নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের শেষ আপসেট আজ্জুরা!

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৪

রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে দেখা যাবে না চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আজ্জুদের। গত ১৪ নভেম্বর, সোমবার রাতে মিলানের সান সিরোয় বাছাইপর্বের প্লে-অফের ফিরতি লিগের ম্যাচ ছিল সুইডেনের সাথে ইতালির। সুইডেনের সঙ্গে জীবন-মরণ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত গোল শূন্য ড্র হওয়ায় রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ল ইতালি। ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেই বাদ পড়ল ইতালি।

ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই ইতালিকে নিয়ে একটা শঙ্কা কাজ করেছিল। ম্যাচ শেষে সেই শঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিলো। সুইডেনে অনুষ্ঠিত উভয় দলের প্রথম লিগে ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল সুইডেন। ফলে রাশিয়া বিশ্বকাপের মূল আসরে ১২ বছর পর আবার খেলার সুযোগ পেল সুইডিসরা। এর আগে সুইডিসরা ২০০৬ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলেছিল।

সান সিরোয়'র খেলার প্রায় পুরোটা সময়ই বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ইতালি। ড্র অথবা হার হলেই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ থেকে বাদ পড়ে ইতালি, এমন লজ্জা এড়াতে প্রথম থেকেই তাই ইতালি বেশ আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেছিল। বেশ কয়েকটি সুযোগও পেয়েছিল আজ্জুরা। কিন্তু একবারের জন্যও বল জাল পর্যন্ত নিতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে একের পর এক আক্রমণ করেও আজ্জুরা কোনো গোল আদায় করতে পারেনি। ফলে খেলা গোল শূন্য ড্র হয়।

২০০৬ সালের জার্মান বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত দুই আসরে গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি ইতালি। আর এবার সরাসরি বাদ পড়ল বাছাইপর্ব থেকেই। ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সফল দল ইতালি। ব্রাজিল এখন পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে। ইতালি ও জার্মানি জিতেছে চারবার করে। অথচ রাশিয়ায় সেই ইতালিকেই দেখা যাবে না। ভাবা যায়! আমার সবসময়ের প্রথম পছন্দের দল ইতালি এবার বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না বলে আমিও আজ্জুদের মত হতাশ!

ইতালির ক্যাপ্তেন জিয়ানলুইগি বুফনের স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেই অবসর নেবেন। কিন্তু সুইডেনের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ইতালির বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটেছে বুফনের। ফলে চোখের জলে বিশ্বকাপ না খেলেই অবসরের ঘোষণা দিলেন এই সময়ের সেরা গোলরক্ষক বুফন। বুফনের সঙ্গে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন ইতালির আর তিন তারকা ফুটবলার ড্যানিয়েল ডি রসি, জর্জিও কিয়েলিনি ও আন্দ্রেয়া বারজাগলি।

আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে বুফন বলেন, ‘যারা ফুটবল খেলে তারা জানে ম্যাচটি আমাদের জন্য কতটা কঠিন ছিল। আমরা আমদের সেরাটা দিতে পারিনি। এটি হতাশাজনক। কেননা, আমরা এমন একটা জায়গায় ব্যর্থ হয়েছি সত্যিকার অর্থেই যেটি দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে বিদায়বেলায় আমার অন্য কোনো আক্ষেপ নেই। কেননা, সময় বয়ে চলে এবং (বিদায় বলার) এটাই সেরা সময়।’

ইতালির হয়ে মোট ১১৭ ম্যাচে ২১ গোল করা ড্যানিয়েল ডি রসি বিদায় কালে দিনটিকে ‘কালো দিন’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ফুটবলের জন্য দিনটি কালো একটি দিন।'

তবে আগামী প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছেন ফুটবল থেকে বিদায় দেওয়া জর্জিও কিয়েলিনি। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা বিদায়কালে আগামী প্রজন্মের ওপর ভরসা রাখার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের ওপর এমন আস্থা দেখাতে হবে, ভালোবাসতে হবে। সামনে বহুদূর যেতে হবে। এভাবে ব্যর্থতার পর অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন।’

৩৬ বছর বয়সী আরেক তারকা আন্দ্রেয়া বারজাগলি বলেন, ‘ফুটবলীয় অর্থে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় হতাশাজনক ঘটনা এটাই। আমাদের জন্য এটা লজ্জার ঘটনা যে এভাবে শেষটা হয়েছে।’

বিশ্বকাপ ফুটবলে ইতালি মোট ১৮ বার অংশগ্রহণ করেছে। তার মধ্যে চারবার আজ্জুরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ এবং ২০০৬। এছাড়া ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে আজ্জুরা দুইবারের বিশ্বকাপ রানার-আপ।

২০১৬ সালের ইউইএফএ ইউরো কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানের কাছে পেনাল্টিতে হারার পর থেকেই কেমন একটা ছন্দ হারায় আজ্জুরা। তারপর দীর্ঘদিন দলে ছিল কোচ সংকট। কোচ অ্যান্তোনিও কোন্তের পদত্যাগের পর আজ্জুদের নতুন কোচ হয়েছিলেন জিয়ান পিয়েরো ভেন্তুরা।

ইতালির কোচ হিসাবে আজ্জুদের চাওয়া ছিল কার্লো আনসেলোত্তি অথবা ক্লডিও রানিয়েরিকে। তাদেরকে না পাওয়ায় কোচের দায়িত্ব পেতে চেয়েছিলেন রবার্তো মানচিনি। শেষ পর্যন্ত নানান জটিলতায় যখন জিয়ান পিয়েরো ভেন্তুরাকে কোচ হিসাবে আকস্মিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলো, মূলত তখন থেকেই আজ্জুদের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘণ্টার আশংকা আরো বাড়লো।

স্টকহোমের প্রথম লেগে মার্কো ভেরাত্তি সাসপেন্ড হওয়ায় আজ্জুদের জন্য ফিরতি লেগের খেলা ছিল জীবন-মরণের লড়াই। এছাড়া কোচ ভেন্তুরা ফরোয়ার্ড আন্দ্রে বেলোত্তি, ইস্তেফান এল শারাওয়ে এবং লরেঞ্জোকে সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রেখে আজ্জুদের শক্তি পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে বিশ্বকাপে আজ্জুদের না দেখার দায়ের প্রায় ৬০ ভাগ ব্যর্থতা কোচ ভেন্তুরার। কারণ শেষ মুহূর্তে হলেও বেলোত্তি ও শারাওয়েকে খেলানো উচিত ছিল।

ইতালির মত বিশশ্বকাপের আসরে ইংল্যান্ডকেও দুইবার বিদায় নিতে হয়েছিল বাছাই পর্ব থেকে। ১৯৭০ ও ১৯৯৪। ইংল্যান্ড মাত্র একবার ১৯৬৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে ইতালির মত আরো যাদের ফুটবলমোদিরা মিস করবে তারা হলো- আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন, ল্যাটিন আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন চিলি ও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অারেক আপসেট নেদারল্যান্ডস।

বিশ্বকাপ ফুটবলে আজ্জুদের সাবেক বিখ্যাত তারকা ফুটবলারগণ হলো ডিনো জফ, ফ্রাংকো বারেসি, জিয়াচিন্তো ফাসেত্তি, পাওলো মালদিনি, জিয়ান্নি রিভেরা, সান্দ্রো মাজ্জোলা, রবার্তো ব্যাজ্জিও, জিউসেপ্পে মেয়াজ্জা, সিলভিও পিওলা, লুইগি রিভা, পাওলো রোসি, ফাবিও কান্নাভারো। যাদের খেলা এখনো একজন আজ্জু সমর্থক হিসাবে আমার চোখে লেগে আছে। ১৪ নভেম্বর রাতে আজ্জুদের হারার পর এটা নিয়ে লেখার মত মানসিক শক্তি যোগাতেই এই অনাকাঙ্খিত দেরি। তবুও আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে আজ্জুরা পূর্ণশক্তি নিয়েই বিশ্বকাপের আসরে উদয় হবে।

আজ্জুরা ও ডাসরা বিদায় নেবার পর রাশিয়া বিশ্বকাপে আমার প্রথম পছন্দের দল অবশ্যই জার্মানি। দ্বিতীয় পছন্দ থাকবে মেক্সিকোর দিকে। এছাড়া আমি আগামি রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলার সময় মিশর, তিউনিশিয়া, জাপান, ইরান, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, পেরু ও উরুগুয়ের দলকে সমর্থন জানাবো। আর যদি রাশিয়া বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ পাই তাহলে রাশিয়ার দলকে কয়েকটা খেলায় সমর্থন দিতে পারি।

আগামি রাশিয়া বিশ্বকাপে যারা খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সেই দলগুলো হলো-
ক). আফ্রিকা অঞ্চল থেকে- মিশর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, সেনেগাল ও তিউনিশিয়া (মোট ৫টি দল)
খ). এশিয়া অঞ্চল থেকে- অস্ট্রেলিয়া, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরব (মোট ৫টি দল)
গ). ইউরোপ অঞ্চল থেকে- বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আইসল্যান্ড, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রাশিয়া, সার্বিয়া, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড (মোট ১৪টি দল)
ঘ). উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে- কোস্টারিকো, মেক্সিকো ও পানামা (মোট ৩টি দল)
ঙ. ওসেনিয়া অঞ্চল থেকে কোনো দল বাছাই পর্বে যোগ্যতা অর্জন করে নাই।
চ). দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলাম্বিয়া, পেরু ও উরুগুয়ে (মোট ৫টি দল)

আগামী ১৪ জুন ২০১৮ সালে রাশিয়ার ২৪টি শহরে বিশ্বকাপ ফুটবলের জমজমাট লড়াই শুরু হবে। মাসব্যাপী ৩২ দলের লড়াই শেষে ১৫ জুলাই হবে ২৩ তম আসরের ফাইনাল। এর আগে বিশ্বকাপ ফুটবলে ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে, ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইতালি, ১৯৫০ সালে উরুগুয়ে, ১৯৫৪ সালে পশ্চিম জার্মানি, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে ব্রাজিল, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড, ১৯৭০ সালে ব্রাজিল, ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানি, ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৮২ সালে ইতালি, ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৯০ সালে পশ্চিম জার্মানি, ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স, ২০০২ সালে ব্রাজিল, ২০০৬ সালে ইতালি, ২০১০ সালে স্পেন এবং ২০১৪ সালে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হয়।

বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে আরো ২০৩ দিন বাকি। ততদিন চলবে বিভিন্ন দলের মধ্যে ওয়ার্ম-আপ খেলা। ফুটবলমোদিরা সেই পর্যন্ত অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবে বিগেস্ট শো অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর।

-----------------------------
২৩ নভেম্বর ২০১৭






মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.