সিরিয়াল যে আপনাদের পেটে লাথি মারছে না, সেই মর্মার্থ হয়তো আপনারা উদ্ধার করতে সামর্থ্য হবেন।
২. ভালো অনুষ্ঠান/নাটক/সিনেমা/সিরিয়াল বানান দর্শক আপনাদের বানানো জিনিস দেখবে!
দর্শক কেন আপনাদের বানানো অনুষ্ঠান/নাটক/সিনেমা/সিরিয়াল দেখবে, সেই বিষয়ে আগে আপনারা একমত হতে পেরেছেন কী? দর্শক তো আর সারাদিন বস্তাপচা জিনিস দেখে মন ভরাবে না। ভাড়ামো কে কতক্ষণ দেখতে পারে? নব্বইয়ের দশকেও দর্শক একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা দলবেধে মুখিয়ে দেখতো। কেন? কারণ সেই নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা বা অনুষ্ঠানে দর্শক টানার মত যথেষ্ঠ মালমশলা থাকতো। এখন আপনারা নকল করছেন, কিন্তু সেই নকলেও কোনো কোয়ালিটি নেই। এখন আপনারা আইডিয়া চুরি করছেন, সেই আইডিয়া দর্শক হয়তো আগেই অন্য মাধ্যমে অরিজিনাল ভার্সান দেখে ফেলেছে। এখন আপনারাই বলুন, দর্শক টানতে না পারার আপনাদের এই ব্যর্থতা কেন এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত ইনিয়ে বিনিয়ে অন্যকিছু বলে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাইছেন? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আপনারা ভালো অনুষ্ঠান/নাটক/সিনেমা/সিরিয়াল বানান, দর্শক আবারো আপনাদের নির্মাণ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে।
৩. বাজেট নাই বাহানা দিয়ে দুনিয়া চলে না!
আপনি যখন ভালো একটি নাটক বা সিনেমা বা সিরিয়াল বানাবেন, তখন বাজেট নাই, এই ফর্মুলা বা এই বাহানা কোনো কাজের কথা নয়। আপনার ভালো জিনিসটি বানাতে কী কী লাগবে, যার প্রধান শক্তি অবশ্যই বাজেট, তো আপনি বাজেট কীভাবে বাড়িয়ে ওই কাজটি করবেন, সেটিও আপনার যোগ্যতা। বাজেট না বাড়িয়ে নামকা ওয়াস্তে সস্তা পচা রসোগোল্লা বাজারে ছেড়ে দিলে, ওটা ফ্রি খাওয়াতে চাইলেও কেউ নেবে না। এটাই বাস্তবতা। আপনি যা বানান, কোয়ালিটি জিনিস বানাতে হবে। কোয়ালিটি জিনিস বানাতে আপনাকে যতটুকু বাজেট দরকার, ততটুকু বাজেট পাওয়ার জন্য আপনাকেই দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। বাংলাদেশে এখন অনেক টাকাওয়ালা লোক আছেন। অনেক কিছুতে তারা ইনভেস্ট করছেন। আপনার বানানো জিনিসের যদি সেই কোয়ালিটি থাকে, সেই পরিমাণ দর্শক যদি এটা প্রাণ থেকে গ্রহণ করে, তাহলে আপনার বাজেট সমস্যা সমাধানের জন্যও অনেকে আছেন। তাদেরকে আপনার আইডিয়া বোঝাতে হবে। সেই আইডিয়া থেকে ব্যবসা না আসলে তো ওই লোক ইনভেস্ট করবে না। সুতরাং বাজেট নাই বাহানাটি দর্শক টানার জন্য একটি খোঁড়া যুক্তি।
৪. বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মিত ভালো ভালো নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল, অনুষ্ঠান বাংলাদেশে উন্মুক্ত হোক!
আমি চাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মিত ভালো ভালো নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল, অনুষ্ঠান বাংলাদেশে উন্মুক্ত হোক। সরকার খোঁজখবর নিয়ে সেসব জিনিস বাংলাদেশের দর্শকদের দেখানোর সুযোগ করুক। প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাক। এটা আমি চাই। কারণ, আমি ভালো জিনিস হলে তা দেখার পক্ষে। ভালো একটি বই যেমন যে কোনো মূল্যে আমি পড়তে চাই। তেমনি ভালো একটি সিনেমা আমি যে কোনো উপায়ে দেখার পক্ষে। খারাপ বই খারাপ সিনেমা দিয়ে বাজার সয়লাব করে সেগুলো যেমন আমাকে দিয়ে পড়ানো যাবে না, আমাকে দিয়ে দেখানো যাবে না, তেমনি অন্য দর্শকের বেলায়ও এই যুক্তিটা কাজ করার কথা। আমাদের দেশে বরং এটি চালু হলে, আমাদের নির্মাণের মান ধীরে ধীরে বাড়বে। কোয়ালিটিও ধীরে ধীরে বাড়বে। মানসম্পন্ন কিছু না করেই আপনারা রাতারাতি মাত করে দিতে চান। সেভাবে দুনিয়ায় কিছু হয় নারে পাগল!
৫. মেধাবীদের খুঁজে বের করুন!
দেশে যে কাজটিতে যে দক্ষ, তাকে কেবল সেই কাজের জন্য ডাকুন। সুনির্দিষ্ট সেই কাজে যিনি সবচেয়ে মেধাবী, সম্ভব হলে তাকেই সেই কাজটির দায়িত্ব দিন। দেখবেন ধীরে ধীরে একটা কোয়ালিটি গ্রো করবে। আমাদের প্রাকটিস বরং উল্টো। গোটা জীবন লেখালেখি করেনি, সে হতে চায় লেখক! সারাজীবন অভিনয়ের অ-আ-ক-খ কিচ্ছু শেখেনি, সে হতে চায় অভিনয় শিল্পী। সারাজীবন গানের একটা বোল শেখেনি, জীবনে একবারও রেওয়াজ করেনি, সে হতে চায় শিল্পী! এই যে অনিয়মে আমরা অভ্যস্থ হচ্ছি, মূল সমস্যাটা এরাই তৈরি করছে। আপনাদের অজান্তে এরাই সমাজের জন্য কোয়ালিটি জিনিস দেবার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। আবার যিনি ভালো অভিনয় করছেন, তিনি বইও লেখেন! যিনি প্রডিউসার তারও একটা গল্প নাকি বানাতে হবে! যিনি নৃত্যশিল্পী তিনিও নাকি নাটকের/সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখেন! এইভাবে জোড়াতালি দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে আপনি পাল্লা দেবেন কীভাবে? সুতরাং যিনি যে কাজে দক্ষ, যিনি মেধাবী, কেবল তাকে দিয়ে সেই কাজটি করান, দেখবেন কোয়ালিটি জিনিস দাঁড়াবে।
৬. টেলিভিশন নীতিমালা ঠিক করুন!
দেশের টেলিভিশন নীতিমালা কী হবে, সেটা সবাই বসে ঠিক করুন। আপনাদের সেই প্রস্তাবনা সরকারকে বাস্তাবায়নের জন্য দাবি জানান। সরকারি টেলিভিশন ও প্রাইভেট টেলিভিশন কে কী কী সুযোগ ভোগ করবে, সেসব ঠিক করুন। সেভাবে সেই নীতিমালা সরকারকে বাস্তবায়নে বাধ্য করুন। দেখবেন অনেক কিছু অটোমেটিক লাইনে আসবে। আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন বিষয়ে অডিশন দেবার রেওয়াজ ছিল। সারা দেশে কয় জন ভালো তবলা বাদক, বা কয়জন পিয়ানো প্লেয়ার আছেন, তা হান্ট করার একটা ব্যাপার ছিল। এখন বেসরকারি টেলিভিশনের যুগে আজ যারে রাস্তায় দেখি ঠিকমত গুছিয়ে কথা বলতে পারে না, পড়াশুনা নাই, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান নাই, কাল সে টকশোতে গিয়ে বড় তারকা বনে যাচ্ছেন! এই যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা, এটা থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়, সে বিষয়গুলো টেলিভিশন নীতিমালায় যুক্ত করুন। জগাখিচুরি দিয়ে তো আর জগত চলবে না। চললেও তা দিয়ে কোয়ালিটি এনসিউর করা যাবে না।
৭. বিজ্ঞাপন নীতিমালা ঠিক করুন!
বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন এখন সন্ত্রাসের পর্যায়ে চলে গেছে। বিজ্ঞাপনেরও কোয়ালিটি বলে একটা কথা আছে! সেই বিষয়টি কেউ দেখভাল করছে না। একটি অনুষ্ঠানে কতটুকু সময় বিজ্ঞাপনের জন্য থাকা উচিত, দর্শক বিরক্ত হবে না, অথচ বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে, সেই বিষয়ে কঠোর নীতিমালা তৈরি করুন। আপনি ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠানে ১৮ মিনিট নানান কিসিমের অখাদ্য বিজ্ঞাপন দিয়ে ভরালে, সেই অনুষ্ঠান যত কোয়ালিটি হোক, তা দেখার জন্য দর্শকের ধৈর্য্য থাকার কথা নয়। প্রাইভেট টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন কখন কতটুকু কীভাবে দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে কঠোর নীতিমালা থাকা জরুরি। দর্শককে জোর করে আপনি বিজ্ঞাপন দিয়ে ধর্ষন করতে পারেন না। এখন দেশের প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন সন্ত্রাসের নামে দর্শককে ধর্ষন করছে। এটা বন্ধ করার উপায় বের করুন। এজন্য বিজ্ঞাপন নীতিমালা ঠিক করুন, আর তা কঠোরভাবে পালন করার অঙ্গিকার করুন।
৮. বিশেষায়িত টেলিভিশনের কথা ভাবুন!
দেশে এখন অনেকগুলো প্রাইভেট টেলিভিশন। সবাই সবকিছু দেখায়। কোনোটার কোনো বিশেষ আয়োজন নেই। এভাবে প্রাইভেট টেলিভিশন চালানো মোটেও যৌক্তিক কিনা সেটা ভাবতে হবে। এজন্য বিশেষায়িত টেলিভিশনের কথা ভাবুন। যেটি স্পোর্টস চ্যানেল হবে, সেটিকে সংবাদ, নাটক, টকশো দেখানোর কোনো মানে নাই। হ্যা, সেটি স্পোর্টস বিষয়ক টকশো, স্পোর্টস বিষয়ক সংবাদ প্রচার করবে। মোটেও গণসংবাদ বা গণনাটক বা গণটকশো নয়। যেটি মিউজিক চ্যানেল হবে, সেটি কেবল মিউজিক বিষয়ক অনুষ্ঠান বানাবে। যেটি শিশুদের চ্যানেল হবে, সেটি কেবল শিশুদের বিষয় দেখাবে। যেটি নিউজ চ্যানেল হবে, সেটি কেবল নিউজ বিষয়ক অনুষ্ঠান বানাবে। যেটি এডুকেশান চ্যানেল হবে, সেটি কেবল শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান বানাবে। যেটি ড্রামা চ্যানেল হবে, সেটি কেবল ড্রামা বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখাবে। এভাবে প্রাইভেট চ্যানেলে একটা শৃংখলা আনাটা খুব জরুরি। সব প্রাইভেট চ্যানেল একই জিনিসের কপিপেস্ট করলে, তা দর্শক কেন গিলবে? মনে রাখতে হবে- টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলটি কিন্তু মাননীয় দর্শকের হাতে। সুতরাং আগে অডিয়েন্স ঠিক করেন, পরে সেই বিষয়ে অনুষ্ঠান, সেই বিষয়ের প্রাইভেট চ্যানেল করুন। এতে ধীরে ধীরে একটা শৃংখলা আসবে।
৯. প্রতিটি অনুষ্ঠান, নাটক, সিরিয়ালের মজুরির গ্রেড করুন!
টেলিভিশনের প্রতিটি অনুষ্ঠান, নাটক, সিরিয়াল বা প্রোগ্রামের জন্য গ্রেড অনুযায়ী মজুরি ঠিক করুন। যার অনুষ্ঠান যে গ্রেডের, তাকে সেই গ্রেডের ন্যায্যমূল্যটা পরিশোধ করুন। কোন গ্রেডের কী কোয়ালিটি তা আগেই ঠিক করা হোক। কেউ যদি কোয়ালিটি ফল করে, তার গ্রেডও ফল করার ব্যবস্থা রাখুন। কেউ যদি কোয়ালিটিতে চমক দিতে পারে, তার জন্য আপার গ্রেডে যাবার সুযোগ রাখুন। একটা শৃংখলা আপনাকে মানতেই হবে। নইলে একজনের নাটক তিন লাখ টাকায় যাবে। আবার আরেকজনের নাটক ছয় মাসেও চ্যানেল থেকে টাকা আদায় হবে না। এভাবে চলতে পারে না। একটা গ্রেড সিস্টেম থাকলে যিনি যে অনুষ্ঠান বা নাটক বানাবেন, তিনি আগেই জানবেন, তিনি কোন গ্রেডের। তিনি তখন সেই গ্রেডের মজুরি পাবেন। এটা শিল্পী কলাকুশলীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
১০. নতুন আইডিয়া নতুন দর্শক!
আমাদের প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো বিভিন্ন ধরনের নির্মাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া কল করতে পারেন। কারো আইডিয়া কেউ চুরি করবে না, এবিষয়ে কঠোর শৃংখলা পালন করার মাধ্যমে ভালো ভালো আইডিয়া সংগ্রহ করে, চ্যানেলগুলো সেই আইডিয়া অনুযায়ী নিজেরাও অনুষ্ঠান বানাতে পারে। যেগলো দর্শক দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে। দর্শককে সেই আইডিয়া বিষয়ে অবগত করানোর নানান মাধ্যম আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। নতুন আইডিয়া নতুন দর্শক টানতে চ্যানেলগুলোকে দারুণ চমক দেখতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এতে নির্মাতাদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ যেমন সৃষ্টি হবে, তেমনি নতুন নতুন অনুষ্ঠান দর্শকদের জন্য নতুন বিনোদনের খোরাক যোগাবে।
শেষকথ:
রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করে রবীন্দ্রনাথ পড়া ঠেকানো যায়নি। তেমনি সুলতান সুলেমান বা ম্যাকগাইভার বন্ধ করে দর্শককে ধরে রাখা যাবে না। দর্শক ধরে রাখতে হলে নিজেদের বুদ্ধি খাটিয়ে কোয়ালিটি জিনিস দেখানোর দিকেই মনযোগী হতে হবে। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে অমুক সিরিয়াল বা তমুক জিনিসটি বন্ধ রেখে পেটের লাথি ঠেকানো যাবে না। দেশে বিশেষায়িত টেলিভিশন যতদিন গড়ে না উঠবে, কোয়ালিটি অনুষ্ঠান নির্মাণে যতদিন মনযোগী হওয়া না যাবে, মেধাবীদের দিয়ে ভালো গল্পের নাটক যতদিন বানানো না যাবে, একটি যুগোপযুগী টেলিভিশন নীতিমালা যতদিন তৈরি করা না যাবে, একটি কঠোর বিজ্ঞাপন নীতিমালা যতদিন চ্যানেলগুলো অনুসরণ না করবে, ততদিন এমন লোকদেখানো আন্দোলন করে কোনো ফল আসবে না। দেশের শিল্পী-কলাকুশলী-টেলিভিশনের মালিক, প্রযোজক, নির্মাতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যতদিন বিষয়টি নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা পরিত্যাগ না করবে, ততদিন আন্দোলনের নামে শহীদ মিনারে কমেডি শো করে কোনো লাভ হবে না। বরং তা কেবল নতুন তামাশা তৈরি করবে। দর্শককে কিছু দেখানোর জন্য তেমন আকর্ষনীয় নতুন জিনিস বানাতে হবে। যার অন্য কোনো বিকল্প নাই।
দেশের সকল শিল্পী-কলাকুশলী-টেলিভিশনের মালিক, প্রযোজক, নির্মাতাসহ সবাইকে তাই আগামীতে আকাশ সংস্কৃতি কোনদিকে যাচ্ছে, সে অনুযায়ী একটি যুগপোযুগী কৌশল নিয়েই আগাতে হবে। দেশের অন্য সকল কাঠামোর মত জগাখিচুরি সিস্টেম দিয়ে অন্তত টেলিভিশনের দর্শক টানা যাবে না। কারণ রিমোট কন্ট্রোল করেন যেখানে স্বয়ং মাননীয় দর্শকবৃন্দ! অতএব সাধু সাবধান।
............................
৩ ডিসেম্বর ২০১৬
©somewhere in net ltd.