নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্যা মোটেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক দুর্যোগ!!!

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:২২

বর্ষা মৌসুমের বন্যাকে আমি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে নারাজ। বরং এই দুর্যোগ অনেক বেশি রাজনৈতিক। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৬ বছর হয়েছে। ৪৬ বছর কিন্তু অনেক লম্বা সময়। এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের সরকারগুলো আমাদের নদীর যত্ন করেনি। একদিকে আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা নেই। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর জলবণ্টন নিয়ে আমাদের সরকারগুলো কূটনৈতিক তৎপরতায় বিগত ৪৬ বছর ধরে ফেল করেছে।

এই দীর্ঘ সময়ে নদীগুলো মরে মরে জলা ও চর সৃষ্টি করেছে। নদীর স্বাভাবিক যে নাব্যতা তা দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত থাকার কারণে একটু বাড়তি জল পেলেই তা বন্যায় রূপ নিচ্ছে। মানবিক কারণে বন্যা দুর্গতদের পাশে এদেশের মানুষ সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়ে বলেই সর্বনাশা বন্যার পরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দুর্গত এলাকার সাধারণ মানুষ। আর সবচেয়ে বেশি পোয়া বারো হয় আমাদের চাটার দলদের। আটানব্বই'র বন্যার সময় আমি বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের গবেষণা দলে ছিলাম। ২০০৭ সালের সিডর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমি ইউএন হ্যাবিটেড টিমের সঙ্গে ছিলাম। এ দুটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ঘুরে এবং সরকারি ত্রাণ ও অন্যান্য অ্যাকশান প্ল্যানগুলো দেখে রূঢ় বাস্তবতা যা দেখেছি, সেটি সহজ করে বললে বলা যায় যে, আমাদের সরকারগুলো বেশি বেশি খয়রাতি সাহায্য পাবার জন্য বেশি বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কামনা করে।

জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি অফিসগুলোতে এই সময় মহাধুমধাম উৎসব দেখেছি আমি। সকল চোর-বদমাশ তখন মিলেমিশে লোকদেখানো মানবিক সাহায্যের নামে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সাহায্য কত আসলো আর তার কতোটা বণ্টন করা হলো, এই হিসাব দুর্যোগ শেষে কোনো সরকার মিলিয়ে দেখেনি। যে কারণে এসব চুরিচামারির সুযোগ আছে বলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের আসল সমাধানে আমাদের সরকারগুলোর খুব একটা আগ্রহ কখনোই কাজ করে না।

গোটা বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন একটি দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ঘিরে কে কত মারলো, তার হিসাব কেউ কোনোদিন করেনি। যে কারণে আমাদের সরকারগুলো সবসময় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আশির্বাদ মনে করে আসছে। কারণ এই সময় চুরিচামারিতে অনেক বেশি সুযোগ তৈরি হয়। যে নদীর কারণে এই বন্যা সেই নদী নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নাই।

নদীর পাশে বেড়িবাঁধ নিয়ে অনেক চুরি হয়েছে বাংলাদেশে। নদী শাসন নিয়ে অনেক বড় বড় চুরি হয়। নদীর ন্যায্য জল পাবার কূটনৈতিক দৌড়ে সরকারগুলো বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ যেটুকু হয় তা কেবল লোকদেখানো। আসল কাজটি সেই নদীকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বে সবাই ফাঁকিবাজ।

রাজধানী ঢাকার চারপাশে চারটি নদী। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালী ও তুরাগ। সবার চোখের সামনে এই চারটি নদী কীভাবে ভূমিদস্যুরা দখল করছে, তার কোনো বিচার হয়নি। বুড়িগঙ্গাকে মেরে একটি আবর্জনার স্তূপ বানানো হয়েছে রাজধানী ঢাকা নামে। সারা দেশের নদীগুলোর অবস্থা আরো করুণ। সবখানে খাই খাই দখল লুটপাট স্বভাব। আর এই কাজগুলো সবসময় হয় সরকারি দলের কর্মীবাহিনী দিয়ে। যা সরকার ঠিক থাকলে একদম হবার কথা না।

আমাদের ৩৫০ জন সাংসদের কতজন নদী দখলকারী? কতজন খুনী? কতজন চোরাকারবারী? কতজন স্ম্যাগলার? কতজন লুটপাটকারী? এসব নিয়ে এদেশে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। অথচ এসব নিয়েই গবেষণা হওয়া উচিত। এসব রিপোর্ট সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা নেওয়া উচিত। কিন্তু গণমাধ্যম সেদিকে হাঁটে না। কারণ খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে সেই গণমাধ্যমের অধিকাংশের মালিক আমাদের কোনো না কোনো বর্তমান বা সাবেক সাংসদরা।

ভারতের সঙ্গে আমাদের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের সরকারের কোনো তৎপরতা বিগত কুড়ি বছরে নজরে পড়েনি। সেই সুযোগে এবারের অতিবৃষ্টিতে ভারতের উত্তরবঙ্গে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। সেই বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা বিভিন্ন নদীতে দেওয়া বাঁধের কপাটগুলো খুলে দিয়েছে। যে কারণে ভাটিতে থাকা বাংলাদেশকে মারিয়ে সেই জল এখন এই বন্যা সৃষ্টি করেছে।

ভারত যেদিন একসঙ্গে এতগুলো নদীর কপাট খুলে দিল, সেদিন আমাদের সরকারি তরফ থেকে কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। বারবার প্রতিবাদহীনতার সুযোগে ভারত তাদের বন্যা এখন আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। ভারতের ভেতর থেকে এই বাড়তি জল নদীপথে অপসারণের সুযোগ থাকলে তারা এটা আমাদের দিত না। বেকায়দায় পড়লেই জল ছাড়ে ভারত। কায়দার সময় কপাট সব বন্ধ থাকে। এটা কোনো সঠিক নীতি হতে পারে না।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের এই চাপিয়ে দেওয়া বন্যা নিয়ে আমাদের সরকারের অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু সরকার তা করবে না। কারণ এই দুর্যোগ দেখিয়ে পকেট আরেকটু ভারী হলেই তো লাভ বেশি। দুর্ভোগ যা হবার সাধারণ গরীব মানুষের হোক। তাদের তো পকেট ভারী হবে। এই যে ঘুমিয়ে থাকা নীতি, এটা দিয়ে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না।

নদী মার্তৃক বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে হবে, নদী আমাদের মায়ের মতন। নদী ছাড়া আমাদের বাঁচার উপায় নাই। নদীকে আমাদের ভালোবেসেই তাদের যত্ন করতে হবে। আমাদের মানুষকে সচেতন করতে পারলেই এই নদীই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে। কিন্তু নদীর চর দখল করতে পারলেই অনেক ব্যবসা হবে। নদীতে অনেক জায়গা, তা দখল করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- এই যে ভুল কৌশল নিয়ে আমাদের সরকারগুলো কাজ করে, আসল সমস্যা সেখানেই।

প্রাকৃতিক দুর্যোগককে আমাদের দেশে আয়-রোজগারের একটা মোক্ষম হাতিয়ার করা হয়েছে সরকারি ভাবেই। তাই এখন এসব দুর্যোগে সরকারের তেমন টনক নড়ে না। ভেতরে ভেতরে আমাদের মন্ত্রী এমপিদের, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তাই এখন ঈদের খুশির আমেজ টের পাচ্ছি।

মনে রাখতে হবে নদী বাঁচাতে হবে সবার আগে। নদী না বাঁচলে বন্যা হবেই। সেই বন্যা থেকে সাধারণ মানুষের দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে একদল ফুলেফেঁপে পকেটে মাল ঢুকাচ্ছে। সেই মাল ঢুকানো বন্ধ করতে না পারলে, নদীকে বাঁচানোর উপায় না খুঁজলে, কেবল দুর্যোগে মানবিকতা দেখিয়ে দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।

গত তিন মাস ধরে সিলেটে বন্যা হচ্ছে। মিডিয়ায় সেই খবর নাই বললেই চলে। মানুষ মারা যায়নি। তাই সিলেটের সেই বন্যার খবর মিডিয়ায় তেমন একটা নাই। সরকারি তৎপরতাও চোখে লাগার মত পড়েনি। এবার যখন ভারতের গজলডোবার সবগুলো পয়েন্টের কপাট খুলে বন্যা এদিকে তাড়িয়ে দিল ভারত, তখনো সরকারি পর্যায়ে কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। কারণ এই বন্যায় কিছু সাধারণ মানুষ মারা যাবে, কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে বটে। কিন্তু আখেরে লাভ হবে শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীদের। তাই এই সর্বগ্রাসী বন্যা নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নাই।

এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত একশোর উপরে মানুষ কেবল পানিতে ডুবে মারা গেছে। সাপের কামড়ে মারা গেছে অনেকে। অথচ সরকারি তরফে এটা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তিত হবার কারণ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান না। কারণ, এই বন্যা অনেকের পকেট ভারী করবে। সেই খুশিতে তারা বোগল বাজিয়ে যাচ্ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন যতোটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। সেই রাজনৈতিক দুর্যোগকে উপরে ফেলার জন্য যতক্ষণ আমরা সচেতন না হব, ততক্ষণ তারা সেই সুযোগ ও সুবিধা ভোগ করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাধারণ মানুষ মানবিক কারণে পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু আমাদের শাসকগোষ্ঠী এখান থেকে আমছালা দুটোই কুড়িয়ে নিজেদের ঘর ভরে। যা খালি চোখে আমাদের নজরে আসে না।

এরশাদের সামরিক শাসনের আমলে ত্রাণের গম চুরির জন্য অনেক মেম্বার-চেয়ারম্যানকে গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে গলাপানিতে চুবানোর নজির আছে। তারা পরবর্তী সময়ে আর জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি। কারণ মানুষ তাদের আর ভোট দেয়নি। এখন দৃষ্টান্তমূলক সাজার নজির নাই। তাই দুর্যোগের পরে মানুষ আর এই চুরির কথা মনে রাখতে পারে না।

উত্তরবঙ্গের ২০টি জেলা এখন সর্বনাশা বন্যায় ডুবে আছে। অথচ ৩৫০ জন সাংসদ বা ৫০ জনের বেশি মন্ত্রী'র কয়জন দুর্যোগ এলাকা ভিজিট করেছে? প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে এই তামাশার নামও রাজনীতি। তবুও আগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান সবাই। বেঁচে থাকলে পরে এদের নিয়ে রাজনীতি করতে পারবেন।

এই মুহূর্তে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল বাতিল মোটেও দেশের এক নম্বর সমস্যা নয়। তা নিয়ে রাজনীতি করার অনেক সময় পাবেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা চলমান সর্বনাশা বন্যা। এটা থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য সবাই কাজ করেন। আখেরে অনেক ছোয়াব পাবেন। আর মনে রাখবেন, বন্যা এখন আর মোটেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক দুর্যোগ।

---------------------------
১৭ আগস্ট ২০১৭

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার ভাবনা সঠিক।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:২৪

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:

রেজা ভাই, আপনার পুরো লেখার সাথে একমত। তবে একটু অসস্তি আছে টাইটেলটা। টাইটেলটি লেখার মুল বক্তব্যকে রিপ্রেজেন্ট করতেছে না সঠিক ভাবে।

আপনার লেখার লিংক আমার স্টিকি পোষ্টে যোগ করে দিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: সহমত

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৩৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। বন্যা আসলেইা আমাদের কিছু নেতাদের টাকা বানাবার সুযোগ তৈরী হয় আর বানাচ্ছেও। নদী খননের নামে বন্যা রক্ষা বাঁধের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে একেকজন নেতা আমলা মন্ত্রীরা সুইস ব্যাংকেও লাল হয়ে যাচ্ছে!

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩

কানিজ রিনা বলেছেন: ঠিক সময়উপযোগী পোষ্ট দিয়েছেন অসংখ্য
ধন্যবাদ।

৬| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:১২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বারবার প্রতিবাদহীনতার সুযোগে ভারত তাদের বন্যা এখন আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। ভারতের ভেতর থেকে এই বাড়তি জল নদীপথে অপসারণের সুযোগ থাকলে তারা এটা আমাদের দিত না। বেকায়দায় পড়লেই জল ছাড়ে ভারত। কায়দার সময় কপাট সব বন্ধ থাকে। এটা কোনো সঠিক নীতি হতে পারে না।

নদী মার্তৃক বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে হবে, নদী আমাদের মায়ের মতন। নদী ছাড়া আমাদের বাঁচার উপায় নাই। নদীকে আমাদের ভালোবেসেই তাদের যত্ন করতে হবে। আমাদের মানুষকে সচেতন করতে পারলেই এই নদীই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে।

এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত একশোর উপরে মানুষ কেবল পানিতে ডুবে মারা গেছে। সাপের কামড়ে মারা গেছে অনেকে। অথচ সরকারি তরফে এটা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তিত হবার কারণ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান না। কারণ, এই বন্যা অনেকের পকেট ভারী করবে। সেই খুশিতে তারা বোগল বাজিয়ে যাচ্ছে।

সত্য বলার লোক কমে যাচ্ছে। আপনি সত্যিটা তুলে ধরেছেন।

ধন্যবাদ ++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.