নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
ঈদে বেড়ানো:
একুশ শতকের শুরু থেকেই বাঙালির ঈদ উৎসবে কিছু কিছু নতুন বিষয় যোগ হয়েছে। একেবারে বড়লোক পাড়ার লোকজন ঈদ মৌসুমে দুই দফা বিদেশ সফর করে। প্রথম দফায় কেনাকাটা দ্বিতীয় দফায় বেড়ানো। তাদের বেড়ানো দেশের তালিকায় থাকে ইউরোপ, আমেরিকা, আর এশিয়ার হলে ভারত, জাপান, কোরিয়ায়। উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি বরং সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে। তারা বড়জোর একবার পরিবার নিয়ে বাইরে বেড়াতে যায়। আর তা এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঈদ উৎসবে সেটা এখন ধীরে ধীরে নিয়মিত হচ্ছে। মধ্যবিত্তরা সবাই কর্মস্থল থেকে ছুটি পেলেই ছোটে গ্রামের বাড়িতে। আর নিম্নবিত্তরা ঈদ উৎসবে দান-খয়রাত পাবার পর ঈদের পরদিন গ্রামের বাড়িতে ছোটে।
ঈদের কেনাকাটা:
বড়লোকদের কেনাকাটা হয় দেশের বাইরে। হেতিরা কী কী কেনে আমার কোনো আইডিয়া নাই। উচ্চ মধ্যবিত্তরা ঈদের সময় বাজারে নতুন আসা ফ্যাশনের দিকে আগ্রহী থাকে। তারা গমন করে এসি মার্কেটে। মধ্যবিত্তরা সস্তা মার্কেট থেকে গরমে সিদ্ধ হয়ে কেনাকাটা করে। আর একেবারে নিম্নবিত্তরা কেনাকাটা করে ফুটপথ থেকে। হকাররাই তাদের মূল ভরসা।
যাত্রাপথে নিয়মিত দুর্ভোগ:
ঈদ উৎসবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা কর্মস্থল থেকে বাড়িতে যাবার জন্য প্রতিবছর পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে বেশি দুর্ভোগ হজম করে। এদের হজম শক্তি প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানে প্রতিবছর উপচেপড়া ভীড় এরা উপভোগ করছে।
পথে পুলিশের চাঁদাবাজি:
প্রতিবছর ঈদের সময় পথে পুলিশের চাঁদাবাজি একটি নিয়মিত ঘটনায় নিয়েছে। প্রশাসন থেকে প্রতিবছর দাবি করা হয় সবাই খুব নির্বিঘ্নে ঈদ উৎসব পালন করেছে। সাবাস বাংলাদেশ।
যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি:
প্রতিবছর ঈদের সময় বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ভাড়া নিয়মিতভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণ তা বিনাদ্বিধায় মেনে নিচ্ছে।
টিকেট কালোবাজারি:
প্রতি বছর ঈদের সময় ট্রেন ও বাসের টিকিট কালোবাজারি হয়। লঞ্চে কেবিনের ক্ষেত্রে এটা নিয়মিত হয়। জনগণ মুখ বুজে এসব মেনে নিচ্ছে। জনগণের হজমশক্তি মাশাল্লা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যাত্রপথে দুর্ঘটনা:
প্রতিবছর ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন আজ পর্যন্ত এই সড়ক দুর্ঘটনার যথাযথ ব্যাখ্যা ও তার সমাধানে আগ্রহী নয়।
মলমপার্টির উৎপাত:
প্রতিবছর ঈদের সময় সাধারণ মানুষ মলমপার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারায়। অনেকে মলমপার্টির খপ্পরে পড়ে জীবনও হারায়। মলমপার্টি এখন পর্যন্ত সফলভাবে ঈদ মৌসুমে বাণিজ্য করতে পারছে। আর পুলিশ সবসময় মুখস্থ ব্যাখ্যা প্রদান করে দায় সারছে।
স্যোশাল মিডিয়ায় ঈদ:
আগে ঈদের সময় অনেকে গ্রেটিংস কার্ড পাঠাতো বন্ধুদের। এখন তা ধীরে ভিডিও, ছবি আর এসএমএস-এ পৌঁছেছে। সর্বশেষ সংযোজিত এই ভিডিও, জিআইএফ চরম বিরক্তিকর হলেও সবাই পাঠিয়ে মজা পাচ্ছে। যে যেখানে যাচ্ছে সেখানকার ছবি আপলোড করছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম সেলফি। রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে গরু জবাই, জবাই করা গরুর গায়ে শুয়ে সেলফি, মাংসের সাথে সেলফি, খা্বারের সাথে সেলফি, সবকিছুতে সেলফি এক ভয়াবহ সংক্রামক রোগে পরিণত হয়েছে।
ফেসবুক লাইভ:
এবারের ঈদের নয়া চমক ফেসবুক লাইভ। কেউ গরু জবাই লাইভ দেখাচ্ছে। কেউ বেড়ানো ঘুরে দেখাচ্ছে। কেউ গান শোনাচ্ছে। কেউ জাতির উদ্দেশ্য বক্তৃতা দিচ্ছে। কেউ মস্করা করতেছে। মোটামুটি যে যখন ফেসবুক লাইভ ব্যাপারটা শিখতেছে, সে যা পারুক একবার ট্রাই করতেছে।
পরিবার ও বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ছবি:
ফেসবুকে ঈদের সময় সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ছবি তোলা ও তা আপলোড করা।
জনসংযোগ:
ঈদের মৌসুমে যারা রাজনীতি করেন তারা জনসংযোগের জন্য পোস্টার ছাপিয়ে শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। ছবিতে দলীয় নেতানেত্রীর চেয়ে নিজেদের ছবির সাইস থাকে বিশাল। কয়েক গোণ্ডা থাকে বানান ভুল। সারা বছর জনসংযোগ করুক আর না করুক ঈদের সময় এরা জনসংযোগ করছে বেশ আগ্রহ নিয়ে।
টেলিভিশনে ঈদ:
ঈদ একদিন হলেও দেশের টেলিভিশনে ঈদ চলে সাত দিন। তারা ঈদ উপলক্ষ্যে নানান কিসিমের অনুষ্ঠানের নামে মূলত বিজ্ঞাপন দেখায়। জনগণের ধৈর্য পরীক্ষা নেয় টেলিভিশনগুলো। জনগণও ভোদাই'র মমত সেই পরীক্ষা প্রতিবছরই দেয়।
অতএব সময় যত যাচ্ছে ঈদ কিন্তু আর আগের জায়গায় নাই। যত দিন যাচ্ছে ঈদের সংজ্ঞা এখন তত পাল্টে যাচ্ছে। পছন্দের পোষাক না পেলে সুইসাইড করার মত ঘটনাও ঘটছে। সবচেয়ে মজার যে ঘটনাটি ঘটছে ঈদের সময় সরকারি ছুটি কেউ পাত্তা দেয় না। ঈদের ছুটি কাটিয়ে এসে কয়েকদিন কেটে যাচ্ছে আবার যথারীতি অফিসের কাজে ফাঁকি দিয়ে ঈদ পুনর্মিলনে। বড়লোক পাড়ায় এটি ঈদ রি-ইউনিয়ন নামে পরিচিত।
-------------------------
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৫২
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভালোলাগলো
ঈদের শুভেচ্ছা জানবেন।