নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ ছিল আমার কাজিন (চাচাতো বোন) আদুরী'র বিয়ে। মুন্সীগঞ্জের ছেলে তনয়ের সাথে আদুরী'র বিয়ে হলো। আজ থেকে ওরা একটি নতুন জার্নি শুরু করলো। দু'জনের জীবনেই এই জার্নিটা নতুন। দু'জনকেই এই নতুন জার্নিতে পরস্পরকে চেনার মাধ্যমে, জানার মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে, ভালোবাসার মাধ্যমে, পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে ধৈর্যের সঙ্গে একটা যৌথ জীবন এগিয়ে নেবার কমিটমেন্ট থাকার জন্য আমার পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকলো। আশির্বাদ করি, তোমারা জীবনে সুখি হও। তোমাদের যৌথ জীবন আনন্দময় হোক। তোমাদের মঙ্গল হোক।
আমার দাদু'র ছিলো দুই বউ। দাদু'র সংসারে ছিলো চার ছেলে ও আট মেয়ে। আমার বাবা সবার বড়। দাদু'র বড় সংসারে বাবাসহ তারা তিন ভাই ও পাঁচ বোন। আর দাদু'র ছোট সংসারে আমার এক কাকা ও তিন ফুফু। আদুরী'র বাবা হলো আমার মেজে কাকা। আমার বাবা, বড় ফুফু, মেজে ফুফু, সেজে ফুফু, সেজে কাকা ও নোয়া ফুফু না ফেরার দেশে চলে গেছেন। মেজে কাকা ও ছোট কাকাসহ এখনো আমার চার ফুফু জীবিত আছেন।
মেজে কাকা'র দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সবার ছোট হলো আফসানা শামীম আদুরী। আমাদের জেনারেশানে কাজিনদের মধ্যে আদুরী সবার ছোট। তাই ওর অফিশিয়াল নাম আফসানা শামীম হলেও ফ্যামিলি নেইম আদুরী। পরিবারে সবার ছোট বলে ও আদরও একটু বেশি পেয়েছে। যে কারণে ওর নামও আদুরী। আদুরী একজন আর্কিটেক্ট। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থ্যাপত্য বিদ্যায় পড়াশুনে শেষে আদুরী এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।
আমি মূলত পরিবার থেকে বাইরে এক ধরনের চৈতন্য জীবনযাপন করি। লেখালেখি করি। চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত। বলতে গেলে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে পরিবার থেকে অটোমেটিক একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে আমার। যার প্রধান কারণ, আমার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে পরিবারের অন্য কারোর প্রচলিত চিন্তা-মানসিকতার মধ্যে রাতদিনের পার্থক্য। পরিবারের ভাইবোনদের বিয়েও আমাকে ছাড়া হয়েছে। আমাকে না জানিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত হয়েছে, হচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, হচ্ছে। আমি তাদের অনেককে এখন আর চিনি না। নেক্সট জেনারেশানের সঙ্গে আমার দূরত্ব যে কারণে আরো বেশি। সেই অর্থে আমি মোটেও পারিবারিক-সামাজিক প্রাণী নই। পরিবারের বাইরে আমার সম-মানসিকতার বন্ধুদের নিয়েই আমার জগত ও পরিবার!
আদুরী'র বিয়ে উপলক্ষ্যে মেজে কাকা ঢাকায় এসেই আমাকে ফোন করেছিলেন। কাকাকে কথা দিয়েছিলাম সময়সুযোগ করতে পারলে আদুরী'র বিয়েতে আমি যাবো। দুই বছর আগে কাকীমা (আদুরী'র মা) মারা গেছেন। কাকীমা'র সাথে আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি। কাকীমা সবসময় গর্ব করে বলতেন, আমি তার সবচেয়ে আদরের ছেলে। কাকীমা বেঁচে থাকলে আজ আদুরী'র বিয়ের সময় খুব ভালো লাগতো তার। আজকে পরিবারের অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। অনেক আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেই দীর্ঘদিন পরে দেখা হয়েছে। আদুরী'র বিয়ে উপলক্ষ্যে দীর্ঘদিন পরে এটা পরিবারের সঙ্গে আমার এক ধরনের গেটটুগেদার। এই ফেমিলি গেটটুগেদারে আমি সবচেয়ে বেশি মিস করেছি কাকীমাকে। কাকীমা সত্যি সত্যিই আমাকে খুব স্নেহ করতেন।
দীর্ঘদিন পরে বলাই মামা, মামী, তাদের মেয়ে ঐশী (ঐশী খুলনায় একটি কলেজে বিবিএ পড়ছে এখন), হিমু মামা, বাসু খালা, মিনু খালার মেয়ে ডলি'র সঙ্গে দেখা। আমার সবচেয়ে বেশি খাতির ছিলো নীলু মামার সঙ্গে। নীলু মামা আসেনি। ঐশীকে আজ প্রথম দেখলাম। ১৯৮৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর খুলনায় আর্মি কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে বাগেরহাট বলাই মামার বিয়েতে অ্যাটেন্ট করেছিলাম। সেটা ২৮ বছর আগের ঘটনা। তারপর বলাই মামা-মামী'র সাথে আজকে আবার দেখা হলো।
আদুরী'র বড় হচ্ছে পপি। রোকসানা শামীম পপি। ১৯৯৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পরীবাগের হোয়াং হো হোটেলে পপি'র বিয়ে হয়েছিল। পপি'র বিয়েতেও আমি উপস্থিত ছিলাম। ২১ বছর পরে আজ পপি আর পপি'র বর সিমুর সঙ্গে দেখা হলো। ওদের তিন ছেলে। পপি'র বড় ছেলে তো লম্বায় আমাকে ছাড়িয়ে গেছে!
মেজে কাকার পরিবারে চাচতো ভাইবোনদের মধ্যে মামুন সবার বড়। মামুনের ঢাকা চিটাগাং যাতায়াত থাকায় আর মামুন ও আমি একই ক্লাশে পড়তাম বলেই, মামুনের সাথেই আমার যোগাযোগটা সবার চেয়ে বেশি। আজ মামুনের বউ আর দুই ছেলের সাথেও দেখা হলো। মামুনের পরে হলো রোজী, তারপর পপি, তারপর বাপ্পী, তারপর টপি আর সবার ছোট আদুরী। রোজী আর টপি আসতে পারেনি। বাপ্পী'র সাথেও অনেক দিন পরে দেখা হলো। বাপ্পী'র বউ সুমি'র সাথেও দীর্ঘদিন পরে দেখা। চট্টগ্রামে সুমি'র বাবার বাড়িতে কোনো এক ঈদের সময় বেড়াতে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। বাপ্পী আর সুমি'র তিন ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে অহোনা তো অনেক লম্বা হয়ে গেছে। ছোট দুইটার নাম বলতে পারবো না।
আদুরী ওর নতুন বর তনয়ের সাথে পরিচয় করানোর সময়ে বলেছে, ভাইয়া তুমি আশায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আমিও তোমার জীবনের এই বিশেষ দিনে উপস্থিত থাকতে পরে খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের নতুন জীবন আনন্দময় হোক, তোমাদের চলার পথ আরো উপভোগ্য হোক। জগতে তোমাদের কীর্তি সবার নজর কারুক। এই আশির্বাদ করি।
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পারিবারিক ঘটনা মনে পড়ে গেল। শান্তিনিকেতনে তখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় গুরুজির পায়ে তেল মালিশ করা হতো। তো একদিন কবি'র দুই নাতনি গীতা ও দীপ্তি গুরুজির পায়ে তেল মালিশের দাবি নিয়ে কবি'র কাছে হাজির হলেন। কিন্তু কবি'র এতে বেজায় আপত্তি। গুরুজি রসিকতা করে বললেন, তোরা সব আধুনিকার দল, আধুনিকরা যে কারুর পা টিপতে চায়, তা তো জানতুম না। তাছাড়া তোদের সব শৌখিন পোশাক, যদি ওতে তেল লেগে যায়? তখন হয়তো এদেশে কাপড় কাচাতেই পারবি না, কাপড় কাচাতে হয়তো প্যারিস পাঠাতে হবে।
কিন্তু গুরুজির নিষেধ সত্ত্বেও হুট করে দীপ্তি কবি'র হাত ধরতেই কবি বললেন, পাণি-পীড়ন তাহলে করবেই? তা করো। ততক্ষণে গীতা যখন পা টিপতে শুরু করলো, তখন কবি বললেন, ও, এইবার পা নিপীড়নও করবে বুঝি? তা করো। কিন্তু খেয়াল রেখো, তোমাদের শৌখিন পোষাকে যেন তেল না লাগে! (রবীন্দ্রনাথের ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় মেয়ে সরোজাসুন্দরী দেবী'র দুই মেয়ে হলো গীতা ও দীপ্তি)।
.................................
২৪ ডিসেম্বর ২০১৬
২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৭
আশফাক ওশান বলেছেন: শুভ কমনা রইলো
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
" তাই ওর অফিশিয়াল নাম আফসানা শামীম হলেও ফ্যামিলি নেইম আদুরী।
-"আদুরী ", সম্ভবত: নিক নেইম।
আদুরী সুখী হোক, মন থেকে এই কামনা।
বাংলার মেয়েরা ছেলেদের থেকে বেশী ভদ্র, বেশী শিক্ষিত, বেশী সংসারী; এটা অনেক সমস্যার সৃস্টি করছে, ছেলেরা স্ত্রীকে পরিবারে সঠিক স্হান দিতে পারেনি আজও।