নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষন ও আমাদের গণমাধ্যম!

১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১:২৪

একটি দেশের গণমাধ্যমকে বলা হয় সেই দেশের রাষ্ট্রীয় দর্পন। গণমাধ্যম একটি দেশের শাসককে সেই দেশের অনিয়ম ও সামাজিক অবক্ষয়গুলো প্রতিরোধের জন্য আইন করতে এবং সেই আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাপশাপাশি গণমাধ্যম দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা জোরদার করতে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যম কী আসলে সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করছে? নইলে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও কেন বাংলাদেশে বিচারহীনতা এমন জোড়ালো ভাবে বাসা বাধতে পারে? সামাজিক অবক্ষয়গুলো বিচারহীনতার সুযোগে কেন বারবার ঘটতে দেখা যায়? গণমাধ্যম কী তাহলে বিচারহীনতা ও সামাজিক অবক্ষয়গুলো নিয়ে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না বা সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না? সরকারকে চোখে আঙুল দিয়ে বারবার দেখিয়ে না দেওয়ার সুযোগেই কী দুর্বৃত্তে জড়িত সরকারগুলো সেই সুযোগে জবাবদিহিতা ছাড়াই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে?

রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষনের ঘটনায় গণমাধ্যম যেন ভাসুরের নাম মুখে নিতে না হয়, এমন এক কৌশলী আচরণে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে! খোদ রাষ্ট্রের পুলিশ যেমন 'ধরি মাছ না ছুই পানি' এমন এক রহস্যময় আচরণে ব্যস্ত, তেমনি আমাদের গণমাধ্যম শ্রেফ খবর আকারে পরিবেশন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করার মধ্যে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছে! অথচ দেশের গণমাধ্যম যদি একযোগে কোনো একটি একক বিষয় নিয়ে একসঙ্গে গা ঝাড়া দিয়ে আওয়াজ তোলে, তখন খোদ সরকার বাহাদুর রাষ্ট্রের অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করার পাশাপাশি সেই বিষয়ে নজর দিতে বাধ্য হয়।

গণমাধ্যমের কিছু বাড়তি দায়িত্ব মাঝে মাঝে নিতে হয়। সরকার যখন কোনো সামাজিক বিষয়ে গা-ছাড়া ভাব দেখায় বা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে বা দুঃশাসনে মত্ত হয়, তখন গণমাধ্যম দেশকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে পারে। বিশেষ করে সামাজিক গণসচেতনতা বাড়াতে এবং সামাজিক ভাবে সবাইকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার মত গুরু দায়িত্ব পালন করতে পারে গণমাধ্যম। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের গণযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সহজ হলেও গণমাধ্যম কোথায় যেন একটু 'ভাসুরের নাম মুখে নিতে সরম লাগে' টাইপ আচরণ করছে! সরকারের কঠোর সমালোচনা তো দূরের কথা, উল্টো নিজেদের স্যোশাল-কর্পোরেট দায়িত্বের কথাটিও যেন একটু ভুলোমন নিয়ে অবহেলা করছে!

বাংলাদেশের সবগুলো গণমাধ্যম কেন একযোগে ধর্ষনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসে না? নাকি মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে যায় এমন যে কোনো কাজ যতই সামাজিক হোক না কেন, তা পালনে গণমাধ্যমের এক ধরনের গড়িমসি? তাহলে কী বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখন কেবল একটি নামমাত্র পেশা? আসল ধান্দা নিজের স্বার্থ বা আখের গোছানো? মালিকপক্ষের ইসারায় হোক আর সরকারের সঙ্গে আপোষ রফা করেই হোক না কেন, এভাবে সাংবাদিকতার মত মহান পেশাকে কলংকিত করা মোটেও রুচিসম্মত নয়! সমাজে একজন সাংবাদিকের কিছু মহান দায়িত্ব অটোমেটিক নিতে হয়, যা বর্তমানে বলতে গেলে একদম চোখেই পড়ে না।

সরকারের যে কোনো নির্দেশ পালন করতে পুলিশ বাধ্য, এমন কি কোনো বিষয়ে এক্সট্রা প্রায়োরিটি দিলে সেই বিষয়ে পুলিশ বরং আরো তৎপর থাকে। তাহলে প্রশ্ন বনানী'র ঘটনায় পুলিশ কেন এখনও ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলো? নাকি সরকারের গোপন ইচ্ছার সারমর্ম আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট অটোমেটিক রিড করতে পারে? কোনটায় দ্রুত অ্যাকশানে যেতে হবে আর কোনটায় গা-ঠিলা ভাব দেখালে হবে, এটা আমাদের মহান পুলিশ বাহিনী খুব ভালো করেই রপ্ত করতে পেরেছে! সরকারে সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পুলিশ সদা তৎপর এমন একটি মেসেজ কী তাহলে খোদ পুলিশ বাহিনী দিচ্ছে না? যা আবার স্বয়ং সরকার বাহাদুরের দুর্বলতাকে সুস্পষ্ট করছে!

এর আগে তনু ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা আমরা দেখেছি। সবসময় বিত্তবান ও টাকার শক্তির পক্ষে পুলিশের অবস্থান, এই কলংক থেকে আমাদের পুলিশ বাহিনী কেন নিজেদের মুক্ত করতে এগিয়ে আসছে না? স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে তো বিচারহীনতা ও সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে কথা বলতে হবে বা আন্দোলন করতে হবে, এমনটি হবার কথা ছিল না। বরং এতদিনে এখানে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য অবক্ষয়গুলো প্রতিরোধের মাধ্যমে সমাজকে একটা সভ্য অবস্থানে নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক মানদণ্ড আরো জোড়ালো করার কথা ছিল!

একুশ শতকেও কেন একটি রাষ্ট্রের সংবিধানে 'ধর্ম' রাখা প্রয়োজন পড়ে? একবিংশ শতকে এসেও কেন একটি দেশের বিবাহ আইনে বয়স কমানোর মত অসভ্যতা শোভা পায়? মনে রাখতে হবে, শাসক নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য যত ধরনের কৌশল ও ফন্দি করে, সেখানে সামাজিক অবক্ষয় বা বিচারহীনতার কোনো জায়গা নাই। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য ধর্মীয় অন্ধগোষ্ঠীকে খুশি রাখতে এদের জুরি নেই! পাওয়ার পলিসি, গণমাধ্যমকে কুক্ষিগত করা, পুলিশ দিয়ে শাসন কার্য চালানো, ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বাগে রাখা, এসবই প্রকৃত জনবিচ্ছিন্ন সরকারের বৈশিষ্ট্য!

একটি রাষ্ট্রের সরকার যখন সামাজিকভাবে দুর্বল সরকারে রুপান্তরিত হয়, তখন সেই সরকারের জাবাবদিহিতা যেমন থাকে না, তেমনি সেই সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিচারহীনতা পালনেই সচেষ্ট থাকে। সামাজিক দায়িত্বের পরিবর্তে তখন খোদ সরকারপক্ষ ব্যক্তির অপকর্ম বা অপচেষ্টটাকে প্রতিহত না করে বরং পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। আর সেই সুযোগে সমাজে এসব সামাজিক অনাচার ও দৃর্বৃত্ত মাথা গজিয়ে ওঠে। এটা একদিকে সরকারের ব্যর্থ শাসনের ফল, অন্যদিকে জবাবদিহিতা না করা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না করার কৌশল।

আমার তো মনে হয়, দেশের সকল গণমাধ্যম একযোগে মাত্র একসপ্তাহ ধর্ষনের মত একটি সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে সজাগ থাকলে খোদ সরকার বাহাদুর এই বিষয়ে নজর দিতে বাধ্য। সরকার বাহাদুরের নজর পড়লেই শুধু হবে না, সরকারকে সেই কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দায়িত্ব নিয়ে সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত গণমাধ্যমকে সক্রিয় থাকাটাও কর্তব্য। কেবল নতুন ইস্যু আসলেই জনগণের চোখ অন্যত্র ঘুরিয়ে দিয়ে সরকার বাহাদুর যেমন বোগল বাজিয়ে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা না করেই সুযোগে পার পেয়ে যায়, তেমনি গণমাধ্যমও নতুন বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। মাঝখানে আগের সমস্যার সমাধান আর হয় না।

আমরা চাই, দেশের গণমাধ্যম সত্যিকারের সামাজিক দায়িত্বটুকু অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করুক। সরকার বাহাদুরের সঙ্গে আপোষ না করে, কিছু কিছু বিষয়ে সত্য উচ্চারণ করাটাই গণমাধ্যমের সুস্পষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ধর্ষন একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধী শতভাগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যম দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

মনে রাখতে হবে, যিনি ধর্ষিত হলেন তার লজ্বা পাওয়ার কিছু নাই। তিনি নামমাত্র ভিকটিম। বরং খোদ ধর্ষক ও ধর্ষকের পরিবার সবসময় সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে লজ্বা পাওয়ার কথা। সামাজিকভাবে ধর্ষক ও ধর্ষকের পরিবারকে সবাই না বলুন। দেখবেন আমাদের নষ্ট গণমাধ্যমের কৌশলী অবস্থান থাকা স্বত্তেও অনেক সমস্যার অটোমেটিক সমাধান হয়ে যাবে।

বর্তমান সময়ে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ট্যুইটার সামাজিক অবক্ষয় ও বিচারহীনতা নিয়ে যতটা সরব, আমাদের গণমাধ্যম ততোটা সক্রিয় হলে, সরকার বা পুলিশ তাদের দায়িত্বে ফাঁকি দেবার সুযোগ পেত না। তাই গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ পালন করতে হবে। নইলে মালিকপক্ষকে খুশি রাখা, শাসকের হাতকে শক্তিশালী করা, পাওয়ার গেমকে আরো পাওয়ার দেওয়ার পাশাপাশি সমাজে সামাজিক অবক্ষয় ও বিচারহীনতা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা দিন দিন আরো প্রশ্নের সম্মুখে পড়বে। নিজের লেজ কেটে হলেও কোনো কোনো দায়িত্ববান পেশাদার সাংবাদিক এই কাজটি করতে পারেন। তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।

ধর্ষক ও তার পরিবারকে সবাই সামাজিকভাবেই না বলুন। দেখবেন ধর্ষনের মত ঘটনায় স্বয়ং ধর্ষক ও ধর্ষকের সমর্থনপক্ষরা দুর্বল হতে বাধ্য হবে।

....................................
১১ মে ২০১৭



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৭ ভোর ৪:২৮

কাল্পনিক হিমু বলেছেন: পোষ্ট কপি করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি

২| ১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ৮:০৬

সত্যের ছায়া বলেছেন: বর্তমানে, গণমাধ্যম< গদির মাধ্যম< ছায়া সরকার

৩| ১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: সামাজিক অবক্ষয় আমাদের সামনের দিনগুলির জন্য চরম হতাশার। এখনই এই অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে চরম মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকতেই হবে সমাজ তথা রাষ্ট্রকে।

পোষ্ট পড়ে মুগ্ধতা রেখে যাচ্ছি।
শুভকামনা ভাই।

৪| ১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: বিচার তো দূরে, কখনো কখনো বিষয়টিকে বিনোদন আকারেও উপস্থাপন করা হয় ।
আমাদের সকলের বোধোদয় ঘটুক ।

৫| ১৪ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:৫০

ফকির জসীম উদ্দীন বলেছেন: শিরোনামে শিরোনামে মিডিয়াতে প্রচার হয় দর্শকমহলে ধর্ষন ইমেজ ছড়ায় পুঙ্খপুঙ্খানুভাবে, যেন অনুষ্ঠানের মেগারিরিয়ালের আলিফ লায়লার মত। মালেকায় হামিরা, কেহেরমানের বিচার পর্ব দেখতে তেমন পাইনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.