নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কীভাবে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব বাংলা একাডেমিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন!!!

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৪

বাংলা একাডেমি আইন ২০১৩ (২০১৩ সালের ৩৩ নং আইন) এর ২৩ ধারায় বাংলা একাডেমি'র নির্বাহী পরিষদ কীভাবে গঠিত হবে, তার দিক নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
২৩। (১) একাডেমির একটি নির্বাহী পরিষদ থাকিবে, যাহা নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা :-
(ক) মহাপরিচালক, পদাধিকারবলে, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
(খ) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(গ) অর্থবিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ঘ) কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, ভাষাতত্ত্ব ও ইংরেজি বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদ হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন করিয়া সর্বমোট চারজন অধ্যাপক;
(ঙ) সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও একজন বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ;
(চ) নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক মনোনীত একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও একজন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী;
(ছ) ফেলোগণ কর্তৃক নির্বাচিত তিনজন ফেলো;
(জ) সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত চারজন সদস্য;
(ঝ) সচিব, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।

অর্থ্যাৎ, বাংলা একাডেমি আইনে নির্বাহী পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এই নির্বাহী পরিষদের পদাধিকার বলে সভাপাতি। এবার চলুন একই আইনের ২৬ ধারায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়টি পড়া যাক। সেখানে বলা হয়েছে-
২৬। (১) একাডেমির একজন মহাপরিচালক থাকিবেন।
(২) বাংলাদেশের নাগরিক এইরূপ কোনো ফেলো অথবা প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বা গবেষকদের মধ্য হইতে সরকার মহাপরিচালক নিয়োগ করিবে এবং তাহার চাকুরির শর্তাবলি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হইবে।
(৩) মহাপরিচালক তাহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন :
তবে শর্ত থাকে যে, একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না।
(৪) সরকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে মহাপরিচালক স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
(৫) মহাপরিচালকের পদ শূন্য হইলে, বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মহাপরিচালক তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা মহাপরিচালক পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত, সচিব অস্থায়ীভাবে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন।

বাংলা একাডেমি আইনের ২৬ ধারার ২৬(৩) অনুযায়ী, একজন মহাপরিচালকের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে শর্ত থাকে যে, একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না।

এবার আসুন, জনাব শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমিতে কখন মহাপরিচালকের দায়িত্ব কখন নিয়েছেন একটু দেখে আসি। ২০০৯ সালের ২৪ মে জনাব শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুসারে, পরপর একই ব্যক্তি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হতে পারবেন না। সেই হিসেবে, জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের মহাপরিচালকের মেয়দ শেষ হবার কথা ২০১২ সালের ২৩ মে।

কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তখন বাংলা একাডেমি আইনের সংশোধন করাতে সরকারকে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিয়েছিলেন। নতুন আইনে একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না শর্ত জুড়ে দিয়ে তিনি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দ্বিতীয় মেয়াদে মহাপরিচালক হিসেবে থেকে যান।

সেই হিসেবে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের দ্বিতীয় মেয়াদের শর্ত পূরণ হয়েছে ২০১৫ সালের ২৩ মে। বাংলা একাডেমি আইন ২০১৩ অনুসারে, একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের অধিক নিয়োগ লাভ করিবেন না বলে যে শর্ত রয়েছে, সেটি ভঙ্গ করে তিনি তৃতীয় মেয়াদে আবার বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। যা আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

বাংলা একাডেমির ৬১ বছরের ইতিহাসে কোনো মহাপরিচালকের এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার কোনো রেকর্ড নাই।
পরিবর্তিত বাংলা একাডেমি আইন অনুসারে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব ২০১৫ সালের ২৩ মে'র পর থেকে বাংলা একাডেমিতে অবৈধভাবে মহাপরিচালক হিসেবে আছেন।

মজার বিষয় হলো, সরকারকে নানান কিসিমের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি তৃতীয় মেয়াদে মহাপরিচালকের পদ লাভ করেছিলেন ১৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে। অর্থ্যাৎ জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবে বাংলা একাডেমিতে তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ার আগে ২৩ মে থেকে ১৫ জুলাই (৫৩ দিন) পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ক্ষমতায় ছিলেন। তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ লাভের পর জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের তৃতীয় মেয়াদ কার্যত শেষ হবে আগামী ২০১৮ সালের ২৩ মে।

কীভাবে জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব বাংলা একাডেমিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তার নমুনা বুঝতে হলে বর্তমান নির্বাহী পরিষদের দিকে তাকাতে হবে। বাংলা একাডেমি আইনে বলা আছে নির্বা্হী পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১৯ জন। কিন্তু বাংলা একাডেমির বর্তমান নির্বাহী পরিষদে মোট সদস্য সংখ্যা মাত্র ১২ জন। ৭ জন সদস্য কম রয়েছে। কেন ৭ জন সদস্য নির্বাহী পরিষদে কম থাকবে? তার ব্যাখ্যা বোঝার জন্য জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের চতুরপনা বুঝতে হবে!

বাংলা একডেমির বর্তমান নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা হলেন- ১. জনাব শামসুজ্জামান খান (মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি), ২. অধ্যাপক ড. অনুপম সেন (নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৩. জনাব সেলিনা হোসেন (নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৪. ড. বেগম আকতার কামাল (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৫. অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৬. অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৭. জনাব সুব্রত বড়ুয়া (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৮. অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ৯. এ.টি.এম. জাকারিয়া স্বপন (সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ১০. জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম (সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য), ১১. শেখ মেহাম্মদ সলীম উল্লাহ্ (অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য) ও ১২. জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (সচিব, বাংলা একাডেমি, সদস্য-সচিব)।

এবার আসুন বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য ১৯ জনের পরিবর্তে মাত্র ১২ জন কেন, তার ব্যাখ্যা জানার আগে মহাপরিচালককে অপসারণ করার আইনগত বিষয়টি একটু দেখে আসি। বাংলা একাডেমি আইনের ২৮ ধারায় কীভাবে মহাপরিচালককে অপসারণ করা যাবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
২৮। (১) এই আইন লঙ্ঘন বা গুরুতর অনিয়ম বা অসদাচরণের অভিযোগে নির্বাহী পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য লিখিতভাবে একাডেমির সভাপতির নিকট মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করিলে, একাডেমির সভাপতি উক্ত বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ করিবেন এবং সরকার তাঁহাকে অপসারণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার মহাপরিচালককে তাঁহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবে, যদি তিনি-
(ক) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হন;
(খ) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বীয় দায়িত্ব-বহির্ভূত অন্য কোনো পদে নিয়োজিত হন;
(গ) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হন; বা
(ঘ) নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।

এবার একটু খেয়াল করে দেখুন, জনাব শামসুজ্জামান খান কীভাবে নিজের অপসারণকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রহিত করে রেখেছেন। নির্বাহী পরিষদের ১৯ সদস্যের যদি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য লিখিতভাবে একাডেমির সভাপতির কাছে মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করেন, তাহলে সভাপতি তা সরকারকে অবগত করবেন। ১৯ সদস্যের দুই তৃতীয়াংশ হলো ন্যূনতম ১৩ জন সদস্য। কিন্তু বর্তমান নির্বাহী পরিষদে মোট সদস্য মাত্র ১২ জন। অর্থ্যাৎ ১২ জনের দুই তৃতীয়াংশ মানে হলো ন্যূনতম ৮ জন। তার মানে হলো বর্তমান নির্বাহী পরিষদের ৫ জন সদস্য জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবকে সমর্থন দিলে তাকে আর অপসারণ করা সম্ভব নয়। তিনি ঠিক সেই সুযোগটিরই অপব্যবহার করছেন। নির্বাহী পরিষদের ৫ জন সদস্যকে ম্যানেজ করা জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেবের পক্ষে তেমন কঠিন কোনো ব্যাপার না। দুনিয়া যেখানে চলে রহস্যময় ইসারায়!

সুতরাং জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব বাংলা একাডেমিতে এক্সপায়ার হিসেবে একজন স্বৈরাচারীর চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া তার পক্ষে এত দীর্ঘ সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকার রেকর্ড একটি অযৌক্তিক ও অসম্ভব ব্যাপার। ক্ষমতার অপর নাম স্বৈরাচারী আচরণ, এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি প্রমাণিত সত্য। অতএব সাধু সাবধান।

................................
৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



রাজনৈতিক পদ, রাজাদের পক্ষের মানুষ; না হয়, উনার তো ওখানে যাবার কথা নয়।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

কত জায়গায় কতকিছু অপব্যবহার/ জোচ্চুরি... এ আর এমন কী! আপনি সমবর্তি বা পূর্ববর্তিদের দিকে তাকালেই শান্তি পাবেন মনে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.