নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
প্রাচীন গ্রিসে একটি প্রবাদ আছে- যদি কোনো জাতিকে পরাজিত করতে চাও, তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দাও। বাকি কাজটুকু ওরা নিজেরাই করে নেবে। আজ মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে। এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো আগা মাথা নাই!
১. পুলিশের বই সেন্সর নিয়ে বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক ও সচিবের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে আলাদা!
২. পুলিশের বই সেন্সর নিয়ে প্রকাশকদের বক্তব্য বিভিন্ন ধরনের।
৩. পুলিশের বই সেন্সর নিয়ে দেশের প্রধান ও প্রথম সারির কবি-লেখকদের কোনো বক্তব্য নজরে পড়লো না। নিরবতা মানে কী সমর্থন?
৪. এবারের অমর একুশে বইমেলায় সবচেয়ে ক্ষমতাবান বাংলাদেশ পুলিশ। অথচ বইমেলার ভেতরে তাদের কোনো দায়িত্ব থাকারই কথা ছিল না।
৫. অমর একুশে বইমেলাকে দুই খণ্ড করে বইমেলার আসল সৌন্দর্যকেই ধ্বংস করা হয়েছে।
৬. অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে স্টল বরাদ্দে কোনো শৃঙ্খলা নাই। গোটা জাতির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য কেবল এই মাঠে ঢু মারাই যথেষ্ট!
৭. প্রতি বছর আমরা অমর একুশে বইমেলার সময় টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করার দাবি করলেও এখন পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করার কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি! যা খুব দুঃখজনক। এই রাস্তাটি খোলা রেখে বইমেলা আয়োজন কী আদৌ সম্ভব?
৮. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অমর একুশে বইমেলা'র শুভ উদ্ভোধন করবেন। সেজন্য দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তায় নিরাপত্তাজনিত কারণে সব ধরনের হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ত্যাগ করা মাত্রই পুরো এলাকা জুড়ে আবার হকারদের পশরা বসবে। যা বইমেলার জন্য চরম ক্ষতিকর। আর হকারদের এই বসার সঙ্গে পুলিশের টুপাইস কামানোর একটি ধান্দা জড়িত। এটা নিয়ে লিখেও কখনও কাজ হয় না। আশা করি পুশিল এবার এই ব্যাপারে শুরু থেকেই কঠোর থাকবে!
৯. বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে এবার লিটলম্যাগ চত্বরে স্টল সাজ সজ্জার দায়িত্ব একাডেমি নেয়নি। ফলে বিপত্তি যা ঘটেছে, একেক লিটলম্যাগ একেক সাইজের লোগা লাগাচ্ছেন। যা সত্যি সত্যিই খুব দৃষ্টিকটু। সৌন্দর্যবোধটাই এখানে ১০০% মার খাচ্ছে!
১০. অমর একুশে বইমেলা'র এবারের আয়োজন দেখে মনে হয়েছে, একাডেমি স্পন্সরের টাকা একদম খরচ করতে চায়নি। প্রতিবছর দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত যেভাবে সাজানো হয়, গতকাল পর্যন্ত তার ছিটেফোটাও নজরে পড়েনি।
১১. ডক্টর হুমায়ুন আজাদকে বাংলা একাডেমি যাবার রাস্তায় যেখানে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল, সেখানকার কোনো চিহ্ণ নজরে পড়েনি। এমনকি জায়গাটি চিহ্ণিত করার কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে টিএসএসি'র যেখানে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে, সেখানে দেখলাম ময়লার ভাগাড়! যা সত্যি সত্যিই খুব দুঃখজনক।
১২. ৬৫ বছর আগে ১৯৫২ সালে যেখানে মাতৃভাষার দাবিতে আমার ভাইয়েরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, সেখানে ৬৫ বছর পর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর, লেখকের স্বাধীনতার উপর চোখ রাঙাচ্ছে মৌলবাদী জানোয়ার। রাষ্ট্র এখন মৌলবাদের চোখ রাঙানোকে একে একে মেনে নিচ্ছে। যার সহজ সরল অর্থ হলো- আগামীতে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ করার জন্য ওরা দাবি তুলবে।
১৩. একদিকে পাঠ্যপুস্তকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে মৌলবাদের চাষবাস হচ্ছে, অন্যদিকে লেখকদের স্বাধীনতাকে দিনদিন গুটিয়ে আনার রাষ্ট্রীয় এই চক্রান্ত দেশকে ভবিষ্যতে এক অন্ধকারের দিকেই কেবল নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা হারাবে তখন বাংলাদেশের ক্ষমতা সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধী ওই মৌলবাদী শক্তিগোষ্ঠী গ্রহণ করবে! যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেই সেদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাবে!
১৪. ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আগামীতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছে। কারো জীবন এখানে এখন আর নিরাপদ নয়। এক চরম অনিরাপদ যুগে আমরা এখন বসবাস করছি। যারা এখন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল আটছেন, তারাও কতটা নিরাপদ তা ভবিষ্যৎ-ই বলে দেবে!
১৫. অমর একুশে বইমেলায় বই সেন্সর করবে পুলিশ। বিগত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণ সাক্ষ্য দিচ্ছে, আসলে বইমেলার মাঠে মৌলবাদী গোষ্ঠী মূলত বইয়ের এই ধর্মীয় অনুভূতি খুঁজে বের করার কাজে নিরলস পরিশ্রম করেছে। প্রতিদিন তারা দলে দলে বইমেলায় ঢুকে বইয়ের কনটেন্ট খুঁজে দেখছে- কোথায় কী আছে! আর এটাকে পরোক্ষভাবে লাই দিয়েছে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। সন্দেহ নেই- এই পরিস্থিতি আগামীতে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
১৬. আগামীতে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রকাশকদের বই ছাপানোর পারমিশন মিলবে- যা আমাদের সচেতন লেখক-প্রকাশক-বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠী এখনও টের পাচ্ছে না।
১৭. অমর একুশে বইমেলাকে কতিপয় স্বার্থন্বেসী প্রকাশক নেতৃত্ব বাংলা একাডেমি'র সহযোগিতায় নিজেদের একটি ব্যবসায়িক প্লাটফরম হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তারা নিজেদের ভাগ বুঝে নেবার পর অপর প্রকাশকদের জন্য তাদের কারো কোনো সহযোগিতা নেই। নইলে জায়গা সংকুলানের অযুহাতে মেলাকে উদ্যান অংশে নেবার পরেও মেলায় কোনো শৃঙ্খলা নেই কেন?
১৮. ঢাকার বাইরে থেকে এমন কি ঢাকার একজন পাঠক বা বইপ্রেমী, তার পছন্দের বইটি খুব সহজে কীভাবে খুঁজে পাবেন, কোন প্রকাশনী'র স্টল কোথায়, সেটিকে কীভাবে খুঁজে পাবেন, তেমন কোনো দিকচিহ্ণ বইমেলা প্রাঙ্গনে চোখে পড়েনি। যা বইমেলা শুরু হবার পরে আরো জটিল আকার ধারণ করবে।
১৯. বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে যে পুকুরটি এখনো তার অস্তিত্ব জানান দেয়, সেটির রুগ্নদশা দেখলে যে কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের হৃদয় কেঁপে ওঠার কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী এই পুকুরটি নিয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেবেন? একাডেমি'র কেবল ভবন উঁচু হলেই উন্নয়ন হয় না। চোখের সামনে বাংলা একাডেমি'র পুকুরটি মারা যাচ্ছে, আর তার চারপাশে আমাদের কবি-লেখক-প্রকাশক-বইপ্রেমীরা গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আনন্দ করবে! এ বড় দৃষ্টিকটু! ওই পুকুরের রাজহাঁসগুলো'র সাঁতার কাঁটার সুযোগটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব কষ্ট অনুভব করছি। বাংলা একাডেমিকে আমি পুকুরটি নিয়ে নতুন করে ভাবার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
২০. গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে একাডেমি প্রাঙ্গনে যে অচল প্রবন্ধ/কবিতা পাঠ এখনো সচল রাখা হয়েছে, বাংলা একাডেমি কী একবারও ভাববে না যে, ওটা শোনার জন্য বইমেলার মাঠে কেউ যায় না। খামাখা প্রতি বছর প্রবন্ধ/কবিতা পাঠের এই অপচেষ্টা দেখেই বোঝা যায়- কী পরিমাণ উৎকৃষ্ট গবেষণা একাডেমিতে হচ্ছে! চোখের সামনে ঘটা ঘটনা থেকে যাদের চোখ খোলে না, তারা কী গবেষণা করববে? একাডেমি থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রকাশ পায় না কেন? বস্তাপচা প্রবন্ধ ছাপলেই একাডেমির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
২১. নিরাপত্তা জনিত কারণে অমর একুশে বইমেলায় পুলিশের সঙ্গে রোজ দেখা হবে। আশা করি, পুলিশ কবি-লেখক-প্রকাশক-বইপ্রেমীদের রুচি-পছন্দ বুঝে নিজেদের আচরণে সংযমী থাকবে। আমরা একটি নিরাপদ ও সফল অমর একুশে বইমেলা দেখতে চাই। মৌলবাদের যত চোখ রাঙানি থাকুক না কেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, লেখকের স্বাধীনতা, বই প্রকাশের স্বাধীনতা যদি রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়, সেই রাষ্ট্র বরং ধীরে ধীরে অন্ধকারকেই বরণ করবে। আর সেই দায় সরকার কিছুতেই এড়াতে পারবে না!
সবাইকে অমর একুশে বইমেলায় স্বাগতম। বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলনমেলায় আপনিও সঙ্গী হন প্রিয়জনদের নিয়ে। নিজে বই কিনুন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। কারণ একমাত্র বই-ই পারে আপনাকে জ্ঞানের আলো দিতে। কোনো জুজুর ভয় আপনাকে জ্ঞান আরোহনে বাধা হতে পারে না। সবাইকে ভাষার মাসের শুভেচ্ছা।
একুশ মানে মাথা নত না করা।
................................
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৮
অসমাপ্ত কাব্য 21 বলেছেন: যে দেশে বিশৃঙ্খলাটাই সুশৃঙ্খলতা, আইন ভঙ্গ করাটাই আইন; সেই দেশের যাত্রী আমরা !
চলেন এক্ষেত্রে নচিকেতার গানটা একটু গেয়ে নেই -"শোনো এক উল্টো দেশের উল্টো রাজার উল্টো কথা/ চলে সব..................
ঘটক ভাই, আগামী 'একুশ' তারিখ আমার জন্মদিন; কেক কাঁটার দাওয়াত রইলো
আরেকটা কথা- আমি কিন্তু একটা বিয়েও করিনি.......... ফী নিয়ে চিন্তা করবেন না
আপনার চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ ! ভালো থাকুন নিরোবধী এবং এমন সব ভালো লেখা উপহার দিন !