নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
গতকাল ছিল পহেলা ফাগুন। অথচ আমি হাবার মত ঘুমোচ্ছিলাম। বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকন ফোন করে ঘুম ভাঙালো। খোকন জিগাইলো- বসন্ত কোনদিকে আজ? কইলাম চারুকলার দিকে। জবাবে খোকন কইলো, ব্যাডা হ্যালে কী তুই খালি ঘুমাই থাকবি? চল চারুকলায় যাই। ডিউকের নাম্বারটা দে। ডিউক মানে আর্টিস্ট নাসিমুল কবির ডিউক, আমাদের বন্ধু, চারুকলার মাস্টার। ফোন খুঁজে দেখি ডিউকের নাম্বার নাই। তারপর ফোন করলাম বন্ধু কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুরকে। ঠাকুর ডিউকের নাম্বার এসএমএস করলো। আমি খোকনকে তা দিলাম। তারপর খোকন লাপাত্তা! বাট হারামজাদা কইছিল- অফিসে ঢুকব আর বের হব, তুই রেডি হ!
আমি খোকনের আশায় আশায় দুপুর পার করলাম। বসন্ত আসে না। গোসল করে লাঞ্চ করলাম। এই সময় ঠাকুরের ফোন। কই আপনারা? বললাম আমি বাসায়। খোকনের কোনো সাড়া নাই! জবাবে ঠাকুর কইলো, আমি তো শাহবাগ, চলে আসেন। তারপর আমি রওনা দিলাম। আমি শাহবাগ পৌঁছানোর পরে খোকনের ফোন। কিরে ব্যাডা, তোর কোনো খবর নাই? কী কমু দুঃখের কথা! কার খবর নাই! অথচ বসন্ত চলে যাচ্ছে!
ততক্ষণে ঠাকুর আর আমি চারুকলায় ঢুকে পড়েছি। বর্ষা বিভাবরি মানে ঠাকুরের ভাগ্নি, আমরা সবাই বর্ষার মামা, বর্ষা এবার ত্রিশালের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়েছে। গতকাল বর্ষার নবীন বরণ ছিল, আজ ক্লাশ শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাশ। বর্ষা ত্রিশাল যাবার সময় ওর ক্যামেরা নিতে ভুলে গেছে। সেজন্য বর্ষার কিছুটা মন খারাপ। বর্ষার মন ভালো করতে ঠাকুর সৈয়দ শামসুল হকের সাথে বর্ষার কিছু ছবি ফেসবুকে আপ করেছে। বর্ষা তাই দেখে কিছুটা খুশি। তো বর্ষার সেই ক্যামেরা নিয়েই ঠাকুর শাহবাগে হাজির। তারপর আমরা ইচ্ছামত ক্যামেরা চালানো শুরু করলাম। আমাদের সঙ্গে যোগ দিল সাদিক আর সাদিকের বান্ধবী। একটু পর শিল্পী শেখ শাহেদ আলী'র ফোন। আমরা চারুকলায় শুনে শাহেদ ভাই, মানে ব্যাচেলর কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। আমরা ইচ্ছামত ফটো সেশন করছি, এমন সময় খোকনও আমাদের সঙ্গে যোগ দিল।
আজকের বসন্তে ঘুরে ঘুরে ক্যামেরা চালিয়েছে ঠাকুর, খোকন আর আমি। অনেক ছবি তোলা হয়েছে। সাদিকের যে ছবি ঠাকুর তুলেছে, ওটা দেখিয়ে নাকি আগামীকাল সাদিক একটা প্রেম করবে। খুব ভালো, প্রেম করা ভালো। আমাদের মত না করা আরো ভালো। অনেকদিন পর আমরা চারুকলার ছাদে উঠলাম। ছাদের পুরো সেশনটা ক্যামেরা চালিয়েছি আমি। খোকনের যেখানে দুপুরে লাঞ্চ করানোর কথা, সেখানে ও পাঁচটার পর আমাদের টাকা পয়সা না দিয়ে রমনা পার্কে ব্যায়াম করতে চলে গেল। ও মাঝখানে অবশ্য দশ টাকার বাদাম খাওয়াইছে খোকন। আর একবার সিগারেট। খোকন চলে গেলে কী আমাদের বসন্ত থেমে যাবে? আমরা ছুটলাম বাঙলা একাডেমি।
সেকি? লিটল ম্যাগ চত্বরে কোনো কবি নাই, কোনো কবিতা প্রেমিক সুন্দরীরা নাই। অথচ পহেলা ফাগুন, এইটা কিছু হইলো। ঠাকুর আর শাহেদ ভাই কইলো, আপনার স্কোর কিন্তু কাটা যাচ্ছে। ততক্ষণে শাহেদ ভাই দুইটা ছক্কা মারছে। তবুও বাংলাদেশ ভারতের কাছে একমাত্র টেস্টে ২০৮ রানে হেরেছে। কেবল পুকুর পারে মহান কবি ও নির্মাতা দিলদার হোসেনকে পেয়ে আমরা কিছুক্ষণ দিলদার ভাই'র স্টলে আড্ডা মারলাম। তারপর বাংলাদেশের টেস্ট হারার সেই কষ্ট বুকে নিয়েই আমরা আবার টিএসসিতে আসলাম।
আমাদের ভব, মানে শিল্পী শতাব্দী ভব ওর বউ শতাব্দী সানজানারে লিটল ম্যাগ চত্বরে সব্যসাচী স্টলে বসাই দিয়ে নিজে টিএসসিতে বসে বসে আড্ডা মারতেছিল। ভবরে জিগাইলাম, তুই তো ফাঁকি মারলি, সানজানারে কইয়া দিমু। তুই এখন আমাদের কিছু খাওয়া। নইলে তোরে এখন লিটল ম্যাগে পাঠামু। তারপর ভব আমাগো সিগারু খাওয়াইলো। তখন আমাদের সঙ্গে যোগ দিল তরুণ কবি অনার্য আদিম। এবারের বইমেলায় কবি অনার্য আদিমের কবিতার বই 'শূন্যতার স্বর' প্রকাশ পেয়েছে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে। বন্ধুরা খোঁজ নিতে পারো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাগৃতি'র ১৫৮-১৫৯-১৬০ নাম্বার স্টলে। আমরা সিগারু শেষ করে আবার চারুকলায় ফিরলাম।
চারুকলায় ফিরে অনেকক্ষণ আমরা বসে বসে আড্ডা মারলাম। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, এই তিন পাগলরে কেউ প্রেম নিবেদন করলো না। তখন শাহেদ ভাই ক্ষেপে গিয়ে বলল, চলেন আবার বইমেলায় যাই। ঠাকুরের তখন খুব মন খারাপ হলো। কোনোমতে বাসায় যেতে পারলে বাঁচে। কারণ চেকে ঠাকুর বানান ভুল হওয়ায় মানে ডাবল ও'র জায়গায় ইউ লিখে দেওয়ায় টাকা তুলতে পারেনি ঠাকুর। বেচারার পকেট ফাঁকা। ঠাকুরের বাসায় যেতে লাগবে দুইশো টাকা। শাহেদ ভাই আর আমি দশ টাকা করে নিজেদের পকেটে রেখে ঠাকুরকে যা দিলাম, তাতে একশোও পুরলো না। এই টাকায় বসন্ত হয় কী করে? শাহেদ ভাই কইলো- বইমেলায় গেলে টাকা পাব। কিন্তু ঠাকুর বইমেলায় ঢুকবে না। বাসায় যাবে। পরে ঠাকুরকে চারুকলার গেট রেখে আমি আর শাহেদ ভাই বইমেলায় গেলাম।
এবার দু'জনের পকেটে মাত্র দশ দশ বিশ টাকা। কী করি। খুব ক্ষুধাও লাগছে। শাহেদ ভাইরে কইলাম, চলেন শ্রাবণে যাই। রবীনের ওইখানে অনেক লেখক মিষ্টি নিয়ে আসে। আমরা মিষ্টি আর জল খেয়ে পেটের ক্ষুধা মিটাব! প্রেমের ব্যাপার আজ বাতিল হোক। শ্রাবণে গিয়ে পেলাম বাবু ভাইকে। বিপ্লবী বাবু ভাই কইতে না কইতে মিষ্টি আর পানি এগিয়ে দিলেন। আমরা খাওয়া শেষ করতে না করতে সাদিয়া নাসরিন আপা কইলেন, ছবি তুলবে। জবাবে আমরা কইলাম- প্রতিটি ছবি তোলার জন্য আমাদের ত্রিশ টাকা দিতে হবে। আর অটোগ্রাফ নিতে চাইলে কুঁড়ি টাকা লাগবে। আর একসঙ্গে প্যাকেজ হইলে পঞ্চাশ লাগবে। শ্রাবণ প্রকাশনীর সামনে হেতিরা আমাগো লগে ছবি তুললো মাগার টেহা দিল না। বাবু'দাকে আমরা সেই নালিশ জানিয়ে ছুটবো ঠিক তখন বাচিক শিল্পী শিমুল মোস্তফা অ্যান্ড গং আমাদের চারদিকে থেকে ঘিরে ধরলো। কাহিনী কী?
আমাগো ইন্টারভিউ নিবে। আমরা কইলাম, ভাই আমরা ক্ষুধার্ত। আমাগো ইন্টারভিউ নিতে চাইলে আগে খাওয়াইতে হবে। শিমুল ভাই কইলো, তোমার ভাবী আইসা খাওয়াবে। তোমরা যা যা খাইতে চাও সব পাওনা থাকল। চলো, আমরা আড্ডার স্টাইলে কথা কই। পরে শুনলাম, ওইটা এসএ-টিভি। পাপারাজ্জিদের পাল্লায় পইরা আমাগো পেট তহোন আরো চিউ চিউ করতাছে। শাহেদ ভাই কইলো, চলেন, একাডেমির ভেতরে পুকুর পারে উন্মাদ স্টলে শাহীন ভাই আছে। ওইহানে গিয়া কিছু খামু। আমি কইলাম, চলেন বিদ্যাপ্রকাশে গিয়া হামলা করি। খোকা ভাই আমেরিকা থাকলেও নাস্তা ঠিকই থাকবে। আমরা বিদ্যাপ্রকাশে হামলা করার আগেই রুদ্র ও তূর্ণা আমাদের অ্যাটাক করলো।
কাহিনী কী? রুদ্র'র কাছে আমার একটা বই পাওনা আছে, রুদ্র কয় গণি ভাই বই দেয় না। আর ওসমান গণি মানে বইমেলার সবচেয়ে বড় মোড়ল প্রকাশক আমাদের গণি ভাই কইলেন, বই দিয়ে দিছেন! সেই জন্য ও আমার কাছে কোনো বই চাইতে পারবে না। চালাকি কইরা তাই রুদ্র ওর বউ নিয়া বইমেলায় আইছে। আমারে কয়, আপনার বুনডিরে আপনি অটোগ্রাফসহ বই দেবেন। বই ঠিকই তূর্ণাকে অটোগ্রাফসহ দিছি। রুদ্র তার ফটোও তুলছে। মাগার লস যা হবার খোকা ভাই'র হইছে। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে নাস্তা খেয়ে আমরা বাংলা একাডেমিতে ঢুকলাম। আজ মোহিত ভাই আমাদের একটা ফাঁকি দিছে। এইটা আমরা সুদে আসলে শিগ্গির উসুল করুম, কইয়া রাখলাম!
একাডেমিতে ঢুকে পুকুর পারে উন্মাদ স্টলে পাইলাম শাহীন ভাইকে। শাহীন ভাই মানে উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব। শাহীন ভাই সবসময় অনেক ভক্ত পরিবেষ্টিত থাকেন। কে যে কী খাওয়াবে, আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। তিনবার আইসক্রিম বদল কইরা আমি নিলাম কাপ আইসক্রিম আর শাহেদ ভাই লাঠি আইসক্রিম। খাওয়ার পর সাধারণত আমাগো সবার বাড়ি হয় নোয়াখালী। উন্মাদ গং থেকে বিদায় নিয়ে আমরা লিটল ম্যাগ চত্বরে ঢুকলাম।
স্বকৃত নোমান আর প্রশান্ত মৃধা গংরা মিলে সেখানে বিশাল আড্ডা জমিয়েছে। আমরা কইলাম, এবার আমাগো সিগারেট লাগবে। প্রশান্ত এবার আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস পুরস্কার পেয়েছে। প্রশান্ত'র এই অর্জনে আমরা বন্ধুরা খুব খুশি। প্রশান্তও খুশি। কারণ ইলিয়াস ভাই প্রশান্ত'র সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। প্রশান্ত কইলো, ১৭ তারিখ ওর সব কাজ শেষ হবে। তারপর যা আমাগো খাওয়াবে সিলেট থেকে আইসা খাওয়াবে। রাতেই প্রশান্ত সিলৈট যাচ্ছে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রশান্ত আমাদের বন্ধুদের পুরান ঢাকায় লাঞ্চ করায়। এবারও ২১ তারিখ প্রশান্ত ঢাকায় থাকবে। প্রশান্ত'র বউ মানে ফারজানা সিদ্দিকা রণি'র বাবা এখন সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে ভর্তি। সেই বিষয়ে খোঁজখবর নিলাম। এই সময় শাহেদ ভাই বিদায় নিলেন। কারণ শাহেদ ভাই'র স্টুডিওতে রেকর্ডিং আছে।
পরে আমরা সিগারু খাওয়া শেষ না করতেই আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন কবি ফরিদ কবির। ফরিদ ভাইকে নাকি সারাদিন ঝর্না আপু ঘরে বন্দী কইরা রাখছে। আপু যহোন বাথরুমে গেছে, সেই ফাঁকে ফরিদ ভাই পালিয়ে বইমেলায় আইসা পড়ছে। ফরিদ ভাই কইলো, সিগারেট খাবি? কইলাম, খামু। আমাদের আড্ডা যখন প্রায় জমে উঠেছে, তখন আমার বন্ধু ফিরোজ হাজির। দীর্ঘ বারো বছর পর ফিরোজের লগে দেখা। তাই ফরিদ ভাই, প্রশান্ত, নোমানদের আড্ডা ছেড়ে আমি আর ফিরোজ বেড়িয়ে পড়ি।
মাঝখানে কুশল বিনিময় ও বাসন্তি শুভেচ্ছা বিনিময় হলো নীল সাধু ও তুলা ভাবী, কবি শাফি সমুদ্র, কবি ও সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, লেখক ঋষি এস্তেবান, নাটোরের বনলতা সারা, কবি মাহবুব আলম, কবি তানিম কবিরসহ অনেকের সাথে। তারপর আমি বন্ধু ফিরোজের সঙ্গে মেলা থেকে বের হই। চারুকলার সামনে এসে আবার ঠাকুরকে পেলাম। যেখানে রেখে গেছি সেখানেই। সঙ্গে আছে ২৭ বছর আগে থিয়েটারে ঠাকুরের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা কানাডা প্রবাসী বান্ধবী ও তার স্বামী, শিল্পী সাবা অ্যান্ড গং সহ অনেকে। আমরা সেখানে আরেক দফা আড্ডা মেরে পরে বন্ধু ফিরোজের গাড়িতে চেপে আমি বাড়ির পথ ধরি। বসন্তের প্রথম দিন এভাবে গেল রাস্তায় গড়াগড়ি। আহা আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তো কার লগে যে কে প্রেম করে, কে জানে!
......................................
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
©somewhere in net ltd.